নীল আঁচল

সূচনা পর্ব

সুলতানা সিমা

 

আচঁলঃ ওই নীলের বাচ্চা নীল। তুই জীবনে আমারে ফোন দিবিনা। তোরে বলছি না, তর লগে আমার ব্রেকআপ?

নীলঃ ওই শুন, প্রথমত আমি আফজালের বাচ্চা। দ্বিতীয়ত, আমি তর সাথে প্রেম করতে ফোন দেইনাই। আমার বিয়ের দাওয়াত দিতে ফোন দিছি। তুই না বলছিলি, আমি নীল রংয়ের মেয়ে পাবোনা। শুন মেয়ে পেয়ে গেছি, আজ দেখতে যাচ্ছি। সত্যি সত্যি মেয়েটা নীল রংয়ের হলে আজই বিয়ে হবে।

আচঁলঃ আগে জানতাম তুই পাগল। এখন মনে হচ্ছে তর চৌদ্দগুষ্টি পাগল। রাখ ফোন।

 

ছেলেটার নাম নীল। সে নামে যেমন কাজেও তেমন। নীল রং তাঁর খুব প্রিয়। তাঁর ঘরের জানালা, দরজার পর্দা, কার্পেট,বিছানার চাদর,ঘরের আসবাবপত্র সব কিছুতে নীলের সমাহার। পুরু বাড়িটা নীল রঙে সাজানো। শুধু তাই নয় বাথরুমের কমোডটাও তাঁর এই নীল রং থেকে রক্ষা পায়নি। তাঁর বাড়ির নাম নীল মহল। তার একটা জামা কাপড়ও নীল রং ছাড়া অন্য কোনো রংয়ের নেই। সমস্যা এসবে না। সমস্যা হলো তার জিএফ কে নিয়ে। তাঁর জিএফ আচঁলের নীল রং ভালো লাগেনা। সবার পছন্দ তো আর এক হয়না। কিন্তু নীল এটা মানতেই চায়না। তার কথা হলো আচঁল যেন নীল রং দিয়ে একেবারে লেপ্টে থাকে। খুঁজলে পাওয়া যায় আচঁলের একটা জুতাও নাই নীল রংয়ের।

 

নীল একদিন আচঁলের জন্য একটা শাড়ি কিনলো। আচঁলের সামনে হাটু গেড়ে দু’হাতে শাড়িটা বাড়িয়ে ধরলো। তারপর নীল রং নিয়ে যত কবিতা গান আছে সব গাইতে লাগলো। আচঁল প্রথমে খুশি হলেও নীলের এমন কান্ডে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে তার রাগ উঠে গেলো। তাই সে রাগে শাড়ীটি ফেলে দিলো নিলের হাত থেকে। এতে নীল রাগে আগুন। সেই বিষয় নিয়ে ঝগড়া করে ওদের ব্রেকআপ হয়। তারপর আচঁল শর্ত দেয়, তার সাথে রিলেশন রাখতে চাইলে নীল রংয়ের ভূত মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। নীল বলে সে আচঁলকে ছেড়ে দিবে তবু নীল রং ছাড়বে না। নীল আচঁলকে চ্যালেঞ্জ করে সে নীল রংয়ের একটা মেয়ে বিয়ে করবে। কথাটা শুনে আচঁল মজা উরায়। নীলকে নিয়ে মজা করায় নীলের মাথায় জেদ চেপে বসে। সে বিয়ে করলে নীলের রংয়ের মেয়ে বিয়ে করবে। ভাগ্যের জোরে একটা মেয়ে পেয়েও গেছে। তাই আজ ফোন দিছিলো। কিন্তু কালনাগিনী গালাগালি করে ফোন রেখে দিলো।

 

নীলের বাবাকে সে জানিয়ে দিয়েছিলো নীল রংয়ের মেয়ে ছাড়া সে বিয়ে করবেনা। ছেলের কথায় নীলের বাবার অবস্থা প্রায় পাগল হওয়ার মতো ছিলো। নীল রংয়ের মানুষ কি আছে যে তিনি নীল একটা মেয়ে এনে দিবেন। যেখানে কোনো সুন্দরী মেয়ের সন্ধান পেতেন সেখানে ছেলেকে নিয়ে যেতেন তিনি। সুন্দরী মেয়ে দেখে নীল রংয়ের মেয়ের ভূত মাথা থেকে বের হয় কিনা এই আশায়। কিন্তু দিন শেষে তিনি হতাশ হতেন । ঘুরে ফিরে নীলের একটাই আবদার, তার বউ নীল রংয়ের হতেই হবে। একমাত্র ছেলে তাও জেদি কী আর করতেন। চুপ করে সব হজম করা ছাড়া কিছুই করার ছিলোনা উনার। নীলের বাবা এ নিয়ে কারো সাথে কথাও বলতে পারতেন না। মানুষ এসব শুনলে তাঁকে নিয়ে যে শুধো হাসাহাসি করবে তা নয়। পাগল বলে গণধোলাই খাওয়াবে, সেটা উনার জানা ছিলো।

 

হঠাৎ একদিন উনার শালা একটা সুখবর নিয়ে আসলেন। নীল রংয়ের একটা মেয়ে আছে। কথাটা শুনে নীলের বাবা দুই ঘন্টা অজ্ঞান ছিলেন। উনার ৬০ বছরের জীবনে উনি এই প্রথম শুনলেন নীল রংয়ের মানুষ আছে।

 

 যাইহোক মেয়ে দেখতে যাওয়ার জন্য সবাই রেডি হলো।নীল, নীলের বাবা-মা,নীলের বোন সবাই নীল রংয়ের জামা পরছে। নীলের বাবার মাথায় একটা নীল টুপি,নীল পাঞ্জাবীর সাথে নীল পায়জামা, পায়ে নীল রংয়ের জুতা। দেখতে সবার কাছে জুকার লাগলেও নীলের কাছে অনেক সুন্দর লাগছে। নীল রংয়ের গাড়িটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন সবাই। 

 

দু’ঘন্টা পরে গাড়ি এসে থামলো কনেদের বাড়ির সামনে। বিশাল বড় একটা বাড়ি। এই বাড়ির নামও নীল মহল। বাড়ির রংটাও নীল। আহা নীলের কলিজা ঠান্ডা হয়ে গেছে। হাঁ করে বাড়িটার দিকে তাকিয়ে তাকে সে। যেন এমন বাড়ি জীবনেই দেখেনি। আসলে তো সে বাড়িটা দেখছে না, সে তো নীল রং দেখছে। সার্ভেন্ট এসে তাদের মিষ্টি মিটাই এগিয়ে নিলো। সার্ভেন্টের গায়েও নীল জামা। নীল রংয়ের জামা পরা দুইটা পিচ্চি মেয়ে এসে নীলকে ধাক্কা দিয়ে বললো। দুলাভাই হাঁ করে আছেন কেন? মশা ডুকে যাবে, মুখ বন্ধ করেন।” বলেই খিলখিল করে হাসতে লাগলো দুজন।  নীল লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। এইটুকু মেয়েগুলা তাঁকে লজ্জায় ফেলছে। ইচ্ছে করছে নীল পানিতে এদের ছুঁড়ে ফেলতে।

 

ঘরের ভেতরে ডুকে নীলের মনে হলো সে ভুল করে কোনো নীল রংয়ের ডিব্বাতে ডুকে গেছে। তাঁর বাড়িতেও মনে হয় এতো নীল রংয়ের জিনিসপত্র নাই যা যা এখানে আছে। নীল রংয়ের সোফাতে বসে পড়লো তাঁরা। তাঁদের নাস্তা দেওয়া হলো। অনেক্ষণ অপেক্ষা করার পরে কনেকে আনা হলো। মেয়েটিকে দেখেই সে ক্রাশ খেলো, এটাতো তার স্বপ্নের নীল পরি। কনেকে দেখা মাত্রই নীলের বাবা মা এক লাফ দিয়ে সোফায় উঠে গেলেন। বোনতো এক চিৎকার দিলো পুরো ঘর কাপিয়ে। নীলের বাবা ছেলেকে ফিসফিসিয়ে বললেন। “বাবারে তর দাদা আমার বাবার কসম লাগে তুই এই মেয়েরে বিয়ে করিস না। নয়তো দেখবি তর মা তর বাবাকে হারিয়ে বিধবা হয়ে তার বাবার কাছে চলে গেছে।

 

নীল তার বাবার দিকে কঠিন চোখে তাকালো। উনি চুপ হয়ে গেলেন। ছেলেকে ভয় পান তিনি। নীলের মা পরপর চার গ্লাস পানি খেলেন তবুও তৃষ্ণা মিটছেনা উনার। ভয় পেলে এমনটা হয় উনার। নীলের বোন যে তাঁকে আঁকড়ে ধরছে আর ছাড়ছেনা। যেন ছেড়ে দিলেই সামনে বসে থাকা নীল মেয়েটি তাকে গিলে খাবে। নীল মেয়েটিকে একদম ভূতের মতো লাগছে। সব নীলের মাঝে একটা নীল মানুষ দেখাই যাচ্ছেনা। শুধু চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে। সবার নিরবতা ভেঙে নীল কথার সূত্রপাত করলো। মৃদু হেসে মেয়েটিকে বললো।

 

_আপনার নাম যেটাই হোক আমি আপনাকে নিলা বলে ডাকবো।” নীলের কথায় মেয়েটা সরু গলায় বলল”

_আমার নামতো জন্ম থেকে নীলা।

_ওকে, নীল রং পছন্দ তো? 

_আমি তো মানুষটাই নীল।

নীল তার বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে বললো। 

_হিহিহি তাইতো।

 

নীলের হাসি দেখে নীলাও হাসলো। নীলার হাসি দেখে নীলের মা তাঁর বাবার পাঞ্জাবি খামছে ধরলেন, ভয়ে তিনি থরথর করে কাঁপছেন। নীলা হাসলে তার চোখ আর দাত ছাড়া কিছুই দেখা যায়না। কি ভয়ানক দৃশ্য। নীল তাঁর বাবাকে বললো।

 

_বাবা নীলাকে ছাড়া আমি কাউকে বিয়ে করবো না। আমি নীলাকেই বিয়ে করবো এবং আজকেই।” নীলের কথা শুনে নীলার বাবা বললেন” বাবা দেখো,আজ মাত্র দেখাদেখি হলো। দুদিন পরেই বিয়ে হোক।” নীলের উত্তর উত্তর না দিয়ে তাঁর বাবাকে বলল” বাবা আমি কিন্তু বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো আজকে বিয়ে না করালে।” ছেলের কথায় টাসকি খেলেন নীলের বাবা। কী আর করার উনার ছেলে যেটা বলে সেটাই করে। যদি সত্যি সত্যি চলে যায়। সবাইকে বুঝিয়ে রাজি করালেন তারপর কাজি আনা হলো। কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করবে তখন নীলা বলে উঠল “আমার কিছু শর্ত আছে”।

 

_বলো তোমার সব শর্ত আমি মানতে রাজি।

_বিয়ে পরে নীল নীল নীলাঞ্জনা গান গেয়ে গেয়ে এই গানের স্বরেই আমার সাথে কথা বলতে হবে। নয়তো আমি শুনবো না।

 

নীলার কথায় কিছু না ভেবেই নীল রাজি হয়ে গেলো। তারপর তাঁদের বিয়ে পরানো হলো। শেষে নীলাকে নিয়ে নীলের বাসায় আসে তাঁরা।

 

বাসায় এসে নীল ছাদে গেলো। আঁচল কে একে একে অনেকগুলা ফোন দিলো। কিন্তু ফোন বন্ধ। নীলের ইচ্ছে করছে আঁচলকে টেনে এনে দেখাতে। দেখো আমি নীল রংয়ের মেয়েকে বিয়ে করেছি। খুব তো মজা উড়াছিলা।  কিন্তু আঁচলের ফোন তো বন্ধ, বলবে কীভাবে? নীল আঁচলে মেসেজ দিলো। আমার বউ দেখে যেও নীল মেয়ে বিয়ে করছি।

 

 

রাত ১২টা বাজে। নীল তার রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ১১টা থেকে তার বউ কে ডাকছে,কিন্তু তাঁর বউ দরজা খুলছেনা। হঠাৎ তার মনে পড়লো শর্তের কথা। সে গলা খাঁকারি দিয়ে গলাটা একটু পরিষ্কার করে নিয়ে গান ধরলো।

 

নীল নীল নীলাঞ্জনা, দরজাটা খুলে দাওনা।

 

সাথে সাথেই দরজা খুলে গেলো। তারমানে এই বজ্জাত মেয়েটা দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো। তবুও দরজা খুলেনি? নীলের ইচ্ছে করছে নিলাকে একটা থাপ্পড় দিতে। বাসর রাতে স্বামীর জন্য মেয়েরা অপেক্ষা করে আর মহারাণী কিনা দরজা খুলে দেননা। কিন্তু ঘর তো একেবারেই অন্ধকার। থাপ্পড় মারবে কেমনে? নীল হাতড়ে লাইট অন করতে সুইচ খুঁজছে। তাঁর চোখের সামনে মারবেলের মতো কি যেন চিকচিক করছে। নীল সুইচ দিলো লাইট জ্বলেনি। ড্রিম লাইট জ্বালালো সেটা জ্বলে ওঠল। ড্রিম লাইটটা নীল রংয়ের। নীল আলোতে নীল মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন।

 

নীলের কাঁদতে ইচ্ছে করছে। মানুষ বাসর ঘরে কতো রোমাঞ্চ করে। আর সে কিনা বাসর ঘরে সে কানামাছি খেলছে। কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল”

নীল নীল নীলাঞ্জনা, বউ তোমায় খুঁজে পাইনা।

 

_এইতো আমি।

 

গম্ভীর এক কন্ঠ শুনে সামনে তাকালো নীল। চুল খুলা অবস্থায় নীলা দাঁড়িয়ে আছে। তার বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে। দাঁত আর চোখ গুলা চিকচিক করছে। দেখতে একদম ডাইনি রাক্ষসী লাগছে। ভয়ে নীল এক লাফে “ও মা গোওওওওওও” বলে রুমে থেকে বাইরে গিয়ে লাফ দিয়ে পড়লো। তাঁর বাবা মা দৌঁড়ে আসলেন। উনারা যেন আগে থেকেই এটার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। ভয়ে নীল হাঁপাচ্ছে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে,একের পর এক ঢোক গিলছে আর ভয়ার্ত চোখে রুমের দিকে তাকাচ্ছে। নীলের বাবা বললেন ” আমি আগেই বলেছিলাম বিয়ে করিস না এই ভূতকে”। বাবার কথা শুনে নীল দাঁড়িয়ে গেলো। সে ভয় পেয়েছে এটা কিছুতেই বুঝানো যাবেনা। নীল তাঁর বাবা মাকে বললো।

 

_আজ আমার বাসর রাত তোমারা জানোনা? এখনে কি করছো?

_নীলের মা বললেন “আগে তুই বল, তুই এসে বলের মতো উড়ে পড়লি কেন,নিশ্চয়ই ভয় পেয়েছিস?

_আজব তো। ভয় পেয়ে উড়ে পড়বো কেন? আগে মানুষ বাসর ঘরে ক্রিকেট খেলতো। এখন পাবজি খেলে। আমরাও তাই খেলছি, যাও ঘুমাও গিয়ে।

 

 

 

গল্পটা এক মাস আগে লিখেছিলাম। হুটা করে ভালোবাসি প্রিয় গল্পের থিম টা মাথায় আসায় এটা আর পোস্ট করা হয়নি। যেহেতো ভালোবাসি প্রিয় শেষে অন্য একটা গল্প শুরু করবো তাই এটা এখন দিয়ে দিলাম। আপনাদের রেন্সপন্স দেখে নেক্সট দিবো। যদি ভালো রেন্সপন্স হয় তো চালু করবো। ইন শা আল্লাহ।❤

 

চলবে…।

 

নীল আঁচল

পর্ব ২

সুলতানা সিমা

 

সকালে পাখির কলরবে ঘুম ভেঙে যায় নীলের। আড়মোড়া ভেঙ্গে পিটপিট করে চোখ খোলে তাকাতেই দেখলো নিলা তাঁর দিকে তাকিয়ে বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হাসছে। দাঁতগুলা চিকচিক করছে। গাঢ় নীল রংয়ের মাঝে চিকচিক দাঁতের হাসি ভয়ংকর রূপ ধারন করেছে। ঘুম থেকে উঠে এমন দৃষ্টি দেখে আহহহহহ বলে চিৎকার দিয়ে খাট থেকে উল্টে পড়ে গেলো নীল। নীলের চিৎকার বাড়ির সবার কানেই গেলো। নিলা দৌঁড়ে এসে নীলকে ধরলো। কোমরে হাত রেখে কিঞ্চিৎ স্বরে আর্তনাদ করে উঠল নীল। এমন ভূতকে বিয়ে করেছে বাকি জীবনটা যে কীভাবে কাটাবে এটাই ভেবে তাঁর কান্না পাচ্ছে। নিলা নীলকে তুলে খাটে বসিয়ে বলল” ছিঃ আপনি এতো ভিতু। বাবা বলেছিলো আমাকে বীরপুরুষের সাথে বিয়ে দিবে। কিন্তু বাবা আমাকে এ কী দেখে বিয়ে দিলো। একটা ভিতুর সাথে বিয়ে দিলো? কথায় কথায় আহহহ বলে চিৎকার করে।” নিলার কথাটা নীলের আত্মসম্মানে আঘাত করলো। এই ভূত তাঁকে ভিতু ডাকবে এটা কিছুই হতে পারেনা। নীল ঠিক করলো যা হবার হবে, সে আর চিৎকার দিবেনা। নীলের কোমরে ব্যথা করছে এদিকে তাঁর ওয়াসরুমেও যেতে হবে। উঠে এক’কদম এগিয়েই কোমরে ধরে বাঁকা হয়ে গেলো। নিলা চোখে মুখে বিস্ময় নিয়ে বলল “আপনি তো দেখি দূর্বলতায় ভুগছেন?” নীল সাথে সাথে কোমর ছেড়ে চলে গেলো ওয়াসরুমে। ব্যথা লাগুক কিন্তু প্রকাশ করা যাবেনা।

 

ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো নিলা রুমে নেই। মনে হয় নিচে গেছে।  নীল ফোন নিয়ে বারান্দায় গিয়ে আঁচল কে ফোন দিলো। আঁচল ফোন রিসিভ করেই বলল” ওই কুত্তা আমারে ফোন দিছস কেন? বউয়ের কাছে জায়গা পাসনি তাইনা? এখন আমাকে খুঁজতেছিস। আমি জানতাম তো ঘুরেফিরে তুই আমার কাছেই আসবি। আহহহহ তিনি নীল রংয়ের মেয়েকে বিয়ে করেছেন। আমার তো মনে হয় তুই কোনো ভূতকে বিয়ে করেছিস?

_ওই মুখ সামলে কথা বলবি। আমার বউ তুলে কথা বলবি না। আমি তো তোরে আমার বউ দেখতে দাওয়াত দিতে ফোন দিছি। জানিস আমার বউ আমারে নীল চা খাওয়াইছে। নীল চা। জীবনে নীল চা খাইছস। খাইবে কেমনে জীবনে চোখে দেখছিস কিনা সন্দেহ আছে।

_দ্যাত রাখ ফোন।” আঁচল ফোন রেখে দিলো। নীল নিচে আসলো। তাঁর বোন থরথর করে কাঁপছে নিলা সামনে দাঁড়িয়ে কী যেন বলছে। নীল গিয়ে বলল”কী রে কী হইছে কাঁপতাছিস কেন?” নীলের বোন ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে চলে গেলো। তাঁর ভাবীকে দেখলেই তাঁর ভয় লাগে। নীল এসে টেবিলে বসলো। নিলা একটা কাপ আর একটা বাটি এগিয়ে দিলো। নীল হাতে নিলে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে নীলাকে বলল” এগুলা কী?

_কেন? চা আর পেয়াশ।” নীল চোখ বড় করে তাকিয়ে বলল”

_কিইইইইইই? চাচাচাচা চা? চা তো লাল হবে বাদামী হবে। এটা এতো নীল কেন? 

_আপনি না নীল রং পছন্দ করেন?

_তাই বলে পায়েশটাও নীল হবে? এটা না হয় সাদা দাও।

_এগুলা খাবেন নাকি ভাত এনে দিবো।

_ওকে তাহলে ভাত এনে দাও।” নীলের কন্ঠে প্রফুল্লতা। এতো সকাল সকাল ভাত খেতে পারবে না। তবুও আপাতত এটা দিয়েই ক্ষিধা মিটাতে হবে। নিলা একটা প্লেটে করে নীল রংয়ের ভাত নিয়ে আসলো। নীলের অবস্থা এখন মরে গেলে বাঁচি এমন। 

 

_এ এ এ এসব কী বউ।

_কেন ভাত।

_নী নী নী নীল কেন? আ আ আ আমি খাবো না এসব।

_ওমা এতো কষ্ট করে আপনার জন্য নীল চাল এনে রান্না করলাম আর আপনি কিনা খাবেন না বলছেন?

_ওই বোকা পাইছো আমায়? নীল রংয়ের চাল পাইবা কই তুমি?

_নীল রংয়ের মানুষ থাকলে চাল থাকবে না কেন?

 

নীলের রাগ উঠে গেলো। রাগে একটা গ্লাস হাতে নিয়ে ফ্লোরে ছুঁড়ে মারল। গ্লাস ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। গ্লাস ভাঙ্গার শব্দে নিলা কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠে৷ কিন্তু পরক্ষণে আগুন হয়ে যায়। রাগে গিজগিজ করতে করতে কিচেনে গিয়ে খুন্তি নিয়ে আসে। নিলার হাতে খুন্তি দেখে নীলের কলিজা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। ভয়ার্ত চোখে নিলার দিকে তাকিয়ে শুকনো একটা ঢোক গিলে। গলা শুকিয়ে গেছে তাঁর। নিলা এসে প্লেট নীলের সামনে টাস করলো রাখলো। তারপর কর্কশ গলায় বলল”

_ চুপচাপ এগুলা খাবি তুই, আমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকবো।

_তু তু তু তুই তুকারি করছো কেন?

_খাবি নাকি ডান্ডা লাগাবো। “নীল কাঁদো কাঁদো হয়ে ভাত মাখাতে লাগলো। দেখেই ঘৃণা লাগছে মুখে তুলবে কেমনে। আজ আঁচলের কথা খুব মনে পড়ছে। আঁচলের বার্থডে তে নীল রংয়ের কেক নিছিলো। আঁচল নীল রংয়ের কেন প্রশ্ন করছিলো বলে। নীল কেক ফেলে চলে আসছিলো।  আঁচলে সেদিন বলেছিলো নীল হচ্ছে বিষ রং। আসলে সত্যিই বলছে আঁচল, নীল বিষের রং। চোখ বন্ধ করে বির বির করে বলল” আল্লাহ মরে যেন নাই যাই গো আল্লাহ।” দুইবার মুখে তুলতে গিয়েও তুললো না। 

 

নীল নিলার দিকে তাকিয়ে অনুরোধের স্বরে আহ্লাদ করে বলল”

_বউ। ও বউ। আমার ডাইনি বউ। রাক্ষসী বউ। পেত্নি বউ। ভূত বউ। আমারে মাফ করে দেও প্লিজ। “নিলা চোখ বড় বড় করে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকাল। নীল দ্রুত না সূচক মাথা নেড়ে বলল” না না না সুন্দরী বউ রূপসী বউ লক্ষী বউ। প্লিজ মাফ করে দাও।” নীলা তাকালো না। নীল বেশ কয়েকবার ডাকার পরে কেঁদে কেঁদে বলল” “নীল নীল নীলাঞ্জনা একবার কথা শুননা। 

_কোনো কথা শুনা যাবেনা চুপচাপ খেতে বলছি মানে চুপচাপ খাবি।” নীল ভয়ে কেঁপে উঠল। বাবা মায়ের দরজার দিকে অসহায় চোখে তাকাল। উনাদের দরজা বন্ধ। হয়তো এই ভূতের ভয়ে দূরে দূরে থাকছেন। চোখ বন্ধ করে এক লোকমা মুখে তুলল। গিলার সময় মনে হচ্ছে তাঁর নাড়ী ভুড়ি বাইরে চলে আসছে। নিলার অগ্নিচোখের দিকে তাকিয়ে গিলে ফেলল। দ্বিতীয় লুকমাটাও গিলল। কিন্তু তিনবারের বেলায় চোখ বড় বড় করে মুখ চেপে ধরে দৌঁড়ে বেচিনে গিয়ে বমি করতে লাগলো। বমিতে বেচিন নীলে নীল হয়ে গেলো। নীল নিলাকে ডাক দিয়ে বলল” বউ আমার পেটের ভেতর সব নীল হয়ে গেছে।” নিলা গিয়ে শার্টের কলার ধরে টেনে হিঁচড়ে এনে আবার টেবিলে বসালো। নীল ভ্যাঁ করে কেঁদে দিলো। নিলা বলল” ওই চুপ একদম কাঁদবি না।” নীল অবাক চোখে তাকালো। রেগে যখন কথা বলে তখন গলাটা একদম আঁচলের মতো লাগে। নিলা বলল”

_এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?

নীল বাচ্চাদের মতো কাঁদো ফেইসে ঠোঁট উল্টে বলল”

_আমার গার্লফ্রেন্ডের কথা মনে পড়ছে। 

_আলতু ফালতু কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে চুপচাপ খাবি। 

_আমার গার্লফ্রেন্ডও আমায় তুই করে বলে। আমরা প্রেম করার আগে বেস্টফ্রেন্ড ছিলাম তো তাই।

_ওই তোর কিচ্চা শুনতে এখানে দাঁড়িয়ে আছি? খাওয়া শুরু কর।

_বউ একটু দয়া করো প্লিজ। আমি না খেয়ে থাকতে পারবো । তুমি যা বলবা তাই করবো। তবুও এগুলা খেতে বলবা না প্লিজ।

 

নিলা কিছুক্ষণ কী যেন ভাবলো তারপর বলল” ঠিক আছে রুমে চলো।”নীলের যেন প্রাণ ফিরে পাইছে। উঠে এক দৌঁড়ে চলে গেলো রুমে। নিলা এক বালতি পানি এনে নীলকে বলল “রুম মুছো”। নীল তীক্ষ্ণ গলায় বলল “কিইইইই। আমি রুম মুছবো।” 

_হ্যাঁ তুমি মুছবে। যদি না মুছো তো বলে দাও।” নীল কাঁদো কাঁদো হয়ে বালতি হাতে নিয়ে গিয়ে রুম মুছতে লাগলো। নিলা কানে হেডফোন গুঁজে গান শোনছে আর পা নাচাচ্ছে। একটুপরে হেডফোন খুলে নীলকে বলল” ওই গান গাও তো।” নীল শোনলো না। নিলা ধমক দিয়ে বলল” ওই গান গাইতে বলছি না?” নীল গান ধরলো 

 

“কারে দেখাইবো মনের দুঃখ গোওওও, আমার বুক ছিঁড়িয়া।

অন্তরে নীল রংয়ের আগুন জ্বলে রইয়া রইয়া”

 

_ওই চুপ। কী গাচ্ছো এগুলা?” নিলার ধমকে নীল থেমে  গেলো। নিলা বলল নীল নীল নীলাঞ্জনা গান গাও। নীল কেঁদে কেঁদে গান ধরলো।

 

নীল নীল নীলাঞ্জনা 

চোখ দুটো কানা কানা

চিকচিক ওই দাঁত

নীল নীল ওই ভাত

একদিনেই জীবন হলো তেনা তেনা

নীল নীল নীলাঞ্জনা

জীবনটা তেনা তেনা 

 

  গান গেয়ে গেয়ে রুম মুছলো নীল। রুম মুছার পরে ওয়াসরুমে গিয়ে কমোড ধুয়ে দিলো। এটা নিলার আদেশ ছিলো। উল্টা পাল্টা গান গাওয়ার শাস্তি।

 

সারাদিন কেটে গেলো নীল একফোঁটা পানিও খেলোনা। কেন যে সে আঁচলকে কথায় কথায় এটা বলতে গেছিলো, সে নীল মেয়েকে বিয়ে করে দেখাবে। এখন তো তাঁর অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। নীলের বাবা মা নীলের বোন ঘর থেকে বের হলে তিনজন এক সাথে বের হন। একজন আরেকজনকে ধরে থাকেন যেন সুলতানা বিবিয়ানা খেলতে নামেন।

 

রাতে নীল রুমে এসে দেখলো নিলা ঘুমিয়ে আছে। এতো গাঢ় নীল নিলার গায়ের রং, যে নিলার চেহারার আকার আকৃতিও আন্দাজ করা যাচ্ছেনা। রাত বাড়লে মেয়েটাকে আরো ভয়ানক লাগে। নীল কাঁপা কাঁপা পায়ে এসে খাটের এককোণায় শুয়ে পরলো। একটু নড়লেই নীল খাট থেকে ধপাস করে পড়ে যাবে। হাত পা কাচুমাচু করছে। খুব শীত লাগছে। রুমে একটাই কম্বল যেটা নিলা গায়ে দিয়ে ঘুমাচ্ছে। এটার নিচে নীল যাবে না তাঁর ভয় লাগছে। ভয় পেয়ে লাইটটাও অফ করেনি সে। একটুপরে নিলা উঠে গিয়ে লাইট অফ করে দিলো। নীল লাফ দিয়ে উঠে বসলো। ভয়ার্ত স্বরে বলল  “ক্ক ক্ক কে ওখানে?” কোনো জবাব নেই। নিশ্বাস ভারি হয়ে এলো নীলের। নিলা ড্রিম লাইট জ্বালালো। ভয়ানক একটা ভূত এগিয়ে আসছে নীলের দিকে। নীল এক দুই না ভেবে দৌঁড় দিলো। দৌঁড়াতে গিয়ে নিলার সাথে ধাক্কা খেয়ে আবার এসে খাটে উল্টে পড়ল। নিলা নীলকে বলল” ছিঃ একটা পুরুষ মানুষ এতো ভিতু হয়।” নীল আর কিছু বললনা। তাঁর ভয় এখনো কাটেনি। শুকনো এক ঢোক গিলে আগের জায়গায় শুয়ে পড়লো। মনে মনে আয়াতুল কুরসি পড়ছে। 

 

[https://facebook.com/groups/716368086669384/]

 

রাত দুইটা বাজে। নীল ঘুমাচ্ছে তাঁর দিকে অপল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আঁচল। এই পাগলটাকে সে অনেক বেশি ভালোবাসে। তাইতো নিজের বাবা মায়ের শত বকা শুনেও নীল রং গায়ে দেওয়া বাদ দিলোনা। ক্লাস নাইন থেকে তাঁরা বেস্টফ্রেন্ড ছিলো। আঁচল নীলকে আগেই প্রপোজ করেছিলো। সম্পর্কের শুরু হয়েছিলো থেকে নীল তাঁকে সবসময় নীল নীল নীলাঞ্জনা গান গেয়ে শুনাতো। এই গান ছাড়া যেন দ্বিতীয় কোনো গান তাঁর জানা ছিলো না৷ এ নিয়ে আঁচলের ফ্রেন্ডগুলা তাঁকে নিয়ে অনেক মজা করেছে। তবুও নীলের এসব ছাড়াতে পারেনি সে। আঁচল যদি একবার বলতো নীল রং তাঁর পছন্দ না। তাহলে পনেরো দিনের জন্য তাঁদের ব্রেকআপ হয়ে যেতো। চার বছরের সম্পর্কে কম হলেও হাজারবার ব্রেকআপ হয়েছে তাঁদের। সব বারের ব্রেকআপে একটা কারণ ছিলো, সেটা হলো নীল রং। শেষেরবার যখন ব্রেকআপ হয়, তখন নীল বলে সে নীল রংয়ের মেয়ে বিয়ে করবে। আঁচল নীলকে অনেক বেশি ভালোবাসে। নীলকে ছাড়া তাঁর জীবন তেজপাতা ছাড়া কিছুই না। কিন্তু নীলের মাথা থেকে নীলের ভূত যে ছাড়াতে হবে। তাই এই সুযোগটা সে কাজে লাগিয়ে এক ডিলে দুই পাখি শিকার করলো। নীলকেও পাওয়া হলো নীলের ভূতও তাড়ানো হলো। তাঁর বাবা মা তো নীলের ছবি দেখেই পছন্দ করে ফেলছেন। করবেন না কেন। নীল যে মানুষটাই এমন, দেখলে চোখে নেশা ধরে যায়।

 

নীলের কপালে চুমু খেলো আঁচল। নীলের সিল্কি চুলগুলায় হাত বুলিয়ে দিলো আঁচল। সরু নাক,মুখের খোচাখোচা দাড়ি,ঘন জোড় ভ্রু, ঠোঁটের মাঝখানে লাল রংয়ের একটা তিল। যা গুলাপি ঠোঁটের সাথে মিশে আছে। আঁচলের খুব লোভ হলো ঠোঁট জোড়া একবার নিজের দখলে নিতে। কিন্তু না জেগে যাবে নীল। কিন্তু হালকা করে তো চুমু এঁকে দেওয়া যায়। আঁচল ঝুকে একটা চুমু খেল। নীল কিঞ্চিৎ নড়ে উঠল। নীলের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। ইস কত কিউট তাঁর বর। যখন ভয় পায় তখন আরো কিউট লাগে। নীলের শার্টের দুটো বোতাম খুলে তাঁর উন্মুক্ত বুকে চুমু খায় আঁচল। পুরো শরীরে অন্য রকম শিহরণ জেগে ওঠল। শীতল স্রোত শিরায় শিরায় বইতে লাগলো। এটাকে কী কাছে পাওয়ার তৃষ্ণা বলে? ভাবতেই আঁচলের চোখে মুখে লজ্জা ফুটে উঠলো। লজ্জায় মুখ লুকাতে নীলের বুকে শুয়ে পড়লো আঁচল। ইস নীল জেগে থাকলে কতটা লজ্জা পেতে হতো তাঁকে। নীল সারাদিন কিছু খায়নি খারাপ লাগছে আঁচলের। কিন্তু এই পাগলের মাথা থেকে যে নীলের রংয়ের ভূত তাড়াতে হবে। তারপর না হয় ভালোবাসা দেখাবে। আর তখনই সে তাঁর পরিচয় দিবে।

 

চলবে…..।

 

নীল আঁচল

পর্ব ৩

সুলতানা সিমা

 

নীলের বিয়ের পনেরো দিন চলছে। এতেই তাঁর জীবনটা তেনা তেনা হয়ে গেছে। হাঁটতে, বসতে, খেতে, ঘুমাতে সবখানে শুধু নীল নীল আর নীল। মাঝে মাঝে নীলের মনে হয়,নিলা তার উপর কোনোকিছুর প্রতিশোধ নিচ্ছে। আবার মাঝে মাঝে ভাবে, যে মানুষটা সম্পুর্ণ নীল ভূত, তাঁর মাথায় তো নীলের রংয়ের পাগলামো থাকবেই। নীল রংয়ের খাবার থেকে বাঁচতে নিলার সব আদেশ মানতে হয় নীলকে। আর সারাদিন নীল নীল নীলাঞ্জনা গান গাইতে হয়। আজকাল নীল আঁচলের কষ্টটা অনুভব করতে পারে। সারাদিন আঁচলের পাশে এই গান গান গেয়ে ঘ্যানঘ্যান করতো। আঁচল বিরক্ত হতো বলে কতই না ঝগড়া করতো। এখন বুঝতে পারে, সব সময় এক গান হোক বা যাই হোক শুনতে ভালো লাগেনা, বিরক্ত লাগে। তবে এই নীল ভূতের মনে হয় বিরক্ত বলে কিছু নাই। নীল তো শুধু বিরক্ত না। নীল শব্দটার প্রতি তাঁর একটা তিক্ততা জন্ম নিয়েছে। কেউ তাঁকে নীল বলে ডাকলে সে ক্ষেপে যায়। তাঁর কাছে মনে হয় নীল বলে ডাকছে মানে তাঁকে নিয়ে মজা উড়াচ্ছে। রাস্তাঘাটে যদি কারো সাথে দেখা হয় আর সে বলে, “এই নীল শুন” তখন তাঁর মেজাজ সপ্তম আকাশে চড়ে যায়। আর শুরু হিয় মারামারি। এক কথায় নীল৷ এখন নীল শব্দটাকে ঘৃণা করে। 

 

নীল পেয়াজ কাটতাছে আর কাঁদতাছে। তাঁর নীল রংয়ের ভূত বসে বসে আপেল খাচ্ছে। নীলের ইচ্ছে করছে গলাটা মাথা থেকে আলাদা করে দিতে। নিলা নীলকে তর্জুনি আঙুলের ইশারায় ডাকলো। নীল নাইফ রেখে চোখ মুছে মুছে এসে হাত সামনে এটে মাথা নিচু করে দাঁড়ালো। মনে মনে দোয়া করতাছে, গান গাইতে যেন না বলে। নিলা একটা আঙুর নিয়ে নীলকে বলল” হাঁ করো।” নীল হাঁ করে খেয়ে নিলো। নিলা বলল” এবার এটা খেতে আমাকে কিছু একটার সাথে তুলনা করে প্রশংসা করো।” নীল বলল 

_বুঝিনি।

_এই যেমন ধরো,তুমি ফুলের মতো সুন্দর। তুমি হীরার চেয়েও চকচকা। এইরকম কিছু বলো।” 

নীল একটু ভাবলো তারপর বলল”

 “_তুমি আকাশের থেকেও নীল। আমাদের টয়লেটের কমোডের থেকেও নীল।” নীল আঙুর মুখে ঢুকাচ্ছিলো। এটা শুনে তাঁর হাত থেমে গেলো। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল “আমারে কমোডের সাথে তুলনা করলি? আমারে দেখতে তোর কাছে কমোডের মতো লাগে? আমি কমোড?” নীল শুকনো একটা ঢোক গিলে বলল” তুমি কমোড হবা কেন। তুমি তো ইলিশ মাছ। তুমি জাতীয় মাছ। খেতে মজা, কিন্তু অনেক কাঁটা।” 

_কীইইইইইইই? তুই আমারে এইটা বললি। শেষমেষ আমাকে মাছের সাথে তুলনা করলি? ওই তুই কোনোদিন আমারে খাইছিলি?

_নীল দ্রুত কয়েকবার না সূচক মাথা নেড়ে বলল” না না না মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেছে।

_মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেছে? আজ তোকে আমি নীল ভাত খাওয়াবো।

_না না না প্লিজ। তুমি যা বলবা তাই করবো। ভাত নীল না প্লিজ। 

_তুই শুধু ভাত না, এখন থেকে সব নীল খাবি। “নীল কাঁদো কাঁদো গলায় বলল”

_বউউউউউউউ। বউউউউ রেএএ। প্লিজ বউ পাষাণ হইওনা।

_কেঁদে লাভ নাই। যা রুমে যা।

_বউ প্লিজ।

_তুই যাবি নাকি কুন্তি লাগাবো।” নীল আর দাঁড়ালো না।  কাঁদো কাঁদো মুখ করে চলে গেলো রুমে। কিছুক্ষণ পরে তাঁর বউ তাঁকে এনে এক প্লেট ভাত দিয়ে গেলো। সাথে ডিম ভাজি। আহহহ ডিম ভাজার ঘ্রাণে ইচ্ছে করছে এখনই খেতে। কিন্তু ভাত দেখে তো ইচ্ছে গুলো অসহায় তাঁকে ফেলে উড়ে যাচ্ছে। 

 

নীল প্লেট হাতে নিয়ে কাঁদো কাঁদো মুখ করে বসে আছে। নীলের বাবা মা আসলেন। নীলের মা বললেন “বাবা নীল” নীল ক্ষেপে গেলো। হুংকার দিয়ে বলল “ওই নীল ডাকো কেন?” নীলের বাবা সহজ ভঙ্গিতেই বললেন” তোকে নীল ডাকবে না তো কাকে ডাকবে”

_আমি কী জানি কাকে ডাকবা? আমাকে নীল ডাকবা না। “প্লেট হাত থেকে রেখে বাবা মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে বলল”আমার নাম নীল কে রাখছে? ” নীলের মা বললেন”

_আমি না তো বাবা রাখছে। “নীল রাগি লুকে তাঁর বাবার দিকে তাকালো। নীলের বাবা ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে বললেন” কিছু কী হইছে বাবা নীল?”

_উফফফফফফ। আমাকে কিছু বলতে হলে একদম এই নাম ব্যবহার করবা না। আর নীল কী নাম রাখছো হ্যাঁ? আর নাম নাই? লাল, হলুদ,বেগুনি,সবুজ,টিয়া কত রং তো আছে। নীল রাখলা কেন? আরে কালা তো রাখতে পারতা। লোকে সুন্দর করে ডাক দিতো কালা ভাই।

_কিন্তু তুই তো সাদা হইছিলি বাবা তাই কালা রাখি নাই।

_তো নীল রাখলা কেন? নীল হইছিলাম? সাদা রাখলে কী হইতো। আমি কালা হইয়া যাইতাম? যাও বের হও আমার ঘর থেকে। 

 

[

 

“নীলের বাবা মা আর দাঁড়ালেন না। নীলের রাগ উঠে গেছে মানে এখন সে যা মুখে আসবে তাই বলবে। এখন যাওয়াই ভালো। পড়ে আবার আসবেন। বাসায় একটা নীল রংয়ের ভূত দেখতে দেখতে ভয়ে মরে যাচ্ছেন কিছুদিনের জন্য বাইরে কোথাও যেতে চান।

 

নীলের বোন (নীরা) ছাদে দোলনায় বসে বসে বই পড়ছে। তাঁর পোষা বেড়াল একটু পর পর এসে তাঁর কোলে উঠছে তো এদিকে দৌঁড়াচ্ছে ওইদিকে দৌঁড়াচ্ছে। বেড়ালটা সাদা রংয়ের। নীরার সব থেকে প্রিয় বন্ধু হচ্ছে এই বেড়াল। বেড়ালটার নাম রেখেছে ক্যাটবেরী। নীরা যখন কোলে নিবেন না তাঁর পিছু পিছু হাঁটবে। শুধু নীরা নয় তাঁর ঘরের সব মানুষের কোলে উঠতে পছন্দ করে ক্যাটবেরী। নীরার মনোযোগ বইয়ের দিকে, বেড়ালটা নেমে চলে গেলো তাঁর খেয়াল নেই।

 

আঁচল রান্না শেষ করে এসে বসেছে মাত্র। নীল এখনো প্লেট সামনে রেখে বসে আছে। ডিম খেয়ে ফেলছে ভাত ছাড়াই। নিলার মনে মনে হাসি পাচ্ছে। আসলে সে নীলকে কিচেন থেকে তাড়ানোর জন্য এই ব্যবস্থা করেছে। আর পাঁচদিন পরে নীলের বার্থডে। তখন সে নীলকে অনেক বড় সারপ্রাইজ দেবে। ভেবেই আনন্দ লাগে আঁচলের, যখন নীল জানবে সে আঁচল তখন কেমন রিয়েক্ট করবে। একটা সাদা বেড়াল এসে দৌঁড়ে ঘরে ঢুকলো। আঁচল প্রথমে কিঞ্চিৎ ভয় পেয়ে যায়। লাফ দিয়ে খাটে পা তুলে। বিড়াল এসে নীলের কোলে উঠে। আঁচল বলল” এটা কার বিড়াল?” নীলের মনে হলো আঁচল ভয় পেয়েছে। তারমানে বেড়াল দেখিয়ে এখন থেকে আঁচলের থেকে বাঁচা যাবে। নীলের মাথায় শয়তানি বুদ্ধি আসতেই বলল “এটা আমার বিড়াল। জানো,এটা আমার খুব প্রিয় বিড়াল।

_কই আগে তো কখনো দেখিনি।

_কেমনে দেখবে, ওঁর তো আলাদা একটা ঘর আছে।

_অহ আচ্ছা।

বেড়ালটা নীলের কোল থেকে নেমে বেরিয়ে গেলো। একটুপর আঁচলও বেরিয়ে গেলো। নীলের বউ বেড়াল ভয় পায় ভাবতেই তাঁর লুঙ্গিডান্স দিতে ইচ্ছে করছে। আহ এখন থেকে সে বেড়াল দেখিয়ে ভয় দেখাবে। খুশিতে নীল কলার নাড়াতে নাড়াতে বলল ” নীলকে ভয় দেখানো,নীলকে ধমক দেওয়া। নীল একাই একশো হতে পারলো না তো কি হইছে। নীলের একটা বেড়াল আছে।

 

নীরা বই বন্ধ করে পায়ে জুতা পড়তে যাবে তখন দেখলো নীল রংয়ের একটা বেড়াল তাঁর দিকে দৌঁড়ে আসছে। নীরা আহহহহহ বলে চিৎকার দিয়ে জুতা বই সব ফেলে দৌঁড় দিলো। নীরা ছাদের চারদিকে দৌঁড়াচ্ছে বেড়াল তাঁর পিছু পিছু দৌঁড়াচ্ছে। নীরার চিৎকার শুনে তাঁর বাবা মা সবাই আসলেন ছাদে। নীরা সিঁড়ির দিকে দৌঁড় দিলো। বিড়ালও সেদিকে দৌঁড় দিলো। সিঁড়ির ওখানে নীলের বাবা মা ছিলেন তাঁরাও দৌঁড় দিলেন। উনারা আগে আগে বেড়াল পিছে পিছে দৌঁড়াচ্ছে। নীলের বাবার লুঙ্গি পায়ের সাথে আটকে গিট খুলে গেলো। গেঞ্জি দাঁতে কামড়ে লুঙ্গি পেছাতে পেছাতে দৌঁড়াচ্ছেন। মোটা পেটটা নড়ে নড়ে উঠছে। নীলের মা দৌঁড়াচ্ছেন আর বলছেন ” লা হাওলা লাকুয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিউল আজিম।” দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে উপর থেকে নিচে চলে আসলেন। বেড়াল নীরার দিকে দোঁড়াচ্ছে। সে তাঁর বেড়ালটা চিনতে না পেরে বার বার ক্যাটবেরী ক্যাটবেরী বলে ডাকছে। যতই ক্যাটবেরী ডাকছে বেড়াল ততই তাঁর দিকে যাচ্ছে। মা মেয়ে বাপ মিলে ঘরের একোণা থেকে ওকোণায় দৌঁড়ে যাচ্ছেন। নীল ঘর থেকে বের হয়ে দেখলো এই কান্ড । কিসের জন্য দৌড়াচ্ছেন জিজ্ঞেস করার আগেই নীলের চোখে পড়লো বেড়ালটা।  নীল নিচে আসলো। সে নিচে আসতেই তাঁর দিকে এগিয়ে এলেন তাঁর বাবা মা বোন। পিছু পিছু দৌঁড়ে আসলো বেড়ালও। রাগান্বিত বেড়াল রাগে শরীরের পশম দাঁড়িয়ে আছে। নীল বেড়াল দেখতে কত ভয়ানক লাগছে। বিড়ালটা ভয়ানক এক অদ্ভুত স্বরে বললো “মিউউউউউ” সাথে সাথে নীল লাফ দিয়ে উঠে “ভূউউউউউউত” বলে দৌঁড় দিলো।

 

চলবে…..।

 

পর্ব ছোট হওয়ার জন্য সরি।❤

 

গল্পটি পড়ে কেমন লাগলো তা আলোচনা /সমালোচনায় করতে পারেন আমাদের এই গ্রুপে👇

 

নীল আঁচল

পর্ব ৪

সুলতানা সিমা

 

একটা সোফার পিছনে লুকিয়ে আছে, নীলের বাবা মা বোন আর সে। নীলের বাবা হাঁপাচ্ছেন। আর তাঁর মা তো এক নাগাড়ে দোয়া পড়ে যাচ্ছেন। নীরা ফ্যাসফ্যাস করে কান্না করছে। নীল দু হাত জড়ো করে ভয়ে কাঁপছে। এদের এমন কান্ড দেখে আঁচল রুমে দরজা লাগিয়ে ফ্লোরে গড়াগড়ি খেয়ে হাসছে। তাঁর হাসির শব্দ দেয়ালে লেগে ভয়ানক প্রতিধ্বনি হচ্ছে। চেষ্টা করেও সে হাসি থামাতে পারছে না। নীলের বাবার লুঙ্গি পেছাতে পেছাতে দৌঁড়ানোর দৃশ্যটা মনে পড়লেই তাঁর পেট ফেটে হাসি আসছে। নীলের মায়ের জোরে জোরে দোয়া পড়ার কথা মনে হলে তো, হাসি আর থামছেই না। আঁচলের হাসির শব্দ শুনা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কোনো ভূত হাসছে। নীলের মা কাঁপা কাঁপা গলায় বলছেন “লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তুম মিনাজ্জুয়ালিমিন।” নীলের বাবা বললেন “এ এ এই নীল। ব ব বউমা কে ডাক দে।” নীল ক্ষেপে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল “চুপচাপ মুখ বন্ধ করে বসে থাকো। ওই মেয়েটা তো বেড়ালের রূপ ধারন করেছে।” নীরা কেঁদে কেঁদে বলল “ক্যাটবেরী রে ওই ক্যাটবেরী, তুই কই গেলি রে ক্যাটবেরী” নীরার কথা শেষ হতে না হতেই মিউউউউউ বলে বেড়াল এসে ঝাঁপিয়ে পড়লো তাঁদের উপর। সবাই এক সাথে “ওরে বাবা রেএএএ” বলে যে যেভাবে পারে সেভাবে দৌঁড় দিলো। নীল আগে আগে দৌঁড়াচ্ছে, নীলের পিছু পিছু সবাই। নীল গিয়ে তাঁর রুমে ঢুকে দেখল আঁচল দাঁড়িয়ে আছে। পিছনে তাকিয়ে দেখল বেড়াল আছে কিনা। বিড়াল দৌঁড়ে আসছে। নীল আঁচলের পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো। নীলের বাবা মা বোন সবাই এসে আঁচলের পিছনে গেলো। নীলের মা এখনো দোয়া ইউনুস পড়ছেন। বেড়াল এসে আঁচলের সামনে দাঁড়ালো। যেহেতু এটা পোষা বেড়াল। আর আঁচল তাকে একটু আগে ধরে রঙে রাঙানোর জন্য অত্যাচার চালিয়েছে। তাই আঁচলকে দেখে সে উল্টো পথে দৌঁড় দিলো। আঁচল পিছন ঘুরে তাকালো। সবাই জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আঁচল বলল”

 

 “ছিঃ ছিঃ ছিঃ,আমার শশুড় বাড়ির মানুষ এতো ভিতু। সামান্য একটা বেড়াল দেখে দৌঁড়ায়। আর স্বামী সেও কিনা পুরুষ মানুষ হয়ে কোনো সাহস নাই।” বলেই আঁচল রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আঁচল যাওয়ার পরে সবাই যে যার রুমে চলে গেলো।  সারাদিন আর কেউ রুম থেকে বের হলো না। রাতে আঁচল সবার রুমে রুমে নিয়ে খাবার দিয়ে আসলো। আঁচলের মনে হলো সে খুব বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে। বেড়াল ধরে নিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে একটা টাওয়াল নিয়ে মুছে দিয়ে,সেটা ছেড়ে দিলো। 

 

ঘড়ির কাঁটায় রাত দেড়টা বাজে। ফোনের ভাইব্রেশনের কাঁপানো শব্দে ঘুম ভেঙে গেল আঁচলের। ফোন হাতে নিয়ে দেখলো নীল কল দিচ্ছে। পাশ ফিরে তাকাল আঁচল। নীল বিছানায় নেই। ফোন হাতে নিয়ে বারান্দায় উঁকি দিলো। কারো ছায়া দেখা যাচ্ছে। আঁচল ফোন কেটে দিলো। ফোন কাটার পরে মেসেজ আসলো “তোমায় খুব মনে পড়ছে।” আঁচল মৃদু হাসলো। নীল যে এখনো তাঁকে ভালোবাসে এতে কোনো সন্দেহ নেই। কোনো রিপ্লাই না করে ফোন সুইচঅফ করে ঘুমিয়ে গেলো সে। আর মাত্রই তো পাঁচদিন। তারপর তাঁরা আবার আগের মতো এক হয়ে যাবে। তখন না হয় ভালোবাসা বাসি হবে।

 

সকালে ঘুম থেকে উঠতে আঁচলের একটু দেরি হলো। ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া ভেঙ্গে ওয়াসরুম গেলো।  ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হয়েই সে থমকে গেলো। একজন হুজুর ধোঁয়া উড়ানো বাটি হাতে নিয়ে ঘরের চারদিকে ঘুরছেন আর বিরবির করে কী সব পড়ছেন।  আঁচলের যে কী পরিমাণ হাসি পাচ্ছে, তা বলে বুঝাতে পারবে না। লোকটাকে দেখেই লাগছে সে একটা ভন্ড। আর তাঁর ভিতু স্বামীর বাড়ির লোক কিনা এই ভন্ডকে আনছে ভূত তাড়াতে? আঁচল রাগি চোখে হুজুরের দিকে তাকিয়ে তাকলো। 

 

খুব মনোযোগ দিয়ে হুজুর উনার মন্ত্র পড়ছেন আর ঘরের চারদিকে ঘুরছেন। হঠাৎ হুজুরের চোখ গেলো  আঁচলের দিকে। নীল একটা মানুষ দাঁড়িয়ে আছে, কোমর সমান চুলগুলা খোলা। চোখগুলা কেমন ভয়ানক লাগছে। হুজুর হাতের বাটি ফেলে “ওরে বাবা রে ভূত নেমে এসেছে” বলে দৌঁড় দিলেন সদর দরজার দিকে। নীলের বাবা মা নীরা নীল তাঁরা সিঁড়ির দিকে না তাকিয়ে, তাঁরাও হুজুরের পিছু দৌঁড় দিলো। 

 

দরজায় ঢুকার পথে গিয়ে কে কার আগে বের হবে এ নিয়ে সবাই ধাক্কাধাক্কি লেগে গেলো। এসব দেখে আঁচল উচ্চ স্বরে হা হা করে হেসে উঠল। যা সবার ভয় দ্বিগুণ পরিমাণে বেড়িয়ে দিলো। ধাক্কাধাক্কিতে হুজুর নিচে পড়ে গেলেন। হুজুরের উপর দিয়ে দৌঁড়ে সবাই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। হুজুরের এক পা থেকে জুতা খুলে গেছে। লুঙ্গির গিট খুলে গেছে। তিনি উঠে এক হাতে জুতা অন্য হাতে কোমরে লুঙ্গি চেপে দৌঁড় দিলেন। নীলের বাবা মা আর হুজুর জোরে জোরে পড়ছেন “লা হাওলা লা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিউল আজিম।” 

 

পাশের বাসার ছাদে কয়েকটা মেয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। এদের এসব দেখে তাঁরা ভাবলো ভূমিকম্প হচ্ছে। তাঁরা ভূমিকম্প ভূমিকম্প বলে নিচে নামতে লাগলো। ওদের দেখাদেখি ওই বাসার সবাই বেড়িয়ে আসলো। নীলের মা হুজুরকে বললেন “আমাদের বাসা থেকে এদের বাসায় চলে গেছে।” জুহুর লুঙ্গি পেছানোর জন্য জুতা হাত থেকে রাখলেন। আঁচল ছাদে উঠছিলো ওদের কান্ড দেখার জন্য। হুজুরের চোখে পড়ে গেলো। “ওরেএএএএএ ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে।” বলেই লুঙ্গি ছেড়ে দৌঁড়। উনার দৌঁড় দেখে নীলরাও দৌঁড় দিলো। এদের দৌঁড় দেখে উপস্থিত সবাই দৌঁড় দিলো। লুঙ্গি না থাকায়। পাঞ্জাবীর দুই দিক ধরে আগে আগে দৌঁড়াচ্ছেন হুজুর, আর উনার পিছে পিছে সবাই। একদল মানুষ ভাবলো সবাই হুজুরকে মারার জন্য দৌঁড়াচ্ছে। তাঁরা এসে হুজুরকে ধরে এলোপাতাড়ি মারতে লাগলো। পরিস্থিতি বিগড়ে গেছে দেখে নীলের বাবা পিছন ঘুরে দৌঁড় দিলেন। যারা তাঁদের পিছু পিছু দৌঁড়াচ্ছিলো। তাঁরা একজন আরেকজনকে জিজ্ঞেস করছে। “এই এতোক্ষণ সবাই দৌঁড়ালাম কেন?” ওই লোকটা বলল “কী জানি আমিও তো জানিনা কেন দৌঁড়ালাম।

 

চলবে….।

 

এই গল্পটা লেখার সময় প্রচুর হাসি পায়। তাই প্রচুর বকা শুনি। যার কারণে পর্ব বড় করে দেওয়া সম্ভব হয় না। সরি।❤

 

গল্পটি পড়ে কেমন লাগলো তা আলোচনা /সমালোচনায় করতে পারেন আমাদের এই গ্রুপে👇

 

নীল আঁচল

শেষ পর্ব

সুলতানা সিমা

 

[কেউ কোনো খাবার খেতে খেতে পড়বেন না।]

 

 

আজ আঁচলের ভিতুর ডিমের জন্মদিন। মানে তাঁর স্বামী নীলের জন্মদিন। নীলের বাবা মা বোন তো তিনদিন ধরে ঘর থেকেই বের হননি। নীলের মা সারাদিন তাসবীহ হাতে নিয়ে তাসবীহ পড়েন। নীরা তো এখন আমলদার হয়ে গেছে। পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়ে। আঁচল কাল সারাদিন বসে বসে লিষ্ট করেছে । কী কী লাগবে না লাগবে। যেহেতু সে নীলকে সারপ্রাইজ দিবে তাই বাজারটা সে করবে। আর নীল বাইরে বের হবে বলেও তাঁর মনে হয়না। একটু আগে আঁচলের তিনটা কাজিন এসেছে। তিনজনই আঁচলের সমবয়সি৷ সবাই গেস্ট রুমে আছে। তাঁদের এখনো কেউ দেখেনি। দেখবে কিভাবে সবাই তো রুম থেকেই বের হচ্ছেনা। বিকালের দিকে নীলের বাবা মা নীরা নীল সবাই যে যার রুমে ঘুমাচ্ছে। আঁচল এই ফাঁকে বাজারে চলে গেলো। যেহেতু সে নীল রঙে লেপ্টে আছে, তাই বোরকা পড়ে হাত মুজা পা মুজা লাগিয়ে গেলো। 

 

আঁচলের কাজিনরা গেস্ট রুমে টিভি দেখছে। একজন বলে উঠল “এই চলনা হরর মুভি দেখি।” তাঁর কথায় সবাই রাজি হলো। মুভি দেখা শুরু করলো সবাই। একজন টিভির ভলিউম বারিয়ে দিলো। হরর মুভি দেখে ভয় না পেলে কী চলে? নাইকা বের হতেই সবাই খুব জোরে হোঅঅঅঅঅঅ বলে চিৎকার করে উঠল। 

 

হঠাৎ এমন চিৎকারে নীলদের বাসার সবার ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম থেকে উঠে সবাই দৌঁড়ে যে যার রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। সবাই সিঁড়ির কাছে এসে একজন আরেকজনকে জাপ্টে ধরে থরথর করে কাঁপতে লাগলো। অনেক্ষণ কোনো শব্দ শুনা যায়নি দেখে কিছুটা ভয় কেটে গেলো সবার। নীলের বাবার খুব চাপ দিছে তাই তিনি ওয়াসরুমে গেলেন। কোমডে বসা মাত্রই ভূতের অদ্ভুত এক চিৎকার শুনা গেলো। সাথে উঠে তিনি হাফপ্যান্ট টানতে টানতে বেড়িয়ে আসলেন।

 

 নীল তাঁর মা বোনকে ফেলে তাঁর বাবার রুমের দিকে দৌঁড়ে গেলো। নীলের মা লুঙ্গি ধরার মতো একহাতে শাড়ি ধরে এক হাতে নীরাকে ধরে দৌঁড়াতে দোঁড়াতে দোয়া পড়তে লাগলেন “লা লা লা লা ” ভয়ে উনি মুখ থেকে লা হাওলা লাকুয়াতা,,, বের করতে পারছেন না।

 

 সবাই গিয়ে নীলের বাবা মায়ের খাটের নিচে ঢুকলো। নীলের বাবা ঢুকতে পারছেন না সবাই টেনে ঢুকালো। একের পর এক ভূতের চিৎকার ভেসে আসছে। নীলের মা ভয়ের চোটে ভুলবাল দোয়া পড়ছেন। নীলের বাবা পেটে হাত দিয়ে কাচুমাচু করছেন। উনার বায়ু চাপ পাচ্ছে। একটুপরে টাস করে পাঁদ মারলেন। সবাই নাক ছিটকে তাকালো। উনি মুখটা এমন করে রাখছেন যেন উনি অনেক কষ্টের মাঝে আছেন। 

 

কিছুক্ষণ পরে খাটের নিচে থাকা অসম্ভব হয়ে গেলো। নীলের বাবার বায়ু ত্যাগের গন্ধে সবার দম বন্ধ হয়ে আসছে। নীল নাকে ধরে তাঁর মাকে বলল “আম্মু এই বেটাকে বের করে দাও তো।” নীলের বাবা অসহায় গলায় বললেন “না না আর মারবো না।” মারবেন না বলা মাত্রই উনার এরেকটা পেলো। অনেক কষ্টে চেপে রাখলেন। কিছুক্ষণ পরে আবার আসলো। নীলের বাবা পাদ আটকাতে মুছড়াচ্ছেন। দাঁতে দাঁত চেপে জোর করে আটকাতে চাইছেন কিন্তু পারলেন না। এবারেরটা আরো শব্দ করে বের হলো। নীল আর নীরা নাক চেপে খাটের নিচ থেকে বেরিয়ে আসলো। নীলের মাও আর বসে থাকতে পারলে না তিনিও বেরিয়ে আসলেন। কেউ রুম থেকে বের হলোনা। সবাই রুমের ভেতর থাকলো। নীলের বাবা খাটের নিচ থেকে মাথা বের করলেন। অনেক্ষণখানি বের হয়ে আর বের হতে পারলেন না। নীলকে ডাক দিয়ে বললেন “বাবা নীল একটা টান দে” নীল রেগে বলল “এখন বের হবা কেন ওখানে বসে পাদো।” নীলের বাবা কাতর গলায় বললেন “বাবা বের কর প্লিজ। আর একটাও মারিনি বিশ্বাস কর।” নীল তাঁর বাবাকে টেনে বের করলো। উনি বের হয়ে বসলেন মাত্র একসাথে অনেকগুলা মেয়েলী কন্ঠে চিৎকার ভেসে আসলো। নীলের মা খাটে উঠে বসছিলেন মাত্র। চিৎকার শুনে “লা হাওলা লা হাওলা লা লাওলা বলে খাটের নিচে ঢুকতে লাগলেন।  নীরা নীলও আবার খাটের নিচে ঢুকে পড়লো। কিন্তু নীলের বাবা ঢুকতে পারছেন না। নীলকে টান দিতে বললেন নীল টান দিলো না। নীলের মা টান দিতে গেলে নীল বলল ” এই বেটার পাছা ঢুকাতে দিবানা। খাটের বাইরে থাকুক” নীলের বাবা কাতর স্বরে বললেন “বাবা আর মারবো না। একটা টান দে।” নীল টান দিলোনা। উনি এভাবেই থাকলেন, অর্ধেক খাটের ভেতর অর্ধেক বাইরে। কিছুক্ষণ পরে নীলের মা টাস করে পাদ মেরে দিলেন। নীল রাগি লুকে উনার দিকে তাকালো। খাটের তল থেকে বের হওয়ার ভয়ে তিনি না সূচক মাথা নাড়াতে নাড়াতে বললেন,”আমি না তোর বাপ মারছে।” নীল তাঁর বাবার দিকে রাগি লুকে তাকালো। তিনি বললেন “আমি মারিনাই আল্লাহর কসম।” চুপচাপ বসে থাকলো সবাই।

 

 ভূতের হুংকার শুনা যাচ্ছে। এক ভারি গলায় ফ্যাসফ্যাস করে কেউ বলছে “আমি চার হাজার বছরের পুরোনো আত্মা। আমার থেকে বাঁচা সহজ নয়।” তখনই নীলের বাবার পিঠের উপর এসে ক্যাটবেরী বসলো। উনি চিৎকার দিয়ে উঠলেন। নীল ধমক দিয়ে বলল “চুপ চুপ একদম আওয়াজ করবা না।” নীলের বাবা কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন “নী নী নীল আমার পিঠের ওপর নরম তুলতুলে কী একটা বসে আছে।” কথাটা শুনে নীল তাঁর বাবাকে ধাক্কিয়ে বের করে দিতে লাগলো। উনি আটকে থাকতে নীলের মাকে আঁকড়ে ধরলেন। নীলের মা কাঁপতে কাঁপতে শুধু পড়ছেন “ইন্নি কুন্তুম ইন্নি কুন্তুম ইন্নি কুন্তুম” ভয়ে উনি সব দোয়া ভুলে গেছেন।

 

অনেক্ষণ পরে শব্দগুলা আর শুনা যাচ্ছে না। সবাই আস্তে আস্তে বের হলো। নীলের বাবা আগে ওয়াসরুমে গেলেন। উনি ওয়াসরুম থেকে আসার পরে সবাই এক সাথে রুম থেকে বের হলেন। নীলের মা তাসবীহ হাতে নিয়ে কিচেনে গেলেন। নীরা ডাইনিং টেবিলে পানি খেতে গেলো। নীলের বাবাও এসে টেবিলে বসলেন। নীল ভয়ে ভয়ে নিজের রুমে গেলো। কালো বোরকা পড়া আঁচলকে দেখে “ওরেএএএ বাবারেএএএএ” বলে উল্টা পথে দৌঁড় দিলো। নীল দৌঁড়ে এসে নিচে নামছে দেখে নীরা আর তাঁর বাবা সব কিছু ফেলে ছুঁড়ে সদর দরজার দিকে দৌঁড় দিলেন। নীলের মা কিচেন থেকে ওদের দৌঁড় দেখে হাতের কুন্তি নিয়েই তিনিও দৌঁড়ে বেরিয়ে আসলেন। 

 

নীল আর নীরা একটা পিলারের আড়ালে লুকালো। নীলের বাবা মা দৌঁড়ে এসে ছেলের মেয়ের পিছনে লুকালেন। নীলের মায়ের হাতের গরম কুন্তি নীলের পিঠে লাগলো। নীল লাফ দিয়ে উঠতেই তাঁর মায়ের হাতের কুন্তি গিয়ে পড়লো তাঁর বাবার উপর। উনি আহহহ বলে লাফ দিয়ে উঠলেন। নীল আর তাঁর বাবা দিলো দৌঁড় পুকুরের দিকে। নীলের মা নীরাকে টেনে দৌঁড়ে নীলদের পিছু পিছু গেলেন। সাথে উনার দোয়া তো আছেই। 

 

 আঁচল এবার প্রচন্ড রেগে গেলো নীলের উপর। এই ভিতুটাকে সে এতো ভালোবাসে ভাবতেই তাঁর রাগ উঠছে। ছাদে উঠে গিয়ে দেখলো নীলরা পুকুর পাড়ে কাচুমাচু হয়ে বসে আছে। আঁচল রুমে এসে তাদের রুমটা খুব সুন্দর করে সাজালো। আঁচলের বোনরা সবাই তাকে হেল্প করলো। ১১ বাজে। আঁচল টর্চ লাইট হাতে পুকুর পাড়ে গেলো ভিতুর দলদের আনতে। কিন্তু তাকে দেখা মাত্রই নীলরা সবাই অন্যদিকে দৌঁড় দিলো। বাড়ির ডান পাশে ঘুরে এসে বাড়িতে ঢুকলো সবাই। আঁচল কপাল চাপড়ালো। সে এলো ঘরে নিতে আর সবাই তাকে দেখে উল্টা পথে দৌঁড়ে গিয়ে ঘরে ঢুকলো। আঁচল চলে গেলো তাঁর বাবা মাকে আনতে।

 

বাসায় এসে নীল ও তাঁর বাবা মা বোন সবাই অবাক হয়ে চারিদিকে তাকালো। কত সুন্দর করে চারদিক সাজানো হয়েছে। রুমের ডানদিকে অনেক সুন্দর করে ফুলদিয়ে লেখা হ্যাপি বার্থডে ভিতুর ডিম। অনেকগুলা রঙ বেরঙের বেলুন দেয়ালে বাঁধনো। কেউ জানেনা কী হচ্ছে এখানে। নীলের মা মনে মনে ভয় পাচ্ছেন। এগুলা জ্বীন-ভূতের কাজ কিনা ভেবে।

 

অনেক্ষণ পরে দরজা খুলার শব্দে সবাই সদর দরজার দিকে তাকালো। দরজা একটু একটু করে পুরোটা খুলতেই চোখে ভেসে উঠল আঁচলের মুখ। এক পা এক পা করে এসে আঁচল ঘরে ঢুকলো। দুধে আলতা গায়ে নীল রংয়ের একটা শাড়ী। লম্বা চুল গুলা খুলা, দু’হাত ভরে নীল চুড়ি। দেখতে একদম পরী লাগছে। নীলের চোখে মুগ্ধতা নেমে আসলো। আঁচলের মায়াবী চোখ দুটি তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে। নীল আঁচলের পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকালো। এই শাড়ীটা আঁচলকে সে ওইদিন দিয়েছিলো যেদিন তাদের ব্রেকআপ হয়। আঁচল নীলের সামনে এসে দাঁড়ালো। নীলের বাবা মা নীরা সবাই আঁচলের দিকে তাকিয়ে আছেন। উনারা তাকে চিনতে পারছেন না। দেয়ালের ঘড়িতে ১২টার ঘন্টা বাজলো। আঁচল নীলকে বলল “হ্যাপি বার্থডে আমার ভিতু স্বামী।” আঁচলের কথায় সবার কপালে ভাঁজ পড়ল। নীল বলল”স্বামী মানে?” আঁচল বলল “নীল নীল নীলাঞ্জনা,নীল রংয়ের ভূত। নীল মেয়েকে বিয়ে করার ভূত আশা করি মাথা থেকে চলে গেছে।” নীল এখনো হাঁ হয়ে আছে তাঁর মাথায় কিছুই ঢুকছে না। আঁচল বলল “বুঝনি?” নীল না সূচক মাথা নাড়ায়। আঁচল ডাক দিলো তাঁর বাবা মাকে। আঁচলের বাবা মা আসতেই সবাই ৪৪০ ভোল্টের শকড খেলো। নীল আঁচলকে বলল, 

_এ এরা তো আমার শশুড় শাশুড়ী।

_হ্যাঁ। আমার বাবা মা তো তোমার শাশুড় শাশুড়ী হবে।

_কিন্তু এরা তো নীলার বাবা।

_আমিই তো সেই নীল নীলা।

_কিইইইইইইই?” নীলের বাবা মা নীল সবাই অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছে। নীল অবাক হয়ে আঁচলের দিকে তাকালো। তারপর বলল “তুমি এতোকিছু করেছো?” আঁচল বলল”আমি কিছুই করেনি। আমি শুধু তোমার মাথা থেকে নীল রংয়ের ভূত ছাড়াতে চাইছিলাম। কিন্তু তোমার যে উল্টো ভূতে ধরবে আমি কী জানতাম?” নীল ধপ করে সোফায় বসে পড়লো। প্রচন্ডরকমের শকড খেয়েছে সে। এতোদিন তাহলে শুধু শুধু দৌঁড়ের উপির ছিলো? নীলের বাবা মা বললেন” তারমানে আমাদের বাড়িতে কোনো ভূত টূত নাই?” আঁচল মুচকি হেসে না সূচক মাথা নাড়ালো। নীলের মা বললেন” দেখেছেন আমি আগেই বলেছিলাম। ভূত বলতে কিছু নেই।” নীরা বলল” তুমি এটা কখন বললে আম্মু।”

 

_আমার একটা প্রশ্ন আছে।” সবার কথার মাঝখানে বলে উঠল নীল। সবাই থেমে গেলো। নীল আঁচলের সামনে দাঁড়িয়ে বলল “আচ্ছা তুমি নীল হইছিলা কীভাবে?

_রং লাগিয়ে।

_তারমানে তুমি এতোদিন গোসল করো নাই?

_অবশ্যই করেছি।

_তাহলে রং ছুটে নি কেন? বোকা বানাও আমায়? নীলকে বোকা বানাও? ” খুব ভাব নিয়ে বলল নীল। আঁচল রেগে গেলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “একটা বেড়াল দেখে যে পুরুষ দৌঁড়ায় তাঁর এভাবে ভাব দেখানো মানায় না। তুমি পুরুষ তো? আমার না সন্দেহ হচ্ছে।” নীল চোখ বড় বড় করে তাকালো। আঁচল বলল “আচ্ছা তুমি এতো ভিতু কেন বলোতো? কোথায় তুমি সবাইকে সাহস দিবে উল্টো তুমি সবার পিছু পিছু দৌঁড়াও।” নীল মাথা নিচু করে ফেলল। আঁচল নীলের বাবা মাকে সালাম করলো। তারপর সবাইকে বলল “আপনারা সবাই আমার জন্য অনেক ভয়ে ছিলেন। কিন্তু বিশ্বাস করেন আপনারা শুধু শুধু ভয় পাচ্ছিলেন। আমি আপনাদের কখনো ভয় দেখাতে চাইনি। আমি যা করেছি নীলের পাগলামো দূর করতে করেছি।” নীলের মা আঁচলকে জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বললেন “মাশা আল্লাহ। আমার বউমাটা দেখি অনেক মিষ্টি।” আঁচল মৃদু হাসলো। তারপর নীলের হাত ধরে কেকের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। নীলের কাজিনরা নীলের পরিবারের সবাই এসে দাঁড়ালেন। নীল কেক কাটলো। প্রথমেই আঁচলের দিকে বাড়িয়ে দিলো। ঠিক তখনই টাস করে একটা শব্দ হলো। নীল কেক ফেলে দৌঁড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো। নীলের বাবা মা নীরা তারাও নীলের পিছন পিছন দৌঁড়। নীলের মা দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে বলছেন “লা হাওলা লাকুয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিউল আজিম”। “এদিকে আচমকা এমন দৌঁড় দেখে আঁচলের বাবা মা বোকার মতো তাকিয়ে থাকেন। আর তাঁর কাজিনরা হাসতে হাসতে ফ্লোরে গড়াগড়ি খায়।

 

সমাপ্ত।

 

অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।❤❤

 

যারা আগের রম্য অনুগল্পের লিংক চেয়েছিলেন❤

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।