.১

বেসিনের সামনে দাড়িয়ে রক্ত মাখা হাত পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে করতে ফারহা তার ছোট ভাই রাফিদকে চেঁচিয়ে বলতে লাগলো,” ছোটু আমি ভার্সিটিতে যাচ্ছি তুই ঠিক টাইমে কলেজে চলে যাস৷” রাফিদ মুখে খাবার গুজে দিয়ে খেতে খেতে ফারহাকে বলতে লাগলো,” ওকে দি আমি টাইমলি চলে যাবো আর আমার আজ ফিরতে লেট হবে৷ আজ আরও দুটো নতুন টিউশনি পেয়েছি৷” 

ফারহা তার ছোট ভাইয়ের কথা শুনে দীর্ঘশাস ফেলে হাত পরিষ্কার করে রেডি হয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্য বেড়িয়ে গেল৷ যুদ্ধের আমলের পুরনো ভাঙাচোড়া বাড়িটার চিলেকোঠার রুমটা খুব কম রেন্টে ভাড়া নেই ফারহা রাফিদ৷ এই শহরে বলতে গেলে এই দুই ভাই-বোনের দুজন দুজনের ছাড়া আর কেউ নেই৷ তবে তাদের বাড়িওয়ালা দাদু আর দিদা তাদের নিজের নাতি নাতনীদের মত করে ভালোবাসে খেয়াল রাখে৷ 

ফারহা হেটে ভার্সিটিতে চলে যায় কারণ ফারহার বাড়ি থেকে তার ভার্সিটির দূরত্ব পনেরো মিনিটের তাই তাকে আর আলাদা করে রিকশা নিতে হয়নি৷ 

ফারহা ভার্সিটি পৌছাতে চারজন ছেলে মেয়ে ছুটে আসে ফারহার কাছে, আর এসেই একজন বলতে লাগলো,” এই এসেছেন আমাদের মহারানী ভিক্টোরিয়া৷ তা ম্যাম আপনার আজ এতো লেট করে আশার কারণ টা জানতে পারি?” মুখ বাকিয়ে বললো তনু যা দেখে ফারহা মুচকি হেসে বলে ,” দুপুরের রান্না টা সেরে আসতে একটু লেট হলো তনু৷”

ফারহার কথা শেষ হতে নেহাল ফারহার হাত ধরে তনু আর নিখিলের থেকে একটু দুরে নিয়ে গিয়ে বললো,” ফারহা সত্যি করে বল তোর আজ এত লেট হলো কেন? ” ফারহা তার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে রেগে নিখিলকে বলে,” বেশি বাড়াবাড়ি করছিস নিখিল৷ আমি আগেই বলেছি দুপুরের রান্না করতে একটু লেট হয়ে গেছে৷” 

নিখিল আবারও ফারহাকে কিছু বলতে নিয়েও বললো না৷ ফারহা রেগে লিখিল কে রেখে তনু নেহাল এর কাছে এসে দাড়িয়ে বললো,” ক্লাসে চল নাহার ম্যাম এর ক্লাস আছে আর এক মিনিট যদি লেট করি তাহলে ক্লাসে ঢুকতে দিবে না৷” ফারহার কথা শুনে সবাই তড়িঘড়ি করে ক্লাসের দিকে ছুট লাগালো৷ 

(২)

বিভৎস আগুনে পোড়া টুকরো করা লাশ দেখে উপস্থিত সব পুলিশ অফিসারের বমি আসার উপক্রম৷ এতটা নৃশংস ভাবে এই ব্যক্তিকে খুন করা হয়েছে যে লাশের টুকরো গুলো গুনে বোঝার উপায় নেই যে ঠিক কত গুলো টুকরো লাশটির করা হয়েছে৷ মেঘ মুখে মাক্স পড়ে টুকরো করা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লাশের কাছে গিয়ে খুনিকে ধরার ক্লু খুজতে থাকে৷ শহরে এই নিয়ে সতেরোটি খুন হয়েছে একি পেটেন্ট একই ভাবে তাই এই থেকে পুলিশ অফিসাররা ধারণা করে নিয়েছে যে বা যারা এই খুন গুলো করেছে তারা একই ব্যক্তি৷ তবে তাদের টার্গেট হচ্ছে তারা যাদের কালো জগতের সাথে সংযোগ আছে৷ তবে তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রমান না থাকায় মেঘ তাদের কে এরেস্ট  করতে পারেনি৷ তবে কে বেছে বেছে তাদের টার্গেট করছে? এর উওর মেঘের জানা নেই৷ 

মেঘ খুব ভালো করে খুজেও খুনির কোন ক্লু না পেয়ে রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো মেঘের তা দেখে হাবিলদার মুশফিক বলে ওঠে,” স্যার আবারও আজকে খুন হলো কে করছে এই খুন গুলো? আর খুনিটা কে? এটা যদি সল্ভ করতে না পারেন তাহলে হয়তো আপনার চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়বে৷” মেঘ অনেক কষ্টে তার রাগটা কন্ট্রোল করে হাবিলদার মুশফিককে বলে,” 

“লাশটার পোস্ট মোর্টেম এর জন্য নিয়ে যান আর রিপোর্টারদের সরে যেতে বলুন৷ ক্রাইম সিনের আসে পাশে যেন কেউ না আসে আমি এখুনি আসছি৷” এই বলে মেঘ সেখান থেকে পুলিশের গাড়ি নিয়ে চৌধুরী ভিলায় চলে আসে৷ বাড়িতে ঢুকতে ড্রইং রুমে বসে থাকা মেঘের বাবা শাফায়াত চৌধুরী বলে ওঠেন৷ ” মেঘ এবার নিজের হার মেনে নেও আর ইস্তফা দিয়ে আমাদের ফ্যামিলি বিজনেসে জয়েন করো৷ দেখছোই তো একের পর এক মার্ডার হচ্ছে অথচ তুমি একজন পুলিশ অফিসার হয়ে খুনিকে ধরতে পারছো না৷ কারণ এই প্রফেশন তোমার জন্য না৷” মেঘের বাবার কথা শেষ হতে মেঘ বলে ওঠে ,” ডোন্ট ওয়ারি আব্বু এবার তোমার ছেলে খুনিকে ঠিক ধরে ফেলবে কারণ খুনি তার নিজের অজান্তে লাশের পাশে তাকে ধরার ক্লু ফেলে গেছে৷” মেঘের কথা শুনে চমকে ওঠে শাফায়াত চৌধুরী৷ 

মেঘ আর কিছু না বলে স্টাডি রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়৷ মেঘকে এভাবে দরজা বন্ধ করতে দেখে মেঘের মা মিসেস মায়রা তার স্বামীর উদ্দেশ্য বলে ওঠে,” শাফু তুমি আমার ছেলের উপর ম্যান্টালি প্রেসার একদমি ক্রিয়েট করবে না৷ তুমি জানো তো মেঘ কতটা জেদি ছেলে৷ ও যেটা ঠিক মনে করবে ও সেটাই করবে৷”

” এই ভয়টাই তো আমি পাচ্ছি মায়রা কারণ এই কেসটা উপর থেকে যতটা না সহজ মনে হচ্ছে এই কেসটা তার থেকেও হাজার গুন জটিল৷ এতে যে আমাদের একমাত্র ছেলের প্রাণনাশের শংকা আছে৷”

” চিন্তা করো না শাফু আল্লাহ ঠিক আমাদের সন্তানকে রক্ষা করবে৷ ওহ যেটা বলতে এসেছিলাম আগামিকাল বেলা মামুনি কানাডা থেকে এখানে আসছে৷ আর আমাদের সাথে এখানে থাকবে৷”

” তাহলে তো কাল এয়ার্রপোর্টে মামুনিকে আনতে গাড়ি পাঠাতে হয়৷ সে নিয়ে তুমি চিন্তা করো না আর শোন শাহিন ভাই ফোন করে জানিয়েছেন অতি শিগ্রই তারাও বাংলাদেশে আসবে৷ “

” তাহলে ওদের রুম গুলো সার্ভেন্টদের বলে ক্লিন করিয়ে নিয়ো৷ কারণ ওরা এত বছর পর দেশে ফিরছে আমি চাই না আমার ছোট ভাই তার বউ আর মেয়ে এখানে কোন প্রব্লেম ফেস করুক আর হ্যাঁ নিজের ছেলেকেও বুঝাও যাতে এই দুই টাকার চাকরি ছেড়ে দিয়ে বিজনেসে জয়েন করে৷ ” মেঘের বাবার কথা শুনে মিসেস মায়রা বলে ওঠেন ,” ছেলে শুধু আমার একার না আর না আমি বাপের বাড়ি থেকে ছেলেকে নিয়ে এসেছি তাই বুঝানোর হলে তুমি নিজে গিয়ে বুঝাও৷ ” কথা গুলো বলে মিসেস মায়রা উঠে কিচেনের দিকে চলে যায় মেঘের জন্য কফি বানাতে৷ 

অন্যদিকে মেঘ দেয়ালে পিন দিয়ে লাগানো আগের ষোলটি লাশের ছবি গুলো খুব ভালো করে দেখতে লাগলো৷ আগের খুন গুলোর মত নিক্ষুত ভাবে এই খুনটাও করা হয়েছে৷ মেঘ একটা ছবির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে কিছু একটা ভেবে হুট করে আবার বেরিয়ে পরে৷

(৩)

ক্লাস করতে করতে তনু নেহাল ক্লাসের মধ্যে কথায় কথায় ঝগড়া শুরু করে দেয়৷ আর তা দেখে নাহার ম্যাম পুরো গ্রুপটাকে ক্লাস থেকে বের করে দেন৷ ক্লাস থেকে বের হয়ে ফারহা রাগী চোখে তনু আর নেহালের দিকে তাকিয়ে থেকে রেগে ক্যান্টিনের দিকে চলে যায়৷ ফারহাকে রাগতে দেখে নেহাল তনুর দিকে তাকিয়ে দাঁত কটমট করে তাকিয়ে বলে,” শাকচুন্নি তোর জন্য ফারহা দোস্ত রেগে চলে গেল৷ এত কি খেয়ে তুই ঝগড়া করিস হাহ! তোর মাথায় কি বুদ্ধিসুদ্ধি বলতে কিছুই নেই টোটালি মাথার ভেতর টা ফাঁকা! ” তনু আর সহ্য করতে পারলো না নেহালের কথা গুলো ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলো আর তা দেখে নেহাল হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থেকে এদিক ওদিক তাকিয়ে তনুর কান্না থামানোর চেষ্টা করে৷

” এই তনুর বাচ্চা এভাবে পোলাপাইনের মত কান্না করস ক্যান৷ দুনিয়ার সব পানি কি তোর ওই ট্যারা চোক্ষু দুইটায় জমা হয়ছে?”

নেহালে কথা শুনে তনু কান্না থামিয়ে দাঁত কটমট করে নেহালের দিকে তাকিয়ে বললো,” সালা বজ্জাত , অকম্মার ঢেকি কি কইলি তুই? আর এত শিক্ষিত ছেলে হয়েও তোর মুখের ভাষার এই ছিড়ি ছিঃ আর কি যেন বললি আমার মাথার ভেতর টা ফাঁকা? আমার চোখ ট্যারা? আমি শাকচুন্নি? দারা আজ তোর একদিন কি আমার একদিন …” অবস্থা বেগতিক দেখে নেহাল আর ওখানে দাড়িয়ে থাকার রিক্স না নিয়ে দৌড়ে ক্যান্টিনের দিকে দৌড় লাগায় আর পেছন পেছন তনু নেহালকে ধরার জন্য দৌড় লাগায়৷ 

মাঠে থাকা কয় একজন স্টুডেন্ট দাড়িয়ে সবটা দেখে আবার নিজেদের কাজ করতে লাগলো৷ কারণ এই স্টার গ্রুপের নিত্যদিনের কান্ড কারখানা দেখতে দেখতে এরা অভ্যস্ত ৷ ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট হয়েও টিনএইজারদের মত বিহেবিহার দেখে কেউ কেউ খুব বিরক্ত এই গ্রুপের উপর তবুও মুখের উপর কিছু বলার সাহস তাদের নেই৷ তনু, নেহাল, নিখিল, এরা তিনজন শহরের বড় বিজনেসম্যান এর ছেলে মেয়ে আর আয়মান হলো কলেজের এমডির ছেলে৷ প্রত্যেকে খুব ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট তবে ফারহা সবার থেকে এগিয়ে পড়াশুনা নিয়ে সব সময় সিরিয়াস৷ তবে এদের বন্ধুত্ব অনার্স প্রথম বর্ষ থেকে… এরা যেন একে অন্যের জান কারও সাহস হয় না এই গ্রুপটা নিয়ে কিছু বলার৷

ক্যান্টিনে বসে গান আর হইচই করছে ফারহার সব বন্ধুরা৷ তনু মুখ ফুলিয়ে বসে আছে নেহালকে কিছু বলতে পারেনি বলে৷ অবশ্য সেটা ফারহার জন্য সম্ভব হয়েছে৷ ক্যান্টিনে আসা মাত্র ফারহার চোখ রাঙানিতে দুজনে শান্ত হয়ে বসে পড়লো৷ নিখিল ফার্স্ট ইয়ারের একটা ছেলের থেকে গিটার এনে ফারহা কে বলে,” দোস্ত অনেক দিন তোর গান শুনি না আজ একটা গান শোনা প্লিজ৷ নিখিলের কথার তালে নেহাল আয়মান দুজনে জোর করে ফারহা মাথা নেরে সম্মতি জানিয়ে চোখ বন্ধ করে গাইতে লাগলো………

   তোমার নামের রোদ্দুরে,আমি ডুবেছি সমুদ্দুরে

            জানিনা যাবো কতদূরে এখনো,

  আমার পোড়া কপালে,আর আমার সন্ধ্যে সকালে

                          তুমি কেন এলে জানিনা এখনো,

  ফন্দি আটে মন পালাবার,বন্দি আছি কাছে এসে তোমার

  যদি সত্যি জানতে চাও তোমাকে চাই, তোমাকে চাই

   যদি মিথ্যে মানতে চাও,তোমাকেই চাই

     হলো শুরু সাতদিনের,এই খেলাধুলো রাতদিনের

      জানি বারণ করার সাধ্যি নেই আর আমার,

      তোমার নামের মন্দিরে,আর তোমার নামের মসজিদে

                        আমি কথা দিয়ে এসেছি বারবার

     বিন্দু থেকে সিন্ধু হয়ে যাও,তুমি ইচ্ছেমতো আমাকে সাজাও..

      যদি সত্যি জানতে চাও তোমাকে চাই,তোমাকে চাই

       যদি মিথ্যে মানতে চাও,তোমাকেই চাই

       মনের গভীরে,ঘুমের শরীরে তোমাকে নিয়ে ডুবে যাবো

         আমার কাছে কারণেরা আছে,নিজেকে আমি খুঁজেই নিবো

        যদি সত্যি জানতে চাই তোমাকে চাই,তোমাকে চাই

         যদি মিথ্যে মানতে চাও তোমাকেই চাই।

ফারহার গলায় গান শুনে উপস্থিত সবাই করতালি বাজিয়ে প্রশংসা করে তবে এতে ফারহার মুখের ভাবভঙ্গি  তেমন ভাবে প্রকাশ করলো না বিষয়টা নেহাল খেয়াল করে।ফারহার গলায় গান বরাবরই সবারই বেশ ভালো লাগে।এদিকে নেহাল ফারহার থেকে চোখ সরাতেই পারছে না।ফারহার গাওয়া গান শেষ কিন্তু এখনো একমনে ফারহার দিকে তাকিয়ে আছে।তনু পাশে তাকিয়ে নেহালকে এখনো স্থির থাকতে দেখে মাথায় গাট্টা মারে।নেহাল ধ্যান থেকে বের হয়ে আশেপাশে তাকিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে হাততালি দেয়।নেহাল মনে মনে ভাবছে ফারহা এটা তাকেই উদ্দেশ্য করে গাইলো তাই সে মনে মনে একটু খুশি।ফারহাকে নিয়ে মনে মনে তার একটা ভালোলাগা কাজ করে কিন্তু সেটা ফারহাকে কখনোই বুঝতে দেয় না।এদিকে আরো একজন ব্যক্তি ফারহার গান দূরে থেকে শুনে মুগ্ধ বিমোহিত।সে আর কেউ নয় মেঘ।মেঘ এখানে এসেছিলো কেসের তদন্ত করতে কিন্তু ফারহার সমধুর কন্ঠের গান শুনে তার পা ওখানেই স্থির হয়ে যায়।অবাক নয়নে ফারহার দিকে তাকায় আর ফারহার গাওয়া গান শুনতে থাকে।সবাই যখন ক্যান্টিনে বসে ছিলো হালকা নীলাভ চোখের অধিকারিণী কৃষ্ণ কালো কোমর ছড়ানো চুল৷ আর ঠোটের কোণে এক চিলতে মিষ্টি হাসি৷ ফারহাকে দেখে একদমি বাংলাদেশি মেয়ে মনে হয় না৷ মেঘ ফারহাকে দেখতে দেখতে এতটাই বিমহিত হয়ে পরে যে ফারহাকে দেখতে দেখতে ক্যান্টিনে প্রবেশ করে মেঘ৷ফারহা বাদে ক্যান্টিনে উপস্থিত সব মেয়ে মেঘের লুক দেখে বড়সড় একটা ক্রাশ খায়।মেঘ একটা সাদা শার্ট কালো প্যান্ট ইন করে রেখেছে।হাতে রিচ ওয়াচ পায়ে লোফার আর সানগ্লাসটা শার্টে ঝুলিয়ে রেখেছে আর তাতেই সব মেয়ে ফিদা।মেঘকে কেউই চিনে না উপস্থিত সবাই।সবাই ভাবছে হয়তো ভার্সিটির নতুন স্টুডেন্ট।মেঘকে দেখে ফারহার কোনো হেলদোল নেই।মেঘ সোজা ফারহার কাছে গিয়ে ফারহাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো,

“মিস আপনার নাম?”ফারহার কিছু বলার আগে নেহাল দাড়িয়ে মেঘকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো,”সেটা জেনে আপনি কি করবেন?নতুন কলেজে এসেছেন তাই জুনিয়র জুনিয়রের মতো থাকবেন সিনিয়রদের সাথে কোনো কথা নয়।”নেহালের কথা শেষ হতেই মেঘ মুচকি হেসে ওয়ালেট থেকে নিজের কার্ড টা সবার সামনে তুলে ধরে।সবাই কার্ডটা দেখে অবাক হয়ে যায়।কারন মেঘ হচ্ছে পুলিশ অফিসার।সবার ভুল ধারণা নিমেষেই ভেঙে গেলো।মেঘ কার্ডটা পকেটে রেখে আবারও ফারহার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো “তো মিস বলুন আপনার নাম কি”?

“ফারহা!আমার নাম ফারহা রহমান।”

“বাহ খুব সুন্দর নাম তো আপনার।তা আপনি তো বেশ ভালোই গাইতে পারেন।এছাড়া অন্যকিছু কি ভালো করতে পারেন?”বাঁকা হেসে কথাটা বললো মেঘ।ফারহা মেঘের কথা বুঝতে না পেরে ভ্রু কুচকে ফেলে।তনু মেঘকে জিজ্ঞেস করলো,

“স্যার হঠাৎ আপনি আমাদের ভার্সিটিতে?কিছু কি হয়েছে?”মেঘ কিছু বলতে যাবে তার আগেই হঠাৎ তার ফোন কল আসে।মেঘ কিছু না বলেই ওখান থেকে বের হয়ে যায়।কেউ কিছুই বুঝতে পারলো না মেঘের কি হলো।সবাই আর বেশি না ভেবে নিজেদের মতো ইনজয় করতে থাকে।কেউ না বুঝলেও ফারহা মেঘের চলে যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ মেঘ ফারহার চোখের আড়াল হতে ফারহা  তার বন্ধুদের বলে ,” তনু আমি ওয়াশরুম থেকে আসছি৷”

” ওকে তাড়াতাড়ি আসবি নাহলে কিন্তু তোর ভাগের চিকেন বার্গার  আমি খেয়ে ফেলবো৷” তনুর কথা শুনে নেহাল মুখ ফসকে বলে ফেলে,” রাক্ষসী৷”

__________

মেঘ তার গাড়িতে উঠে বসতে একটা পাগলের সাজে একজন লোক এসে মেঘের গাড়ির জানালায় নক করে৷ মেঘ তার ওয়ালেট থেকে টাকা বের করে জানালা খুলতে লোকটি একটা পেনড্রাইব গাড়ির ভেতরে ফেলে মেঘের হাত থেকে টাকা নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়৷ লোকটাকে চলে যেতে দেখে এক রহস্যময় হাসি দিয়ে গাড়ি স্ট্রাট দেয়৷ মেঘ চলে যেতেই আড়াল থেকে কেউ বেড়িয়ে এসে কাউকে কল করে সবটা বলে তখন ফোনের ওপাশ থেকে কেউ একজন সেই ব্যাক্তিকে ফোনের ওপাশ থেকে বলে ওঠে, “যাস্ট কিল হিম৷” 

.

.

.

#চলবে…..

#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া

#ফারহানা_আক্তার_ছবি ও রাফি

||সূচনা পর্ব ||

[আপনাদের রেসপন্সের উপর ভিত্তি করছে পরবর্তী পর্ব।]

বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। অনেকদিন পর নতুন গল্প নিয়ে ফিরলাম। কেমন আছেন আপনারা? এই গল্পের প্রথম পর্বটি কেমন লেগেছে? অবশ্যই জানাবেন। আপনাদের গঠনমূলক মন্তব্যের অপেক্ষায় বসে রইলাম কিন্তু!🌼

#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া

#ফারহানা_আক্তার_ছবি_ও_রাফি

#পর্ব_০২

🕊

 মেঘ তার গাড়িতে উঠে বসতে একটা পাগলের সাজে একজন লোক এসে মেঘের গাড়ির জানালায় নক করে।মেঘ তার ওয়ালেট থেকে টাকা বের করে জানালা খুলতে লোকটি একটা পেনড্রাইভ গাড়ির ভেতরে ফেলে মেঘের হাত থেকে টাকা নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়।লোকটাকে চলে যেতে দেখে এক রহস্যময় হাসি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়।মেঘ চলে যেতেই আড়াল থেকে কেউ বেরিয়ে এসে কাউকে কল করে সবটা বলে তখন ফোনের ওপাশ থেকে কেউ একজন সেই ব্যক্তিকে ফোনের ওপাশ থেকে বলে উঠে, “জাস্ট কিল হিম।”

৪.

মেঘ নিজের মতো করে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে।পাশের রাস্তার একটু দূর থেকে একটা ট্রাক দ্রুতগতিতে মেঘের গাড়ির দিকে আসছে।মেঘ পাশে তাকিয়ে ট্রাকটাকে নিজের দিকে আসতে দেখে বাঁকা হেসে গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দেয়।মেঘের গাড়ির একটু কাছাকাছি আসতেই ট্রাক টার ব্রেক ফেইল হয়ে যায়।ট্রাক চালানো ব্যক্তিটি হতভম্ব হয়ে যায় হঠাৎ তার ট্রাক ব্রেকফেল হতে দেখে।মেঘ দূর থেকে দেখছে ট্রাকটা এপাশ ওপাশ করছে।মেঘের মুখে বাঁকা হাসির রেশ এখনো লেগে আছে।ট্রাক চালানো ব্যক্তিটি কোনোভাবেই নিজের ট্রাকটাকে কন্ট্রোল করতে পারছে না।ট্রাক থেকে লাফ দিবে যে তারও উপায় নেই।কন্ট্রোল করতে না পেরে ট্রাকটা একটা বড় গাছের সাথে ধাক্কা খায় আর লোকটি মাথায় আঘাত পাওয়ার কারন অজ্ঞান হয়ে যায়।কিছু বুঝে উঠার আগেই ট্রাকটা ব্লাস্ট হয়ে যায়।মেঘ দূর থেকে গাড়িতে বসে রিভলবারটা আঙ্গুলে ঘুড়াতে ঘুড়াতে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে গুন গুন করে গান গাইতে লাগলো,” দিল নে এ কাহাহে দিল সে,,, মোহাব্বাত হো গেয়াহে তুমছে……….” গান গুন গুন করে গাইতে গাইতে ফারহার মুখটা মেঘের চোখের সামনে ভেসে উঠলো৷ মেঘ মুচকি হেসে বলে,” খুব শিগ্রই দেখা হচ্ছে ফারুপাখি৷” 

অন্যদিকে আগন্তুক ব্যক্তির কানে কথাটা যেতেই রাগে ফ্লোরে মোবাইলটা ছুড়ে মারে সাথে সাথে কয়েক টুকরো হয়ে যায়  “ছাড়বো না মেঘ চৌধুরী তোকে আমি ছাড়বো না।এবার তো বেচেঁ গেলি কিন্তু পরেরবার আর বাচঁতে পারবি না।”

___________

ফারহা ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখে তনু বাইরে দাড়িয়ে আছি।তনু ফারহার দিকে তাকিয়ে দেখে ফারহার চোখ লাল হয়ে আছে।মুখে পানি দেওয়া তবুও তনু বুঝতে পারছে।তনুকে এখানে দাড়িয়ে দেখে ফারহা জিজ্ঞেস করে উঠে, “কিরে তনু তুই এখানে দাড়িয়ে আছিস যে?”

“তোর জন্যই এলাম।তোকে এতবার ফোন দিলাম কিন্তু ফোন সুইচড অফ আসছে তাই দেখতে আসছি তুই ঠিক আছিস কিনা।

“হ্যাঁ আসলে ফোনে চার্জ ছিলো না তাই ফোনটা বাসায় চার্জে দিয়ে আসছি।সেইজন্য হয়তো পাসনি।”

“তোর চোখমুখ এমন লাল হয়ে আছে কেন।ক্যান্টিনে তো একদম ঠিকই ছিলো।”

“আরে চোখে একটা পোকা পড়েছিলো তাই চোখটা লাল হয়ে আছি।সেইজন্য মুখ ধুয়েছি।”ফারহার কথাটা তনুর হজম হলো না  তবুও আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না।বেশি প্রশ্ন করলে হয়তো রেগে যাবে।তাই জাস্ট এতটুকু বললো “চল ক্লাসে যাই নাহার ম্যাম এর ক্লাস শেষ হয়ে গেছে।”

“না রে তনু আজ আর ক্লাস করবো না।তুই বরং ক্লাসে যা আমি বাসায় চলে যাচ্ছি।”

“তুই ক্লাস করবি না তো আমি আর থেকে কি করবো। এমনিতেও ওই বজ্জাত দুইটার সাথে থাকলে আমাকে জ্বালিয়ে মারবে।তুই থাকলে তো আমি একটু সাহস পাই।”তনুর কথায় ফারহা হেসে উঠে।তারপর দুজনই ভার্সিটি থেকে বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে৷

__________

রাফিদ কলেজ থেকে এসে দেখে ফারহা রুমের দরজা বন্ধ করে বসে আছে।রাফিদ নিজের ব্যাগটা টেবিলে রেখে সমানে ফারহার দরজা ধাক্কাচ্ছে আর চেঁচিয়ে যাচ্ছে।কিছুক্ষণ পর এসে ফারহা দরজা খুলে।রাফিদ তাকিয়ে দেখে ফারহার মাথায় টাওয়াল পেচানো।রাফিদ বুঝতে পারলো ফারহা এতোক্ষণ শাওয়ার নিচ্ছিলো।ফারহা আবার রুমে ঢুকে পেছনে রাফিদ ও।ফারহা রুমে ঢুকে রাফিদকে বলে উঠলো,

“আজ তোর ফিরতে এতো লেট হলো কেন?”

“বলেছিলাম না আজ দুটো নতুন টিউশনি পেয়েছি।কলেজ শেষ করে টিউশনি করিয়ে মাত্রই আসলাম।”ফ্লোরে পাতানো বিছানার উপর বসে কথাটা বললো রাফিদ।ফারহা রাফিদের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,”ঠিক আছে তুই ফ্রেশ হয়ে আয় আমি তোর খাবার দিচ্ছি।”রাফিদ ফারহাকে বসিয়ে ফারহার মাথা থেকে টাওয়াল খুলে মাথা মুছে দিতে দিতে বললো ” আজ আমি বাইরে থেকে তোর প্রিয় কাচ্চি বিরিয়ানি এনেছি।”

“কাচ্চি বিরিয়ানি মানে?তুই টাকা কোথায় পেলি?”

“আজ টিউশনি থেকে বেতন পেয়েছি ওখান থেকেই আনলাম।তোর জন্য একটা গিফট ও আছে।”

“ছোটু কেন এসব আজেবাজে খরচ করিস তুই।আমার এসব একদম পছন্দ না।তুই এখনো এসবের জন্য ছোট।”

“আমি ছোট না আমি এখন বড় হয়ে গেছি।আমার একটা মাত্র দি তার জন্য আমি গিফট আনতেই পারি সেটা তুই না করার কে রে?”

“হুম  সেটাই জনাব আমি কে সেসব বলার।আপনি গিফট আনতেই পারেন   এখন তো  অনেক বড় হয়ে গেছেন।”

“হয়েছে হয়েছে এখন চল খুব ক্ষুধা লেগেছে।আমি  কিন্তু তোর ভাগের বিরিয়ানিও আমি খেয়ে ফেলবো তখন কিন্তু তোর খাওয়ার জন্য প্যাকেট ছাড়া আর কিছু থাকবে না।এমনিতেও খেয়ে খেয়ে জলহস্তী হয়ে যাচ্ছিস দিনদিন।”রাফিদের কথা শুনে ফারহা রাফিদের কান টেনে ধরে বললো,” কি বললি শয়তান ছেলে আমি জলহস্তী।নিজের বড় বোনকে এসব বলতে লজ্জা করে না বজ্জাত।”

“আহহ! দি লাগছে ছাড়।ওকে ওকে এখন তো আর জলহস্তী বলবো না।”

“হুম মনে থাকে যেন।”

“উফফ এটা বলে কান ঢলতে ঢলতে দরজার কাছে গিয়ে ফারহার উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো,”এখন তো জলহস্তী নয় হাতি বলে ডাকবো।”এই বলে দ্রুত নিজের রুমের দিকে দৌড় দেয়।ফারহা রাফিদের দৌড় দেখে হেসে বলে উঠে,” পাগল ছেলে একটা।”

ফারহা  টাওয়াল টা নেড়ে দিয়ে ভাঙা ফোনটা হাতে নিয়ে কাউকে কল করে।কলে কিছু একটা বলে ফোনটা চার্জে বসিয়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

___________

মেঘ নিজের রুমে ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে।সে ক্রাইম সিনের প্রত্যেকটা ক্লু খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।মনে মনে ভাবছে খুনি খুব চালাক।এমনভাবেই প্রত্যেকটা  খুন করেছে যে তাকে ধরার মতো কোনো চিহ্নও পাচ্ছে না সে।তবে একটা প্রবাদ আছে “যে কোনো খুনি খুনের অবস্থানে একটা ভুল করেই যায়” আর মেঘ সে ভুলটাই খুঁজছে।হঠাৎ তার মনে পড়ে পেনপেনড্রাইভটার কথা।দ্রুত সে নিজের ব্যাগ থেকে পেনড্রাইভ টা বের করে ল্যাপটপ সেট করে পেনড্রাইভের ফাইলগুলো ওপেন করে।ফাইলগুলো ওপেন করেই তার চোখ চড়কগাছ।এর মানে তার ধারণাই ঠিক।সে যেভাবে আগাচ্ছে সেটাই ঠিক।ইতিমধ্যে মেঘকে যে খুন করতে চেয়েছিলো সেটার মাস্টারমাইন্ডকে খোঁজার জন্য নিজের বিশেষ টিমকে মোতায়েন করে রেখেছে।তার ধারণা সেই ব্যক্তিটাই এই খুনগুলো করেছে।

রহস্যময় হাসি দিয়ে নিজের ল্যাপটপ টা বন্ধ করে দেয় ফারহা।এতক্ষণ সে ল্যাপটপে বসে একজন ব্যক্তির কার্যকলাপ দেখছিলো।এই ল্যাপটপটা ফারহার সিক্রেট যেটা শুধু সে ছাড়া আর কেউ জানে না এমনকি রাফিদও না।ফারহা মনে মনে কিছু একটা ভেবে তার চোখ দিয়ে নোনাজল বের হয়।পুরো দুনিয়ার সামনে সে নিজেকে শক্ত দেখালেও একাকি অবস্থায় অন্য সবার ন্যায় সেও দুর্বল হয়ে পড়ে।চোখের পানিটা মুছে সে ডায়রি লিখতে বসে।ডায়রি তে সে মনের সব আনন্দ দুঃখ কষ্টের কথা লিখে রাখে।তারপর ডায়রিটা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।

___________

ভোর বেলা সুমধুর আজানের ধ্বনি কানে পৌছাতে ঘুম ভেঙে যায় ফারহার৷ বাসি বিছানা ঠিক করে ওযু করে নামাজ পড়ে ছোট্ট বেলকনিতে গিয়ে দাড়াতে ভোর বেলার ফুরফুরে শীতল হাওয়া গায়ে মেখে অন্ধকার আকাশে দিকে তাকিয়ে রইল৷ পুরনো বাড়ি বিধায় বাড়িটার চার দিকে নানা রকমের পুরনো গাছ রয়েছে৷ পূর্বাকাশে সূর্য মামা উকি দিতে পাখিরা তাদের বাসস্থান ছেড়ে নিজেদের খাদ্য সন্ধানে পাড়ি জমালো তা দেখে ফারহা বিড়বিড় করে বলতে লাগলো, জীবন যুদ্ধের আর একটা দিন তোমাকে স্বাগত জানাই৷” আকাশের অন্ধকার কেটে সূর্যের কিরণ বিস্তর ছড়িয়ে আছে৷ ঘন্টাখানিক বেলকনিতে কাটিয়ে রুমে আসতে দেখে বাড়ির মালিক দিদা এসে হাজির হয়৷ ফারহা তাকিয়ে দেখে দিদার হাতে ট্রে বুঝতে বাকি নেই সব দিনের মত আজও তাদের দুই ভাইবোনের জন্য নিজের হাতে নাস্তা বানিয়ে নিয়ে এসেছে৷ দিদা যে তাদের দুই-ভাইবোনকে প্রচন্ড ভালোবাসে সেটা ফারহা খুব ভালো করে জানে তাই মুখের উপর কিছু বলতেও পারে না৷ ফারহা কপট রাগ দেখিয়ে বলে,” দিদা তোমাকে না বারণ করেছি প্রতিদিন আমাদের নাস্তা বানাবে না৷”

” এই শুরু হয়ে গেল ছুড়ি হয়ে বুড়িদের মত কথা বলা৷ বলি তোকে কিউট করে মিষ্টি বলে ডাকি তা মেয়ে একটু মিষ্টি মেয়ে হতে তো পারিস৷ খালি মুখে তেতো তেতো বুড়িদের মত কথা বলিস৷ চুপ করে নাস্তা খেয়ে ভার্সিটিতে যাও৷”

” বুড়ি তোমার সাথে কথা বলে লাভ নেই এখন বলো আমার কিউট  বয়ফ্রেন্ড কোথায় হাহ?”

দিদা ভেংচি কেটে বলে,”আপনার বয়ফ্রেন্ড তো তার দ্বিতীয় গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ব্যস্ত৷” কথাটা শোনা মাত্র ফারহা ঢং করে বলে ওঠে নায়য়য়য়া বয়ফ্রেন্ড শুধু আমার একার বুঝেছো বুড়ি৷ রুমে গিয়ে নিজের নাতনি কে বলে দিও আমার বয়ফ্রেন্ডের উপর যেন নজর না দেয়৷” বলতে বলতে পরোটা ছিড়ে মুখে দিয়ে আবারও বলে,” ছোটু কোথায় দিদা?”

” সে তো খেয়ে পড়তে চলে গেছে৷”

৫.

ফারহা ভার্সিটির উদ্দেশ্য বের হতে কিছুদুর যেতে বুঝতে পারে কেউ তাকে ফলো করছে৷ ফারহা কয়েক পা হেটে থমকে দাড়ায়৷ ফারহা পেছনে তাকিয়ে কাউকে না দেখতে পেয়ে বাঁকা হেসে আবারও হাটতে লাগলো৷ ভার্সিটি পৌছে ফারহা তার বন্ধুদের কাছে চলে যায়৷ আর এদিকে ফারহাকে ভার্সিটিতে ঢুকতে দেখে একটা গাড়ি দ্রুত গতিতে চলে গেল৷ 

মেঘ থানায় পৌছাতে এক হাবিলদার এসে মেঘ কে বলে “স্যার একটা খবর আছে৷ গতকাল যে লোকটি খুন হয়েছিলো তার পুরো ইনফরমেশন পাওয়া গেছে৷ স্যার ওই লোকটা….. থামো মুশফিক এখানে নয় আমার কেবিনে চলো৷

“ওকে স্যার চলুন৷”

মেঘ মুশফিক কে নিয়ে তার কেবিনে গিয়ে বলে,” এবার বলো কি ইনফরমেশন পেয়েছো?”

” স্যার এই লোকটার নাম ইয়ামিন হাওলাদার ৷ স্যার এই ব্যাটা খুব খারাপ পিচাশ বললে হয়তো পিচাশকে অপমান করা হবে৷ স্যার এই লোকটা নিজের ব্যাবসার আড়ালে খুব খারাপ কাজ করে৷”

মেঘ খানিকটা বিরক্তি নিয়ে মুশফিককে বলে,” আসল কথায় বলো মুশফিক৷”

” সরি স্যার , স্যার ওই ব্যাটা বাচ্চাদের  দুধের প্যাকেটে ক্যামিকাল মিক্স করে দুধ ঘণ আর দীর্ঘ সময় রাখার জন্য যেটা বাচ্চাদের জন্য খুবই বিপদজনক৷ স্যার আপনি জানলে অবাক হবে এর সাথে সাথে ইয়ামিন হাওলাদার মেয়েদের কিডন্যাপ করে তাদের শরীরের অর্গান গুলো বিদেশে পাচার করে৷ আর ছোট ছোট মেয়েদের বিদেশে পাচার করে৷” 

” এই বিজনেস কয়জন পরিচালনা করে মুশফিক?”

” স্যার আমার কাছে খবর আছে ইয়ামিন হাওলাদার আর তার দুই ছেলে ইমান হাওলাদার এবং মিলন হাওলাদার মিলে এই বিজনেস করে৷ “

মেঘের কেন যেন মনে হচ্ছে এর পরের টার্গেট হয়তো ইয়ামিন হাওলাদারের ছেলেরা হতে পারে৷ মেঘ কিছু একটা ভেবে মুশফিককে বলে,” মুশফিক সাহেব এই ইনফরমেশন গুলো অন্য কাউকে ভুলেও বলবেন না৷ “

” জ্বি স্যার বলবো না৷” 

“ঠিকাছে এখন আপনি যেতে পারেন৷” 

মুশফিক যেতে মেঘ পায়ের উপর পা তুলে ফোন বের করে কাউকে কল করলো৷ ওপাশ থেকে কল রিসিব হতে উৎসাহিত মেয়ে কন্ঠে কেউ বলে উঠলো,” কবে আসছিস বেলুন?” বেলুন নাম টা শুনে ফোনের ওপাশ থেকে মানুষটা ক্ষেপে গিয়ে বলে,” তুই আর ভালো হলি না মেঘের বাচ্চা৷ আমার নাম বেলুন না বেলা৷ অটিস্টিক নামটাও ঠিক করে বলতে পারিস না৷ বড় মা কেন যে তোকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় না৷”

মেঘ ফিক করে হেসে দিয়ে বলে,” বোন হিসাব করে কথা বল৷ আমি তোর বড় ভাই আর আমি এখনো পিওর সিঙ্গেল তো বাচ্চা পয়দা করবো কেমনে হা? তার চেয়ে বড় কথা আমি তোর বড় মায়ের এক মাত্র ছেলে আমাকে কেন বার করে দিবে৷ বার করে দেওয়ার হলে তোকে দিবো৷”

” ভাই প্লিজ তোর ফালতু কথা বন্ধ কর আর আমার ভাবিকে জলদি খুজে বের কর৷ তারপর না হয় আমাকে জামাই সহ বাড়ি থেকে বার করে দিও, আমি মাইন্ড করবো না৷”

মেঘ হাসতে হাসতে বললো, “খুব শিগ্রই তোর ভাবিকে তোর সামনে হাজির করবো৷ যাই হোক তোর একটা হেল্প লাগবে৷”

” বিকেলের ফ্লাইটে আমি আসছি৷”

” ওকে তাহলে দেখা হচ্ছে৷”

” ইয়াপ , ভাই আমার প্যাকিং করা এখনো বাকি আছে রাখছি দেশে এসে দেখা হচ্ছে৷”

” সাবধানে আসিস আর নিজের খেয়াল রাখিস৷ আল্লাহ হাফেজ৷”

” আল্লাহ হাফেজ৷” 

___________

ক্লাস শেষ করে ফারহা নেহাল নিখিল তনু আয়মানকে নিয়ে ক্লাস থেকে বের হতে তাদের সামনে অন্য ডিপার্মেন্টের কয়েকজন ছেলে মেয়ে দাড়িয়ে বলে,” তুমি ফারহা তো?” অন্য একটা মেয়ে ফারহাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো…

ফারহা গম্ভির মুখে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলে,” হ্যাঁ, আমি ফারহা৷”

” আচ্ছা আমাদের সাথে তোমাকে একটু আসতে হবে৷” 

ফারহা কিছু বলার আগে নিখিল বলে বলে ওঠে, ফারহাকে কোথায় নিয়ে যাবে? আর ও তোমাদের সাথে যাবে কেন?”

ছেলে মেয়ে গুলোর মধ্যে থেকে একটা ছেলে দাঁত কটমট করে নিখিলের দিকে তাকিয়ে বললো,” ফারহাকে কোথায় নিয়ে যাবো সেটা তোমার না জানলেও চলবে৷ আর বেশি জানতে চাইলে অসুবিধা নেই আমি তোমাকে বেশ ভালো করে জানিয়ে দিবো৷” শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে বললো ছেলেটি৷ আয়মান নেহাল কিছু বলতে যাবে ফারহা ইশারায় সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলে,” তোরা ক্যান্টিনে গিয়ে বস খাবার অর্ডার কর আমি কিছুক্ষণ পর আসছি৷” 

” ফারহা তুই এদের সাথে একা যাবি? এদেরকে একদমি আমার সুবিধার মনে হচ্ছে না৷ মনে হচ্ছে এদের ভেতর কোন ঘাপলা আছে৷” তনু ফিস ফিস করে ফারহার কানের কাছে মুখটা এনে বললো৷ ফারহা তনুর কোন কথা কানে না নিয়ে সে ছেলে মেয়ে গুলোর সাথে হাটতে লাগলো৷

ফারহাকে নিয়ে ছেলে মেয়ে গুলো একটা ফাঁকা ক্লাস রুমের ঢুকতে তাদের পেছন পেছন আরও দুজন ছেলে ঢুকে ক্লাস রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়৷ সাথে সাথে ছেলে মেয়ের গুলোর ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠে এক পৌশাচিক হাসি৷ যেটা ফারহার চোখ এরায়নি তাদের আড়ালে ফারহার ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠলো এক রহস্যময় হাসি৷

.

.

.

#চলবে…………….

[ভুলত্রুটি সুন্দর ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷]

#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া

#ফারহানা_আক্তার_ছবি_ও_রাফি

#পর্ব_০৩

🕊

ফারহাকে নিয়ে ছেলে মেয়ে গুলো একটা ফাঁকা ক্লাস রুমের ঢুকতে তাদের পেছন পেছন আরও দুজন ছেলে ঢুকে ক্লাস রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়৷ সাথে সাথে ছেলে মেয়ের গুলোর ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠে এক পৌশাচিক হাসি৷ যেটা ফারহার চোখ এরায়নি তাদের আড়ালে ফারহার ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠলো এক রহস্যময় হাসি৷

ছেলে মেয়েদের ভেতর থেকে একটা ছেলে খুবই নোংরা দৃষ্টিতে ফারহার দিকে তাকাতে তাকাতে ফারহার চার দিকে ঘুরতে লাগলো আর ফারহার দিকে কামুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো,” দোস্ত মালটা কিন্তু জোস অনেক দিন ধরে এই মালটার দিকে আমার নজর ছিলো কিন্তু মালটার নাগর গুলার জন্য আশেপাশে যেতে পারি নি তবে এবার মালটাকে মনের আশ মিটিয়ে তৃপ্তি নিয়ে টেষ্ট করবো৷” ছেলেটার কথা শুনে এক মেয়ে বলে উঠলো,” খবরদার জনি ভুলে মেয়েটাকে টাচ করার চেষ্টা করবি না বস কিন্তু আমাদের আগে বলে দিয়েছিলো সলিট মাল চাই৷ আর দশটি মেয়ে বসকে দিতে হবে এটাকে নিয়ে দশটা পূর্ণ হবে৷ এটার গায়ে একটা ফুলের টোকা যেন না পরে জনি৷”

” দোস্ত প্লিজ একবার একটু টেস্ট করি না তোরা শুধু বসকে বলবি না৷”

জনির কথার জুড়াজুড়িতে মেয়ে গুলো রাজি না হলেও ছেলে গুলো রাজি হয় কারণ তাদেরও ফারহার উপর নজর ছিলো৷ ফারহা শুরু থেকে তেমন কিছু বলেনি কারণ ফারহা জানতে চাইছিলো ছেলে মেয়ে গুলো ঠিক কি কারণে তাকে এখানে নিয়ে এসেছে ৷ এখন কারণ গুলো ফারহার কাছে পরিষ্কার৷ ফারহা এক ব্যাঞ্চের উপর উঠে বসে ছেলে মেয়ে গুলোর উদ্দেশ্য বলে উঠলো,” এই তোরা আগে ঠিক কর কে প্রথমে আমার কাছে আসবি কারণ আমার কাছে সময় কম, বন্ধুরা আমার জন্য ক্যান্টিনে বসে আছে৷ আমাকে যেতে হবে৷”

ফারহার কথা শুনে ছেলে মেয়ে গুলো বিদঘুটে হাসি দিয়ে বলে উঠলো,” উহু মামনি তোমার তো আর কোথাও যাওয়া হচ্ছে না৷ কারণ এই মুহূর্ত থেকে তুমি আমাদের কাছে বন্ধি আর এখান থেকে তোমার গন্তব্য স্থান হলো আমাদের বসের ডেরা৷ সেখানে তোমাকে নিয়ে যাওয়া হবে কিন্তু তার আগে তোমাকে যে একটু আদর করবো সোনা৷” এই বলে জনি ফারহার দিকে এগোতে লাগলো ফারহা শীতল দৃষ্টিতে জনি নামক ছেলেটার দিকে  তাকিয়ে রইল৷ জনি ফারহার কাছে এসে ফারহার ওরনায় হাত দিতে যাবে তখনি ফারহা পাশে ভাঙা ব্যাঞ্চের পা তুলে নিয়ে সুচালো লোহা থাকা অংশটা জনির পেটে ঢুকিয়ে দিলো৷ কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগে জনি মাটিতে পড়ে গেল৷ চোখের সামনে হঠাৎ শান্তু মেয়েকে এমন ভয়ংকর রুপ ধারণ করতে দেখে ছেলে মেয়ে গুলো হতবম্ব হয়ে গেলো৷ কিছুই হয়নি এমন ভাব করে ফারহা আবারও ব্যাঞ্চের উপর বসে পড়ে ছেলে গুলোর উদ্দেশ্য বলে,” বলেছিলাম আমার হাতে সময় কম যা করার দ্রুত করো তোমরা৷ আর না হলে আমাকে যেতে দেও৷” 

মেয়ে গুলো কোন কথা না বললেও ছেলে দুইজন তাদের বন্ধুর এমন অবস্থা দেখে প্রচন্ড রেগে গেল৷ দুজনে রেগে ফারহার দিকে এগিয়ে আঘাত করতে নিলে ফারহা কৌশলে প্রথম এগিয়ে আসা ছেলেটার বুকে লাথি মারে আর দ্বিতীয় ছেলেটার গলায় ডান হাতে দুই আঙ্গুল দিয়ে আঘাত করতে ছেলেটার নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে৷ তিন বন্ধুর এমন ভয়ানক অবস্থা দেখে মেয়ে তিনজন প্রচন্ড ঘাবড়ে যায়৷ ফারহা তার লম্বা চুল গুলো হাত খোপা করতে করতে ধীর পায়ে মেয়ে গুলোর দিকে এগিয়ে বলতে লাগলো,” কি হলো আপুরা তোমরা কিছু কি বলতে চাও?” মেয়ে গুলো ভয়ে ভয়ে বলে উঠলো,” না আমরা কিছু বলতে চাই না? “

ফারহা বাঁকা হেসে তার ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে কাউকে একটা মেসেজ করে৷ ফারহা মেসেজ করে মেয়ে গুলোর দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো,” বাকি মেয়ে গুলো কে কোথায় রাখা হয়েছে?”

ফারহার কথা শুনে চমকে তাকালো মেয়ে গুলো৷ মেয়ে গুলোর মনে হলো ফারহার শীতল দৃষ্টি যেন মুহূর্তে তাদের ভেতরকার সব কথা গুলো পড়ে নিচ্ছে৷ ভয়ে মুখগুলো শুকিয়ে গেছে মেয়ে গুলোর৷ ফারহা ঘাড় বাঁকা করে মেয়ে গুলোর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, “আমি সবাইকে মাত্র একটা সুযোগ দি আর তোমরা সে সুযোগ হারিয়েছো৷ ” বলে বাঁকা হাঁসলো ফারহা৷ মেয়ে গুলো ভয়ে কেঁদে দিলো৷ ফারহা মেয়ে গুলো ভয়ার্ত মুখ দেখে আর কিছু বললো না ততক্ষনে  দরজায় দু’বার নক হতে ফারহা মেয়ে গুলো কে দরজা খোলার ইশারা দিতে একটা মেয়ে দরজা খুলে দৌর দিতে নিলে  সামনে প্রায় ৬ ফুট লম্বা কয়েকজন লোক ভেতরে ঢুকলো৷ লোক গুলোর মুখে মাক্স আর চোখে কালো সানগ্লাস পড়া লোকগুলো ফারহার সামনে এসে দাড়াতে ফারহা বলে,” ছেলে গুলোর ঠিকঠিক ব্যবস্থা করো আর এমন অবস্থা করবে যেন ছেলে গুলো বেঁচে থাকবে কিন্তু প্রতি নিয়ত নিজের মৃত্যু কামনা করবে৷ আর এই মেয়ের গুলোর থেকে সব ইনফরমেশন কালেক্ট করো৷ যদি কিছু বলতে না চায় তাহলে নিশ্বাসটাই বন্ধ করে দিবে৷” ফারহার কথা শুনে লোক গুলো রোবটের মত ফারহার নির্দেশ পালন করে৷ ফারহা তার ব্যাগটা নিয়ে কিছু হয়নি এমন ভাবে ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে গেল৷ ফারহা বের হতে মেয়ে গুলোর প্রথমে চিৎকার শুরু হলেও পরবর্তী কোন আওয়াজ শোনা যায় নি৷ ফারহা ওয়াশরুম থেকে হাত ধুয়ে ক্যান্টিনে প্রবেশ করতে নেহাল নিখিল তনু আয়মান ফারহাকে দেখে স্বস্থির শ্বাস ফেলে বলে,” কি বললো ওই ফাজিল ছেলে মেয়ে গুলো?”

” তেমন কিছু না খাবার অর্ডার দিয়েছিস তো? আমার কিন্তু প্রচন্ড খিদে পেয়েছে৷” 

৬.

রাফিদ তার ক্লাস শেষ করে একটা টিউশনি করানোর উদ্দেশ্য কলেজ থেকে বের হয়৷ কলেজের কাছাকাছি ছাত্রের বাড়ি থাকায় রাফিদ এই সময়ে টিউশনিটা ঠিক করে নেয়৷ রাফিদ তার হাতে ঘড়িতে টাইম দেখে আরও দ্রুত গতিতে পা চালিয়ে হাটতে লাগলো৷ রাফিদ হাটতে হাটতে খানিকটা বড় রাস্তায় উঠে গেছে হঠাৎ তখনি একটা গাড়ি রাফিদের পাশ ঘেষে চলে যেতে রাফিদ ভয়ে সরে যেতে নিলে রাস্তায় কাঁদা পানির উপর পরে যায়৷ রাফিদ শান্ত স্বভাবের হলেও এই সময় এমন এক্সিডেন্ট মোটেও কাম্য ছিলো না তার রেগে হাতের কাছে থাকা ভাঙা ইট নিয়ে গাড়ির দিকে ছুড়ে মারে৷ ইট সোজা গিয়ে গাড়ির পেছনের লাইটে লেগে লাইট ভেঙে যায়, সাথে সাথে গাড়ি থেমে যায়৷ ততোক্ষণে রাফিদ উঠে দাড়ায়৷ তখন গাড়ি থেকে একটি মেয়েকে নামতে দেখে রাফিদের বিরক্তি যেন আরও বেরে গেল৷ রাফিদের ধারনা বড়লোক ছেলে মেয়ে এমন অর্থসম্পত্তির কারনে মানুষদের মানুষ মনে করে না তার চাক্ষুষ প্রমান হলো এই মেয়ে৷ 

রাফিদের ভাবনার মাঝে মেয়েটি এসে রাফিদের সামনে এসে দাড়িয়ে বলে,” আই এম সরি মিস্টার আমার বেঁখেয়ালী গাড়ি চালানোর জন্য আপনার এক্সিডেন্টটা হলো৷ আসলে ভাইয়ের সাথে এত বছর পর দেখা হবে সে এক্সসাইটমেন্টে হয়তো এই ভুল আমার দ্বারা হয়েছে৷ এন্ড এগেইন সরি৷” 

মেয়েটির মুখে সবটা শুনে রাফিদের মনটা যেন হুট করে ভালো হয়ে গেল৷ তাই কথা না পেঁচিয়ে বলল,” ইট’স ওকে এন্ড এর পর থেকে চেষ্টা করবেন এভাবে বেঁখেয়ালী হয়ে গাড়ি না চালানোর৷”

” ওকে আচ্ছা আপনার ড্রেস তো নোংরা হয়ে গেল৷ সামনে কোন শপিং মল আছে? থাকলে চলুন আপনার ড্রেস চেন্জ করা টা প্রয়োজন৷”

 রাফিদ মুচকি হেসে বললো,” তার কোন প্রয়োজন নেই৷ আমার কাছে টাকা আছে নিজের ড্রেস কেনার আপনার কিনে দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই৷”

” এই যে মিস্টার আমি আপনাকে দয়া করছি না আর না ভিক্ষা দিচ্ছি৷ আমি একটি ভুল করেছি আর সেটা শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করছি৷”

” প্রয়োজন নেই মিস, শুধু এভাবে গাড়ি চলাবেন না৷ আসছি আল্লাহ হাফেজ৷” 

রাফিদ আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাটতে লাগলো তখন পেছন থেকে মেয়েটি বলে উঠলো,” মিস্টার এরোগেন্ট বয় তোমাকে তো আমি দেখে নিবো৷ নাহলে আমি বেলা চৌধুরী নই৷ ” মেয়েটি তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে রাফিদের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিলো৷ 

                   ফারহা মাসকাবারি বাজার করে বিকেলে বাড়ি ফিরে দেখে রাফিদ গল্পের বই পড়ছে৷ ফারহাকে আসতে দেখে রাফিদ বই রেখে ফারহার হাত থেকে বাজারের ব্যাগ দুইটা নিয়ে বলতে লাগলো,” দি তোকে কতবার করে বলেছি এত ভারি ব্যাগ নিয়ে তোর আসতে হবে না আমি টিউশন শেষে বাজার করে আনবো৷” রাফিদ ব্যাগ রেখে ফারহার জন্য একগ্লাস ঠান্ডা পানি ফারহার দিকে এগিয়ে দিলো৷ ফারহা পানি খেয়ে রাফিদকে বললো,” আজ এই সময় তুই এখানে কেন? তোর না টিউশন থাকে?” 

রাফিদ গ্লাসটা টেবিলের উপর রেখে বললো,” আর বলিস না দি আজ টিউশনটা একটা মেয়ের জন্য মিস দিতে হয়েছে৷” 

একটা মেয়ে! কথাটা শুনে ফারহা চোখজোড়া ছোট ছোট করে রাফিদের দিকে তাকিয়ে বললো,” একটা মেয়ে মানে!”

রাফিদ এবার পুরো বিষয়টা ফারহাকে খুলে বললো৷ সবটা শুনে ফারহা গম্ভির মুখে বলে উঠলো,” এটা কখন ঘটেছে?”

” কলেজ শেষে৷” 

ফারহার কন্ঠ আরও গম্ভির করে বলে উঠলো রাফিদকে,” আজ থেকে তুই আর কোন টিউশন করবে না ছোটু৷ সামনে যে এতিমখানা আছে সেখানকার বাচ্চাদের পড়াবে যে সময় টা তুই ফ্রি থাকবি৷ ” ফারহার কথা শুনে রাফিদ চোখ বড় বড় করে বলে উঠলো মানে কি! তুই কি ওই মেয়েটাকে ভয় পাচ্ছিস দি? আমার কোন ক্ষতি হবার ভয়ে তোর এই ডিসিশন?”

ফারহা রাফিদের কথার কোন জবাব না দিয়ে তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে রাফিদ কে বললো,”যা বলেছি সেটা যেন হয় ছোটু এর বাইরে যেন তোকে একপা যেতে না দেখি৷” 

ফারহা ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিতে রাফিদ মুখ ফুলিয়ে বলতে লাগলো,” এই মাসটা যদি টিউশন না করি তাহলে তো দি’র জন্য ওর বার্থডে তে সারপ্রাইজটা দিতে পারবো না৷ উফ এই দি টা না আদেশ দিয়ে চলে গেল এদিকে আমি এখন কি করবো৷” ভাবনায় বিভোর হয়ে ফারহার জন্য খাবার রেডি করতে চলে গেলো৷

________

                      মেঘ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ফাইল মনোযোগ দিয়ে দেখছে৷ হঠাৎ মেঘের হাত থেকে কেউ ফাইলটা ছিনিয়ে নিলো মেঘ প্রচন্ড রেগে সামনে তাকাতে দেখে তার কলিজার টুকরো তার ছোট চাচার মেয়ে বেলা৷ মুহূর্তে সব রাগ গলে জল হয়ে গেল এত বছর পর বোন কে দেখে৷ বেলা যে তাকে সারপ্রাইজ দিতে যে থানায় এসে হাজির হবে এটা মেঘ একদমই ভাবতে পারেনি৷ বেলা মুচকি হেসে মেঘকে জড়িয়ে ধরে বলে,” কেমন আছো দাভাই ?” 

মেঘ বেলার মাথায় স্নেহের হাত রেখে বলে আমার পুচকি বেলা যখন তার দাভাইয়ের কাছে তখন তার দাভাই ভালো থাকবে না এটা হতে পারে৷ এখন বল বাড়িতে গিয়েছিলি?”

” না দাভাই এয়ারপোর্ট থেকে সোজা এখানে এসেছি তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে৷” 

“লক্ষী বোন আমার বল কি খাবি?”

“খাওয়া দাওয়া পরে হবে এখন বলো কোন কেস নিয়ে তুমি এত চাপে আছো?”

” তুই এতটুকু পুচকি মেয়ে তুই কি করে আমার সমস্যা সমাধান করবি?”

” উফ দাভাই ভুলে যাচ্ছো আমি ল নিয়ে পড়ছি৷ যাই হোক বলতো তোর সমস্যা গুলো৷”

মেঘ এবার বলতে লাগলো শহরে প্রত্যেক মাসে একটা করে মার্ডার হওয়ার কথাটা, আর এটাও বলে সব মা’র্ডার একি পের্টেনে হওয়াটাও… সব শুনে বেলা বলে,” ভাই তুই তো মাথা মোটা না তাহলে এই সিম্পল জিনিস গুলো তোর চোখের আড়াল হলো কি করে? যাই হোক একটা কথাই বলবো তুই একজন সাধারণ মানুষের মত না ভেবে একজন ক্রিমিনালের মত করে ভাব দেখবি তুই তোর সব প্রশ্নের উওর পেয়ে যাবি৷

মেঘ বেলার গাল টেনে দিয়ে বললো, এই জন্য তোকে এত ভালোবাসি বেলুন৷ আমার কিউট বেলুন বনু৷” 

বেলা কপোট রাগ দেখিয়ে বললো, ” দেখ দাভাই তখন আমি ছোট ছিলাম আর একটু গলুমলু ছিলাম তখন না হয় বেলুন ডাকতি কিন্তু এখন তো আর গলুমলু নেই ৷ তবে এখন কেন এই বিশ্রি নাম ধরে ডাকো দাভাই?” 

মেঘ কোন উওর না দিয়ে ফাইল গুলো ড্রয়ারে রেখা লক করে বেলাকে নিয়ে থানা থেকে বেরিয়ে যায়৷

                লাল নীল আলোর জ্বলছে চারিদিকে সাথে বিকট চিৎকার৷ এই চিৎকার যেন কারো হৃৎপিন্ড কাঁপিয়ে দিতে যথেষ্ট৷ কলেজের সেই মেয়ে গুলো থরথর করে কাঁপছে তাদের সাথে থাকা ছেলে বন্ধুদের আর্তনাদ শুনে৷ কারও মুখে কোন কথা নেই তারা কেউ বুঝতে পারছে না এখন রাত না দিন৷ কারণ তাদের যেখানে নিয়ে আসা হয়েছে সেখানে বাইরের আলো বাতাস ঢোকার বিন্দু মাত্র জায়গা নেই৷ ভেতর টা কেমন ঠান্ডা অনুভব করছে মেয়ে গুলো৷ এই ঠান্ডা পরিবেশেও দরদর করে ঘামছে৷ হঠাৎ কিছুক্ষণ বাদে ছেলে গুলো আর্তনাদ থেমে যায়৷আর শুনতে পায় কারও পায়ের আওয়াজ…………

.

.

.

#চলবে…………

#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া

#ফারহানা_আক্তার_ছবি_ও_রাফি

#পর্ব_০৪

🕊

আকাশের রুপ যেন হঠাৎ করে পাল্টে গেল৷ কিছুক্ষণ আগে রঙিন আকাশে কালো মেঘেরা ছেঁয়ে গেল৷ পরিবেশটাও মুহূর্তে এক ভয়ংকর রুপ ধারণ করেছে৷ ঝড়ো হাওয়ায় গাছ গুলো যেন উপড়ে পড়ছে এমন অবস্থা, সেখানে ফারহা তার ছোট্ট বেলকনিতে গিয়ে দাড়িয়ে প্রকৃতির তান্ডব লীলাখেলা দেখতে লাগলো তখনি রাফিদ এসে ফারহার পাশে দাড়িয়ে বলে উঠলো,” এই দি তুই এই ঝড়ো হাওয়ায় এখানে কেন দাড়িয়ে আছিস? আর তোর শাকচুন্নির মত লম্বা চুল গুলো ছেড়ে দিয়েই বা কে দাড়িয়েছিস? কেউ যদি হঠাৎ তোকে এই রুপে এখানে দেখতে পায় তাহলে হয়তো সে সেখানে হার্টফেল করে মারা যাবে৷” কথা গুলো বলে রাফিদ হাসতে লাগলো৷ রাফিদের কথা শুনে ফারহা রাফিদের দিকে তাকিয়ে বললো,” তুই আমাকে ইনডিরেক্টলি শাকচুন্নি বললি তাই না ছোটু?” দাঁত কিড়মিড় করে রাফিদের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো ফারহা৷ ফারহা প্রশ্ন শুনে রাফিদ শুকনো ঢোক গিলে বলে,” আরে দি তোকে কেন আমি শাকচুন্নি বলতে যাবো? শাকচুন্নি হোক তোর শত্রু তুই তো প্রিন্সেস৷” 

“ভালোই তৈল দিতে জানিস ছোটু৷” কথাটা বলে লম্বা চুল গুলো হাত খোপা করতে করতে রুমে চলে গেল৷ ফারহাকে যেতে দেখে রাফিদ স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে বলে “আল্লাহ এই বারের মত বাঁচিয়ে দিলো নাহলে নির্ঘাত আমার মাথার সুন্দর সিল্কি চুল গুলো দি’র হাতে চলে যেত৷”

রুমে এসে ফারহা রাতের রান্নাটা ঝটপট করে ফেলে পড়তে বসে যায়৷ আর রাফিদও মন দিয়ে পড়তে লাগে৷  দশটা বাজতেই ফারহা রাফিদ রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে৷ সারাদিনে ব্যস্ততার ক্লান্তিতে রাফিদের চোখে ঘুমের দলেরা হানা দিতে ফারহা রাফিদের রুমে গিয়ে চাদরটা রাফিদের গায়ে দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়৷ 

__________

চৌধুরী  ভিলায় আজ উৎসব মুখর দিন৷ বাড়ির একমাত্র প্রিন্সেস এত দিন পর বাড়ি ফিরেছে যার কারণে মেঘের বাবা মা দুজনে ভীষণ খুশি আরও বেশি খুশি হত তখন যখন তার ছোট ভাই এবং তার স্ত্রী সহ দেশে ফিরে আসতো৷ তবে খুব শিগ্রই তারাও যে দেশে ফিরবে এটা মেঘের বাবা মা জানে৷ বেলা বাড়িতে ফেরা মাত্র শাফায়াত চৌধুরী এবং  মিসেস মায়রা চৌধুরীর সাথে গল্প জুড়ে দেয়৷  রাত এগারোটায় গল্পের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে বেলা নিজের চিরচেনা রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নেয়৷ ড্রেসিং টেবিলে সামনে দাড়িয়ে বেলা ভেজা চুল গুলো মুছতে মুছতে হঠাৎ রাফিদের মুখটা ভেসে ওঠে৷ আনমনে বেলা হেসে ফেলে বলে,” এরোগেন্ট বয় তোমাকে তো আমি এই জীবনে আর ছাড়ছি না৷ বাই দ্য ওয়ে তোমার নামটাই তো জানা হলো না৷ নেভার মাইন্ড আমার পুলিশ অফিসার দাভাই আছে কেন? দাভাই কে দিয়ে তোমার ষোল গুষ্টির সব খবর আমি পেয়ে যাবো যাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ৷” 

মেঘ এবার শুরু থেকে সব সব গুলো মার্ডারের ছোট বড় ক্লু দেখতে লাগলো৷ মেঘের কাছে এমন কোন ক্লু ইম্পটেন্ট মনে হলো না যেটা দিয়ে সে কোন মার্ডারার কে সনাক্ত করতে পারে৷ তাই মেঘ সে সমস্থ এরিয়ার ক্যামেরার ফুটেজ গুলো চেক করতে লাগলো৷ হঠাৎ করে একটা ফুটেজ দেখে মেঘের চোখ আটকে যায়৷ আর তখনি মেঘের ফোনটা বেজে উঠতে মেঘ কল রিসিব করতে ফোনের ওপাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠলো,” স্যার আপনার কথা মত লাশটাকে দ্বিতীয়বার পোস্ট মোর্টেম করানো হয় আর তাজ্জব বিষয় হলো লাশের শরীরে কোন অর্গান পাওয়া যায়নি৷ আমরা ডক্টরকে এই বিষয় জিজ্ঞাসাবাদ করতে নিলে তিনি সবটাই অস্বীকার করে এবং আগের রিপোর্ট ভুল ছিলো বলে দাবি করছে৷”

“ডক্টর কে ছেড়ে দেও আর তার উপর নজর রাখো৷” 

” ওকে স্যার৷”

মেঘ ফোনটা বিছানার এক কোণে ছুড়ে ফেলে নরম বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করতে ফারহার মুখটা ভেষে ওঠে তখনি মেঘ তড়িঘড়ি করে উঠে বসে তার ফোন নিয়ে কাউকে কল করে৷

” হ্যালো৷” মেঘের গলা শুনতে পেয়ে ফোনের ওপাশ থেকে কেউ বলে ওঠে…

” সরি স্যার সময় মত আপনাকে ইনফরমেশন গুলো না দেওয়ার জন্য,”

” ভনিতা রেখে যা জেনেছিস সেগুলো বল৷”

” বস মেয়েটার নাম ফারহা রহমান৷ অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে৷ বাবা মা নেই৷ শুধু একটা ছোট ভাই আছে নাম রাফিদ রহমান৷ রাফিদ অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র আর খুব মেধাবী৷ দুই ভাইবোন টিউশন করে তাদের খরচ চালায়৷ আর তারা থাকে হান্নান উদ্দিন সাহেব ছোটখাটো  ব্যবসায়ী তার পুরনো বাড়িতে ভাই-বোন দুজনে দোতলার চিলেকোঠার রুমে ভাড়া থাকে৷ ” 

সব শুনে মেঘের খুব খারাপ লাগে ফারহার জন্য, কত না স্ট্রাগল করে বাঁচতে হচ্ছে এই দুই ভাই-বোনের ৷ এমনিতে মেঘ প্রথম দেখায় ফারহাকে ভালোবেসে ফেলে আর আজ এই সব শুনে ফারহার জন্য ভালোবাসা সন্মান যেন আরোও কয়েকগুন বেড়ে গেল৷ 

মেঘ মনে মনে ঠিক করে নিলো আগামিকাল সে ফারহার সাথে দেখা করবে৷”

                      সেই রুমে থাকা মেয়ে গুলোকে টেনে হিচরে ছেলে গুলো কে যেখানে রাখা হয়েছে সেখানে নিয়ে গেল দুজন মাক্স পরিহিতা লোক৷ মেয়ে গুলো সেই রুমে প্রবেশ করতে ভয়ে চিৎকার দিয়ে সেন্সলেস হয়ে যায়৷ জনি সহ বাকি দুজনকে এমন ভাবে নৃ’শংস ভাবে মা’রা হয়েছে যে কাউকে চেনার উপায় নেই৷ লাশ গুলোর হাত পা মা’থা শরীর থেকে বি’চ্ছিন্ন করা৷ রক্তে পুরো ফ্লোর ভিজে আছে৷ মেয়ে গুলো সেগুলো দেখে আর সহ্য করতে পারেনি৷ 

লোকদুটোর একজন রুমের বাইরে গিয়ে দুজনকে নিয়ে এসে মেয়ে গুলোকে ধরে স্ট্রেচারে শুইয়ে দিয়ে হাত পা লোহার শেকল দিয়ে বেধে  সেখানে ফেলে তারা রুম লক করে বেড়িয়ে যায়৷

_______________

পরদিন সকালে রাফিদ নিজের মতো নাস্তা করে কলেজের জন্য বেড়িয়ে যায় আর ফারহাও ভার্সিটি পৌঁছে  যায়।ভার্সিটি ক্যাম্পাসে একটা বটগাছের নিচে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো ফারহা,নেহাল,তনু আর আয়মান।হুট করে কোথা থেকে নিখিল দৌড়াতে দৌড়াতে আসে।রিতীমত হাপাচ্ছে সে।আকস্মিক ঘটনায় ফারহা সহ বাকি তিনজনও অপ্রস্তুত ছিলো।নেহালের হাতে একটা ফুলের তোড়া আর হাতে একটা কার্ড।কোনোরকম শ্বাস নিয়ে হুট করে ফারহার দিলে তোড়া আর কার্ডটা বাড়িয়ে দিয়ে নেহাল বললো,

“হ্যাপি বার্থডে ফারু।ম্যানি ম্যানি হ্যাপি রিটার্নস অফ দ্যা ডে।”নিখিলের কথা শুনে ফারহা বোকা বনে যায়।নেহাল আর আয়মানেরও কিছু মাথায় ঢুকছে না।এদিকে তনু মুখ চেপে হাসছে।ফারহা ভ্রু কুচকে বললো,

“তোকে কে বললো নিখিল যে আজ আমার বার্থডে?”

“কেন আজ তোর বার্থডে নয়?তনু আমাকে আজ সকালে বললো আজ তোর বার্থডে।তাই দ্রুত করে ভার্সিটিতে আসলাম তোকে উইশ করবো বলে সাথে এগুলোও নিয়ে আসলাম।”ফারহা এবার বুঝতে পেরেছে তনু নিখিলের সাথে ফান করেছে।এদিকে নিখিলের কথা শুনে তনু,নেহাল আর আয়মান পেট চেপে হাসতে থাকে।নিখিল কপট রাগ দেখিয়ে বললো,

“ওই শা* এভাবে বলদের মতো হাসছিস কেন তোরা?”নেহাল কোনোরকম হাসি থামিয়ে বললো,”হাসবো না তো কি করবো।তোরা মতো হাদারাম একটাও নেই।তনু তোর সাথে মজা করেছে আজ ফারুর বার্থডে নয় এতগুলো বছর আমাদর সাথে থেকেও ভুলে গেলি কি করে সালা? ফারুর যেদিন বার্থডে থাকে সেদিন আমরা কেউ ভার্সিটি আসি না।সারাদিন ফারুর বার্থডে সেলিব্রেট করি। এটা কি করেভুলে গেলি?”

নেহালের কথা শুনে  নিখিল মাথা চুলকিয়ে বললো,”তাহলে আমি যে এগুলো নিয়ে এসেছি সেগুলো কি করবো?”তনু দুষ্টুমি করে বললো,

“কি আর করবি ওই যে দেখ রাস্তায় যে পাগলিটাকে দেখছিস ওকে দিয়ে প্রপোজ করে ফেল এক্সেপ্ট করে ফেলবে? কারণ তোর কপালে তো আর কোন মেয়ে জুটবে না৷”বলেই আবার হাসতে লাগলো।তনুর কথায় বাকিরাও হাসছে।নিখিল তনুর দিকে রাগি একটা ফেস নিয়ে তাকিয়ে তোড়াটা একটা পিচ্চি মেয়েকে দিয়ে এসে ওদের সাথে আবার জয়েন করে।নেহাল বলতে শুরু করলো,

“কি গভীর ঘুমে ছিলাম জানিস।ফারুর বার্থডে শুনে দৌড়াতে দৌড়াতে এক পায়ে স্যান্ডেল আর এক পায়ে শু পড়ে এসে পড়েছি।আমার কপালটাই খারাপ৷” নিখিলের কথায় সবাই ওর পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যি সত্যি ওর এক পায়ে স্যান্ডেল আর এক পায়ে শু পড়ে আছে।সবাই আরো একধাপ হেসে নিলো তনু বললো”সত্যি আজ তোর কপালটাই খারাপ।সকালে কার মুখ দেখে উঠেছিস?”তনুর কথায় নিখিল ভাবনায় চলে গেলো।কারন সে তো রোজই ফারহার ছবি মোবাইল দেখে ঘুম থেকে উঠে।কিন্তু এটা তো ফারহার সামনে সে বলতে পারে না।কথা ঘুরানোর জন্য নিখিল বলে উঠলো”আরে এসব কুপ্রথা আমি বিশ্বাস করি না”।আয়মান বলে উঠলো,

“বাহ নিখিল আমাদের কারো বার্থডে আসলে তো তোকে খুজেই পাওয়া যায় আর না ফারুর বার্থডে নিয়ে তোর এতো মাথা ব্যাথা।কেন রে?”নিখিল বিড়বিড় করে বলছে,”আমার মাথাব্যথা আর না থাকলে আর কার থাকবে।।ফারহা বলে উঠলো,

“কি বিড়বিড় করছিস।জোরে বল?”

“আরে ফারহা তো আর আমারই বান্ধবী তাই না।ওর বার্থডে মনে রাখাই উচিত।তোদের টাও আমি মনে রাখি কে বলেছে মনে রাখি না।”

“হুম সেটা তো বার্থডে আসলেই বোঝা যায় মনে থাকে নাকি থাকে না।”ফারহা এবার বলে উঠলো,”আচ্ছা এসব বাদ দে এখন।ক্লাসে চল বেল দিয়ে দিয়েছে।”সবাই সমস্বরে বলে উঠলো,”

“হুম চল”

___________

মেঘ নিজের রুমে রেডি হচ্ছিলো।হঠাৎ কে যেন এসে ওর চুলগুলো এলোমেলো করে দেয়।মেঘের চুলে কেউ হাত দিলে মেঘের ভিষনই রাগ হয়।কিন্তু পাশে তাকিয়ে যখন বেলা কে দেখে তার সব রাগ গলে যায়।মেঘ সবার সামনে নিজেকে কঠিন দেখালেও তার পিচ্চি বোনের কথা সে একদম নরম।কখনোই একটু বকঝকা করে না রাগ দেখানো তো দূরের কথা।

“বেলুন হঠাৎ তুই আমার রুমে আসলি যে?”বেলা মেঘের চুলে টান দিয়ে বললো,”ওই তোকে কতবার বলতে হবে আমাকে বেলুন বলে ডাকবি না।এই বেলুন নাম দিয়ে আমাকে ডাকবি না।”

“আচ্ছা আচ্ছা ডাকবো না এখন তো ছাড়।”

“হু।এরপর থেকে ডাকলে তোর মাথার প্রিয় সব চুল টেনে টেনে ছিড়ে ন্যারা করে ফেলবো।”

“তখন তোকেই সবাই ন্যাড়া মেঘ চৌধুরীর বোন বলে ডাকবে।তখন সেটা শুনতে ভাল্লাগবে।”

“ডাকুক তবুও এই নামে আমাকে আর ডাকবি না।”

“আচ্ছা ডাকবো না।কি জন্য এসেছিস সেটা বল?”

“দাভাই আসলে গতকাল থানায় যাওয়ার আগে এয়ারপোর্ট থেকে আসার সময় একটা ছেলের সাথে দেখা হয়।”তারপর বেলা পুরো ঘটনা টা খুলে বললো মেঘকে।পুরো কথা শুনে মেঘ দুস্টুমি হাসি দিয়ে বললো,”বাহহ আমার বনু দেখে প্রেমে পরে গিয়েছে।”মেঘের কথায় বেলা একটু লজ্জা পেল।মেঘ আবার বলে উঠলো,”তা ছেলেটার নাম ঠিকানা কিছু জানিস?”

“না দাভাই।সেইজন্যই তোর কাছে এলাম।তুইতো পুলিশ অফিসার দ্রুত খুজে বের করতি পারবি কোথায় থাকে।”

“আচ্ছা তুই নিশ্চিন্ত থাক আমি খুঁজে বের করবো ওই ছেলেকে।এখন তুই যা আমি বের হবো।”

“ঠিক আছে।লাভ ইউ আমার কিউট হ্যান্ডসাম দাভাই।”

“লাভ ইউ টু বনু।”

_____________

মেঘ গাড়ি থামায় ফারহার কলেজে।পুরোই হিরো লুকে এসেছে আজ।ফর্সা জিম করা  বডিতে কালো শার্ট কালো পেন্ট পায়ে শো।আজ সানগ্লাস টা চোখেই দিয়ে এসেছে।সোজা ক্যাম্পাসে ঢুকে যায় সে।অন্যদিনের মতোই ফারহা ও তার বন্ধুরা ক্লাস শেষে ক্যান্টিনে বসে ছিলো।মেঘও সেখানে প্রবেশ করে।আজও মেঘকে এখানে দেখে অবাক হয়ে যায় সবাই।মেঘ ফারহা রা যেই টেবিলে বসা সেখানের একটা চেয়ারে পাশের বসে যায়।সানগ্লাসটা খুলে টেবিলে রাখে।ফারহা তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে  তাকিয়ে মেঘের কার্যকলাপ দেখছে।মেঘ বলে উঠলো,

“তোমরা কোন ইয়ারের স্টুডেন্ট?কিন্তু কেউ কিছু বললো না।মেঘ আবারও বললো,”আমি কিছু একটা জিজ্ঞেস করেছি।”তনু কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলো,”স্যার আমরা অনার্স ৪র্থ বর্ষের স্টুডেন্ট।”মেঘ ফারহার দিকে একবার তাকিয়ে বলে উঠলো,”তোমরা কি ওই ছেলেমেয়েগুলোর খোজঁ জানো যারা তোমাদের ব্যাচমেট অন্য ডিপার্টমেন্ট পড়ে।”

“কাদের কথা বলছেন স্যার?”নেহাল জিজ্ঞেস করলো,

“যারা গতকাল থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে।আমার কাছে তাদের পেরেন্টস মিসিং কম্প্লেইন করেছে।তাদের এই ভার্সিটিতেই পড়ে।আর তোমাদের ভার্সিটির একজন বলেছে তাদের গতকাল তোমাদের সাথে কথা বলতে দেখেছে।”এবার তনু বলে উঠলো,

“হ্যা স্যার গতকাল অন্য ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন স্টুডেন্ট আমাদের কাছে এসেছিলো।বলছিলো ফারহার সাথে কিছু কথা বলবে।তাই ওকে কোথাও একটা নিয়ে গেলো।”তনুর কথায় এবার মেঘসহ সবাই ফারহার দিকে তাকালো।কিন্তু ফারহার কোনো হেলদোল নেই।মেঘ ফারহার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,”তো মিস ফারহা সত্যিটা কি বলবেন আসল ঘটনাটা কি?”হঠাৎ করে গতকালের দুটো মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে ক্যান্টিনে এসে উপস্থিত হয়।উপস্থিত সবাই তাদের দেখে অবাক হয়।ফারহার মুখে রহস্যময়ী হাসি।মেঘ তাদের দেখে বলে উঠলো,”তোমরা কোথায় ছিলে?তোমাদের পেরেন্টস থানায় এসেছিলো মিসিং কম্প্লেইন করতে।গতকাল বিকাল থেকে তোমরা মিসিং তাই।”মেয়ে দুটো বলতে লাগলো,

“স্যার জনি আর ওর বন্ধুরা আমাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়েছে।ফারহা অনেক ভালো স্টুডেন্ট।আমরা চাচ্ছিলাম ওদের ডিপার্মেন্টে শিফট হতে।তাই এই বিষয়ে জানার জন্য ওকে নিয়ে গিয়েছিলাম।ওইদিন সন্ধ্যায়ই আমরা দুজন আর জনি ও জনির বন্ধুরা জনির একটা ছোট্ট বাড়িতে যাই পার্টি করতে।এক পর্যায়ে জনি আর ওর বন্ধুরা আমাদের উপর জবরদস্তি শুরু করে।হাতাহাতিতে একটা ঝুলন্ত বাল্ব এলকোহলের উপর পড়ে যায় আর আগুন ধরে যায়।জনি আর ওর বন্ধুরা নেশাক্ত ছিলো অনেক।আমাদের শোরগোলে ফারহা ওই বাড়িতে এসে আমাদের বাঁচিয়ে  নেয়।আমরা ঠিকই বের হয়ে যাই কিন্তু সিলিন্ডারে আগুন লেগে জনিসহ ওর বন্ধুরা আর ওই বাড়িটা  ব্লাস্ট হয়ে যায়।”

এবার পুরো ঘটনাটা সবার বোধগম্য হলো।কিন্তু তবুও মেঘের কোথাও ডাউট হচ্ছে কিন্তু প্রুফ নেই বিধায় কিছু বলতেও পারছে না।মেঘ ওই মেয়েগুলোর উদ্দেশ্য বলে উঠলো,”ঠিক আছে তোমরা এখন বাড়িতে যাও।তোমাদের পেরেন্টস তোমাদের জন্য টেনসড হয়ে আছে।”ফারহা মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় কিছু একটা বলে।মেয়েগুলো ঢোক গিলে ওখান থেকে চলে যায়।মেঘ এবার সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,”ঠিক আছে গাইজ তোমরা তোমাদের কাজ করো।সরি ফর ডিস্টার্বিং।”যাওয়ার পথে ঘুরে সানগ্লাসটা চোখে দিয়ে ফারহার কানের কাছে আস্তে করে বললো,”বাট নট ফর ইউ ফারুপাখি।তোমাকে ডিস্টার্ব করা বন্ধ করবো না।আমার মনের খাচায় জায়গা করে নিয়েছো তুমি।তোমার গানটা আমাকে ডিস্টার্ব করে দিয়েছে জান।আমার থেকে তোমার নিস্তার নেই।”বলেই মুচকি হেসে ওখান থেকে বেরিয়ে যায়।আর মেঘের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রহস্যময়ী হাসি দেয় ফারহা।

.

.

#চলবে……………..

#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া

#ফারহানা_আক্তার_ছবি_ও_রাফি

#পর্ব_০৫

🌸

রাতে মেঘ নিজের রুমে ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে।তখনই মেঘের রুমে নক করে বেলা বলে উঠলো,”দাভাই ভেতরে আসবো?”মেঘ ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে দরজায় তাকিয়ে বেলাকে দেখে ল্যাপটপ বন্ধ করে বেলাকে ভেতরে আসতে আসতে বললো,”দাভাই বিজি আছিস নাকি?তোকে বিরক্ত করিনি তো?”

“না বনু একদমই বিরক্ত করিসনি।আয় বস বল কি হয়েছে?”

“দাভাই সকালে তোকে যে কাজটার কথা বলছিলাম সেটা কি করেছিস?ওর ইনফরমেশন পেয়েছিস?”

“হ্যা পেয়েছি।”বেলা উত্তেজিত হয়ে মেঘকে জিজ্ঞেস করলো,”কি জানতে পেরেছিস তাড়াতাড়ি বল না দাভাই।”মেঘ একটা জোরে শ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করলো,” ওর নাম রাফিদ রহমান।ওর পৃথিবীতে মা-বাবা কেউ নেই।শুধু একটা বড় বোন আছে ওর নাম ফারহা রহমান।রাফিদ একটা কলেজে পড়াশোনা করে আর পার্টটাইম জব হিসেবে ৩-৪ টা টিউশনি করে। “

রাফিদের মা-বাবা নেই সেটা শুনে বেলার মনে মনে একটু রাফিদের জন্য খারাপ লাগলো।কতই না কস্ট করে জীবনযাপন করছে।একটা ছোট্ট বাড়িতে কোনোরকম থাকে।বেলা বেশি আকৃষ্ট হয় রাফিদের নিষ্পাপ চেহারাটা দেখে।বেলা দেখেই বুঝতে পেরেছিলো রাফিদ খুবই শান্ত প্রকৃতির একজন ছেলে।বেলা ঠিক করলো সে রাফিদের সাথে দেখা করবে।তাই মেঘকে বলে উঠলো,”দাভাই একটা হেল্প করে দিবি?”

“কি বল?”

“আমি ওই কলেজে এডমিশন নিতে চাই?”।

“কিন্তু কেন?তুই তো অলরেডি এবরোডে “ল” নিয়ে পড়েছিস?”

“হ্যা করেছি বাট আমি ওর কলেজে একজন সাধারণ স্টুডেন্ট হিসেবে ওর ডিপার্মেন্টে ভর্তি হতে চাই।”বেলার কথার মানে মেঘ বুঝতে পারলো তাই বেলার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,”ঠিক আছে আমি আগামীকালই তোকে ওই কলেজে এডমিট করিয়ে দিবো।”

“থ্যাংকিউ আমার হ্যান্ডসাম দাভাই।”

“ওয়েলকাম বনু।বনু তোকে একটা কথা বলার ছিলো।”

“বল দাভাই।”

“আমি একটা মেয়েকে ভালোবেসে ফেলেছি।”বেলা মেঘের কথায় অবাক হয়ে যায়।যে ছেলে মেয়েদের আশেপাশেও যায় না সেই ছেলে কিনা একটা মেয়েকে ভালোবেসে। কথাটা বেলার হজম হলো না।”

“ফান করছিস দাভাই।তুই যে কিনা কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকায় না আর যে রাস্তা দিয়ে গেলে সব মেয়ে চোখ দিয়ে গিলে খায় সে কিনা একটা মেয়েকে ভালোবাসে অসম্ভব।”মেঘ ট্যারা চোখ করে বললো,”সত্যি আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসি।”

“তাই! কে সে?”

“আমার ফারু পাখি,আমার ভালোবাসা,আমার প্রিয়তমা ফারহা রহমান।”এইবার বেলা অবাকের শীর্ষে পৌছে যায়।তার মানে কি রাফিদের বড় বোনকেই দাভাই ভালোবাসে।

“ওয়াও দাভাই।তারমানে ফারহা আপুই আমার হবু ভাবি হতে যাচ্ছে।”

“হ্যাঁ,তবে শোন এখনই এই ব্যাপারটা মম ড্যাডকে জানানোর দরকার নেই।আগে ফারুপাখিকে আমার ভালোবাসার কথাটা জানাই তখন সবাইকে জানাবো।”

“তো তাড়াতাড়ি জানিয়ে দে দেরি করছিস কেন?”

“হ্যাঁ জানাবো খুব শীঘ্রই জানাবো।তুই এখন যা ঘুমিয়ে পড়।সকালে রেডি হয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যাস কলেজে।আমি প্রিন্সিপালকে ফোন করে জানিয়ে দিবো তোর এডমিশনের কথা।”

“ঠিক আছে দাভাই।” তারপর বেলা মেঘের রুম থেকে চলে যায় আর মেঘ আবার ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করতে বসে।

____________

পরদিন সকালে রাফিদ কলেজে চলে যায় আর ফারহা ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।ফারহা একা একা রাস্তা দিয়ে হেটে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে যাচ্ছে।হঠাৎ একটা গাড়ি অনেক স্পিডে এসে ফারহার সামনে কষে ব্রেক করে।ফারহা সেখানেই দাড়িয়ে যায়।১০ সেকেন্ড পর গাড়ি থেকে একজন বের হয়।সামনে তাকিয়ে দেখে মেঘ গাড়ি থেকে বের হচ্ছে।মেঘকে এই সময়ে এখানে এক্সেপক্ট করেনি ফারহা।মেঘ ফারহার সামনে এসে দাড়িয়েছে।ফারহা মেঘকে বলে উঠলো,

“কি হলো মিস্টার চৌধুরী এভাবে আমার পথ আটকে দাড়িয়েছেন কেন? সরে যান।”

“ওয়েট ফারুপাখি।তুমি আগে গাড়ি উঠে বসো তোমার সাথে কথা আছে।

“ওয়াট!কে ফারুপাখি?আমার নাম ফারহা রহমান।”

“নো ইউ আর মাই ফারুপাখি।নাউ যেটা বলছি সেটা করো গাড়িতে উঠে বসো।”

“আমি আপনার সাথে কেন যাবো।আমার আপনার সাথে কোনো কাজ নেই।”

“বাট আমার আছে।ইউ নো আমি একজন পুলিশ অফিসার।আমি যেভাবে বলবো সেভাবে তোমাকে করতে হবে।যদি তুমি অপরাধী না হও আর ভুল না করো তাহলে আমার সাথে যেতে প্রবলেম হওয়ার কথা না।”মেঘ ফারহার কানের কাছে মুখ নিয়ে ধীরকন্ঠে বলে উঠলো,”আর ইউ,,,”মেঘ আর বলতে পারলো না তার আগেই ফারহা নিজে গিয়ে মেঘের গাড়িতে বসে।মেঘ একটা মুচকি হাসি দেয় আর চোখে সানগ্লাস টা পড়ে গাড়িতে উঠে বসে গাড়ি চালাতে লাগলো।মেঘ কয়েকবার আর চোখে ফারহার দিকে তাকায়।ফারহা নিজের মতো করে বাইরে তাকিয়ে আছে।এই পর্যন্ত একবারও মেঘের দিকে তাকায়নি।বিষয়টা মেঘের খুব একটা ভালো লাগেনি কিন্তু ওটা নিয়ে মাথা ঘামায়নি।মেঘ ফারহাকে নিয়ে নদীর পারে আসে।বিস্তৃত পরিবেশে সবুজের সমারোহ পাশে বণফুলে সমারোহ। কচুরির ফুল গুলো নদীর ঢেউ সমান্তরাল ভাবে ভেসে চলছে।মাথায় উপর সূর্যটা চিকচিক করছে আর হালকা বাতাস চলছে।বাতাসে ফারহার চুলগুলো উড়ছে আর ফারহা বারবার সেই চুলগুলোকে কানের পিছনে গুঁজে দিচ্ছে।মেঘের ইচ্ছে করছে চুলগুলোকে ছুঁয়ে দিতে কিন্তু ফারহা হয়তো এটাতে ওভার রিয়েক্ট করতে পারে তাই করছে না।মেঘ ফারহা কেউই কথা বলছেনা।অনেকক্ষণ ওর ফারহা বিরক্তি নিয়ে বললো,”মিস্টার চৌধুরী অনেকক্ষণ হলো আমরা এসেছি।আপনি কি জিজ্ঞেস করার তাড়াতাড়ি করুন আমার ভার্সিটি যেতে হবে।লেট হয়ে যাবে নয়তো।”

“তোমার আজ ভার্সিটি যেতে হবে না ফারুপাখি।আজ দুপুর পর্যন্ত আমরা এখানেই থাকবো।”

“মিস্টার চৌধুরী আমার মনে হয় না আপনার জিজ্ঞাসাবাদ এতক্ষণ চলবে সো যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন।”

“ফারুপাখি এই জায়গাটা দেখেছো কত সুন্দর।আমি প্রায়সময়ই এই জায়গায়টায় আসি।যখনই মন ভালো থাকুক অথবা খারাপ থাকুক আমি এইখানে এসে বসে থাকি।আজ প্রথমবার কাউকে আমি আমার সাথে করে  এখানে নিয়ে এলাম।ফারুপাখি আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই।”মেঘ ফারহার হাতজোড়া নিজের হাতের নিয়ে বলে উঠলো,”আই লাভ ইউ ফারুপাখি।আমি তোমাকে অনেক ভালোবেসে  ফেলেছি।”মেঘের কথায় ফারহার অনেক রাগ হয়।ফারহা কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিলো মেঘ হয়তো এরকম কিছু একটাই বলবে।ফারহা হাত ঝাড়া দিয়ে বললো,”হাউ ডেয়ার ইউ মিস্টার চৌধুরী!আপনি এসব বলার জন্য আমাকে নিয়ে এসেছেন।মিথ্যা বলতে আপনার লজ্জা করলো না।”

“সরি ফারুপাখি বাট ওটা না বললে তুমি আসতে না।তাই বাধ্য হয়ে বলেছিলাম।ট্রাস্ট মি ফারুপাখি যেদিন তোমাকে দেখেছি সেদিন যেন আমার হৃদস্পন্দন কয়েক মুহূর্তের জন্য থেমে গিয়েছিলো৷ তোমার হরিনীর ন্যায় চোখ, ঠোঁটের হাসি এক মুহূর্তে যেন আমাকে পাগল করে তুলেছিলো৷ যখন তোমার ওই সুমধুর কন্ঠে গান শুনেছিলাম সেদিনই আমার হৃদয়টা তোমাকে দিয়ে ফেলেছি।তারপর যখন তোমার পরিবার তোমার স্ট্রাগল তোমরা কিভাবে কি পরিস্থিতিতে থাকো সেটা শুনে তোমার প্রতি আরো বেশি মুগ্ধ হয়েছিলাম।আই রেইলি লাভ ইউ ফারুপাখি।” বলতে বলতে মেঘ ফারহার সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়ে তৎক্ষনাৎ ফারহা আগুন চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে,”বাট আই ডোন্ট লাভ ইউ মিস্টার চৌধুরী।আপনাদের মত বড়লোকদের মতে এই সব ভালোবাসা হলো মোহ।এই যে বললেন না আমার অসহায়ত্ব দেখে আপনার মায়া হলো এইসব দুইদিন পর ঠিকই চলে যাবে যখন বড়লোক ঘরের কোনো মেয়ে দেখবেন।আপনাদের মতো বড়লোকদের আমার ভালো করেই জানা আছে।”

“তুমি কোন ছেলেকে কি রকম ভাবো জানি না তবে আমি মোটেও এরকম নই।আমার ফ্যামিলি আমাকে ভালো শিক্ষা দিয়েছে।বিলিভ মি ফারুপাখি আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।আমি যথেস্ট চেষ্টা করবো তোমাকে সুখে রাখার।কখনো কোনো কষ্ট পেতে দিবো না তোমাকে আমি।সবসময় তোমার বিপদে ঢাল হয়ে দাড়াবো আমি।”

“আপনার এইসব ফালতু কথা শোনার সময় আমার নেই।নেক্সট টাইম এই নির্লজ্জ চেহারাটা নিয়ে আমার সামনে আসবেন না।আপনার মতো লোককে আমি আমার সামনে দেখতে চাই না।”এই বলে ফারহা একটা রিক্সায় বসে ওখান থেকে চলে যায়।মেঘের রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে যায়।হাত মুঠো করে ফেলে কপালের রগগুলো ফুলে যায়।মেঘ দাতেঁদাত চেপে বললো,”ফারুপাখি এতো সহজে এই মেঘ চৌধুরী তোমাকে ছেড়ে দেবে না।ছেড়ে দেবার জন্য ভালোবাসিনি তোমাকে।তোমাকে ভালোভাবে বুঝিয়েছিলাম তুমি বুঝনি।এবার যা যা হবে তার জন্য তুমি দায়ী থাকবে ফারুপাখি।”মেঘ গাড়িতে বসে অনেক জোরে গাড়ি চালিয়ে ওখান থেকে চলে যায়।

____________

৮. 

রাফিদের কলেজে প্রবেশ করে বেলা।নিজেদের গাড়ি নিয়েই কলেজে আসে।গাড়িটা ড্রাইভারের সাথে কলেজের বাইরেই পার্কিং করে রাখে বেলা।কলেজে ঢুকে সে দেখে অনেকগুলো ছেলেমেয়ে নিজেদের মতো কথা বলছে।কেউ দাড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে কেউ বসে।কলেজটা বেলাদের ক্যাটাগরির না হলেও বেলা মানিয়ে নিচ্ছে কোনোরকম।আশেপাশে তাকিয়ে রাফিদ কে খুঁজছে বেলা।কিন্তু কোথাও পাচ্ছে না।হঠাৎ একটু দূরে তাকিয়ে দেখে রাফিদ ক্যান্টিনে বসে আছে একা একটা টেবিলে।রাফিদকে দেখেই বেলার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে।সোজা ক্যান্টিনে চলে যায়।রাফিদ ক্যান্টিনে বসে ছিলো আর কিছু একটা নিয়ে ভাবছিলো হঠাৎ সে দেখে একটা মেয়ে ওর বসা টেবিলেই আরেকটা চেয়ারে বসে পড়ে।মেয়েটাকে দেখে তার খুব চেনা চেনা লাগছে   কিন্তু কোথায় দেখেছে ঠিক মনে করতে পারছে না।হঠাৎ বেলা রাফিদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,”হাই আমি বেলা চৌধুরী।কলেজে নতুন ভর্তি হয়েছি।”রাফিদ ভদ্রতার খাতিরে হ্যান্ডশেক করে বলে উঠলো,”হাই আমি রাফিদ রহমান।”রাফিদ আর কিছু বললো না।বেলা ভাবছিলো হয়তো কিছু একটা বলবে।বেলা নিজেই জিজ্ঞেস করলো,”আমাকে চিনতে পারছেন না?ভুলে গেলেন নাকি।”এবার রাফিদ কৌতুহল  দমিয়ে রাখতে না পেরে বললো,”হ্যাঁ আসলে আপনাকে দেখে  খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছিলো।কিন্তু কোথায় দেখেছি সেটা মনে করতে পারছি না।”

“আরে ওইদিন রাস্তায় আপনার সাথে দেখা হয়েছিলো।আমি খুব দ্রুত গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলাম আর ভুল করে আপনার উপর কাঁদা ছিটকে পরে।”

“”ওহ হা মনে পরেছে। আপনিই তাহলে সেই।”

“হ্যাঁ আমিই সেই।সেদিনের জন্য সরি আসলে খুব তাড়াহুড়োয় ছিলাম তাই খেয়াল করিনি।”

“ইটস ওকে নো প্রবলেম।”বেলার মনে মনে বেশ রাগ হলো।সে চাচ্ছে রাফিদের সাথে আরো বেশিসময় কথা বলতে কিন্তু এই ছেলেটা অল্পতেই কথা সেরে নিচ্ছে।বেলা রাফিদকে জিজ্ঞেস করলো,”আপনি কোন ইয়ারে পড়েন?”

“অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ি আমি।”

“ওয়াও গ্রেট!আমিও তো অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ি।তাহলে আমরা কি বন্ধু হতে পারি?আসলে আজকে প্রথম তো তাই কাউকে চিনি না।আপনাকে ওইদিন দেখলাম তাই কলেজে এসে আপনাকে দেখে আপনার কাছেই আসলাম।”

“না।আমি কোনো মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব করি না।”

“কেন?মেয়েরা কি আপনার সাত জন্মের দুশমন নাকি?”

“না সেরকমটা নয়।আমি কারো সাথে বন্ধুত্ব করি না।একা থাকতে পছন্দ করি।”রাফিদের কথা শুনে বেলা বিড়বিড় করে বলে উঠলো,”কি নিরামিষ ছেলে রে বাবা।একে বিয়ে করলে তো আমার সারাজীবন চুপচাপই কেটে যাবে।জামাইয়ের সাথে এতো কথা বলার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।”

“কি বিড়বিড় করছেন?”

“না কিছু না।এই আপনি কেমন ছেলে হা।ফ্রেন্ডস ছাড়া জীবন চলে নাকি।”বেলা জোর করে রাফিদের সাথে হাত মিলিয়ে বলে উঠলো,”আজ থেকে আমরা ফ্রেন্ডস।এখন আমি তোমাকে তুমি বলে ডাকবো আর তুমি আমাকে তুমি বলে ডাকবা ওকে?”

“না আমি কাউকে কিচ্ছু বলে ডাকতে পারবো না।”এই বলে রাফিদ উঠে চলে যেতেই বেলা পথ আগলে দাড়িয়ে বললো,”এই ছেলে কি মনে করো তুমি নিজেকে।একটা মেয়ে নিজে থেকে তোমার সাথে বন্ধুত্ব করতে চাইছে আর তাই তুমি ভাব নিচ্ছো।এতো দেমাগ তোমার?”

“কোথায় ভাব নিলাম আমি?”

“তাহলে আমার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতে সমস্যা কোথায় তোমার?”

“আমি আগেই বলেছি আমি কারো সাথে ফ্রেন্ডশিপ করি না।এখন আমার পথ ছাড়ুন ক্লাস টাইম হয়ে যাচ্ছে।”এই বলে রাফিদ ওখান থেকে চলে যায়।বেলা দুষ্টুমি হাসি দিয়ে বললো,”ফ্রেন্ডশিপ তো আমি তোমার সাথে করবোই মিস্টার এরোগেন্ট সেটা যেভাবেই হোক না কেন বাই হুক অর বাই ক্রুক।” 

____________

প্রচন্ড রাগ নিয়ে ফারহা রিকশা ওঠে তো বসে তবে আর ভার্সিটি যায় না ভার্সিটির উল্টো দিকে চলে যায়৷ রিকশা থেকে নেমে ফারহা রিকশাচালকের ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে একটা ভাঙ্গা বাড়ির ভেতর ঢুকতে নিলে রিকশাচালক বলে ওঠে ,” আফামনি আপনে কই জান? এই হানে তো এই ভাঙ্গা বাড়িডা ছাড়া আর কোন বাড়ি নাই৷ আর এই বাড়িডা তো দেইখা মনে হয়না কোন মানুষজন থাকে৷” ফারহার চোখে মুখে অদ্ভুত হাসি খেলে উঠলো রিকশাচালকের কথা শুনে৷ রিকশা চালক ফারহার হাসির মানে বুঝতে না পেরে কিছু বলতে যাবে তখনি ফারহা ভাঙ্গা বাড়িটার ভেতর ঢুকে গেল৷ 

.

.

.

#চলবে……………

[সবার গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি]

#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া

#ফারহানা_আক্তার_ছবি_ও_রাফি

#পর্ব_০৬

.

.

🌸

এই হানে তো এই ভাঙ্গা বাড়িডা ছাড়া আর কোন বাড়ি নাই৷ আর এই বাড়িডা তো দেইখা মনে হয়না কোন মানুষজন থাকে৷” ফারহার চোখে মুখে অদ্ভুত হাসি খেলে উঠলো রিকশাচালকের কথা শুনে৷ রিক্সাচালক ফারহার হাসির মানে বুঝতে না পেরে কিছু বলতে যাবে তখনি ফারহা ভাঙ্গা বাড়িটার ভেতর ঢুকে গেল৷ 

৯.

মেঘ নিজের রাগটা দমন করে থানায় চলে গেল৷ থানায় ঢুকতেই মেঘের ফোনটা বেজে ওঠে৷ মেঘ কল রিসিভ করে হ্যালো বলতে ফোনের ওপাশ থেকে কেউ বলে উঠলো,” স্যার ম্যাম কিছুক্ষণ আগে একটা ভাঙ্গা বাড়ির ভেতর ঢুকে গেল৷”

” ওই বাড়িটা কার? “

” স্যার ওই বাড়িটা কার জানি না তবে এই ওই বাড়িটা ভাঙ্গা অবস্থায় আছে প্রায় পাঁচ বছর৷”

” আমি আসছি ৷”

” ওকে স্যার আমি লোকেশন সেন্ড করছি৷” 

মেঘ থানা থেকে বের হয়ে তার গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে৷ 

                  প্রচন্ড রেগে আছে ফারহা ধাড়ালো ছুড়ি হাতে রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে সামনে দাড়িয়ে থাকা দু’জন ব্যক্তির দিকে৷ লোক দুটো মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে৷ প্রচন্ড ভয়ে মুখ থেকে একটা শব্দ বের হচ্ছে না কারোর৷ ফারহা প্রচন্ড জোড়ে টেবিলের উপর ছুড়িটা গেঁথে উঠে দাড়িয়ে বলে উঠলো,” তোমাদের সাহস কি করে হয় আমার কথা অমান্য করার? আন্সার মি ড্যাম ইট৷”

” মা,, মানে ম্যাম আমরা আপনার কথা মত কাজ করতে ছেলে গুলো তাদের বসের নামটাও বলে দিতে চেয়েছিলো কিন্তু তার আগে জনি নামের ছেলেটি হুট করে ছুড়ি নিয়ে তার বন্ধুদের গলা কেটে দেয় আর তারপর নিজের গলা কেটে ফেলে৷ এত দ্রুত এই সব হয়েছে যে আমরা কিছু করতে গিয়েও করতে পারি নি৷ আই এম সরি ম্যাম৷” 

ফারহার মাথায় যেন আগুন জ্বলছে৷ ছেলে গুলোকে কঠিন শাস্তি দিতে চেয়েছিলো ফারহা কিন্তু তা হয়ে উঠেনি যখন তখন না হয় তাদের বসকে ধরে সে স্বাদ পূর্ণ করবে৷ এটা ভেবে ফারহার ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো৷ ফারহা ছুড়িটা হাতে নিয়ে ছেলে গুলোর সাথে ঠিক কি কি হয়েছিলো তা সি সি ক্যামেরার ফুটেজে দেখতে লাগলো ফারহা৷ ফারহা পুরো ভিডিও টা দেখে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,” নেক্সট প্লান আজকের মধ্যে এক্সিকিউট হওয়া চাই গট ইট৷”

” ইয়েস ম্যাম৷” এক সাথে লোক দুটো বলে উঠলো৷ ফারহা উঠে যেতে নিবে তৎক্ষনাৎ ফারহার ফোনে একটা মেসেজ আসে৷ ফারহা মেসেজটা অপেন করে দেখতে রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলো,” মিস্টার মেঘ চৌধুরী কাজটা মটেও ভালো করলে না৷ এর পরিনাম তোমাকে ভুগতে হবে৷” কথাটা বলে লোক দুটোর উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো, তোমরা বাকি টিম মেম্বারদের জানিয়ে দিবে দুদিন যেন তারা কেউ কোন প্রজেক্টে হাত না দেয় আর বাইরে যেন বার না হয়৷ আর তোমরা আজকের দিন এখানে থাকবে আর বাকি প্লান এখান থেকে করা হবে বাইরে বের হবে না৷”

ফারহার কথা শুনে দুজনে সম্মতি জানায়৷ ফারহা খুব সাবধানে সিড়ি দিয়ে উঠে দেওয়ালে থাকা সুইচের বাটনে টাচ করতে উপরের দরজাটি খুলে যায়৷ এদিকে মেঘ সেই ভাঙ্গা বাড়ি তন্যতন্য করে খুঁজেও ফারহার দেখা পায়নি৷ চারিদিকে শুধু বাড়িটির ধ্বংসাবশেষ এখানে কোন মানুষের চিহ্ন পর্যন্ত নেই৷ সেখানে ফারহাকে খুজে পাবে কি করে মেঘ? মেঘের প্রচন্ড রাগ হলো তার ইনফরমারের উপর৷ মেঘের ধারণা তার লোক তাকে ভুল ইনফরমেশন দিয়েছে৷ ফারহাকে না পেয়ে মেঘ ভাঙ্গা বাড়িটা থেকে বেড়িয়ে যেতে ফারহা বেড়িয়ে আসে৷ আড়ালে দাড়িয়ে মেঘকে রেগে চলে যেতে দেখে রহস্যময়ী হাসি হাসলো ফারহা৷ এই রহস্যময় হাসির রহস্য আদৌ কি মেঘ উদঘাটন করতে পারবে? নাকি সেটা অধরাই থেকে যাবে?

                   মেঘ থানায় না গিয়ে বাড়িতে চলে যায়৷ মাথা আজ প্রচন্ড গরম৷ প্রথমত ফারহা তাকে রিজেক্ট করেছে আর দ্বিতীয়তঃ তার ইনফরমারের ভুল ইনফরমেশন৷ দুটো বিষয়ে মেঘ আজ চরম বিরক্ত৷ এদিকে বেলা আজ কলেজ থেকে দ্রুত ফিরে এসেছে কারণ আজ তার বাবা মা দেশে ফিরছে৷ ফ্রেস হয়ে বেলা মেঘের রুমে যেতে দেখে রুমের জিনিসপত্র এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে৷ বেলার ধারণা তার হান্ডসাম দাভাইয়ের মন খারাপ নয়তো এভাবে রুমের জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতো না৷ মেঘ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বেলাকে দেখে নরমাল গলায় বলে উঠলো ,” কি বেপার তুই এখন বাড়িতে? তোর না কলেজ আছে?”

বেলা জিনিসপত্র ঠিক জায়গায় রাখতে রাখতে বলতে লাগলো,” আজ মম ড্যাড আসছে৷ বড় বাবা আমাকে আজ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে বলেছে৷”

” ওহ”

বেলা মেঘের সামনে গিয়ে চোখে মুখে সন্ধেহের ছাপ নিয়ে মেঘকে প্রশ্ন করে৷”হ্যাঁ রে দাভাই সত্যি করে বলতো তোর কি হয়েছে? আমার মনে হচ্ছে তোর কিছু একটা হয়েছে৷”

মেঘ বেলার চুল ধরে সাইডে সরিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল সেট করতে করতে বলতে লাগলো,” ফারহা আজ আমায় রিজেক্ট করেছে৷” কথাটা বেলার কর্ণগোচর হতে বিস্ময়ের চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে রইল৷ আয়নায় বেলাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেঘ ভ্রু-জোড়া কুচকে জানতে চাইলো৷” কি বেপার তুই এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেন? তোকে দেখে মনে হচ্ছে তুই কোন এলিয়েনকে দেখছিস৷”

“দাভাই তুই তার থেকে কোন অংশে কম না৷ যেখানে ভাবি তোকে রিজেক্ট করলো সেখানে তুই এত শান্ত কি করে?”

” তো আমার এখন কি করা উচিত শুনি?”

” বেশি কিছু না মুখে দেবদাস ভাব ফুটিয়ে কেঁদে কুদেঁ একাকার করবি৷ ভাংচুর করবি, মদ খাবি, পাগলের মত বিহেব করবি৷ আর নিজেকে একটা রুমে বন্দি করে রাখবি৷” মেঘ বেলার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো,” তুই কি ইদানিং বাংলা সিনেমা খুব বেশি দেখছিস?” মেঘের এমন প্রশ্ন শুনে বেলা হাসার চেষ্টা করে বলল,” কেন দাভাই আমি কি কিছু ভুল বললাম? আমি তো দেখেছি সিনেমায় প্রেমে ছ্যা’কা খেয়ে হিরোরা এমনটাই করে৷” মেঘ আর হাসি আটকিয়ে রাখতে পারলো না পেট চেপে ধরে হাসতে হাসতে বিছানায় লুটিয়ে পড়লো৷ বেলা তার এমন পাগলের মত হাসির কারণটা বুঝতে না পেরে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মেঘের দিকে৷ কিছুক্ষণ পর মেঘ হাসি থামিয়ে বেলার কাছে এসে বেলার মাথায় হাত রেখে বললো “শোন বেলুন ফারহা হ্যাঁ বলুক বা না বলুক ফারহাকে তো আমার হতেই হবে৷ আমি কোন সিনেমার হিরো নই যে হিরোইন প্রপোজাল এক্সেপ্ট না করায় কেঁদে কুটে দরজা বন্ধ করে বসে থাকবো৷ মেঘ চৌধুরী খুব ভালো করেই জানে তার ভালোবাসার মানুষকে কি করে নিজের করে নিতে হয়৷ শুধু মাত্র সময়ের অপেক্ষা৷ আমি তাড়াহুড়ো করে কিছু করতে চাইছি না৷”

” তারমানে রাফিদের বোন আমার ভাবী হচ্ছে এটা কনফার্ম?”

” হান্ড্রেড পার্সেন্ট৷”

মেঘ আর বেলার মাঝখানে হঠাৎ দুজনেরই ডাক পড়ে নিচে যাওয়ার জন্য।বেলা সিড়ি দিয়ে দ্রুত নামছে পিছনে মেঘ।বেলা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে তা মম-ড্যাড ভেতরে ঢুকছে।বেলা এক্সাইটেড হয়ে তার ড্যাড শাহিন চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে বললো,”ড্যাড কেমন আছো তুমি?জানো কত মিস করেছি তোমাকে?”

“আই এম ফাইন এন্ড আই মিস ইউ টু মাই প্রিন্সেস।”পাশ থেকে বেলার মম মিরা চৌধুরী বলে উঠলো,”শুধু ড্যাডকেই মিস করেছো আমাকে করোনি?”বেলা তার ড্যাডকে ছেড়ে দিয়ে তার মমকেও জড়িয়ে ধরে বললো,”তোমাকে তো সবচেয়ে বেশি মিস করেছি মম।”

“আই মিস ইউ টু।”ততক্ষণে সেখানে মেঘ,শাফায়াত চৌধুরী,মায়রা চৌধুরী তিনজনেই উপস্থিত হয়।মেঘ এগিয়ে গিয়ে শাহিন চৌধুরী ও মিরা চৌধুরী দুজনকেই জড়িয়ে ধরে বললো,”চাচ্চু ছোট মা তোমরা কেমন আছো?আমাদের কথা তো ভুলেই গেছো তাই না?”শাহিন চৌধুরী মেঘকে ছেড়ে দিয়ে বলে উঠলো, “হ্যাঁ ভালো আছি।আর ভুলে গেলে কি দেশে আসতাম।তোমাদের সবাইকে অনেক মিস করছিলাম তাইতো চলে এলাম তোমাদের কাছে।”পাশ থেকে মায়রা চৌধুরী বলে উঠলো,”খুব ভালো করেছো শাহিন।এখন তোমরা যাও ফ্রেশ হয়ে আসো অনেক জার্নি করে এসেছো।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”তারপর শাহিন চৌধুরী ও মিরা চৌধুরী নিজেদের রুমে চলে যায় আর বাকিরাও।রাতে সবাই ডিনার শেষে ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে গল্প করছে।হঠাৎ শাহিন চৌধুরীর একটা কথা শুনে বেলা ও মেঘ দুজনেই দাড়িয়ে যায়।কেননা শাহিন চৌধুরী হঠাৎ করে শাফায়াত চৌধুরীকে মেঘ আর বেলার বিয়ের কথা বলে বসে।কথাটা শুনে দুজনেই চমকে যায়।বেলা কিছুটা রাগান্বিত হয়ে বললো,”এটা কি করে হতে পারে ড্যাড? আমার আর দাভাইয়ের বিয়ে?”

“কেন নয় প্রিন্সেস।তোমাদের ছোট থেকেই আমি আর ভাইয়া ঠিক করে রেখেছি তোমরা বড় হলে তোমাদের বিয়ে দেওয়া হবে।আর সেটার উপযুক্ত সময় এখনই।”

“কিন্তু চাচ্চু আর বেলাকে সবসময় ছোট বোনের চোখে দেখেছি বোনের মতো স্নেহ করেছি।আমার কোনো আপন বোন নেই তাই বেলাকেই আপন বোনের মত করে দেখেছি।ইভেন বেলাও আমাকে বড় ভাইয়ের মতো দেখে। সরি চাচ্চু এই বিয়ে সম্ভব না।”মিরা চৌধুরী দাড়িয়ে বলে উঠলো,”মেঘ তুমি আপন বোনের চোখে দেখেছো কিন্তু আপন বোন তো নয়।আমরা ছোট থেকেই ঠিক করেছি তোমাদের বিয়ে হবে দ্যাট’স ইট।”বেলা চিৎকার করে বললো,” নো মম।আমি কিছুতেই দাভাইকে বিয়ে করতে পারবো না।তোমরা যদি জোর করো তাহলে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হবো ।”ঘটনা বেগতিক দেখে শাফায়াত চৌধুরী দাড়িয়ে বলে উঠলো,”শাহিন কুল ডাউন।তুই আর আমি ঠিক করে রেখেছিলাম মেঘ আর বেলা মামুনি বড় হলে তাদের বিয়ে দিবো কিন্তু যেখানে ওরা নিজেদেরকে ভাইবোন মনে করে সেখানে আমরা জোর করতে পারি না।ওরা এখন বড় হয়েছে।ওদের নিজেরও ডিসিশন নেওয়ার রাইট আছে।”কথাটার সাথে মেঘের মম মায়রা চৌধুরীও সম্মতি জানালেন।কিন্তু বেলার মম-ড্যাড দুজনই মনে মনে নাখোশ।তারা দুজনই চাচ্ছিলেন মেঘ আর বেলার বিয়েটা হোক।কিন্তু বড় ভাইয়ের মুখে কথা বলার সাহস তাদের নেই তাই কিছু বললো না।শাহিন চৌধুরী চোখের ইশারায় মিরা চৌধুরীকে শান্ত থাকতে বললো।

“ঠিক আছে তাহলে।ওরা যখন বিয়েতে রাজি নয় তাহলে আর আমরা এই বিষয়ে আগাবো না।মেঘ আই এম সরি ফর দিস টপিক।”

“ইটস ওকে চাচ্চু।ইউ নো হাউ মাচ আই লাভ ইউ।বাট এই টপিকে আর কোনো কথা বলোনা প্লিজ।”

“ওকে মাই বয়।”

                আজও ফারহার ভার্সিটিতে হাজির মেঘ।মুখে তার দুষ্টুমি হাসি।মেঘ কলেজে প্রবেশ করতেই সব মেয়ের ভীড় লেগে যায় তার চারপাশে।সবাই মেঘের সাথে হ্যান্ডশেক করছে আর হ্যান্ডসাম হ্যান্ডসাম হ্যান্ডসাম বলে মেঘকে পাম দিচ্ছে।ভীড় দেখে ফারহা ও তার বন্ধুরা এগিয়ে এলো এখানে কি হচ্ছে দেখতে।মেঘকে দেখে ফারহার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে যায়।আজও মেঘ তার ভার্সিটি এসেছে আর কি জন্য এসেছে সেটাও জানে ফারহা।হঠাৎ মেঘের চোখ যায় ফারহার দিকে।মেঘের মুখে দুষ্টুমির হাসি ফুটে উঠে।সকল মেয়েদের উদ্দেশ্য বলে উঠলো,”গাইজ তোমরা এখন যাও তোমাদের পরে কথা হবে।”মেয়েগুলো মেঘের কথা শুনে ওখান থেকে মেঘকে ফ্লাইং কিস দিতে দিতে চলে যায়।মেঘ সেগুলো হাত দিয়ে ক্যাচের মতো করে নিজের গালে লাগায়।মেয়েগুলোর ঢং দেখে ফারহার ইচ্ছে করছে মেয়েগুলোকে পানিতে চুবাতে।এভাবে ফ্লাইং কিস দেওয়ার কি আছে এই বজ্জাতটাকে।এরা কি জীবনেও হ্যান্ডসাম ছেলে দেখেনি।মেয়েগুলোর থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকাতে হঠাৎ  মেঘকে সামনে দেখে ঘাবড়ে পরে যেতে নিলে মেঘ ফারহার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলে।তনু,নেহাল,নিখিল,আয়মান ৪ জনই বেশ অবাক হয়ে যায়।ফারহাকে টাচ করায় নিখিলের বেশ রাগ হচ্ছে।মেঘ আর ফারহাকে এতটা কাছে দেখে নিখিলের একদমই সহ্য হচ্ছে না ইচ্ছে করছে মেঘের হাতটা কেটে ফেলতে।ফারহার বিরক্ত হয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো,

“মিস্টার চৌধুরী ছাড়ুন আমাকে।আমাকে টাচ করার সাহস আপনার হলো কি করে?”মেঘ বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,”সাহসটা আমার বরাবরই একটু বেশি ফারুপাখি।”মেঘের মুখে ফারুপাখি শুনে ফারহার সব বন্ধুরা আকাশ থেকে পড়লো।সবাই  কিছুটা আন্দাজ করতে পারলো মেঘ ফারহাকে কোন উদ্দেশ্যে এই নামে সম্বোধন করলো।ফারহার আবারও বলে উঠলো,” মিস্টার চৌধুরী ছাড়ুন বলছি আমাকে।আমার ভালো লাগছে না এসব?”এই বলে ফারহার বড় বড় নখ  মেঘের হাতে বসিয়ে দেয়।তাতেও মেঘের কোনো হেলদোল নেই।ফারহা অবাক হয়ে যায় এখনো মেঘ তাকে ছাড়ছে না এই নখের ব্যাথা কিভাবে সহ্য করছে।নিখিল এবার সইতে না পেরে মেঘের কাছে এসে মেঘের কলার ধরে বললো,” ফারুকে টাচ করার সাহস হলো কিভাবে আপনার?আমাদের কলেজে এসে আমাদেরই সামনে আমারই বন্ধুকে আপনি টাচ করেন।আপনি জানেন না আমি আপনার কি হাল করতে পারি।”নিখিলের কথায় এবার মেঘ ফারহাকে ছেড়ে  ভ্রু কুচকে নিখিলের দিকে তাকায়।নিখিল এখনও মেঘের কলার ধরে রেখেছে।ফারহা ও তার বন্ধুরা কেউই ভাবেনি যে নিখিল এইভাবে রিয়েক্ট করবে।কেউই নিখিলকে এই রূপে দেখেনি।মেঘের চোখ লাল হয়ে যায় কেউ মেঘের কলার ধরুক এটা মেঘের পছন্দ নয়।মেঘ নিখিলের হাত ধরে নিখিলকে ঘুরিয়ে নিখিলের হাত ওর পিঠের পিছনে এনে চেপে ধরে।এদিকে নিখিলের হাত চেপে ধরায় সে ব্যাথায় কুকরে যাচ্ছে।ফারহা ও তার বন্ধুরা ভাবেনি এরকম কিছু হবে।মেঘ নিখিলের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,”নেক্সট টাইম থেকে আর আমার কলার ধরার চেষ্টা করবি না।আর কি বললি তুই আমার কি হাল করবি তাইতো?এই মেঘ চৌধুরী কাউকে ভয় পায় না।অন ডিউটি পুলিশ অফিসারের কলারে হাত দিলে কি হতে পারে সেটা তোর ধারণাতেও নেই।”এই বলে নিখিলের হাত ঝটকা দিয়ে ছেড়ে দেয় মেঘ।ছাড়া পেয়ে নিখিল নিজের হাত ঢলতে থাকে।এবার মেঘ বাঁকা হেসে ফারহার দিকে তাকিয়ে বললো,”ফারুপাখি তুমি যতই আমাকে রিজেক্ট কর না কেন আমি তোমাকে ছাড়ছি না।মেঘ চৌধুরী থেকে তোমার নিস্তার নেই।এখন থেকে রোজ তোমার জীবনে আমার আনাগোনা হবে।যত যাই করো না আমি ২৪ ঘন্টা আমার চোখের নজরে থাকবে।”পাশে তাকিয়ে তনু,নেহাল আর আয়মানকে উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,” আজ থেকে আমার হবু বউকে দেখে রাখার দায়িত্ব তোমাদের।ওর যেন কোনো অসুবিধা না হয়৷ আর যদি কোন অসুবিধা হয় তাহলে……… ।”এই বলে মেঘ চোখে সানগ্লাসটা চোখে পরে নিয়ে ওখান থেকে বেড়িয়ে যায়।যায়।এদিকে ফারহার বাকি বন্ধুরা হ্যাঁ হয়ে মেঘের কথা গুলো শুনে মাথা নেরে সম্মতি জানালো৷ এদিকে ফারহা রাগে হাত মুঠ করে ফেলে।ইচ্ছে করছে এখানেই মেঘকে মেরে ফেলতে কিন্তু নিজের এই অদম্য ইচ্ছাটা দমিয়ে রাখলো।তনু ফারহার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,”এইসব কি ফারু?মেঘ চৌধুরী এসব কি বললো?”ফারহা তনুর দিকে তাকিয়ে গতকালের সব ঘটনা খুলে বললো।সব শুনে নিখিলের চোখ দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছে।ফারহা ও তার বন্ধুরা ওখান থেকে চলে যেতে নিখিল কাউকে একটা ফোন করে সেও ওখান থেকে চলে যায়। 

ফারহা কোন ভাবে ক্লাসগুলো শেষ করে৷ ক্লাস থেকে বের হতে আচমকা ফারহা তার মাথা দু’হাত ধরে চেপে ধরে পড়ে যেতে নিলে তৎক্ষনাৎ ……

.

.

.

#চলবে………

((দুঃখিত ব্যস্ততার জন্য গল্প দিতে বেশ দেরি হলো৷ ভুলত্রুটি সুন্দর ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷)

#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া

#ফারহানা_আক্তার_ছবি_ও_রাফি 

#পর্ব_০৭

.

.

🌸

ফারহা কোন ভাবে ক্লাসগুলো শেষ করে৷ ক্লাস থেকে বের হতে আচমকা ফারহা তার মাথা দু’হাত  চেপে ধরে পড়ে যেতে নিলে তৎক্ষনাৎ আয়মান ফারহাকে সামলে নিয়ে আলাদা খালি ক্লাস রুমে নিয়ে যায়৷  ফারহার হঠাৎ এভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বে এটা আয়মান নেহাল তনু কেউ বুঝতে পারেনি৷ নিখিল যেহেতু এখানে নেই আয়মান নিখিলকে ফোন করতে নিলে নেহাল বাধা দিয়ে বলে,” আয়মান এখন নিখিলকে নয় রাফিদকে ফোন কর আর ডক্টরকে সাথে নিয়ে আসতে বল ফার্স্ট৷”

“ওকে ” আয়মানের কাছে রাফিদের ফোন নাম্বার থাকায় দেরি না করে দ্রুত ফোন করে রাফিদকে৷ রাফিদ ক্লাসে থাকায় প্রথমবার ফোন বেজে যায় রাফিদ কল রিসিভ করে না৷ কিন্তু আয়মান আবারও কল দিতে রাফিদ ক্লাস থেকে বের হয়ে কল রিসিভ করে৷

” হ্যালো আয়মান ভাইয়া৷”

” রাফিদ দ্রুত আমাদের ভার্সিটিতে আসো ফারুর হঠাৎ করে শরীরটা খারাপ হয়ে গেছে৷ ” আয়মানের কথা শুনে রাফিদের ভয়ে চোখ মুখ শুকিয়ে যায়৷ ভয়ে ভয়ে রাফিদ বলে উঠলো ,” ভাইয়া দি’র কি মাথা ব্যাথা করছে?”

”  হ্যাঁ ঠিক ধরেছো৷ ক্লাস শেষ করে বের হওয়ার পর পর ফারু মাথা চেপে ধরে পড়ে যেতে নিলে আমরা সামলে নি৷”

” ভাইয়া আপনারা আপুর কাছে আরও কিছুক্ষণ থাকুন প্লিজ আমি এখুনি আসছি৷”

” ওকে বাট দ্রুত এসো৷” রাফিদ আর কিছু না বলে দৌড়ে কলেজ থেকে বেড়িয়ে গেল৷ যেটা বেলা দুর থেকে দেখলো ৷ 

১০.

            মেঘ অফিসে ঢোকা মাত্র হাবিলদার এসে জানায় কমিশনার স্যার এসেছে কিছুক্ষণ আগে আর তিনি মেঘের সাথে দেখা করতে চান৷ মেঘ কথাটা শোনা মাত্র দ্রুত কেবিনের দিকে হাটতে লাগলো৷ কেবিনের ভেতরে ঢুকতেই কমিশনার বলে উঠলো,” মিস্টার চৌধুরী এটা আপনার কাছে আমি একদমিই আশা করি নি৷”

” কি হয়েছে স্যার আপনাকে এত বিচলিত কেন দেখাচ্ছে? আর আমার থেকে কি আশা করেন নি আপনি?”

কমিশনার এবার রেগে বললো,” শহরে একের পর এক মার্ডার হচ্ছে৷ আর আপনি এখন পর্যন্ত খুনিকে ধরতে পারলেন না৷ রির্পোটার পুলিশের ব্যর্থতা ডিপার্মেন্টের সন্মান সব জনগনের সামনে কি করে নষ্ট করবে তার প্লানিং করছে৷ আপনাকে একটা দায়িত্ব দিয়েছিলাম কিন্তু আপনি সে দায়িত্ব পালন করতে পারলেন না৷”

“স্যার খুনি কে  সেটা খুব শীগ্রই আমরা জানতে পারবো৷”

” কিন্তু কবে মিস্টার চৌধুরী? আপনি কি জানেন ইয়ামিন হাওলাদারের পর এখন তার বড় ছেলে  ছেলে ইমাম হাওলাদার কিডন্যাপ হয়েছে?”

“হোয়াট! “

” খবরটা রিপোর্টারদের থেকে আড়াল করা হয়েছে৷ যদি তাড়া জানতে পারে ইমাম হাওলাদার নিখোঁজ তাহলে কি হবে তার বিন্দুমাত্র ধারণা আপনার আছে মিস্টার চৌধুরী?”

” আছে স্যার আর আমার টিম যেভাবে হোক ইমাম হাওলাদারকে খুঁজে বের করবো৷”

” হাতে সময় বড্ড কম আপনাকে যত দ্রুত সম্ভব কাজটা শেষ করতে হবে মিস্টার চৌধুরী৷”

” ওকে স্যার৷” 

কথা গুলো বলে কমিশনার বেড়িয়ে গেলেন৷ মেঘ দ্রুত তার ইনফরমারকে ফোন করে৷ 

               রাফিদ ভার্সিটিতে যাওয়ার পূর্বে একটা বড় ফার্মেসিতে ঢুকে কিছু মেডেসিন কিনে নেয়৷ ভার্সিটিতে ঢুকে আয়মানকে ফোন করতে তারা জানায় কত নম্বর ক্লাসরুম আর কোন বিল্ডিংয়ে আছে৷ সে অনুযায়ী রাফিদ গিয়ে হাজির হয়৷ 

” তনু আপু তোমার কাছে পানি আছে?”

” আছে রাফিদ এই নেও৷” ব্যাগ থেকে পানির বোতলটা বের করে রাফিদ কে দিলো৷ ফারহা এখনো সেন্সলেস হয়ে আছে৷ রাফিদ ফারহার চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়৷ কিছুক্ষণ পর ফারহার জ্ঞান ফিরতে রাফিদ খুব দ্রুত কয়েকটা মেডিসিন ফারহাকে খাইয়ে দেয়৷ ফারহা মেডিসিন গুলো খেয়ে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রইল৷ তনু ফারহাকে মেডিসিন খেতে দেখে রাফিদকে প্রশ্ন করলো৷” এগুলো কিসের মেডিসিন দিলে ফারুকে রাফিদ?” তনুর প্রশ্ন শুনে রাফিদ কিছু একটা ভেবে বলে, ” আপু দি’র মাইগ্রেনের প্রব্লেম আছে ৷”

” ওহ তাই বলো৷ আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম৷”

রাফিদ আর কাউকে কোন প্রশ্ন করতে না দিয়ে বললো,” আপু ভাইয়া দি’র এখন রেস্টের প্রয়োজন৷ আমি আপুকে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি৷” রাফিদের কথা শুনে আয়মান বলে উঠলো, আমরা তোমাদের বাড়িতে পৌছে দিচ্ছি৷” রাফিদ বারণ করলো না কারণ এই মুহূর্তে তার দি’র রেস্ট প্রয়োজন৷ আর এখানে সেটা সম্ভব নয়৷ তাই রাফিদ  আয়মানের গাড়িতে যাওয়ার সির্দ্ধান্ত  নিলো৷ 

                মেঘ তার পুরো টিমকে ইমাম হাওলাদারকে খোজার জন্য লাগিয়ে দিয়েছে তবে সেটা গোপনে৷ মেঘ কোন ক্লু পাচ্ছে না৷ ইমাম হাওলাদারের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও কোন ক্লু পাওয়া যায়নি৷ মেঘ তবুও হতাশ হলো৷ সে মুহূর্তে মেঘের এক ইনফরমার জানায় ইমাম হাওলাদার কিডন্যাপ হওয়ার পূর্বে তার অফিসের বাইরে একটা গাড়ি ঘুরাফেরা করতে দেখা গিয়েছে৷ সি সি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে তবে আর একটা ভালো খবর হলো গাড়ির নাম্বারটা দেখা গেছে৷ খবরটা শোনা মাত্র মেঘ ঘন গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে এক বিন্দু আলোর দেখা পেল৷

” খোঁজ নেও গাড়িটা কার?”

” ওকে স্যার৷ আমি এখনি খোঁজ নিচ্ছি৷” 

মেঘ চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলতে লাগলো,” ইমাম হাওলাদারকে তো জীবিত খুঁজে বের করতেই হবে তার সাথে এই খুন গুলো কে  করেছে আর কেন করেছে সবটা আমাকে জানতে হবে৷” 

                ফারহাকে রুমে শুইয়ে দিয়ে রাফিদ ফারহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে৷ মাথা যন্ত্রনায় ফারহার চোখমুখ কেমন যেন নির্জীব হয়ে গেছে৷ রাফিদ মায়াভরা দৃষ্টিতে তার বোনের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,” দি তুই কবে সুস্থ হয়ে যাবি? কবে তোর সবটা মনে পড়বে? কবে তোর এই জেদ ছেড়ে দিয়ে ফিরে যাবি? তোর কষ্ট যে আমার সহ্য হয় না দি৷ প্লিজ তুই দ্রুত সুস্হ হয়ে যা না দি৷ ” বলতে বলতে দুফোঁটা চোখের পানি গড়িয়ে পড়লো৷

এদিকে মেঘ যখন জানতে পেরেছে তার ফারুপাখি অসুস্থ হয়ে পড়েছে তখন থেকে মন আনচান করছে তার ফারুপাখিকে দেখার জন্য কিন্তু দায়িত্বের খাতিরে মেঘ তার ফারুর কাছে যেতে পারছে না৷ সে কষ্ট ও অস্থিরতা নিয়ে মেঘ তার টিম নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো খুনিকে খোঁজার উদ্দেশ্য৷ 

নিখিল হাজার টাকার দুটো মোটা বান্ডিল আট-দশ জন ছেলের দিকে বাড়িয়ে দিতে ছেলে গুলো টাকার বান্ডিল ছোঁ মেরে নিয়ে বললো,” কাজ হয়ে যাবে বড় ভাই৷ তবে লোকটা যে সে লোক নয় বড় ভাই তাই এই কাজে অনেক রিক্স যদি একবার ধরা পড়ি তো সারা জীবন জেলে পঁচে মরতে হবে৷”

” জেলে পঁচে মরবি কি মরবি না সেটা আমি শুনতে চাইছি না রনি৷ আমার কাজ না সম্পূর্ণ হলে আমি নিজে তোদের লাইফটা হেল করে দিবো মাইন্ড ইট৷”

ছেলে গুলো নিখিলের কথা শুনে একে অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল৷ মনে মনে নিজেদের গালি দিচ্ছে নিখিলের কাজ হাতে নিয়ে৷ 

” কাজটা আজই হওয়া চাই রনি৷”

” ওকে বড় ভাই৷”

মেঘ তার টিমকে দুটো ভাগ করে দিয়ে দুদিকে পাঠিয়ে দিয়ে মেঘ একাই গাড়ি নিয়ে এক ইনফরমারের সাথে দেখা করতে যায় কিন্তু মাঝপথে কয়েকটা ছেলে মেঘের গাড়ি আটকে ফেলে৷ মেঘ বুঝতে পারে তার উপর এখন এই ছেলে গুলো এ্যাটাক করবে৷ ছেলে গুলোর মুখ কাপড়ে ঢাকা বিধায় কারোর মুখ দেখা যাচ্ছে না৷ ছেলে গুলো মেঘের উপর হকিস্টিক দ্বারা আঘাত করতে নিলে হুট করে পেছন থেকে কয়েকজন কালো সুটবুট পড়া লোক এসে ছেলে গুলোকে বেধরক পিটিয়ে আদমরা করে ফেলে৷ মেঘ গাড়ি থেকে নেমে চোখের সানগ্লাস খুলে কালো সুটবুট পড়া লোক গুলোকে উদ্দেশ্য করে বলে,” স্টপ গাইজ৷ ছেলে গুলোকে ছেড়ে দেও আর এদের কে নিয়ে যাও আমি আসছি৷”

” ওকে স্যার৷” মেঘের কথা শুনে লোক গুলো ছেলে গুলোকে ছেটে হিচরে মাইক্রোতে তুলে নিয়ে চলে গেল৷ রাস্তাটায় জনগনের যাতায়াত কম থাকায় লোকজনের তেমন ভীড় হয়নি৷ মেঘ এক মুহূর্তের জন্য ইমামের কেস ইনভেস্টিকেট করার কথা ভুলে তার ফারহাকে এক নজর দেখার জন্য ফারহার বাড়ির উদ্দেশ্য গাড়ি স্টার্ট দেয়৷ 

                     ” এই কে তোরা? কি চাস আমার থেকে? আমাকে কেন এখানে আটকে রেখেছিস?” জ্ঞান ফিরে লোহার শেকলে হাত পা বাধা অবস্থায় দেখে বুঝতে বাকি নেই যে সে কিডন্যাপ হয়েছে৷ ইমাম হাওলাদার কথা গুলো কালো মাক্স পড়া লোক গুলোর উদ্দেশ্য ছুড়ে দিলেও লোকগুলো ইমামের কথায় কোন প্রত্যুত্তর করলো না৷ তারা নিজেদের মত কাজ করতে লাগলো৷ এদিকে ইমামের মাথায় বাজ পড়ার মত অবস্থা৷ আগের ডিল ক্যান্সেল হবার পর মোটা এমাউন্টের লস হয়েছে আর আগামীকাল যদি পঞ্চাশটা মেয়েকে ডেলিভারি করতে না পারে তাহলে মিস্টার এলান ওকে বাঁচতে দিবে না৷ মিস্টার এলান এক গুঁয়ে এবং এক কথার লোক প্রথম ডেলিভারি দিতে না পাওয়ায় প্রচন্ড রেগে গিয়েছিলো বলে কয়ে দ্বিতীয় চান্স নিয়েছিলো পঞ্চাশটা মেয়েকে ডেলিভারি দেওয়ার কিন্তু এবার কি হবে? আর লোক গুলো তো কিছু বলছে না তাহলে কি করে জানবো কে আমাকে কিডন্যাপ করেছে? আর কেন করেছে?” ইমাম হাওলাদার তার ভাবনায় বিভোর তখনি দু’জন লোক ইমামকে ধরে স্টেচারে শুইয়ে দিয়ে এটা হাতুড়ি নিয়ে তার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো৷

                  পুরনো আমলের ভাঙ্গাচোরা বাড়িটার সামনে দাড়িয়ে আছে উদ্দেশ্য তার ফারুপাখিকে দেখার৷ রাফিদ কাপড় ধুয়ে বেলকনিতে মেলে দিতে বাইরে গেটের সামনে পুলিশের গাড়ি দেখে রাফিদ কপাল কুঁচকে সন্ধেহের চোখে তাকিয়ে রইল৷ রাফিদ কি যেন ভেবে দ্রুত কাপড় গুলো দড়িতে মেলে দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়৷ 

“এক্সকিউজ মি আপনি এখানে?”

মেঘ কারো গলার আওয়াজ শুনে পাশে তাকিয়ে দেখে রাফিদ৷ 

” আপনি এই বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছেন যে? কাউকে কি খুজছেন?” রাফিদের কথাশুনে মেঘ ঝটপট উওর দিলো” হ্যাঁ আমি ফারহা রহমানকে খুঁজছি৷ উনি তো এ বাড়িতে থাকে তাই না?”

মেঘের কথা শুনে রাফিদের সন্ধেহ যেন আরও একটু গাঢ় হলো৷ গম্ভীর গলায় বলে উঠলো৷” দি’কে  কেন খুঁজছেন?”

রাফিদ যে ফারহার ভাই এটা মেঘ না জানার ভান করে বললো,” এ্যাকচুয়ালি ফারহা রহমানের ভার্সিটিতে তিনজন ছেলের ডেথ নিয়ে মিস ফারহাকে আমার কিছু প্রশ্ন করার আছে৷”

”  সরি স্যার তাহলে আজ আপনার দি’র সাথে দেখা করতে পারবে না৷ কেননা আপু বেশ অসুস্থ রেস্ট নিচ্ছে এই মুহূর্তে আমি আপনাকে আপুর সাথে দেখা করতে দিতে চাইছি না৷ আপনি আগামিকাল আসুন৷ কিন্তু মেঘ নাছরবান্দা সে তার ফারুপাখিকে দেখে তারপর যাবে৷

” মিস্টার রাফিদ এটা আমার কাজ আর আপনি আমাকে বলে দিতে পারেন না আমি কখন কি কাজ করবো৷ বাই দ্যা ওয়ে আপনি যে  সত্য বলছেন আপনার দি অসুস্থ সেটা আমি কি করে বিশ্বাস করি? হতে পারে আপনি মিথ্যা বলছেন?” মেঘের কথা শুনে রাফিদ বেশ রেগে যায়৷ আর মেঘকে বলে আসুন আমার সাথে……

মেঘ রাফিদের পেছন পেছন দো’তোলার চিলেকোঠার রুমে গিয়ে প্রবেশ করে৷ একটা সিঙ্গেল বেডে ফারহা ঘুমিয়ে আছে৷ চোখে মুখে চিন্তা আর ক্লান্তির ছাপ৷ বাতাসে চুল গুলো উড়ে ললাটে আঁচড়ে পড়ছে বারংবার, মেঘে না চাইতেও এক নিষিদ্ধ ইচ্ছে মনে চেপে বসেছে৷ হঠাৎ মেঘের ধ্যান ভাঙ্গে রাফিদের কথা শুনে৷

” আমার দি যে অসুস্থ সেটা আপনি নিজ চোখে দেখলেন তো? এবার চলুন৷” মেঘ গলা খাঁকাড়ি দিয়ে বলে উঠলো,” এক গ্লাস পানি হবে?” মেঘের কথা শুনে রাফিদ কিছুটা বিরক্তি নিয়ে পানি আনতে চলে গেল৷ সে সুযোগে মেঘ ফারহা কাছে এসে ললাটে লেপ্টে থাকা চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে আলতো করে ঠোঁটের ছুঁইয়ে দিতে শুনতে পায়………

.

.

.

#চলবে……….

#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া

#ফারহানা_আক্তার_ছবি ও রাফি 

#পর্ব_০৮

.

.

🌸

” আমার দি যে অসুস্থ সেটা আপনি নিজ চোখে দেখলেন তো? এবার চলুন৷” মেঘ গলা খাঁকাড়ি দিয়ে বলে উঠলো,” এক গ্লাস পানি হবে?” মেঘের কথা শুনে রাফিদ কিছুটা বিরক্তি নিয়ে পানি আনতে চলে গেল৷ সে সুযোগে মেঘ ফারহা কাছে এসে ললাটে লেপ্টে থাকা চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে আলতো করে ঠোঁটের ছুঁইয়ে দিতে শুনতে পায়৷

” স্যার আপনার পানি?” রাফিদের কন্ঠস্বর শুনতে পেয়ে মেঘ দ্রুত ফারহার কাছ থেকে দুরে সরে দাড়ায়৷

ততক্ষণে রাফিদ রুমে চলে আসে৷মেঘ পানিটা খেয়ে নিয়ে বলে,” আমি আগামীকাল আসবো আপনার বোনের সাথে কথা বলতে৷”

” তার কোন প্রয়োজন হবে না স্যার৷ মানে বলতে চাইছি আপনাকে এ বাড়িতে আসতে হবে না কারণ দি আগামীকাল ভার্সিটিতে যাবে৷ আপনি সেখানে দি’র সাথে কথা বলে নিবেন৷”

” ওকে তাহলে আজ আমি চলে যাচ্ছি আগামীকাল মিস ফারহা রহমানের সাথে দেখা হচ্ছে ৷”

” অবশ্যই৷” মেঘ এক নজর ফারহার দিকে তাকিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল৷ 

১১.

                   সন্ধ্যার দিকে ফারহা কিছুটা স্বাভাবিক হয়।আশেপাশে তাকিয়ে রাফিদকে দেখতে পায় না সে।ফোনটা অন করে টাইমটা দেখে সে দ্রুত বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়।ওয়াশরুম থেকে চেন্জ করে এসে তার নিজস্ব কাপবোর্ড থেকে একটা চাবি দিয়ে ড্রয়ার খুলে একটা রিভলবার হাতে নিয়ে কয়েকটা বুলেট সেটার মধ্যে পুরে কোমড়ে গুজে কাপবোর্ড টা বন্ধ করে দেয়।তৎক্ষনাৎ সেই রুমে রাফিদ প্রবেশ করে আর ফারহাকে রেডি হতে দেখে হন্তদন্ত হয়ে ফারহার কাছে এসে বললো,”একি দি তুই এই অবস্থায় বিছানা থেকে উঠেছিস কেন তোর রেস্টের প্রয়োজন।”

“ছোটু আমি ঠিক আছি তুই চিন্তা করিস না।”

“বাট দি তুই এইসময় কোথায় যাচ্ছিস?যেখানেই যাচ্ছিস আমি তোকে এখন যেতে দিবো না।তোর রেস্টের প্রয়োজন।”

“আমি সারাদিন রেস্ট নিয়েছি এখন আমার আর রেস্টের প্রয়োজন নেই।আমাকে বাইরে যেতে হবে তুই সরে দাড়া।”

“না আমি তোকে এই অবস্থায় কোথাও যেতে দিবো না।”ফারহা এবার রাফিদের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বললো,”ছোটু আমি এক কথা দুইবার বলা পছন্দ করি না।”রাফিদ ফারহার চোখ দেখে একটা ঢোক গিলে ফারহার সামনে থেকে সরে যায়।ফারহা ওখান থেকে বেরিয়ে পড়ে।ফারহা চলে যেতেই রাফিদ মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।কখনো কখনো ফারহাকে বাঘিনীর মতো ভয়ংকর মনে হয় রাফিদের কাছে।আর রাফিদ জানে তখন যদি কোনো শব্দও করে তাহলে একটা থাপ্পরও মাটিতে পড়বে না।

                       পুরো শহর তন্ন তন্ন করে খুজেও ইমাম হাওলাদারের খোজ পায়নি মেঘ।নিজের উপর নিজেরই রাগ হচ্ছে মেঘের।ইমাম হাওলাদারকে যদি খুজে না পায় তাহলে ডিপার্টমেন্টের যেমন বদনাম হবে পাশাপাশি মেঘের কর্তব্য নিয়েও সবার মনে প্রশ্ন জাগবে।মেঘ সেটা কোনোভাবেই চায় না।মেঘ নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলে।তখনই হঠাৎ ওর ফোনটা বন্ধ বেজে উঠে।মেঘ পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখে হাবিলদার মুশফিক ফোন করেছে।মেঘ দ্রুত কলটা রিসিভ করে কানে ধরে।

“হ্যালো স্যার।আমরা ইমাম হাওলাদারের অফিসের সামনে যে গাড়িটাকে দেখা গিয়েছিলো সেই গাড়িটা সহ মালিককে পেয়েছি।”

“গ্রেট।তা কি জানতে পেরেছো দ্রুত বল?”

“স্যার খবর খুব একটা ভালো নয়।যিনি গাড়ির মালিক তিনি একটা সংস্থায় গাড়িটি ভাড়া দিয়ে রেখেছেন।যেখান থেকে অন্যান্যরা গাড়ি ১-২ দিনের জন্য ভাড়া নিয়ে চালায়।ওই সংস্থা থেকেই গাড়িটা ভাড়া নেওয়া হয়েছিলো।তার সাথে মালিকের কোনো হাত নেই।”হাবিলদার মুশফিকের কথায় মেঘ চিন্তায় পরে গেলো।খুনিকে ধরার একটা আশা পেয়েছিলো সেটাও কি নিভতে চলেছে।মেঘ আবার হাবিলদার মুশফিককে জিগ্যেস করলো,”ওই সংস্থা থেকে জানতে পারোনি কে বা কারা ওই গাড়িটা ভাড়া নিয়েছিলো?”

“না স্যার, সংস্থা থেকে গাড়ি ভাড়া নেওয়া লোকদের শুধু লাইন্সেস দেখে গাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়। আর তাই আমরা লোকটার পুরো ডিটেইলস পাইনি।”হাবিলদার মুশফিকের কথা শুনে মেঘের রাগ যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।কল টা কেটে দিয়ে মেঘ মাথা চেপে ধরে আর ভাবতে থাকে “খুনিটা আসলেই খুব বেশি চালাক।তাকে ধরার কোনো ক্লু সে বাদ রাখেনি।মেঘ ভাবছে ওকে ধরতে হলে ওর মতো কোনো চাল দিতে হবে।খুনির মতো করে ভাবতে হবে যে খুনিটা আসলে কি করতে চাইছে।মেঘ কিছু একটা ভেবে ওখান থেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।

                রাফিদ নিজের রুমে বই নিয়ে পড়ছিলো হঠাৎ ওর ফোনে আননোন নাম্বার থেকে কল আসে।আননোন নাম্বার দেখে সে কলটা ডিসকানেক্ট করে দেয়।কিছুক্ষন পর আবারো কল করলে আগেরবারের ন্যায় এবারও ডিসকানেক্ট করে দেয়।এভাবে ৩ বার হওয়ার পর রাফিদ এবার বিরক্ত হয়ে কলটা রিসিভ করে।

“হ্যালো কে বলছেন?

“বাব্বাহ স্যার এতো রেগে আছেন কেন?”

“আগে আপনি বলুন আপনি কে?বারবার ডিস্টার্ব করছেন কেন আমাকে।”

“আমার ইচ্ছা হয়েছে তাই ডিস্টার্ব করছি।তুমি বলার কে?”

“আমি বলার কে মানে?আপনি আমাকে ডিস্টার্ব করছেন আর আমাকেই জিগ্যেস করছেন আমি বলার কে।আজব পাবলিক তো।”

“ধ্যাত হাদারাম একটা আমাকে চিনতে পারছো না আমি বেলা।”বেলা নামটা শুনে রাফিদ একটু শান্ত হয়।কিছুক্ষণ চুপ থেকে জিজ্ঞেস করে উঠে,”আপনি আমাকে ফোন দিয়েছেন কেন?আর আপনি আমার নাম্বার পেলেন কোথায়?”

“সেটা তোমার না জানলেও চলবে।আর ফ্রেন্ডকে তো কল দেওয়াই যায় তাই না?”

“কিসের ফ্রেন্ড? আমরা কোনো ফ্রেন্ড নই।”

“তুমি ভাবতে না পারো কিন্তু আমি ঠিকই ফ্রেন্ড ভেবে নিয়েছি।”

“ধ্যাত আপনার সাথে কথা বলাই বেকার।আমি ফোন রেখে দিচ্ছি।”

“এই এই খবরদার ফোন রাখবে না নাহলে কিন্তু”রাফিদ ভ্রু কুচকে বলে উঠলো,”না হলে কিন্তু কি?কি করবেন আপনি শুনি?”।বেলা কিছু না ভেবেই বলে দিলো”না হলে কচু গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখবো।”বেলার কথাশুনে রাফিদ উচ্চস্বরে হেসে উঠে।রাফিদের হাসি শুনে বেলা বোকা বনে যায়।সে ভাবছে সে কি এমন হাসির কথা বললো যে রাফিদ এভাবে হাসছে।বেলা রাফিদের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,”কি হলো এভাবে এলিয়েনদের মতো হাসার কি আছে?আমি কি কোনো জোকস বলেছি?”রাফিদ কোনোরকম হাসি থামিয়ে বললো,”জোকস নয়তো কি?কচু গাছ হচ্ছে পাতলা একটা গাছ আর আমি হলাম ৫’৮ ইঞ্চির একটা ছেলে।কচু গাছের সাথে যদি আমাকে ফাঁস দেওয়া হয় তাহলে আমি কচু গাছের নিচে নয় কচুগাছ আমার নিচে ঝুলে থাকবে।”রাফিদের কথা শুনে বেলা মাথা চুলকায়।আসলেই তো রাফিদের কথা ঠিক।কচুগাছের সাথে তো ঝুলিয়ে রাখা যায় না।বেলা বলে উঠলো,”হয়েছে হয়েছে এতো হাসতে হবে না।আগামীকাল তাড়াতাড়ি কলেজ চলে এসো।আর খবরদার রাস্তাঘাটে কোনো মেয়ের দিকে তাকাবে না বলে দিলাম।”

“কেন মেয়ের দিকে তাকালে কি হবে?”

“অতোসতো জানি না ব্যাস কোনো মেয়ের দিকে তাকাবে না বলে দিলাম।”সাথে সাথে কল কেটে দিলো রাফিদকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না।রাফিদ কলটা কেটে দিয়ে মোবাইলটা পাশে রেখে মুচকি হাসি দিয়ে আবার পড়ায় মনোযোগ দেয়৷

            ইমাম হাওলাদারের সামনে বসে আছে ফারহা।মুখে মাস্ক পরে রেখেছে।কালো সুট পড়ে রেখেছে।পাশের বিভিন্ন টাইপের হাতিয়ার রাখা।ইমাম হাওলাদার রিতীমত চিৎকার করে যাচ্ছে।ইমাম হাওলাদারের চিৎকার ফারহার মনে প্রশান্তি এনে দিচ্ছে।ফারহার দুই পাশে দুজন লোক দাড়িয়ে রয়েছে।ফারহা বাঁকা হেসে বললো”তো কেমন লাগছে আমার এই সুন্দর বাড়িটাতে এসে?আমার লোকরা মেহমান দারির কোনো কমতি রাখেনি তো?”ইমাম হাওলাদার চিৎকার করে বললো,”কে তুই আমাকে কেন নিয়ে এসেছিস এখানে?আমাকে ছেড়ে দে নয়তো তোদের কি হাল হবে তোরাও নিজেও জানিস না।”ইমাম হাওলাদারের থ্রেট ফারহার মধ্যে কোনো পরিবর্তন আনেনি।মুখে এখনো রহস্যময়ী হাসি লেগে আছে।ফারহা বলে উঠলো,”এখান থেকে যেতে পারলে তো কিছু করতে পারবেন ইমাম হাওলাদার।আমার লোকেরা আপনার বোধহয় খুব একটা ভালো খাতির যত্ন করেনি।আমি একটু ভালোমতো খাতির জন্য করি আপনার কি বলেন?”ইমাম হাওলাদার ভয়ে ভয়ে বললো,”কি করবি তুই?”ফারহা ইমাম হাওলাদারের ভীত চেহারা দেখে বাঁকা হেসে তার পাশে থাকা বক্স থেকে একটা সিজার নিয়ে ইমাম হাওলাদারের কনিষ্ঠা আঙ্গুল চেপে ধরে সিজার টা ইমাম হাওলাদারের হাতের দিকে থাকে।ইমাম হাওলাদার বুঝতে পেরে সমানে চিৎকার করে যাচ্ছে।নড়াচড়া করার চেষ্টা করছে কিন্তু করতে পারছে না।ফারহা ইমাম হাওলাদরের কনিষ্ঠা আঙ্গুল কে’টে দিতেই ইমাম হাওলাদার ব্যাথায় বিকট চিৎকার দিয়ে উঠে।পুরো বাড়িতে ইমাম হাওলাদারের চিৎকার প্রতিধ্বনি হতে থাকে।ফারহার ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি।ফারহা এবার সিজার টা রেখে গুড়ো লালমরিচ ইমাম হাওলাদারের কা’টা আঙ্গুলে নিয়ে লাগিয়ে দেয়।জ্বালা সহ্য করতে না পেরে আগের চেয়েও বেশি জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে।ফারহা বলে উঠলো,

“তো কেমন লাগছে ইমাম হাওলাদার আমার খাতির যত্ন।”ইমাম হাওলাদার ধীর কন্ঠে বলতে লাগলো,”আমার ছোট ভাই তোদের ছাড়বে না।একবার শুধু এখান থেকে ছাড়া পাই তোকে আমি শেষ করে ফেলবো।”ফারহা এবার রেগে নিজের বসার চেয়ারটায় লাথি মেরে পায়ের হিল দিয়ে ইমাম হাওলাদারের পায়ের আঙ্গুল চেপে ধরে বলতে লাগলো,”কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয়না আর বংশের রক্ত কখনো বদলায় না।তোর বাপকে দুনিয়া থেকে বি’দা’য় করেছি।তুই নিজেও মৃ’ত্যুশ’য্যায় আছিস তোর ছোটটাকেও খুব শীঘ্রই মৃ’ত্যুর স্বাদ আস্বাদন করাবো।অনেক করেছিস তোরা কিন্তু এবার তোদের হাল বেহাল করে ছাড়বো।”ফারহা নিজের লোকদের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,”এই লোকটাকে যতক্ষণ না আমি থামতে বলবো ততক্ষণ মারতে থাকবে।প্রতি ১ ঘন্টা পরপর একটা করে আঙ্গুল কাটবে, নখ উপড়ে ফেলবে গট ইট?”ফারহার লোকগুলো মাথা নাড়ায়।ফারহা দ্রুত করে ওখান থেকে বেরিয়ে পড়ে। 

এলোমেলো পায়ে হাটছে ফারহা, বাড়ি থেকে বের হবার পর থেকে মাথার ভেতর চিনচিন ব্যাথা অনুভব করছে৷ ইমাম হাওলাদারের সাথে সাথে কথা বলার পর থেকে ব্যাথাটা যেন আরও তীব্র আকার ধারণ করছে৷ ফারহা সেই এলোমেলো পায়ে হেটে কাছাকাছি পদ্মদিঘির পাড়ে গিয়ে বসে পড়ে৷ তখন সন্ধ্যা পেড়িয়ে রাত, আকাশে জ্বল জ্বল করছে একটু চাঁদ আর তার পাশে মিটি মিটি করে জ্বলতে থাকা তারা৷ ফারহা তার পা দুটো পদ্মদিঘির শীতল পানিতে ডুবিয়ে দিয়ে ঘাসের উপর শুয়ে পড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল৷ চোখের কোণ বেয়ে এক বিন্দু পানি গড়িয়ে পড়তে হু হু করে কেঁদে ওঠে ফারহা৷ নিস্তব্ধ রাতে এমন একলা মানবী তার বুকের ভেতর জমে থাকা কষ্টের পাহাড় চেষ্টায় অনবরত চোখের পানি ঝড়িয়ে যাচ্ছে কিন্তু তাতে এক বিন্দু কষ্ট কমেনি বরং হৃদয়ে আগুন যেন দ্বিগুন জ্বলছে৷ নিস্তব্ধ রাত ঝিঝি পোকার আওয়াজে ফারহার কান্নাটা যেন আরও ভয়ানক শোনা যাচ্ছে৷ ঘন্টাখানিক ফারহা চোখের পানি ফেলে উঠে দাড়াতে শুনতে পায় একটা বাচ্চা যেন তাকে মা মা বলে ডাকছে৷ ফারহা আশে পাশে পাগলের মত খুজতে লাগলো বাচ্চাটিকে কিন্তু কাউকে খুজে না পেয়ে ফারহা কাঁদতে লাগলো৷ পেছনের সেই ভয়ংকর স্মৃতি গুলো যে এখনো তাকে তাড়া করে বেড়ায়৷ সে স্মৃতি যে ফারহা ভুলতে পারছে না৷  ফারহা শারিরীক এবং মানুষিক দুটো দিক থেকে অসুস্থ৷ ফারহা কোন ভাবে উঠে দাড়িয়ে হাটতে হাটতে বড় রাস্তায় উঠতে একটা গাড়ি ফারহার সামনে থেমে একজন ব্যক্তি গাড়ি থেকে বের হয়ে ফারহার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,” অনেক রাত হয়েছে সোনা মা বাড়ি ফিরতে হবে তো? ” ফারহা কিছু বললো না চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসতে ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিলো৷

১২.

              রাফিদের প্রচন্ড টেনশন হচ্ছে৷ রাত এগারোটা বাজে তবুও ফারহার কোন দেখা নেই৷ অসুস্থ শরীর নিয়ে বিকেলে বের হয়েছিলো আর এখন রাত ১১ টা এখনো ফারহার কোন খবর নেই৷ রাফিদ এবার ফারহার নাম্বারে ডায়াল করে৷ দুবার বাজার পর তৃতীয় বারে কল রিসিভ হয় তবে কলটা ফারহা নয় বরং অন্য এক ব্যক্তি ধরেছিলো৷ রাফিদ কিছু বলার পূর্বে ফোনের ওপাশ থেকে বলে ওঠে,” টেনশন করো না রাফিদ সোনা মা আমার কাছে রয়েছে৷ আগামীকাল সোনা মা ফিরে যাবে৷” ফোনের ওপাশে থাকা ব্যক্তিটির কথা প্রত্যুত্তরে রাফিদ কিছু না বলে কল ডিসকানেক্ট করে দিয়ে স্বজোড়ে বিছানার উপর ফোনটা ছুড়ে  মেরে বলতে লাগলো,” কেন ফিরে এলে কেন কেন কেন? এই লোকটা যখনি আমাদের জীবনে প্রবেশ করে তখনি আমাদের জীবনটা তসনস হয়ে যায়৷ যেমনটা আমার দি’র সাথে হয়েছে৷ কিন্তু এই বার আমি আর আমার দি’য়ের কোন ক্ষতি হতে দিবো না৷ এর জন্য আমাকে যা যা করতে হয় আমি তাই করবো৷

.

.

.

#চলবে……..

[ভুলত্রুটি সুন্দর ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷]

#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া

#ফারহানা_আক্তার_ছবি_ও_রাফি 

#পর্ব_০৯

.

.

🌺

মুখে সূর্যের কিরণ পড়তে ভ্রু-জোড়া কুচঁকে চোখ মেলে তাকায় ফারহা৷ বিছানা থেকে উঠে বসে পুরো রুমটা একবার পর্যবেক্ষণ করে রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে গেল ফারহার৷ বালিশের পাশে থাকা তার ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে ৬:৩৮ am . ফারহা ঝট করে উঠে ফ্রেস হয়ে ড্রয়ার থেকে একটা পেন আর কাগজ বের করে করে কিছু একটা লিখে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়৷ 

দরজা খোলার আওয়াজ শুনতে পেয়ে রাফি বুঝতে পারে নিশ্চয়ই তার দি এসেছে৷ রাফি সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে নাস্তা বানিয়ে ফেলে ৷ রাফি খুব ভালো করেই জানে ওই লোকের বাড়িতে তার দি কখনো থাকা তো দুর পানি ছুঁয়েও দেখবে না৷ গতকাল রাত থেকে তার দি না খেয়ে আছে তাই নিজের হাতে খাবার তৈরি করলো রাফিদ৷

ফারহা ভেতরে ঢুকতে রাফিদ মুচকি হেসে বলে,” দি ফ্রেস হয়ে আয় আমি তোর জন্য খাবার বাড়ছি৷”

ফারহা রাফিদের মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো,” অনেক বড় হয়ে গেছিস ছোটু৷” রাফিদ ফারহা হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,” আর কত দিন আমাকে ছোট্ট বানিয়ে রাখবি দি৷ এবার তো বড় হতে দে৷ এখন থেকে তোর ছোটু তার দি’য়ের সব দায়িত্ব পালন করবে বুঝেছিস?”

” খুব বুঝেছি এখন দ্রুত খাবার দে আমার প্রচন্ড ক্ষিদে পেয়েছে৷ আমি হাত মুখ ধুয়ে আসছি৷” ফারহা ফোন চার্জে বসিয়ে হাত মুখ ধুতে চলে গেল৷ এদিকে ফারহাকে রুমে না পেয়ে সেই ব্যক্তির বুঝতে বাকি নেই যে তার সোনা মা চলে গেছে৷ হঠাৎ টেবিলের উপর চোখ পড়তে একটা চিরকুট দেখতে পায়৷ দ্রুত চিরকুটটি খুলে পড়তে লাগলো,” ইন ফিউচারে আমার সামনে কখনো পড়বেন না৷ যদি পড়েন তো আই সোয়্যার সেই দিন হবে আপনার জীবনের শেষ দিন৷”

লেখাটা পড়ে দু’ফোটা চোখের পানি চিরকুটে পড়ে ভিজিয়ে দিলো৷ এত বছর পর ও তার রক্ত তাকে ক্ষমা করলো না৷ ক্ষমার পরিবর্তে যে ঘৃনার সমুদ্রে ভাশিয়ে নিয়ে যাচ্ছে৷ এই অতল সমুদ্রে যে কোন কুল কিনাড়া খুজে পাচ্ছে না সেই ব্যক্তি৷

        ফারহা রেডি হয়ে ভার্সিটিতে যাওয়ার উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পড়ে৷ প্রায় মাসখানিক হলো সব টিউশনি ছেড়ে দিয়েছে৷ আপাতত হাতে কোন টিউশনি নেই৷ ভার্সিটিতে ঢুকতে গেটে মেঘ কে দেখতে পেয়ে ফারহার মেজাজ যেন তুঙ্গে ৷ দাঁত মুখ খিচে সোজা ভার্সিটিতে ঢুকে ক্লাসের দিকে চলে গেল৷ তনু নেহাল আয়মান ক্লাসে রয়েছে নিখিলকে দেখতে না পেয়ে ফারহা জানতে চায় নিখিল কোথায়? তখনি আয়মান বলে উঠলো,” গতকাল থেকে নিখিলের ফোন ট্রাই করছি কিন্তু ফোন বন্ধ বলছে৷ আচ্ছা তুই এখন ঠিক আছিস তো? “

” হুম ঠিক আছি৷” কথাটা বলে ফারহা কিছু একটা ভাবতে লাগলো কারণ নিখিল কখনো এভাবে ফোন অফ করে রাখে না৷ কিন্তু আজ কেন? আর সেদিন ওই অফিসারের সাথে ঝামেলা হওয়ার পর থেকে তো নিখিল নিখোঁজ কোন খোজ খবর তো পাওয়া যাচ্ছে না৷ ফারহা নেহালকে কিছু বলতে যাবে তার পূর্বে ক্লাসে স্যার চলে আসে৷ ফারহা তখন আর কথা না বলে ক্লাস করতে লাগলো৷ এদিকে মেঘ বাইরে দাড়িয়ে জানালা দিয়ে ফারহাকে মন দিয়ে দেখে যাচ্ছে৷ তখনি মেঘের ফোনটা বেজে ওঠে৷ মেঘ কল রিসিভ করতে ফোনের ওপাশ থেকে কেউ বলে ওঠে,” স্যার ছেলে গুলোকে ধোলাই দিয়ে হসপিটালে পাঠিয়ে দিয়েছি তবে আপনার কথা মত একজনকে আটকে রেখেছি৷”

” তাকে ভালো মত জামাই আদর করেছেন?”

” জ্বি স্যার৷ দু’ঘন্টা ধরে ছেলেটিকে আদর করেছি৷ ছেলেটি এখন জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছে৷”

“ওকে আমি রাতে আসছি৷”

” ওকে স্যার৷”

মেঘ ফোন রেখে সামনে তাকাতে ঘাবড়ে যায় কারণ সামনে ফারহা দাড়িয়ে আছে৷

মেঘ নিজেকে ধাতস্ত করে ফারহাকে বলে,” এখন কেমন আছো ফারুপাখি?”

” নিখিল কোথায়?”

মেঘ হঠাৎ চমকে গেল ফারহা প্রশ্ন শুনে৷ মেঘকে চমকাতে দেখে ফারহা দাঁতে দাঁত চেপে বললো,” আমি আপনাকে একটা প্রশ্ন করেছি মিস্টার মেঘ চৌধুরী৷ নিখিল কোথায়?”

মেঘ এবার ফারহার আর একটু কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,” নিখিল তার যথাযোগ্য স্থানে আছে৷ ওকে নিয়ে টেনশন না করে আমাকে নিয়ে ভাবো মাই লাভ৷ কারণ এখন থেকে আমি তোমার প্রেজেন্ট এন্ড ফিউচার৷”

ফারহা মেঘের কথা শুনে মুচকি হেসে বললো ,” ইন ইউর ড্রিম মিস্টার অফিসার৷ বাই দ্যা ওয়ে একজন সিনসিয়ার পুলিশ অফিসার হয়ে এমন ছ্যাচড়ামি করতে আপনার লজ্জা লাগে না?”

” লজ্জা নারীর ভূষণ৷ তাই আমার লজ্জা পাওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না জানেমন৷”

” যাস্ট স্টপ ইট মিস্টার অফিসার৷ এই সব ফালতু নামে আমাকে মটেও ডাকবেন না৷ আর নেক্টস টাইম ছ্যাচড়ামি করার ইচ্ছে হলে দুনিয়াতে অনেক মেয়ে আছে তাদের সাথে করবেন৷ ভুলেও আমার সাথে করার চেষ্টা করবেন না৷ তাহলে এর ফল ভালো হবে না৷ ” কথা গুলো বলে ফারহা যেতে নিলে মেঘ ফারহার হাত ধরে আটকে দিয়ে বলে,” এই দুনিয়ায় মেঘ নারী বলতে দুজন নারীকে চেনে এক হলো আমার মম আর অন্য জন তুমি৷ তাই দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে এই জন্মে আমি তোমার পিছু ছাড়ছি না৷ তুমি আমার আমার আর শুধু আমার৷ অন্য কেউ তোমার দিকে হাত বাড়ানোর চেষ্টা করলে আমি সেই হাত ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিবো৷ আর যারা তোমার দিকে তাকাবে তাদের চোখ আমি উপড়ে ফেলবো৷” 

মেঘের কথা শুনে তনু পাশ থেকে বলে ওঠে,”  আমি সত্যি কনফিউজ আপনি পুলিশ নাকি গুন্ডা স্যার?”

” আমি তোমার বান্ধবীর পাগল প্রেমিক৷” অকপটে মেঘ এভাবে সবার সামনে নিজেকে ফারহার প্রেমিক হিসেবে দাবি করবে এটা ফারহা ভাবতে পারেনি৷” 

” আপনার সাহস দেখে আমি সত্যি স্পিচলেস মিস্টার অফিসার৷ আপনার মত ছ্যাচড়া কোন অফিসার হতে পারে এটা আমার জানা ছিলো না৷”

” এই ফারু থাম না আর এত রাগের কি আছে হাহ! এত কিউট হ্যান্ডসাম ড্যাশিং অফিসার তোর প্রেমে পড়েছে এটাতে তো তোর প্রাউড ফিল করা উচিত ৷ ইস কেন যে তোর মিস্টার অফিসার তোর প্রেমে পড়লো? আনরোমান্টিক মাইয়া৷” তনুর কথা শুনে ফারহা দাঁতে দাঁত চেপে তনুর দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলে উঠলো,” এতই যদি এই অফিসারকে তোর ভালো লাগে তাহলে দয়াকরে এই অসভ্য অফিসারকে নিজের গলায় ঝুলিয়ে নে৷”

” কাস যদি এটা সম্ভব হতো দোস্ত৷ বিশ্বাস কর আমি নিদ্বির্ধায় আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকয়াপ করে এই হ্যান্ডসামকে বিয়ে করে নিতাম৷”

তনুর কথা শুনে আয়মান নেহাল ফারহা তিনজনই প্রচন্ড বিরক্ত তা তাদের চোখ মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে৷ ফারহা এবার মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো,” একজন পুলিশ অফিসার হয়ে আপনার উচিত ক্রিমি’নাল ধরা কোন মেয়ের পেছন পেছন ঘোরাটা আপনাকে মানায় না আশা করি আপনি বুঝবেন আমার কথা গুলো আর না বুঝলেও সমস্যা নেই কারণ এর পরও যদি আমাকে ডিসট্রাব করেন তাহলে এর ফলাফল আপনার জন্য মটেও ভালো হবে না৷” 

মেঘ অসহায় চোখে ফারহার দিকে তাকিয়ে থেকে খুব আস্তে করে বলে উঠলো,” আমাকে কি একবার ক্ষমা করা যায় না ফারুপাখি?”

মেঘের কথা গুলো ফারহার কর্ণগোচর হতে ফারহা কঠিন দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,” না৷” ফারহা আর কথা বাড়ালো না দ্রুত পায়ে ক্যান্টিনে ঢুকে গেল৷ এদিকে নেহাল আয়মান তনু মেঘ ফারহার কথা বুঝতে না পেরে ফারহার পেছন পেছন ছুটতে লাগলো৷ এদিকে মেঘ মন খারাপ করে ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে গেল৷

শাফায়াত চৌধুরী আজ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার জন্য অফিস থেকে বেড়িয়ে গেল৷ কিন্তু মাঝ রাস্তায় হঠাৎ শাফায়াত চৌধুরীর গাড়ি খারাপ হয়ে যায়৷ শাফায়াত চৌধুরী গাড়ি থেকে নেমে আকাশের দিকে তাকাতে দেখে কালো মেঘে আকাশ ছেঁয়ে গেছে৷ হয়তো এখনি হয়তো বৃষ্টি পড়বে৷ শাফায়াত চৌধুরী খানিকটা বিরক্ত হয়ে ড্রাইভারকে বলে উঠলো,” আর কতোক্ষণ লাগবে গাড়ি ঠিক হতে ?””

” বুঝতে পারছি না স্যার , আমার মনে হয় গাড়িটা গ্যারেজে নিয়ে যেতে হবে৷”

” তাহলে দাড়িয়ে না থেকে ট্যাক্সি ডাকো আর কতোক্ষণ এখানে দাড়িয়ে থাকবো?” 

” জ্বি স্যার৷” ড্রাইভার ট্যাক্সি ডাকার জন্য এগিয়ে যাওয়ার পর পর একটা বড় গাড়ি এসে শাফায়াত চৌধুরীর সামনে দাড়ায়৷ শাফায়াত বেশ অবাক হয় এটা দেখে তখনি গাড়ি থেকে একজনকে নামতে দেখে শাফায়াতের মুখ যেন আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল৷ ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো সেই ব্যক্তিকে৷

” আরে দোস্ত তুই এত বছর পর, আমি কি সত্যি দেখছি তুই বাংলাদেশে এসেছিস আশরাফ?”

” হ্যাঁ দোস্ত যে ভুল গুলো আমি করেছি তা ঠিক করতেই আমি এসেছি৷ সন্তানের থেকে দুরে আর কত বছর থাকবো বল?”

” মামুনি এখনো ফেরে নি তোর কাছে তাই না?”

” না সোনা মা ফেরেনি৷ সে দিনের পর আর সোনা মা আমার কাছে ফিরেনি৷ “

” দেখ দোস্ত চিন্তা করিস না৷ আগে যে ভুল গুলো আমরা করেছি মামুনির সাথে এবার আর সেটা করবো না৷ আমি তোর পাশে আছি দোস্ত৷” 

কথা বলতে বলতে ঝরিঝিরি বৃষ্টি পড়তে লাগলো৷ তা দেখে আশরাফ বলে উঠলো,” দোস্ত বৃষ্টি পড়ছে গাড়িতে উঠ আমি তোকে বাড়ি পৌছে দিচ্ছি৷ আর ড্রাইভার কর বল গাড়ি ঠিক করে নিয়ে আসতে৷”

শাফায়াত ড্রাইভারের সাথে কথা বলে আশরাফের গাড়ি উঠে পড়লো৷ বহু দিন পর দুই বন্ধু এক সাথে হয়ে নানা রকম গল্প জুড়ে দিলো৷ 

অন্যদিকে রাফিদ লাস্ট ক্লাস করে বের হয়ে দেখে বেলা ফোনে কারও সাথে কথা বলছে৷ রাফিদ বেলার সাথে কথা বলার জন্য বেলার কাছাকাছি গেলে শুনতে পায়৷

” নো সানিয়া আমি এখনি কানাডা ফিরতে পারবো না৷ আমাকে বাংলাদেশে থাকতে হবে৷ আর এক্সাম টাইমে আমি কানাডা গিয়ে এক্সাম দিবো৷ আর আমি ভালো করেই জানি আমি ‘ল’ নিয়ে পড়ছি৷”

ফোনের ওপাশ থেকে কি বললো রাফিদের জানা নেই তবে বেলা আবারও বলতে লাগলো,” দেখ সানিয়া আমি সবে মাত্র ফার্স্ট ইয়ারে আর এখানে থেকেও আমি স্টাডি করতে পারবো৷ তুই টেনশন করিস না৷ রাখছি পড়ে কথা হবে৷” সানিয়াকে বলার সুযোগ না দিয়ে বেলা কল ডিসকানেক্ট করে দিয়ে পেছনে ফিরতে থমকে যায়৷

“তু তুমি?”

রাফিদ এক দৃষ্টিতে বেলার দিকে তাকিয়ে ঝুম বৃষ্টির ভেতর বেড়িয়ে যায়৷ আর এদিকে বেলা হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে রইল৷ বেলার বুঝতে আর বাকি নেই যে রাফিদ তার সানিয়াকে বলা কথা গুলো শুনে নিয়েছে৷ 

             ফারহা আনমনা হয়ে বৃষ্টির দেখছে৷ আর এদিকে নেহাল আয়মান তনু নানা রকম কথা বলে যাচ্ছে ফারহাকে কিন্তু সে দিকে ফারহার কোন ধ্যান নেই৷  ফারহা বৃষ্টি দেখতে দেখতে হঠাৎ পুরনো সেই দিনের কথা মনে পড়ে৷

অতিত…….

” এই ফারুপাখি এভাবে ছুটো না পড়ে গিয়ে ব্যাথা পাবে৷”

” ইস বললেই হলো আমি পড়ে যাবো? তুমি যতক্ষণ আমাকে ধরতে পারছো ঠিক ততক্ষণ আমি ছুটবো৷” বলতে বলতে ফারহা পা পিচলে পড়ে গেল৷ ফারহাকে পড়তে দেখে ছুটে এলো আয়াশ৷

” ফারুপাখি বেশি ব্যাথা লেগেছে? কোথায় লেগেছে?” কথা গুলো বলতে বলতে আয়াশ ব্যস্ত দৃষ্টিতে ফারহার হাত পা দেখতে লাগলো কোথাও কেটে গেল কি না? ফারহা ভেবে পায় না এই আয়াশ নামক ব্যক্তিটা তাকে এত কেন ভালোবাসে? ফারহা কিছু না বলে আয়াশ কে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো,” আয়াশ কখনো আমাকে ছেড়ে যেও না তাহলে আমি সত্যি মরে যাবো৷” আয়াশ রাগান্বিত কন্ঠে বলে ওঠে,” হাউ ডেয়ার ইউ ফারুপাখি? তোমার সাহস কি করে হয় এই ধরনের কথা বলার? তুমি জানো না আমার পৃথিবী তুমি হীনা আমি নিস্ব ৷ আমার যে এতিম তুমি জানো না? ফার্দার যদি তোমার মুখে মরার কথা শুনি তাহলে সত্যি সেদিন আমি এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করবো৷  সে দিনের কথা মনে পড়তে কেঁপে ওঠে ফারহা৷ 

ফারহাকে কেঁপে উঠতে দেখে তনু ফারহার হাত ধরে বলে,” কি হয়েছে ফারু এভাবে কেঁপে উঠলি কেন?”

ফারহা শান্ত দৃষ্টিতে নেহাল আয়মান আর তনুর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,” তোদের আমি লাস্ট বার ওয়ার্ন করলাম আমাকে আর কখনো ফারুপাখি বলে ডাকবি না৷ যদি ডাকিস সেদিন তোদের সাথে আমার বন্ধুত্ব শেষ৷” কথা গুলো ঠান্ডা গলায় বললেও এর গভিরতা ব্যপক ছিলো যেটা আয়মান নেহাল তনুর বুঝতে বাকি নেই৷ 

ফারহা কারও কোন কথা শোনার অপেক্ষা না করে বৃষ্টির মধ্যেই এলোমেলো পায়ে হাটতে লাগলো৷ তনু আয়মান নেহাল ও বৃষ্টি উপেক্ষা করে ফারহার পেছন পেছন হাটতে লাগলো নিঃশব্দে৷ 

ফারহা পুরোটা পথ পায়ে হেটে বাড়ি পর্যন্ত যেতে নেহাল আয়মান তনু নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্য চলে যায়৷ ফারহা ভেতরে ঢুকতে বাড়িওয়ালার নাতনি বৃষ্টিতে ভিজছিলো হঠাৎ ফারহাকে গেট পেরিয়ে ভেতরে আসতে দেখে ছুটে আসে ফারহার দিকে, ক্লাস সেভেনে পড়ুয়া রিমঝিম দেখতে বেশ মিষ্টি৷ দৌড়ে এসে ফারহাকে জড়িয়ে ধরতে ফারহার ধ্যান ভাঙে৷

” এই যে মিষ্টি আপু তুমি আমার মত ভিজছো?”

ফারহা রিমঝিমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,” আর ভিজতে হবে না রিমঝিম রুমে গিয়ে চেন্জ করো৷” ফারহার কথা শুনে রিমঝিম মন খারাপ করে চলে গেল৷ ফারহা দোতালায় উঠে আগে চেন্জ করে নিয়ে কাউকে ফোন করে বলে,,,,,,,

.

.

.

#চলবে……..

#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া

#ফারহানা_আক্তার_ছবি_ও_রাফি 

#পর্ব_১০

.

.

🌺

” মেঘ চৌধুরীর ফোন ট্রেস করুন৷ নিখিলকে মেঘ চৌধুরী কিডন্যাপ করিয়েছে৷ আমার মনে হয় আজই নিখিলকে খুজে পাওয়া যাবে৷”

” ওকে ম্যাম আমরা মেঘ চৌধুরীর নাম্বার ট্রেস করছি৷”

ফারহা কল ডিসকানেক্ট করে চিলেকোঠার ছোট্ট রান্নাঘরে গিয়ে খিচুড়ি রান্না বসিয়ে দিয়ে রুমে এসে তার ডাইরী নিয়ে বসে৷ ডাইরীর সাদা পেজে কলমের খোঁচায় ফারহা তার মনে সব কথা গুলো শব্দে আকার দিতে লাগলো৷ আজ প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে আমার, পুরনো ক্ষত যেন আজ আবারও তাজা হয়ে উঠলো৷ বাবা বেঁচে থাকতেও নিজেকে এতিম বলে পরিচয় দেওয়াটা কোন সন্তানের জন্য খুব একটা সহজ না কিন্তু আমার জন্য খুব সহজ কারণ এই বাবার জন্য আমি আমার অনাগত সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখাবার আগে মেরে ফেলতে পারে সে কখনো আমার বাবা হতে পারে না৷ কি অপরাধ ছিলো আমার? কেন আমার জীবনটা ধ্বংস হয়ে গেল? আচ্ছা ভালোবাসা কি অপরাধ? নাকি কোন এতিম চাল চুলো হীন মানুষকে ভালোবাসা পাপ? কোন অপরাধে স্বামী সন্তানকে হারালাম আমি? এতটুকু লিখে ডাইরী বন্ধ করে ফারহা জানালার বাইরে আকাশের দিকে তাকিয়ে কঠিন গলায় বলে উঠলো,” যাদের জন্য আমি আমার আমার সন্তান আমার স্বামীকে হারাতে হয়েছে তাদেরকে আমি কখনো ক্ষমা করবো না৷ তীলে তীলে কষ্ট দিয়ে মারবো তাদের৷ কাউকে ছাড়বো না কাউকে না৷

১৩.

               বৃষ্টি একটু থামতে ফারহা খেয়াল করলো রাফিদ গেট দিয়ে ঢুকছে তবে রাফিদের মুখে যেন অমাবর্স্যার অন্ধকার ছেয়ে আছে৷ ফারহা বুঝতে পারে তার ভাইয়ের আজ আকাশ সমান মন খারাপ৷ কিছু সময়ের জন্য নিজের রাগ অভিমান প্রতিশোধ দুরে সরিয়ে দিয়ে তার ছোট্ট ভাই রাফিদকে নিয়ে ভাবতে লাগলো৷ রাফিদ রুমে ঢুকে তার দি’কে দেখে অবাক হয় কারণ এই সময় তার দি ভার্সিটিতে থাকে৷ ফারহা রাফিদ কে দেখা মাত্র বলে উঠলো,” এসে পড়েছিস যা ঝটপট গোছল সেরে আয় তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে৷”

” সারপ্রাইজ! কী সারপ্রাইজ দি? আর তুই এই সময় এখানে?”

” ভালো লাগছিলো না তাই চলে এলাম৷ এখন কথা না বাড়িয়ে দ্রুত গোছল করে আয় সারপ্রাইজ দেখতে চাইলে৷”

রাফিদ আর দেরি করলো না দ্রুত নিজের রুমে গিয়ে তোয়ালে নিয়ে ছাঁদে চলে গেল৷ রাফিদ সব সময় ছাঁদের ট্যাপে গোছল করে৷ আর আজও তাই৷ ফারহা সে সুযোগে বাড়িওয়ালা দীদুনের দেওয়া জলপাইয়ের আচার বের করে নিলো তারপর মরিচ ভর্তা  বানিয়ে নিলো৷ দুটো ডিম ভেজে নিয়ে দুটো প্লেটে ভুনা খিচুড়ি গরম গরম বেড়ে টেবিলের উপর গুছিয়ে রাখলো৷

           অন্যদিকে আশরাফকে দেখে মায়রা চৌধুরী ভিষণ খুশি৷ এই লোকটাকে তিনি তার বড় ভাইয়ের আসনে অনেক বছর পূর্বে বসিয়েছে৷ আর আশরাফ খান ও মেঘের মা মায়রা চৌধুরীকে নিজের ছোট বোনের মত স্নেহ করে৷ এত বছর পর আশরাফকে দেখে মায়রা খানিকটা ইমোশনাল হয়ে পড়ে কারণ একটা ঘটনা তাদের সবার জীবনের মোড় যে ঘুড়িয়ে দিবে এটা তারা কেউ বুঝতে পারেনি৷ মায়রা চোখের পানি মুছে আশরাফ কে বলে,” ভাইজান কত বছর পর আপনাকে দেখলাম৷ কেমন আছেন আর আমাদের মামুনি কেমন আছে?”

মায়রার কথা শুনে আশরাফের মুখটা অন্ধকারে ছেঁয়ে যায়৷ তা দেখে শাফায়াত চৌধুরী বলে,” আহা মায়রা এখনি এত কথা বলবে? লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে৷ সার্ভেন্টকে বলো লাঞ্চ সার্ব করতে আজ আমরা দুই বন্ধু এক সাথে লাঞ্চ করবো৷ আর শাহিন মেজবাকে ও ডেকে পাঠাও৷”

” তারা বাড়িতে নেই৷ শাহিন ভাইয়ের কোন এক বন্ধুর বাড়িতে দাওয়াত ছিলো সেখানে দুজনে বেড়িয়েছে৷”

” ওহ তাহলে আমরাই বসে পড়ি৷”

” হ্যাঁ তার আগে ফ্রেস হয়ে নিন৷” 

শাফায়াত তার বন্ধুকে গেস্ট রুম নিয়ে গিয়ে ফ্রেস হতে বলে নিজেও চলে যায় ফ্রেস হতে৷ মিনিট পনেরো পর দুজনে ডাইনিংয়ে এসে দেখে মায়রা খাবার রেডি করে বসে আছে৷ তাদের আসতে দেখে নিজের হাতে খাবার সার্ব করে দেয়৷ 

সবাই খেতে খেতে গল্প করতে লাগলো তখনি মায়রা আবারও ফারহার কথা জানতে চাইলে আশরাফ বলে,” বোন আমার সোনা মা আমাকে এখনো ক্ষমা করেনি৷ সেই চার বছর আগে আমাকে ছেড়ে চলে যায়৷ তার পর পর আমি অসুস্থ  হয়ে পড়ি৷ ডক্টরের পরামর্শে ভালো ট্রিটমেন্টের জন্য আমাকে বিদেশে যেতে বলে৷ এতটাই অসুস্থ ছিলাম যে নিজে এক গ্লাস পানি গড়িয়ে খেতে পারতাম না৷ বিদেশে আমার ট্রিটমেন্ট হলো সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে সোনা মায়ের অনেক খোজ করি কিন্তু কোন খোজ পাইনি কিন্তু তার কিছু দিন পর আমার ছোট বোন মেহরিন আর তার স্বামী রেওজান গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা যায়৷ তাদের একমাত্র ছেলে রাফিদ তাকেও আর খুজে পাইনি ৷ তবে একদিন রাফিদ ফোন করে জানায় সে আমার সোনা মার সাথে আছে৷ আর আমি যেন কখনো তাদের সামনে না যাই৷ আর কখনো যোগাযোগ করার চেষ্টা না করি৷” কথা গুলো বলে আশরাফ চুপ হয়ে গেল৷ তখনি শাফায়াত বলে ওঠে ,” দোস্ত সব দোষ আমার৷ আমার জন্য দুইটি প্রাণ ঝড়ে গেল৷ আমি যদি সেদিন ফারহা মামুনিকে না বলতাম মেঘ কে বিয়ে করার কথা হয়তো সেদিন ফারহা মামুনি হুট করে না আয়াশকে  বিয়ে করতো আর না এত কিছু হতো৷ ফারহা মামুনিকে এবাড়ির বউ করতে চেয়েছিলাম বলে হয়তো সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেলো৷ “

” নাহ শাফায়াত এতে তোর কোন ভুল নেই সব ভুল সব দোষ আমার৷ আমি অর্থ অহংকারে ভুলে গিয়েছিলাম এতিম ছেলেটিকে আমার মেয়ে নিজের প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে৷ ওর মাঝে আমার মেয়ের প্রাণ ভোমরা৷ সেদিন যদি নিজের রাগ টা কন্ট্রোল করতে পারতাম তাহলে হয়তো আয়াশ আজ বেঁচে থাকতো৷ আমার সোনা মায়ের একটা সাজানো গুছানো সংসার হতো৷ “

” দেখ আশরাফ এখন আর আফসোস করে কোন লাভ নেই৷ আমার মনে হয় মামুনিকে খুজে নিজের কাছে নিয়ে আসলে বোধহয় ভালো হতো৷” শাফায়াতের কথা শুনে আশরাফ ত্যাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে মনে মনে বলতে লাগলো,” যে মেয়ে নিজের জন্মদাতা পিতাকে খুন করার হুমকি দিতে পারে সে যে কখনো তাকে ক্ষমা করে তার কাছে ফিরে আসবে না সেটা খুব ভালো করেই জানে আশরাফ৷ 

আশরাফ মেঘ একজন পুলিশ অফিসার আমার মনে হয় মেঘ পারবে মামুনিকে খুজে বের করতে৷ 

” প্রয়োজন নেই শাফায়াত কারণ আমি জানি আমার এখন কোথায় আছে৷”

” তাহলে দেরি করছিস কেন? বিকেলে চল মামুনিকে সাথে করে নিয়ে আসি আর সবটা বুঝিয়ে বলি৷ আশা করি মামুনি বুঝবে আমাদের কথা গুলো৷”

” সব কিছু এতটা সহজ ভাবিস না শাফায়াত৷ যাই হোক মেঘ কোথায় তাকে যে দেখছি না?”

” কোথায় আর থাকবে থানায় আছে৷ তোকে তো বললামই মেঘ একজন পুলিশ অফিসার৷”

মায়রা সব শুনে বলতে লাগলো,” ভাইয়া অতিত ভুলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার নামই জীবন৷ আমাদের উচিত ফারহা মামুনিকে অতিত থেকে বের করে আনার৷ আর এটা হয়তো মেঘ করতে পারবে৷” 

বেলা বাড়িতে ঢুকতে মেঘ ফারহাকে নিয়ে কথা বলতে শুনে দাড়িয়ে পরে৷ শুরুর থেকে সব কথা না শুনলেও এতটুকু বুঝতে পারছে মেঘ তাকে রাফিদ সম্পর্কে ইনফরমেশন দিয়েছে তার ফিফটি পার্সেন্ট মিথ্যে৷ রাগে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে নিঃশব্দে উপরে নিজের রুমে চলে যায়৷

ইমাম হাওলাদারকে খুজতে খুজতে মেঘ তার টিমকে নিয়ে ইমাম হাওলাদারের গোপন ডেরায় যেখানে মেয়েদের তুলে নিয়ে এসে আটকে রাখা হয় সেখানে পৌছে যায়৷ মেঘ সেখানে বাধা অবস্থায় অনেক গুলো মেয়েকে দেখতে পেয়ে প্রথমে ভিষণ অবাক হয়৷ বুঝতে পারে ইমাম হাওলাদার একজন নারীপাচার কারী জঘন্য লোক হয়তো তার এই নিঁখোজের পেছনে তারই রাইভেল কারও হাত আছে৷ মেঘ আরও কিছু ফোর্স এনে মেয়ে গুলোকে উদ্ধার করে তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়৷ তবে ইমাম হাওলাদারের লোকজনকে খুজে পাওয়া যায়না হয়তো বা তারা আগেই পালিয়েছে৷ মেঘ কমিশনারকে রিপোর্ট করে৷ সব কাজ শেষ করে বাড়ির উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পড়ে৷ 

                 ভয়ে কাচুমাচু মুখ করে ফারহার সামনে দাড়িয়ে আছে রাফিদ৷ বেলা সম্পর্কে সবটা জানানোর পর ফারহা প্রচন্ড রেগে যায়৷ 

” দি এখন আমি কি করবো?”

” বেলার সাথে ঠিক আগের মতই কথা বলে যাবি ইনফ্যাক্ট আরও বেশি করে কথা বলবি৷”

” মানেটা কি? কি বলছিস একটু বুঝিয়ে বলবি প্লিজ?”

” সময় আসলে সবটা বলবো তবে এখন যেভাবে বলবো তুই ঠিক সেভাবে করবি৷ আজ থেকে তুই বেলার সাথে এমন ভাবে বিহেব করবি যেন বেলা ভাবতে বাধ্য হয় তুই ওকে ভালোবাসিস৷”

” কিন্তু দি?” 

“যা বলেছি তুই ঠিক তাই করবি৷ আর শোন আশরাফ দেশে ফিরেছে৷ এই লোকটা যেন আমার আশে পাশে না দেখি সেই ব্যবস্থা কর৷”

” ওকে দি৷ দি একটা প্রশ্ন ছিলো৷”

ফারহা বেলকনিতে গিয়ে দাড়িয়ে বলে,” তুই কি প্রশ্ন করতে চাস আমি জানি ছোটু৷”

” তুই জানিস?”

”  মেঘ কে ঘিরেই তোর সকল প্রশ্ন তাই তো?”

রাফিদ হতভম্ব হয়ে মাথা নাড়লো৷ ফারহা মেঘলা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,” আমার জীবনের সুখ যারা কেরে নিয়েছে৷ আমি যদি তাদের পৃথিবীটা জাহান্নাম বানিয়ে না দি তাহলে আমার নাম ফারহা রহমান নয়৷ ” কথাটা বলতে বলতে ফারহার ঠোঁটের কোণে পৌশাচিক হাসি ফুটে উঠলো৷

                 মেঘ বাড়িতে ঢুকতে ড্রইংরুমে বসে থাকা মানুষটিকে দেখে মেঘ খানিকটা অবাক হয়ে গেল৷ 

” আঙ্কেল আপনি?”

” কেন মেঘ এই বুড়ো আঙ্কেলকে দেখে বুঝি তোমার ভালো লাগেনি?”

” না না আঙ্কেল তেমন কিছু না৷ এত বছর পর আপনাকে দেখে অবাক হয়েছি৷”

” জানি মেঘ তুমিও হয়তো আমাকে দোষি ভাবো তাই না?” 

” না আঙ্কেল সত্যিটা আর কেউ জানুক আর নাই জানুক আমি জানি আপনি সত্যি সেদিন কোন অপরাধ করেন নি৷ বরং অন্য কেউ আড়ালে থেকে সবটা করেছে৷ কিন্তু কে সে সেটা এবার বের করতে হবে৷”

” তাতে কি কোন লাভ আছে মেঘ? আমার সোনা মা তো আমাকে ভুল বুঝে দুরে চলে গেছে৷”

” আঙ্কেল ফারহা রাফিদ দুজনে এই শহরে আছে৷ “

মেঘের কথা শুনে শাফায়াত বলে ওঠে,” মেঘ তুমি জানতে মামুনি এই শহরে আছে?”

” হ্যাঁ ড্যাড আমি জানতাম৷ তবে ফারহার এই শহরে থাকাটা বেশিদিন হয়নি আমি জেনেছি৷”

আশরাফ খান এবার বেশ ইমোশনাল হয়ে মেঘকে বলতে লাগলো,” মেঘ বাবা আমার সোনা মা’কে আমার কাছে কি তুমি ফিরিয়ে আনতে পারো না? আমার অন্ধকার ঘরে আলো জ্বালিয়ে দিতে? “

মেঘ আশরাফ খানের হাত দুটো ধরে বলে উঠলো,” আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি আঙ্কেল৷ আপনার সোনা মা’কে  ঠিক আপনার কাছে ফিরিয়ে আনবো৷” 

মেঘের কথা শুনে আশরাফ খান , শাফায়াত চৌধুরী ,মিসেস মায়রা চৌধুরীর মুখে হাসি ফুটে উঠলো৷ 

“মম তোমরা গল্প করো আমি ফ্রেস হয়ে আসছি৷”

” আমি তোমার খাবার গরম করছি তাড়াতাড়ি চলে আসবে৷”

” ওকে মম৷”

মেঘ সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে নিজের রুমের আগে বেলার রুম৷ মেঘ বেলার রুমের সামনে দিয়ে যেতেই বেলা মেঘের সামনে এসে দাড়াতে মেঘ ঘাবড়ে যায়৷

” এই বেলুন এভাবে ভুতের মত সামনে এসে দাড়ালি কেন?” 

” তার তুই আমার কিছু প্রশ্নের উওর দে?”

” উফফ মাথা খারাপ করে কেন করে দিচ্ছিস বেলুন? যা বলার ঝটপট বলে ফেল ৷” 

বেলা মেঘের হাত টেনে রুমে নিয়ে গিয়ে রাগি গলায় বলে উঠলো,” তুই আমাকে রাফিদ আর ভাবির সম্পর্কে মিথ্যে কথা কেন বললি?” 

মেঘ বেলার কথা শুনে বুঝতে পারলো বেলা সবটা জানতে পেরেছে৷ 

” দাভাই তুই ভাবি আর রাফিদ সম্পর্কে সবটা যে মিথ্যে বলেছিস এটা আমি জানতে পেরেছি ৷ এবার সত্যি টা কি সেটা কি আমাকে বলবি? আমি জানি ভাবিকে তুই অনেক আগে থেকে চিনিস৷ তোদের চেনা জানা কয়েক দিনের নয় বরং অনেক বছরের তাই তুই এবার সবটা সত্যি বল আমাকে?”

মেঘ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,” সময় হলে সব টা জানতে পারবি বেলুন৷ এখনই সবটা জানার সময় হয়নি বেলুন সময় আসুক আমি নিজে তোকে সবটা জানাবো৷” মেঘ বেলার কথা শোনার অপেক্ষা না করে বেলার রুম থেকে বেড়িয়ে গেল৷

১৪.

            কালো মেঘ সরে গিয়ে আকাশে তারা গুলো উঁকি মারছে৷ চারিদিকে অন্ধকারে ছেঁয়ে আছে৷ ব্যালকনিতে রাখা বেলি ফুলের ঘ্রানে চারিদিকে মৌ মৌ করছে৷ রাফিদ টিউশনে চলে গেছে ঘন্টাখানিক আগে৷ ফারহাও রাফিদের বের হবার পর পর বেড়িয়ে যায়৷ ফারহা গেট দিয়ে বের হতেই ফারহার ফোনটা বেজে ওঠে………

.

.

.

#চলবে……..

{ প্রিয় পাঠক/পাঠিকা সবাইকে জানাই ঈদ মোবারক৷}

#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া

#ফারহানা_আক্তার_ছবি_ও_রাফি 

#পর্ব_১১

.

.

🌺

১৪.

            কালো মেঘ সরে গিয়ে আকাশে তারা গুলো উঁকি মারছে৷ চারিদিকে অন্ধকারে ছেঁয়ে আছে৷ ব্যালকনিতে রাখা বেলি ফুলের ঘ্রানে চারিদিকে মৌ মৌ করছে৷ রাফিদ টিউশনে চলে গেছে ঘন্টাখানিক আগে৷ ফারহাও রাফিদের বের হবার পর পর বেড়িয়ে যায়৷ ফারহা গেট দিয়ে বের হতেই ফারহার ফোনটা বেজে ওঠে৷ ফারহা ফোন হাতে নিয়ে ফোনের স্কিনে ভেশে ওঠা নাম্বারটা দেখে দাঁত কটমট করে কল কেটে দিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,” আপনাকে কখনো ক্ষমা করবো না মিস্টার আশরাফ খান৷ আপনি আমার কাছে মৃত ৷ ” কথাটা বলতে বলতে বড় রাস্তায় উঠতে একটা বড় গাড়ি ফারহার সামনে থামে ফারহা কোন কথা না বলে গাড়িতে উঠে বসে৷ 

মেঘ হন্তদন্ত হয়ে ড্রইংরুমে এসে দেখে আশরাফ খান চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তখনি মেঘ বলে ওঠে,” আঙ্কেল আমার একটা প্রশ্ন আছে৷”

” প্রশ্ন! আচ্ছা বলো কি জানতে চাও?”

” আঙ্কেল ফারুপাখি আপনার থেকে আলাদা হবার পর ও এত বড় ভার্সিটিতে কি করে পড়তে পারে? আর তাদের এত খরচ কি করে বহন করে? “

আশরাফ খান বলে ওঠে,” মেঘ তুমি ভুলে যাচ্ছো তোমার ফারুপাখির মায়ের সকল সম্পত্তি সোনা মা’র নামে৷ ফারিজা(ফারহার মা) মৃত্যুর আগে তার সকল সম্পত্তি সোনা মায়ের নামে করে দিয়েছে৷ “

মেঘ ভাবতে লাগলো,” ফারুপাখি কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হয়েও কেন ওই ভাঙ্গা চিলেকোঠার ঘরে থাকছে? আরও অনেক গুলো প্রশ্ন মেঘের মাথায় ঘুরছে কিন্তু এর কোন উওর মেঘের কাছে নেই৷

             পায়ের উপর পা তুলে হাতে ধাড়ালো ছুড়ি নিয়ে ইমাম হাওলাদারের দিকে তাকিয়ে আছে৷ ইমাম হাওলাদারের চোখে মুখে ভয় আতঙ্ক আর যন্ত্রনার ছাপ৷ ইতোমধ্যে ইমামের দু’হাত এবং দু’পায়ের আঙ্গুল কাটা আঙ্গুল দিয়ে এখনো রক্ত পড়ছে৷ সাদা ফ্লোর লাল র’ক্তে তলিয়ে গেছে৷ ফারহা তার পাশে দাড়িয়ে থাকা শক্ত পক্ত বলিষ্ঠ পালোয়ানের মত লোক দুইজনকে ফারহা জ্বিজ্ঞাসা করলো,” মুখ খুলেছে এই জা’নো’য়া’রের বাচ্চা?”

ফারহার কথা শুনে লোক দুটো বলে উঠলো,” ইয়েস ম্যাম মোটা মুটি সব ইনফরমেশন দিয়েছে৷”

” তাহলে আর দেরি কেন? এই নিকৃষ্ট কিটকে বাঁচিয়ে কেন রাখলেন?” হুংকার ছেড়ে কথাটা বলে ফারহা উঠে দাড়ালো৷ ইমাম হাওলাদার আতংক ভয়ার্ত চোখে ফারহার দিকে তাকিয়ে আছে৷ লোক দুটো 

” ম্যাম আমরা আপনার হুকুমের অপেক্ষা করছি৷” 

” তাহলে দেরি কেন কাজ শুরু করুন ফাস্ট৷”

” ইয়েস ম্যাম৷” ফারহার পারমিশন পেয়ে লোক দুটো রুম থেকে বেড়িয়ে গেল ফিরে এলো দু’মিনিট বাদে৷ হাতে  একটা ইয়া বড় বক্স৷ বক্সটা রেখে ইমামকে স্টেচারে শুইয়ে দিলো৷ ইমাম যেন ভয়ে নড়াচড়া করতেই যেন ভুলে গেল৷ ফারহা মুচকি হেসে বক্সটা নিজে খুলে ফেলে৷ বক্সের ভেতর নানা রকম অস্ত্র ৷ ছোট বড় নানা রকম অস্ত্র৷ ফারহা একটা মাঝারি আকারের একটা ছুড়ি হাতে নিতে আর একজন ফারহার লোক রুমে প্রবেশ করে বলে,” ম্যাম একটা খবর আছে৷ পুলিশ হাই কোয়ার্টারে মেঘ চৌধুরীর পাশাপাশি আর একজন অফিসার নিয়োগ দিয়েছে যারা এই কেস টা হ্যান্ডেল করছে৷”

” ফারহা গম্ভির গলায় লোকটিকে বলে উঠলো,” সময় নষ্ট না করে আসল কথা বলুন৷”

লোক গুলো কিছু বলার পূর্বে ইমাম হাওলাদার বলে উঠলো,” আমার ভাই  তোদের ছাড়বে না দেখবি ও ঠিকি আমাকে খুজে বের করবে৷ তারপর তোদের কে শেষ করে দিবে৷” ফারহার আর বাকি কথা শোনা হয় না৷ তবে ইমাম হাওলাদারের কথা শুনে ফারহা রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে,” ওহ বেবি আমি তো ভয় পেয়ে গেছি৷ আচ্ছা একটা কাজ করলে কেমন হয়? উমম তোকে না হয় তোর ভাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করি?” 

ইমামের চোখে মুখে হাসি ফুটে উঠলো৷ ফারহা ভয় পেয়ে যে তাকে এত তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিবে এটা ভাবতে পারেনি ইমাম৷ ইমাম হাসতে হাসতে বলে উঠলো ,” দেখেছিস আমার ভাইয়ের পাওয়ার৷ একবার আমি ছাড়া পাই দেখিস তোদের অবস্থা আমি কি করি৷” 

ফারহা ভয় পাওয়ার মত ভঙ্গি করে ইমামের দিকে তাকিয়ে থেকে বলতে লাগলো,” ওহ বেবি এভাবে বলো না আমার যে ভয়ে আত্মা শুকিয়ে যাচ্ছে৷ ভিষণ ভয় পেয়েছি বেবি৷” কথা গুলো বলে হাসতে লাগলো ফারহা৷ ফারহার হাসি দেখে ইমাম যেন ভরকে গেল৷ কিছু বলার সুযোগ পেল না তার আগে ফারহা তার হাতের ধা’ড়া’লো ছু’ড়ি টা ইমামের  পে’টে গেঁথে দিলো৷ ইমামের আত্মচিৎকারে পুরো রুম কেঁপে উঠলো৷ ফারহা মুচকি হেসে বলে,” কষ্ট হচ্ছে বেবি? জানো বেবি তুমি ঠিক যেভাবে ছোট ছোট মেয়েদের কষ্ট দিয়ে মা’রতে আমি তার থেকে হাজার গুন কষ্ট দিয়ে তোমাকে মা’রবো৷ বিশ্বাস করো এত টুকু করতে একটুও কার্পণ্য করবো না৷” বলতে বলতে একটা বোতলের ছিপি খুলে ইমাদের পে’টে কা’টা অংশে একটু একটু করে এ’সি’ড ঢালতে লাগলো৷ এসিট ঢালার সাথে সাথে ইমাম বিকট চিৎকার করতে লাগলো৷ ফারহা সে দিকে মন না দিয়ে নিজের মত করে পেটের কা’টা অংশে তখনি ইমার অতি কষ্টে বলে উঠলো,” আমাকে এভাবে না মে’রে দয়া করে একে বারে মে’রে ফেলো৷ আমি আর পারছি না এই য,, যন্ত্রনা সহ্য করতে৷”

ফারহা এ’সি’ডের বোতল রেখে ইমামকে বলতে লাগলো,” উহু বেবি এত তাড়াতাড়ি তোমাকে মা’রছি না৷ একটু একটু করে মা’রবো তোমাকে আর তারপর তোমার ভাইকে; বিশ্বাস করো তোমাকে যে যন্ত্রনা দিয়ে মা’রবো তার থেকেও একশো গুন বেশি কষ্ট দিয়ে মা’রবো তোমার ভাইকে আপাদতো এই যন্ত্রনা টুকু সহ্য করো তারপর নতুন যন্ত্রনা দেবার জন্য আমি হাজির হবো৷ ” এই বলে ফারহা ইমামের পায়ের একটা র’গ কে’টে দিয়ে বলে,” আজ এই পর্যন্ত বাকিটুকু না হয় পড়ে হবে ওকে বেবি?” ইমাম য’ন্ত্র’নায় আর কিছু বললো না দ’ম বেড়িয়ে যাচ্ছে ইমামের৷ ফারহা বেসিনে হাত পরিষ্কার করে লোক গুলো কে বলতে লাগলো হাতে সময় বেশ কম বাকি এরিয়া গুলো এ্যা’টাক করতে হবে৷ আপনারা তৈরি হন আগামিকাল এই অপারেশনে আমিও বের হবো৷” 

” ওকে ম্যাম আমরা তাহলে সে ভাবে সবটা গুছিয়ে রাখছি৷”

ফারহা ফোনে সময়টা দেখে বললো,” আমাকে যেতে হবে৷ আপনারা এই জা’নো’য়া’র টার দিকে নজর রাখবেন দেখবেন এত তাড়াতাড়ি যেন ম’রে না যায়৷”

” ওকে ম্যাম, ম্যাম চলুন আপনাকে পৌছে দি৷”

” তার কোন প্রয়োজন নেই৷ আমি একাই যেতে পারবো৷”

ফারহা আর দেরি করলো না দ্রুত আন্ডার গ্রাউন্ড থেকে বেরিয়ে যেতে নিলে একজন বলে উঠলো , ” ম্যাম নিখিল স্যারের খবর পেয়েছি৷ ওনাকে ওই অফিসারের বাবার লোকেরা বাগান বাড়িতে আটকে রেখেছে৷” ফারহা সবটা শুনে বেড়িয়ে গেল৷ ফারহার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে মেঘের উপর নয় নিখিলের উপর, ছেলেটার চোখে যে ফারহা ওর জন্য ভালোবাসা দেখতে পেয়েছে অনেক আগেই কিন্তু কখনো নিখিলকে বুঝতে দেয়নি৷ কিন্তু মেঘের বাড়াবাড়ি নিখিলকে ধিরে ধিরে হিংস্র করে তুলছে৷ ফারহা তার এই সুন্দর বন্ধুত্বটাকে নষ্ট হতে দিতে চায়না তাই নিখিলের এই অনুভূতি গুলো বুঝেও না বোঝার অভিনয় করতো৷ ফারহা পায়ে হেটে হেটে আজও সেই পদ্মদিঘির পাড়ে গিয়ে বসে পড়লো৷ আজ আকাশে পূর্ণ চাঁদ৷ চাঁদের আলোয় চারিদিকটা স্পষ্ট৷ চারিদিক নিস্তব্ধ শীতল হাওয়া বইছে৷ ফারহার শরীর টা যেন ছেড়ে দিচ্ছে৷ ফারহার ইচ্ছে করছে এই খোলা আকাশের নিচে শুয়ে থাকতে৷ ফারহা বেশিক্ষণ আর বসতে পারলো না ঘাসের উপর শুয়ে পড়লো৷

” পালিয়ে যাও ফারুপাখি পালিয়ে যাও৷ আমাদের বাচ্চাকে বাঁচাও ফারুপাখি৷ আমাদের বা,,,,,,” বাকি টুকু বলার পূর্বে ধা’ড়া’লো একটা চা’পাতি আয়াশের বুক চি’রে দিলো৷ মূহূর্তে আয়াশের নিথর দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়লো৷ তা দেখে ফারহা আয়াশের নাম ধরে চিৎকার করতেই ফারহার শোয়া থেকে উঠে বসে৷ থর থর করে কাঁপছে ফারহার শরীর৷ কপাল বেয়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম গড়িয়ে পড়লো৷ ফারহা উঠে দিঘির পানিতে চোখে মুখে পানি দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে  আকাশের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,” বড্ড ভালোবাসি তোমায় আয়াশ৷ প্লিজ আয়াশ আমার কাছে ফিরে এসো না৷  জানো আয়াশ তোমাকে ছাড়া আমার এই পৃথিবীতে বাঁচতে হচ্ছে কেন জানো? তোমাকে যারা আমার থেকে বহু দুরে সরিয়ে দিয়েছে তাদের কে জাহান্নাম দর্শণ করানোর জন্য আমি বেঁচে আছি৷ আমার কলিজার টুকরো কে ওরা বাঁচতে দেয় নি আয়াশ৷ আমার পেটেই ওকে মেরে ফেলেছে৷ বড্ড কষ্ট হয় আয়াশ বিশ্বাস করো বড্ড কষ্ট হয় এই পৃথিবীতে শ্বাস নিতে , আজ অঝরে কাঁদছে ফারহা৷ হৃদয়টায় যেন কেউ ছু’ড়ি চালিয়ে দিচ্ছে৷ ক্ষত-বিক্ষত হৃদয়ের ঘা গুলো যেন আজ আবারও তাজা হয়ে উঠলো৷ নিস্তব্ধ পরিবেশ এখন কেমন যেন বেশ গুমোট পরিবেশে বদলে গেল৷ ফারহা চোখের পানি মুছে উঠে দাড়ায়৷ এখন আর ফারহার চোখে পানি নেই৷ চোখে মুখে কঠোরতার ছাপ৷ ফারহা ফোনের স্কিনে সময়টা দেখে নিয়ে পদ্মদিঘির এরিয়া দ্রুত ত্যাগ করে৷ 

                   হাত-পা বাধা অবস্থায় জ্ঞান হারিয়েছে নিখিল৷ নিখিলকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখে টেবিলের উপর থেকে পানির জগ নিয়ে পুরো পানি টা ছুড়ে মারে নিখিলের মুখে মেঘ৷ মুখে পানি পড়তে জ্ঞান ফিরে আসে নিখিলের৷ চোখ মেলে নিখিলকে দেখে বুঝতে বাকি নেই নিখিলের যে তাকে কিডন্যাপ মেঘ করেছে৷ 

মেঘ নিখিলের সামনের চেয়ারে বসে নিখিলকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,” তো মিস্টার নিখিল এখন আপনি বলুন আমার লোকেরা আপনাকে ঠিক মত খাতেমদারি করেছে তো? কোন কিছুতে কার্পণ্য করেনি তো?”

মেঘের কথা শুনে নিখিল দাঁতে দাঁত চেপে মেঘকে বলে উঠলো,” তোকে পস্তাতে হবে অফিসার৷ আমাকে তুই চিনিস না৷ তোকে আমি ছাড়বো না৷” নিখিলের মুখে তুই তুকারি শুনে মেঘের মাথা গরম হয়ে যায়৷ হুট করে নিখিলের চোয়াল শক্ত করে ধরে বলে,” তুই আমাকে ছাড়বি কি ছাড়বি না? এটা আমি জানি না তবে তোকে আমি ছাড়বো না৷ আমার কলিজায় তুই হাত দিতে চেয়েছিস তাই না? এবার দেখ তোর এই হাতের অবস্থা কি করি৷” মেঘ নিখিলের চোয়াল ছেড়ে দিয়ে পেছনে হাত বাড়াতে একজন গার্ড একটা লোহার রড মেঘের হাতে দেয়৷ নিখিল লোহার রড টা দেখে ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে তবে কিছু বলতে পারে না তার পূর্বে মেঘ স্বজোড়ে নিখিলের ডান হাতে রড দিয়ে আ’ঘা’ত করে৷ ব্যাথায় যন্ত্রনায় নিখিল চিৎকার করে ওঠে৷ সাথে সাথে অন্য আর একজন গার্ড নিখিলের মুখে কাপড় ঢুকিয়ে দেয়৷ যাতে শব্দ না করতে পারে৷ 

মেঘ পরবর্তী আঘাত করতে নিবে তার পূর্বে পুরো বাগানবাড়ির বিদ্যুৎ চলে যায়৷ জেনারেটারও অন হয়নি৷ মেঘ রাগে গজ গজ করতে করতে তার গার্ডদের মেইন বোড সুইচ দেখতে বললো আর নিজের ফোন বের করে ফ্লাশ জ্বালিয়ে নিখিলের সামনে ধরতে মেঘ চমকে যায়৷ কারণ নিখিলকে যে চেয়ারে বাধা হয়েছিলো সে চেয়ারটি ফাঁকা, সেখানে নিখিল নেই৷ মেঘের বুঝতে বাকি নেই নিখিল পালিয়েছে৷ কিন্তু নিখিল একা কখনো এভাবে পালাতে পারে না ওকে কেউ নিশ্চয়ই সাহায্য করেছে কিন্তু কে সে?

.

.

.

#চলবে…………..

#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া

#ফারহানা_আক্তার_ছবি_ও_রাফি 

#পর্ব_১২

.

.

🌺

১৫.

ফজরের আজানের পর পর জ্ঞান ফিরে আসে নিখিলের, চোখ মেলে তাকিয়ে চারিপাশটা দেখে নিখিল বুঝতে পারলো সে তার বাড়ির সামনে পড়ে আছে৷ শরীরে অজস্র ব্যাথা নিয়ে কোন ভাবে বাড়ির কলিংবেল কয়েকবার বাজানোর পর নিখিলের মা বাবা দুজনে দরজা খুলে নিখিলকে আহত অবস্থায় দেখতে পেয়ে চিৎকার করে উঠলো৷ নিখিলের বাবা কোন ভাবে নিখিলকে ধরে নিয়ে তার রুমে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দেয়৷ নিখিলের বাবা নিখিলকে হসপিটালে ভর্তি করতে চাইলে নিখিল বারণ করে দিয়ে আস্তে ধীর কন্ঠে বলে,” বাবা যা যা করার তা বাড়িতে করো৷ আমি হসপিটালে যাবো না৷”

একমাত্র ছেলের কথা মতই ডক্টরকে ফোন করে তার বাসায় আসতে বলে৷ নিখিলের মা বাবা নিখিলের এই অবস্থা কি করে হলো? কে করেছে? আর বাড়ির সামনে বা কি করে এলো? সেটা জানতে চাইলে নিখিল বলে,” বাবা সবটা জানতে পারবে সঠিক সময় আসুক৷ আর আমি এখানে কি ভাবে এলাম আমি নিজেও জানি না৷ তবে কেউ একজন আমাকে বাঁচিয়ে এখানে পৌছে দিয়েছে৷” কিছুক্ষণ পরে ডক্টর এসে নিখিলকে চেকয়াপ করে শরীরের কা’টা স্থানে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে কিছু মেডিসিন আনতে বলে নিখিলের বাবাকে, নিখিলের বাবা বাসার দারোয়ানকে মেডিসিন আসতে পাঠিয়ে দেয়৷ ডক্টর নিখিলদের পরিবারের অনেক বছরের চেনা জানা বলতে গেলে ডক্টর নিখিলের বাবার বন্ধুর মত৷ সে সুবাদে ডক্টর নিখিলকে প্রশ্ন করে৷ ” নিখিল বাবা তোমার এই অবস্থা হলো কি করে?”

” তেমন কিছু না আঙ্কেল৷ রাতে বন্ধুদের নিয়ে লংড্রাইবে গিয়ে ছিলাম তখনি এক্সিডেন্ট করি৷”

” ওহ আচ্ছা এখন থেকে সাবধানে চলাফেরা করবে৷ আর আমি যে মেডিসিন গুলো আনতে দিয়েছি সেগুলো কি ভাবে কোনটা কখন খেতে হবে তা লিখে দিয়েছি৷ সেভাবে খাবে৷ তাহলে এখন আমি আসছি৷ নিজের খেয়ান রেখো আর এখন থেকে দুদিন সম্পূর্ণ বেড রেস্টে থাকবে৷” কথা গুলো বলে ডক্টর চলে যাওয়ার পর পর নিখিলের বাবা নিখিল কে জ্বিজ্ঞাসা করে এই সব কি বললে নিখিল? তুমি লংড্রাইবে গিয়ে ছিলে? তাহলে গত পরশুদিন তোমার নম্বর থেকে যে একটা মেসেজ আসলো তুমি আয়মানের বাড়িতে থাকবে৷ ওখানে গ্রুপ স্টাডি করবে?”

নিখিল দম নিয়ে শুধু একটা কথাই বললো,” বাবা ওই মেসেজ টা আমার পাঠানো নয়৷ আমাকে কিডন্যাপ করা হয়েছিলো৷ আমি ডক্টর আঙ্কেলের প্রশ্ন থেকে বাঁচতে মিথ্যে লংড্রাইবের কথা বলেছি৷ এখন আর কোন প্রশ্ন করো না ড্যাড আমি খুব ক্লান্ত ঘুমাবো৷” 

 নিখিলের বাবা আর কোন প্রশ্ন না করে নিখিলের মাকে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়৷

                  বেলা আটটা পর্যন্ত ফারহাকে ঘুমাতে দেখে রাফিদ বেশ অবাক হয় পরক্ষণে মনে পড়ে তার দিয়ে শেষ রাতের একটু আগে ফিরে ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমিয়েছে৷ বাড়িওয়ালা দিদা এসে দুই ভাই-বোনের জন্য নাস্তা বানিয়ে নিয়ে আসে৷ ফারহাকে ঘুম দেখে ওর মাথার কাছে বসে আস্তে আস্তে মোলায়েম কন্ঠে ফারহাকে ডাকতে লাগলো৷ মাথায় হাত বুললিয়ে দিতে ফারহা যেন বাচ্চাদের মত ঠোঁট উল্টে অন্য দিকে ফিরে ঘুমালো৷ তাদেখে রাফিদ দিদা দুজনে মিটি মিটি হাসতে লাগলো৷ তখন আর দিদা ফারহাকে ডাকলো না চলে গেল৷ আর রাফিদ নাস্তা করে কলেজে চলে গেলো৷ ফারহা তার চিলেকোঠায় ঘুমিয়ে আছে এমন সময় তার ফোন টা বিকট শব্দ করে বাজতে থাকে৷ প্রথমবার বেজে কেটে যায় তারপরও আবার ফোন বাজতে থাকে৷ ফারহার ঘুম ভেঙ্গে যায় ফোনের বিকট শব্দে৷ একরাশ বিরক্তি নিয়ে কল রিসিভ করে কানে ধরে ঘুম জড়ানো কন্ঠে হ্যালো বলতে ফোনের ওপাশ থেকে কেউ বলে ওঠে,” ফারুপাখি” যাস্ট এই নামটা শুনে ফারহার ঘুম চোখ থেকে উধাও হতে যথেষ্ট৷ ফারহার মাথায় যেন রাগ চড়া দিয়ে উঠলো৷ রাগি কন্ঠে বলে উঠলো,” কে আপনি আর কাকে আপনি ফারুপাখি বলছেন?”

ফারহার কথা শুনে ফোনের ওপাশ থেকে একটা মৃদু হাসির আওয়াজ এলো তার পর বলতে লাগলো,” এখনো আমাকে চিনতে পারো নি ফারুপাখি? জানো তোমার ঘুম জড়ানো কথা গুলো যেন আমার হৃদয়ে লাগে৷ এত কিউট কেন তুমি? ইচ্ছে করে এই বুকে তোমাকে লুকিয়ে রাখি যেন পৃথিবীর কেউ তোমাকে খুজে না পায়৷” বলেই কাউচে শরীর এলিয়ে দিলো মেঘ৷ 

ফারহা প্রথমে ফোনের ওপাশে থাকা মানুষটা কে চিনতে না পারলেও এখন আর চিনতে অসুবিধা হয়নি৷ আসলে ফোনের ওপাশে মেঘ রয়েছে৷ 

ফারহা বিছানা থেকে উঠে বসে তারপর রাগি কন্ঠে বলে উঠলো,” ফারপাখি বলে আমাকে ডাকার কোন অধিকার আপনার নেই মিস্টার অফিসার৷ সে অধিকার শুধু মাত্র একজনের ছিলো সে হলো আয়াশ৷ আর জেনে শুনে আগুনকে বুকে জড়াতে চাইছেন? এটা নিশ্চিত  হয়ে আমাকে আপনার বুকে জড়িয়ে নিলে আপনার বিনাস অবধারিত৷ শুধু আপনি নন আপনার চারপাশ আগুনে জ্বলে ছাই হয়ে যাবে৷”

” ফারুপাখি তুমি তো নিশ্চয়ই জানো?  আগুন নিভাতে প্রয়োজন পানি৷ এখন তুমি যদি আগুন হও আমি নাহয় পানি হলাম৷ তুমি না হয় আমাতে বিলিন হলে৷ “

” অসম্ভব৷ “

” অসম্ভব বলে মেঘের জীবনে কিছু নেই৷ তুমি আমার ফারুপাখি৷ শুধু আমার৷ আর একটা কথা তোমার ছেলে বন্ধুদের সাথে একটু কম মেলামেশা করো৷ তনু , নেহাল, আয়মানকে নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই তবে নিখিলের সাথে তুমি মিশবে না ইভেন কথাও বলবে না৷”

ফারহা মেঘের এমন অধিকার খাটিয়ে কথা বলতে শুনে রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠলো৷

” হাউ ডেয়ার ইউ মিস্টার অফিসার৷ আপনার স্পর্ধা দেখে আমি সত্যি অবাক৷ আমি কার সাথে মিশবো আর কার সাথে মিশবো না সেটা আপনার বলে দেওয়ার কোন অধিকার নেই৷ আর হা আমাকে ফলো করা সাহস নেক্টস টাইম করবেন না যদি করেন তো সেটা আপনার জন্য খুব একটা ভালো হবে না মিস্টার অফিসার৷” বলে কল ডিসকানেক্ট করে দুহাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে বলতে লাগলো “কেন বার বার এই মানুষ গুলো আমার জীবনে অধিকার ফলাতে চায়? কেন?

                  ফারহা আজ একটু দেরি করে ভার্সিটিতে যায়৷ ফারহা ভার্সিটিতে প্রবেশ করতে করতে বুঝতে পারে অলরেডি ক্লাস শুরু হয়ে গেছে৷ তাই ফারহা ভার্সিটির ক্যাম্পাসের ক্যান্টিনে গিয়ে ক্লাস শেষ হবার অপেক্ষা করতে থাকে৷ ফারহা ক্যান্টিনে বসতে খেয়াল করে কয়েকটা ছেলে শুধু তাকেই খেয়াল করছে তাকিয়ে রয়েছে৷ ফারহা ছেলে গুলোর ফেস দেখে একদমি চেনা লাগলো না কারণ ভার্সিটিতে এত বছর পড়ছে যদি নতুন কোন ছাত্র-ছাত্রী এসে থাকতো তাহলে তারা মুখ দেখে খানিকটা হলেও বুঝতে পারতো৷ আর এদের কে একদমিই চেনা লাগছে না৷ ফারহা সে দিকে না তাকিয়ে খাবার সার্ব করা ছেলেটা ফারহাকে চা দিতে এলে ফারহা ছেলেটাকে বলে,” মামা এই ছেলে কে নতুন লাগছে৷ এই ভার্সিটিতে তো কখনো আগে দেখেনি৷ আপনি চিনেন এদেরকে?”

” আরেহ কি কন মামা এদেরকে আমি কেমনে চিনমু? এরা সকালে ক্যান্টিন খোলার পর থেকে এসে বসে আছে৷ আর এটা সেটা অর্ডার দিয়ে খাচ্ছে৷”

” ওহ আচ্ছা ঠিক আছে মামা৷” ছেলেটা চলে যাওয়ার পর পর ফারহা  অল্প সময়ে চা খেয়ে বিল পে করে ক্যান্টিন থেকে বেড়িয়ে যায়৷ ততক্ষণে ক্লাস শেষ হয়ে গেছে৷ ফারহা ক্লাসে ঢুকতে নেহাল তনু আয়মানদের মুখে হাসি চলে আসে৷ ফারহা গিয়ে তনুর পাশে বসে৷ ক্লাসে স্যার ম্যাম না থাকায় নেহাল বেশ ফারহাকে বলে দোস্ত নিখিল সকালে আমাকে ফোন করেছিলো৷ ওর নাকি ছোট্ট একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে৷ আমরা ভাবছি ক্লাস আর করবো না নিখিলকে দেখতে ওর বাড়িতে যাবো৷”

ফারহা কিছু একটা ভেবে সায় জানায়৷ তারা আর ক্লাস না করে নিখিলের বাড়ির উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পড়ে৷ আয়মান ড্রাইভ করছে আর পাশে ফারহা বসে পেছনে নেহাল আর তনু৷ ফারহা সাইড মিররে তাকাতে দেখতে পায় অন্য একটা গাড়ি ওদের গাড়িটা ফলো করছে৷ ফারহা আবারও কিছু ভেবে আয়মানকে বলে ওঠে,” আয়মান দোস্ত এই রাস্তা নয় ডান দিকের রাস্তা নে আর ফুল স্পিডে রাইড কর৷”

” কেন?”

” সাইকেলের মত গাড়ি না চালিয়ে ঝটপট ডান দিকে গাড়ি ঘুড়া৷”

ফারহার কথা মত আয়মান গাড়ি ঘুড়িয়ে ফেলে ফুল স্পিডে অন্য রাস্তা ধরে৷ ফারহা সাইড মিররে তাকিয়ে গাড়িটি দেখতে পেল না৷ কারণ হুট করে আয়মান গাড়ি ঘুড়াতে আর ফুল স্পিডে চালাতে পেছনের গাড়িটা আয়মানের গাড়িটা আর ধরতে পারলো না৷ কিছুক্ষণের মধ্যে তার নিখিলের বাড়িতে পৌছে গেল৷ বাড়ির কলিংবেল বাজাতে একজন মধ্যে বয়সি পুরুষ এসে দরজাটা খুলে দেয়৷ নেহাল নিখিল তনু আর ফারহাকে দেখতে পেয়ে লোকটি হাসি দিয়ে বললো,” ভালো আছো বাবারা?” তনু মুখ ফুলিয়ে লোকটিকে বললো,” চাচা আমি কিন্তু মাইন্ড করলাম৷”

” কেন মা ?”

” এই যে আপনি ওদের কে কি সুন্দর করে জ্বিজ্ঞাসা করলেন বাবারা কেমন আছো? আমরা নদীর জলে ভেসে আসছি?”

লোকটি নিজের ভুল বুঝতে পারলো কিন্তু তনুর এমন বাচ্চামো দেখে লোকটি কানে হাত দিয়ে বললো,” ক্ষমা করো মা জননী ভুল হয়ে গেছে৷ এখন বলেন মা জননীরা আপনারা কেমন আছেন?”

এবার ফারহা মিষ্টি করে হেসে বলে উঠলো,” আলহামদুলিল্লাহ চাচা আমরা ভালো আছি৷ আপনি কেমন আছেন? আর এই পাগলিটার কথায় কিছু মনে করবেন না৷”

” না না মা জননী আমি কিছু মনে করি নি৷”

নেহাল এবার বলে উঠলো,” চাচা আমরা নিখিলের রুমে যাচ্ছি৷”

” আচ্ছা বাবারা আমি ওখানে তোমাদের জন্য নাস্তা বানিয়ে আনছি৷”

আয়মান নেহাল নিখিল তনু ফারহা আগেও নিখিলদের বাসায় এসেছে যার কারণে এই বাড়ির মেইড সার্ভেন্টদের সাথে তারা পূর্ব পরিচিত৷ যার সাথে এতক্ষণ সবাই কথা বললো তিনি নিখিলদের বাড়িতে কাজ করে প্রায় অনেক গুলো বছর৷ 

নেহাল আয়মান তনু ফারহা নিখিলের রুমে নক করতে নিখিল বলে ওঠে,” ভেতরে আয়৷ দরজা খোলা আছে৷”

তনু সর্ব প্রথম রুম ঢুকে নিখিলের হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ দেখে ছোটখাটো একটা চিৎকার দেয়৷ তা দেখে নিখিল কপাল কুঁচকে বলে এই ড্রামা কুইন তোর ড্রামা বন্ধ কর৷ আমি ঠিক আছি মরে যাই নি৷”

ফারহা দু’পা হেটে নিখিলের পাশে বসে বলে,” এখন কেমন আছিস নিখিল?”

নিখিল ফারহার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,” আলহামদুলিল্লাহ ভালো৷ তুই কেমন আছিস?”

” ভালো আছি৷ দ্রুত সুস্থ হয়ে যা দোস্ত আগামি সপ্তাহে ভার্সিটি থেকে তৃতীয় এবং চতুর্থ বর্ষের স্টুডেন্টদের নিয়ে টুরে যাবে৷ এখন তুই যদি সুস্থ না থাকিস তাহলে আমাদের টুরে তো যাওয়া হবে না৷” 

ফারহার কথা শুনে আয়মান বলে উঠলো,” শিট আমি তো ভুলেই গেছিলাম তোদের টুরের কথা বলতে কিন্তু ফারু না মানে ফারহা তুই জানলি কি করে?” 

এই সব নিউজ আমরা কোথা থেকে জানি হাদারাম? আমি সেখান থেকে জেনেছি৷”

আয়মান মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো,” আসলে আমি একটা হাদারাম৷ যাই হোক তুই এক্সিডেন্ট কি করে করলি? তুই খুব ভালো ড্রাইভ করিস ইভেন নেহাল আর আমার থেকে তো ভালো ড্রাইভ জানিস৷” 

” আসলে আমার শরীর টা ভালো ছিলো না ৷ আর তখন কি থেকে কি হয়ে গেল বুঝতেই পারি নি৷” 

ফারহা গম্ভির গলায় এবার বলে ওঠে,” যা করেছিস তা দ্বিতীয় বার করার দুঃসাহস করবি না৷ ” ফারহার কথা শুনে তনু বলে ওঠে,” এই ফারহা কি বলছিস এই সব? কি করেছে এই এই ছাগলটা?”

” এই যে দেখছিস তো কিভাবে এক্সিডেন্ট করে জখম হয়েছে৷ এটাই বলছি এভাবে যেন আর গাড়ি না চালায়৷” ফারহা কথা শেষ হতে না হতে সার্ভেন্ট হাতে খাবারের ট্রে নিয়ে হাজির হয়৷ সবাই গল্প করতে করতে নাস্তা করে নিখিলকে বিদায় জানিয়ে চলে যায়৷ নিখিল ফারহার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বলতে লাগলো,” তুই শুধু আমার ফারু ওই অফিসারকে তো আমি দেখে নিবো৷ আমার শরীরে হাত দেওয়া! ওকে আমি দেখে নিবো৷ কিন্তু আমি কি করে বাড়ি ফিরে এলাম? যতদুর মনে পরে ওই অফিসার আমাকে আঘাত করতে নিবে তৎক্ষনাত চারিদিক অন্ধকার হয়ে যায়৷ তারপর দুটো হাত আমার বাধণ খুলে দিলো৷ তারপর তারপর কি হলো? নিখিল মাথা চেপে ধরে মনে করার চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারলো না৷ কারণ যখনি তার জ্ঞান ফিরেছে চোখ মেলে নিজেকে নিজের বাড়ির সামনে আবিষ্কার করেছে৷

” কিন্তু পৃথিবী উল্টে গেলেও ফারুকে আমি ছাড়বো না ওকে আমি নিজের করেই ছাড়বো৷” নিখিল কথা গুলো বলে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইল৷

১৬.

                 গাড়ির পেছনে পলো করা লোক গুলো ফারহাদের গাড়ি ধরতে না পেরে তাদের গাড়িটা খুজতে লাগলো৷ তখনি লোক গুলোর মধ্যে একজনের ফোন বেজে উঠলো৷ লোকটা তার ফোন বের করে ফোনের স্কিনে নামটা দেখে শুকনো ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে কলটা রিসিভ করে কানে ধরতে ফোনের ওপাশ থেকে কেউ একজন বলে ওঠে…………

.

.

.

#চলবে………….

#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া

#ফারহানা_আক্তার_ছবি_ও_রাফি 

#পর্ব_১৩+১৪

.

.

🌸

১৬.

                 গাড়ির পেছনে ফলো করা লোক গুলো ফারহাদের গাড়ি ধরতে না পেরে তাদের গাড়িটা খুজতে লাগলো৷ তখনি লোক গুলোর মধ্যে একজনের ফোন বেজে উঠলো৷ লোকটা তার ফোন বের করে ফোনের স্কিনে নামটা দেখে শুকনো ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে কলটা রিসিভ করে কানে ধরতে ফোনের ওপাশ থেকে কেউ একজন বলে ওঠে, “মেয়েটাকে শেষ করে দিয়েছিস ?”

” না বস আসলে মেয়েটা ভার্সিটি থেকে বের হবার পর পর মেয়েটাকে হারিয়ে ফেলেছি৷”

লোকটা কথা শুনে ফোনের ওপাশ থেকে লোকটা অত্যান্ত রাগি আর কর্কশ ভাষায় বলে উঠলো,” কু’ত্তার বাচ্চা ওই মেয়েটাকে শেষ করবি নাহলে আমি নিজের হাতে তোদের কে শেষ করবো৷”

” বস মেয়েটাকে আমরা শেষ করবো৷”

” কথাটা যেন মাথায় থাকে নাহলে কী হবে বুঝতেই পারছিস৷ এই মেয়েটাকে শেষ করার জন্য আবারও আমাকে এ দেশে আসতে হলো৷ বার বার এই মেয়েটা আমার পথের কাটা হয়ে দাড়াচ্ছে৷ শুরুতে মেয়েটাকে শেষ করে দিলে এখন আর এই সমস্যাটা হতো না৷”

” বস এবার আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন৷ ওই মেয়েটাকে শেষ করেই আমি আপনাকে সুখবর টা দিবো৷”

” সুখবরটা পেতে যেন খুব একটা দেরি না হয়৷”

লোকটি কথা গুলো বলে কল ডিসকানেক্ট করে দেয়৷ ছেলে গুলো গাড়ি নিয়ে এদিক-ওদিক ফারহাদের গাড়িটা খুজতে লাগলো৷ 

এদিকে নেহাল ফারহাকে তার বাড়িতে ড্রপ করে দিয়ে চলে যায়৷ ফারহা দো’তালায় চিলেকোঠার রুমে প্রবেশ করতে বাড়িওয়ালা এসে হাজির হয়৷ ফারহা তাকে দেখে মিষ্টি করে হেসে দিয়ে বলে কিছু বলবে দিদা ?”

” হ্যাঁ বলবো৷ তোমার বন্ধুরা তোমাকে বাড়ির সামনে নামিয়ে চলে গেল ভেতরে আসতে বললে না যে?”

” দিদা ওরা বড়লোক বাবার ছেলে মেয়ে আমার মত গরিব বন্ধুর বাড়িতে ওদের কি মানায়? তবে এতটুকু বলবো ওরা আর সবার মত নিচু মন মানুসিকতার নয়৷ ওরা কখনো আমাকে ছোট করে কিছু বলে না৷ বড্ড ভালো ওরা৷”

“মিষ্টি একটা কথা বলবো?” 

” দিদা প্রথমত আমাকে তুই করে বলে তোমার মুখে তুমি শব্দটা বানায় না৷ আর এত ইতস্থবোধ কেন করছো? বলে ফেলো যা বলার আছে৷”

” মিষ্টি আমার ছেলেটা এই বাড়ি বিক্রি করে দিতে চাইছে৷”

এতটুকু বলে দিদা চুপ হয়ে যায়৷ বাকিটুকু বলার হয়তো আর প্রয়োজন নেই কারণ ফারহা বাকি কথা কী হতে পারে সে ধারণা তার আছে৷ ফারহা একটু চুপ থেকে বলে উঠলো কার কাছে বিক্রি করবে এটা কি তোমার জানা আছে?”

” হ্যাঁ মিষ্টি শুনেছি আমজাতের কোন এক বন্ধু তবে বন্ধুটির নাম মনে পড়ছে না৷”

” চিন্তা করো না৷ আঙ্কেল যা করছে তাকে তা করতে দেও৷”

” কিন্তু তোরা কোথায় থাকবি?”

” আমরা এখানেই থাকবো৷”

” মানে?”

”  এই যে বুড়ি এখন এত কথা না বলে নিজের ঘরে যাও আমাকে এখন রান্না বসাতে হবে৷” ফারহার কথা শুনে বুড়ি মুখ ভেঙ্গিয়ে বলে,” বুড়ি তোর শত্রু আমি এখনো কত ইয়াং দেখেছিস? পাড়ায় বের হলে ছেলেরা আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে৷”

ফারহা দুষ্টুমির হাসি দিয়ে বলে,” ওটা শুধু ছেলেরা হবে না বুড়ো ছেলেরা হবে হি হি হি৷ ” ফারহার কথা শুনে দিদা রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো,” তোর সাথে কথায় পারবো না মিষ্টি৷ আর শোন এই অবেলায় তোকে রান্না করতে হবে না৷ আমি খাবার দিয়ে যাচ্ছি৷”

” না দিদা এখন খাবার দিলেও তো রাতের জন্য রাঁধতে হবে৷”

” না রাতের জন্য রাধঁতে হবে না তোকে৷ আমি রাতের খাবারও দিয়ে যাবো৷ এখন গোছলটা সেরে নে ততক্ষণে আমি খাবার নিয়ে এসে পড়বো৷” ফারহার কথা না শুনে দিদা চলে গেলেন৷ ফারহা দিদার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল৷ এই মানুষটা তাকে আর রাফিদ কে নিঃর্স্বাথ ভাবে ভালোবাসে এটা ফারহা খুব ভালো করেই জানে৷ আর এই বাড়িটায় যে দিদার প্রাণ বসে এটাও জানে তবে দিদার ছেলেটি সুবিধার নয়৷ এই বাড়ি বিক্রির পেছনে নিশ্চয়ই কোন বড় কারণ আছে৷ ফারহা তার ফোন বের করে কাউকে কল দিয়ে বলতে লাগলো,” আপনাকে একটা কাজ করতে হবে৷ আমজাত শিকদার ছবিটা পাঠিয়ে দিয়েছি ৷ এই লোকটার সব খবর চাই৷ “

” হয়ে যাবে ম্যাম৷ আমি রাতে আপনাকে সবটা জানাবো৷”

” ওকে৷”

ফারহা ফোনটা চার্জে রেখে গোছল করতে চলে গেল৷

                  মেঘ রানিং কেস গুলো নিয়ে বেশ হাবুডুবু খাচ্ছে৷ তিন বছরের চাকরিতে এমন হেনস্তা তাকে কখনো হতে হয়নি৷ কিন্তু এই বার এই কেস গুলো সমাধান করে উঠতেই পারছে না মেঘ৷ সবটা কেমন যেন জড়িয়ে যাচ্ছে৷ মেঘের মনে হচ্ছে আগের খুন গুলোর সাথে ইমাম হাওলাদারের কিডন্যাপের কোন যোগ সূত্র আছে৷ মেঘ প্রথম থেকে কেস গুলোর ফাইল দেখতে লাগলো৷ যদি কোন ক্লু খুজে পেয়ে যায় সেই আশায়৷ কারণ খুনি কোন প্রমানই রেখে যায় নি৷ হঠাৎ কন্সট্রাবেল এসে জানায় তার সাথে ইমাম হাওলাদার এর ছোট ভাই দেখা করতে চাইছে৷ মেঘ ভেতরে পাঠিয়ে দিতে বলে নিজের কাজে মনোনিবেশ করলো৷ ত্রিশ সেকেন্ড বাদে কারোর গলা শুনে মেঘ ফাইল থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে সুটবুট পড়া কম বয়সি একটা ছেলে৷ ছেলেটার দিকে মেঘ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,” বলুন মিস্টার আপনার জন্য কি সাহায্য করতে পারি?”

” আমার বড় ভাই নিখোঁজ আর আপনারা এত দিনেও আমার ভাইয়ের কোন খোজ এনে দিতে পারলেন না?”

” বসুন আপনি৷”

ছেলেটি বসতে বসতে করুন চেহারা করে বলে উঠলো,” অফিসার আমার ভাইকে দয়া করে খুজে বের করুণ৷ ভাইয়ে চিন্তায় ভাবি পাগল প্রায় আর বাচ্চারা বাবা বাবা করে দিন রাত৷”

” দেখুন মিস্টার আমরা আমাদের সব রকম সোর্স লাগিয়ে দিয়েছি মিস্টার ইমামকে খোজার জন্য কিন্তু কোন ভাবে ওনাকে ট্রেস করা যাচ্ছে না৷ যে বা যা ওনাকে কিডন্যাপ করেছে তারা কোন প্রকার প্রমান রাখেনি৷ তবে আমার মনে হচ্ছে এরা তারাই যারা এত দিন ধরে খুন করে আসছে৷”

মেঘের কথা শুনে ছেলেটি উঠে দাড়িয়ে বলে,” আপনারা দ্রুত আমার ভাইকে খুজে বের করুণ৷ আর আমিও আমার লোক লাগিয়ে ভাই কে খোজার চেষ্টা করছি৷”

ছেলেটি দ্রুত বেরিয়ে গেল কেবিন থেকে, মেঘের কেন যেন ইমাম হাওলাদারের ছোট ভাইয়ের উপর সন্ধেহ হচ্ছে৷ মেঘ কেসের ফাইল গুলো বন্ধ করে ফোনের স্কিনে ফারহার ছবি দেখতে লাগলো৷ সেই নিলাভ চোখ ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি দেখলেই মেঘের মনটা এমনিতেই ভালো হয়েই যায়৷ মেঘ ফারহার ছবিতে চুমু দিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,” নিজেকে ভালো রাখতেই তোমাকে চাই ফারুপাখি৷ এই শূন্য হৃদয়ে ভরিয়ে তুলতে তোমাকে চাই৷ তোমার এলোকেশে ফুল গুজে দিতে তোমাকে চাই৷ তোমার ঠোঁটের এক চিলতে হাসি হতে চাই৷ আমার ভালোবাসার সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চাই ফারুপাখি৷ ভালোবাসতে চাই তোমায়৷ যে ভালোবাসা কখনো ফুরিয়ে যাবে না৷”

মেঘের মনটা হঠাৎ করেই আনচান করে উঠলো ফারহাকে দেখার জন্য কিন্তু কাজের চাপের জন্য ফারহার কাছে যাওয়াটা মুশকিল৷ মেঘ কিছু একটা ভেবে থানা থেকে বেড়িয়ে যায় উদ্দেশ্য ফারহাকে দেখা৷ 

১৭. 

নিখিল নিজে নিজে হাটা চলা করতে পারছে৷ পায়ে তেমন একটা আঘাত লাগেনি৷ নিখিল ফারহার কথা ভেবে যাচ্ছে৷ নিখিল হেটে ছাঁদে চলে যায়৷ নিখিল ওখানে দোলনায় বসে ভাবতে লাগলো কি করে ফারহাকে নিজের করে নেওয়া যায়৷ কিন্তু নিখিল কোন পথ খুঁজে পাচ্ছে না৷ ফারহার চোখের দিকে তাকালে নিখিলের বুকের ভেতর টা ধক করে ওঠে কেমন যেন বুকের ভেতর একটা ভয় হয়৷ নিখিলের মনে হয় ফারহা হয়তো এক নজরেই তার মনের সব কথা জেনে যাবে৷ 

” নাহ আমাকে হার মানলে হবে না৷ ওই অফিসার কিছু করার পূর্বে আমাকে কিছু করতে হবে৷ ফারুকে আমি কিছুতেই হারাতে পারবো না৷” 

          বেলা আর রাফিদ দুজনে এক সাথে গল্প করতে করতে কলেজ থেকে বের হয়ে হাটতে লাগলো৷ সেদিনের পর থেকে রাফিদ খুবই নরমাল বিহেব করছে বেলার সাথে বেলা প্রথমে ভিষণ ভয় পেয়ে ছিলো এটা ভেবে রাফিদ সবটা জানার পর হয় তো তাকে ভুল বুঝবে কিন্তু তেমনটা কিছুই হয়নি৷ উল্টো রাফিদ বেলার সাথে আগের থেকে যেন আরও বেশি করে মিশছে৷ বিষয়টা বেলার ভিষণ রকম ভালো লাগছে৷

” আচ্ছা রাফিদ ধরো যদি এখন আমি তোমাকে প্রপোজ করি তাহলে তুমি কি করবে?”

রাফিদ বেলার দিকে মুচকি হেসে বললো,” তোমার ধরা কথাই বলছি আগে প্রপোজ করো তারপর না হয় ভেবে বলবো৷ তোমাকে গ্রহন করবো কি করবো না৷”

কথা গুলো বলে রাফিদ একাই হাটতে লাগলো৷ বেলা রাফিদের কথা গুলো শুনে ভাবনায় পরে গেল৷ এদিকে রাফিদ অনেকটা দুর একাই হেটে চলে গেল৷ সেটাদেখে বেলা দৌড়ে গিয়ে রাফিদের হাত ধরে হাটতে লাগলো৷ 

মাগরিবের নামাজ পড়ে নিয়ে ফারহা দরজা বন্ধ করে বেড়িয়ে যায়৷ রাফিদ বিকেলে ফিরে ফ্রেস হয়ে খেয়ে নিয়ে এতিম খানায় চলে যায় বাচ্চাদের পড়াতে৷ 

ফারহা মেইন গেটে এসে দাড়াতে একটা গাড়ি এসে থামে৷ ফারহা ভ্রু কুঁচকে বলে নিখিল তুই এখন এখানে?”

নিখিল গাড়ির দরজার লক খুলে দিয়ে ফারহাকে বলে,” তোর সাথে আমার কিছু জরুরী কথা আছে৷”

” কী কথা বলবি?”

” এখানে না৷ আগে গাড়িতে ওঠ বাকিটা পরে বলছি৷”

ফারহা আর কোন প্রশ্ন করলো না চুপচাপ নিখিলের গাড়িতে উঠে বসে৷ যেটা দুর থেকে কেউ একজন দেখে রাগে ফুঁসতে লাগলো৷ 

নিখিল গাড়ি চালিয়ে দুরের একটা নিরিবিলি পরিবেশে নিয়ে গেল৷ যেখানে মানুষের ভীর খুব কম৷ ফারহা গাড়ি থেকে নেমে চারিদিক তাকিয়ে প্রাণ খুলে শ্বাস নিতে লাগলো৷ চারিদিকে নানা রকম গাছ৷ ফুলের বাগান, আর বাগানের মাঝে ছোট্ট একটা রেস্টুরেন্ট৷ প্রকৃতি প্রেমিদের জন্য এটা একটি পার্ফেক্ট জায়গা৷ এখানে এসে ফারহার মনটা যেন এক নিমেষেই ভালো হয়ে গেল৷ 

” জায়গাটা পছন্দ হয়েছে তোর?”

নিখিলের দিকে না তাকিয়ে ফারহা বললো দারুণ৷ এত সুন্দর পরিবেশ ইচ্ছে করছে এখানে সারাটা জীবন কাটিয়ে দি৷”

” তুই চাইলে তোর আর আমার জন্য একটা বাগান বাড়ি বানিয়ে ফেলবো কি বলিস?”

ফারহা নিখিলের কথার মানে টা বুঝতে না পেরে বললো,” মানে?”

নিখিল শুকনো ঢোক গিলে ফারহার সামনে হাটু গেরে বসতে ফারহা বলে,” নিখিল এভাবে কেন বসছিস? তুই অসুস্থ উঠে দাড়া৷”

” হুস আমাকে আগে বলতে ফারু৷ ফারু অনেক দিন তোকে একটা কথা বলতে চেয়েছি কিন্তু বলে উঠতে পারি নি৷ আজ বলবো, ফারু আমি তোকে ভা,,, ” বাকিটা আর বলতে পারলো না তার আগে একটা শক্ত পক্ত বলিষ্ঠ হাত ফারহা হাত টেনে নিখিলের সামনে থেকে নিয়ে গেল৷ খানিকক্ষণের জন্য ফারহা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল মেঘের দিকে, এই সময়ে মেঘকে একদমিই আশা করেনি৷ অন্য দিকে নিখিল রাগে হাত মুঠ করে ফারহা আর মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে৷

মেঘ ফারহাকে তার গাড়িতে বসাতে নিলে ফারহা ড্রাইভিং সিটে বসে পরে৷ মেঘ কিছু বললো না ফারহার পাশের সিটে বসে পড়লো৷ ফারহা স্থির চোখে মেঘের দিকে একবার তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়৷ 

ফারহা ধীরে ধীরে গাড়ির স্পিড বাড়াতে লাগলো৷ প্রথমে মেঘ বিষয়টা বুঝতে না পারলেও একটু পর বেশ বুঝতে পারলো ফারহা গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিচ্ছে৷ 

অন্যদিকে ফারহাকে খুঁজতে থাকা লোক গুলো ফারহাকে ড্রাইভ করতে দেখে ফেলে৷ সময় নষ্ট না করে দ্রুত ফারহার গাড়ির পেছনে যেতে লাগলো৷ মেঘ সরকারি গাড়ি নিয়ে আসেনি৷ সাধারণ মেঘ নিজস্ব কাজে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে না৷ নিজের গাড়ি ব্যবহার করে৷ লোক গুলোর মধ্যে একজন তাদের বসকে ফোন করে৷

” হ্যালো বস মেয়েটাকে পেয়েছি৷” ফোনের ওপাশ থেকে গম্ভির আর রাগি গলায় বলতে লাগলো,” তাহলে দেরি করছিস কেন শেষ করে মেয়েটাকে৷”

” বস মেয়েটার সাথে এক পুলিশ অফিসার আছে৷”

পুলিশ অফিসারের কথা শুনে ফোনের অপাশে থাকা লোকটি বলে উঠলো,” ওই অফিসারের একটা ছবি এক্ষুনি আমাকে সেন্ড কর৷”

” বস গাড়ি প্রচন্ড জোড়ে চালাচ্ছে মেয়েটি হয়তো এখুনি কোন এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে৷ ছেলেটির ছবি কি করে পাঠাবো?”

” যে ভাবে হোক পাঠাও এন্ড রাইট নাও৷” বলে কল ডিসকানেক্ট করে দিলো লোকটি৷ ফারহার পেছনে থাকা লোক গুলো তাদের গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে মেঘের গাড়ির কাছাকাছি এসে মেঘের এক সাইডের ছবি তুলে পাঠিয়ে দেয়৷ ছবি পাঠিয়ে দেওয়ার দশ সেকেন্ডের মাথায় লোকগুলোর বসের কল আসে৷ লোকটি কল রিসিভ করে সাথে সাথে ফোনের ওপাশ থেকে বস বলে ,” তোরা ওদের কোন ক্ষতি করবি না৷ ছেলেটার যেন কিছু না হয়৷ যদি ছেলেটার কিছু হয়তো আমি নিজে তোদের কে নিজের হাতে খুন করবো৷”

লোক গুলো তাদের বসের কথা শুনে ভয় পেল৷ তারা গাড়ির স্পিড কমিয়ে দিলো৷ অন্যদিকে মেঘের মনের ভেতর এক অজানা ভয় কাজ করছে৷ ফারহা যে ভাবে গাড়ি চালাচ্ছে সেভাবে আর কিছুক্ষণ চালালে যে কোন সময় এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে৷ 

” ফারুপাখি গাড়ির স্পিড কমাও যে কোন সময় গাড়ি এক্সিডেন্ট করতে পারে৷”

ফারহা মেঘের কথা শুনে গাড়ির স্পিড চুরান্ত পর্যায়ে দিয়ে গাড়ি চালাতে লাগলো৷ 

মেঘের চোখে মুখে ভয়ের ছাপ ফুটে উঠেছে৷ হয়তো মরার ভয় নয় তো হারানোর ভয় মেঘকে পেয়ে বসেছে৷ সামনে দুটো বাস আসছে৷ তারা হর্ণ দিচ্ছে বার বার কিন্তু ফারহা সেটা শুনেও না শোনার ভান করে গাড়ি চালাতে লাগলো৷ হুট করে মেঘ ফারহার গাড়ি বাসের সামনে আসতেই ফারহা গাড়িটা অন্যদিকে টার্ন করে৷ গাড়ির স্পিড বেশি থাকায় গাড়িটা সোজা গিয়ে স্বজোড়ে গাছের সাথে ধাক্কা লাগে৷ মেঘ গাড়ি থেকে ছিটকে বাইরে পড়ে মাথায় আঘাত লাগে আর ফারহা গাড়ির ভেতরে সেন্সলেস হয়ে যায়৷ জায়গাটা শহর থেকে বেশ দুরে আর মানুষের আনাগনাও বেশ কম বিধায় কেউ আসেনি সাহায্যে করার জন্য, ফারহার জ্ঞান ফিরলে গাড়ি থেকে নেমে যায়৷ দুরে মেঘ কে আহত অবস্থায় দেখে ফারহা গাড়ির ভেতর থেকে তার পার্সটা বের করে ফোন খুজতে লাগলো৷ মেঘের মাথা থেকে প্রচুর রক্তপাত হচ্ছে অথচ ফারহা সে দিকে তেমন না তাকিয়ে এম্বুলেন্সে কল করে এক্সিডেন্ট স্পটে আসতে বলে৷ ৩০-৪০ মিনিটের মাথায় এম্বুলেন্স এসে হাজির হয়৷ ফারহার তেমন একটা চো’ট লাগে নি৷ আর মেঘ যে এভাবে গাড়ি থেকে ছিটকে পড়বে এটাও ভাবে নি ফারহা তবে এতে তার বিন্দুমাত্র আফসোস নেই৷ মেঘকে এম্বুলেন্সে তুলে দেওয়ার পর পর ফারহার সামনে আর একটি গাড়ি এসে থামে৷ গাড়ির দরজা ভেতর থেকে খুলে দিতে ফারহা গাড়িতে উঠে যায়৷

অন্যদিকে  শাফায়াত চৌধুরী, মায়রা চৌধুরী, মিরা চৌধুরী আর বেলা এসে হাজির হয় হসপিটালে৷ মেঘের ট্রিটমেন্ট করে ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছে ডক্টর তাই মেঘ গভীর ঘুমে মগ্ন৷ ডক্টর কেবিন থেকে বের হতে শাফায়াত চৌধুরী ডক্টর বলে,” ডক্টর আমার ছেলে এখন কেমন আছে? বেঁচে আছে তো?”

” চিন্তার কোন কারণ নেই মাথায় সামান্য আঘাত লেগেছে৷ তবে র’ক্ত ক্ষরণ বেশি হওয়ায় পেশেন্ট বেশ দূর্বল৷ তবে চিন্তার কোন কারণ নেই কয়েকদিনে পেশেন্ট সুস্থ হয়ে যাবে৷”

ডক্টরের কথা শুনে সবার মুখে ভয় আতঙ্ক বিষন্নতা ছাপিয়ে হাসি ফুটে উঠলো৷

               “ম্যাম মেঘ স্যার এখন ঠিক আছে তবে অতিরিক্ত র’ক্ত ক্ষরণের জন্য একটু দূর্বল৷ ডক্টর ঘুমের ইন্জেকশন দিয়েছে৷ মেঘ স্যার এখন ঘুমাচ্ছে৷ ” 

কথা গুলো শুনে ফারহা ইজি চেয়ারে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে উঠলো,…….

.

.

.

চলবে…………

শব্দ সংখ্যা- ২১০২

#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া

#লেখনীতে_ফারহানা_আক্তার_ছবি

#পর্ব_১৫

.

.

🌸

“ম্যাম মেঘ স্যার এখন ঠিক আছে তবে অতিরিক্ত র’ক্ত ক্ষরণের জন্য একটু দূর্বল৷ ডক্টর ঘুমের ইন্জেকশন দিয়েছে৷ মেঘ স্যার এখন ঘুমাচ্ছে৷ ” 

কথা গুলো শুনে ফারহা ইজি চেয়ারে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে উঠলো,” ইমামের শ’রী’র টা ১০০ টু’করো করে ওর বাড়িতে পাঠিয়ে দিন৷”

” ওকে ম্যাম৷”

ফারহা চোখ বন্ধ করে রইল৷ ভালো লাগছে না৷ সব কিছু কেমন যেন বিশাক্ত মনে হচ্ছে৷ বুকের ভেতরটা খাঁ খাঁ করছে৷ আপনজন যখন বিশ্বাসঘাতকতা করে তখন জীবিত থেকে নিজেকে মৃত মনে হয়৷ এই কষ্টের ভাগ না নিজে বহন করার ক্ষমতা রাখে আর না অন্য কারোর সাথে ভাগ করে নেওয়া যায়৷ চোখের কোণ বেয়ে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো৷ কি অদ্ভুত অনুভূতি জীবনে যাকে নিজের থেকে বেশি ভালোবেসে ছিলো নিজের অস্তিত্বে মিশে গিয়েছিলো সেই মানুষটা তাকে ফাঁকি দিয়ে পড়পাড়ে পাড়ি জমালো সাথে নিয়ে গেল তার পেটের অনাগত সন্তানকে; আচ্ছা ভালোবাসা মানে কী শুধু ছিনিয়ে নেওয়া? নাকি ত্যাগ করা? উওর নেই? ফারহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে হাতে ধা’ড়া’লো ছুড়িটা তুলে নিলো৷ লাইটের আলোয় চকচক করছে ছুড়িটা৷ ফারহার কেন যেন ইচ্ছে করছে এই ছুড়িটা নিজের গলায় বসিয়ে দিতে৷ কিন্তু সব ইচ্ছেরা যে ডানা মেলে উড়তে পারে না৷ ফারহা তবুও ছুড়িটা নিজের গলায় ধরতে কেউ একজন হুট করে এসে ফারহার হাত থেকে ছুড়িটা ছিনিয়ে নিয়ে বলে,” যারা অন্যায় করেছে তাদের কে শাস্তি না দিয়ে নিজেকে শেষ করে দিতে চাইছিস আপা?”

কথা গুলো শুনে চমকে সামনে তাকালো ফারহা৷ সামনে আর কেউ নয় তার আদরের ভাই আদিল দাড়িয়ে আছে৷ 

” পিচ্চি তুই?”

” কেন অবাক হচ্ছিস আমাকে দেখে? নাকি আমার জন্য নিজেকে শেষ করতে পারিস নি বলে আফসোস হচ্ছে?”

আদিলের কথা শুনে ফারহা চমকে উঠে বলে,” আমি নিজেকে শেষ করতে চাইছিলাম?”

ফারহার কথা শুনে আদিল নিজের মাথার চুল টেনে ধরে বলতে লাগলো,” আমি যদি আসতে আর এক সেকেন্ড দেরি করতাম তাহলে কী হতো জানিস? আপা তুই নিজের বিষয় এতোটা কেয়ারলেস কেন? তোকে বাঁচতে হবে আর কারোর জন্য না হোক আমার আর রাফিদের জন্য তোকে বাঁচতে হবে৷ যারা তোর সুখ ছিনিয়ে নিয়েছে তাদের কে নরক ঘুড়িয়ে আনবি সেখানে তুই নিজেকে শেষ করতে যাচ্ছিলি৷ “

ফারহা আদিলের বুকে মাথা গুজে ধীর কন্ঠে বলে উঠলো,” বিশ্বাস কর পিচ্চি আমি জানি না কেন এমন টা করতে গেলাম৷ তুই ঠিক সময়ে না আসলে হয়তো আমি নিজের অজান্তে নিজেকে শেষ করে দিতাম৷”

” আপা ভুলে যাস না তোর কাজ এখনো শেষ হয়নি৷ তুই বলেছিলি ওই চৌধুরী পরিবারের ভিত নাড়িয়ে দিবি৷ আর ফুফাকে তার প্রাপ্য শাস্তি দিবি তাহলে কেন এভাবে দূবর্ল হচ্ছিস? নাকি তুই ওই মেঘ চৌধুরীকে ভালোবেসে ফেলেছিস?” আদিলের লাস্ট কথাটা শোনা মাত্র ফারহা প্রচন্ড রেগে আদিলকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলে উঠলো,” আমি আয়াশকে ভালোবাসি কোন খুনিকে ভালোবাসি না৷ ওরা খুনি খুন করেছে আমার নিশ্পাপ বাচ্চাকে যে কী না পৃথিবীর আলো পর্যন্ত দেখেনি৷ খুন করেছে আমার স্বামীকে যাকে আমি পাগলের মত ভালোবাসতাম৷ তুই বলছিস আমি তাকে ভালোবাসবো?”

” তাহলে ওকে বাঁচালি কেন? ওখানে পড়ে থাকতো৷ “

আদিলের কথা শুনে ফারহা পাগলের মত হাসতে হাসতে বললো,” ওদের কে আমি এত সহজ মৃত্যু দিবো? এটা তুই কি করে ভাবলি পিচ্চি? আমি গত পাঁচটি বছর ধরে ধুকে ধুকে মরেছি আর ওদের কে এত তাড়াতাড়ি মারবো? হাহ্ কখনো না আমি ওদের মাঝে একজন হয়ে গোটা চৌধুরী বংশটাকে একটু একটু করে শেষ করে দিবো৷ কিন্তু তুই এখন এখানে? তোর তো এখন লন্ডন মামা মামীর কাছে থাকার কথা৷”

” আপা তুই হয়তো জানিস না তোর সুরক্ষার জন্য গোপনে তোর পেছনে আমি সিকিউরিটি নিযুক্ত করেছি৷ তারাই আমাকে তোর সব খবর দেয়৷”

ফারহা আদিলকে আর কিছু বললো না দেখে আদিল বলে উঠলো,” মাম্মা তোকে দেখতে চেয়েছে আপা৷” 

মামী আমাকে দেখতে চেয়েছে আর আমি যাবো না এটা কি করে সম্ভব? যাবো তবে এদেশে সব কাজ চুকিয়ে ফেলার পর পিচ্চি৷”

“দেন তাহলে আমিও তখন তোর সাথে ওদেশে যাবো৷”

ফারহা মুচকি হাসলো কারণ ফারহা জানে আদিল ওকে না নিয়ে এই দেশ ছেড়ে এক পাও নড়বে না৷ 

” আপা রাফিদের বিষয় তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো৷”

“বল৷”

” বেলা চৌধুরী রাফিদকে ওর ভালোবাসার ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছে৷ আর ফুফাও তো বাংলাদেশে আছে৷”

” মিস্টার আশরাফ খান কে নিয়ে আমি কোন কথা শুনতে চাই না পিচ্চি৷ ওই লোকটা মরুক বাচুক তাতে আমার কিছু আসে যায় না৷ ওই লোকটা তো আমার কাছে চার বছর আগেই মরে গেছে৷ যেদিন আমি নিস্ব হয়েছি সেদিন ওই লোকটাও আমার কাছে মরে গেছে৷ “

“আপা তোর খুব কষ্ট হচ্ছে না?”

” হ্যাঁ কষ্ট হচ্ছে৷ ভিষণ কষ্ট হচ্ছে পিচ্চি৷ জানিস তো আমার কষ্ট গুলো এতো বছর ধরে ওই চিলেকোঠায় দম বন্ধ হয়ে আছে৷ ” 

” জানি আপা তাই তো তুই ওই ভাঙ্গা চিলেকোঠার ঘরে থাকছিস৷”

ফারহা ঘড়ির দিকে সময়টা দেখে নিয়ে আদিলকে বললো,” এখন আর কথা নয় পিচ্চি৷ আমাকে যেতে হবে৷”

” কোথায় যাবি এত রাতে?”

” বাড়ি ফিরবো৷”

” ওকে চল আমি তোকে পৌছে দিয়ে আসছি৷ আর একটা কথা এখন থেকে তোর গাড়িতে তুই যাতায়াত করবি৷ নো রিক্সা নো হাটাহাটি ওকে?”

” ওকে৷”

১৮.

               রাগে একের পর এক ড্রিংকস করছে শাহিন চৌধুরী৷ মিরা তার স্বামীর রাগ কমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না৷ এদিকে শাফিন রাগে গ্লাস ছুড়ে ফেলে বলতে লাগলো,” আমার প্লান গুলো আগের বারের মত ফ্লপ হচ্ছে মিরা৷ মেঘের যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমাদের সব হারাতে হবে৷ “

” শান্ত হও শাহিন৷ মেঘের কিচ্ছু হবে না৷ ডক্টর বলেছে মেঘ এখন বিপদ মুক্ত৷ তুমি এখন মেঘ কে নিয়ে না ভেবে ওই মেয়েটাকে নিয়ে ভাবো৷ ওকে কি ভাবে শেষ করবে? ও না শেষ হলে আমরা আমাদের প্লান কখনো সফল হবো না৷ আমাদের আগে ওকে শেষ করতে হবে৷ তাহলে এক ঢিলে আমরা তিনটি পাখি মারতে পারবো৷ এক- আশরাফ ভাই৷ দুই- শাফায়াত ভাই আর তিন- মেঘ বেলার বিয়ে৷”

” ঠিক বলেছো মিরা৷ আগে যে কাজটা শেষ করতে পারি নি৷ এবার আমরা সেই কাজ টা শেষ করবো৷ কেউ জানতেও পারবে না আমাদের ভয়ংকর প্লানের কথা হা হা হা ৷”

          মন খারাপ করে বাড়িতে ফিরে নিখিল ফারহাকে কল করে৷ কিন্তু ফারহা কল রিসিভ না করে উল্টো কল ডিসকানেক্ট করে দেয়৷ এতে নিখিলের আরও একধাপ কমে যায়৷ কিছুক্ষণ সময় পর নিখিলের ফোনে একটা মেসেজ আসে৷ নিখিল মেসেজটা অন করতে দেখতে পায় মেসেজটি আর কারও নয় বরং ফারহা পাঠিয়েছে৷ তাতে লেখা আছে আগামীকাল  সকাল ১১ টায় ভার্সিটির পাশে ক্যাফেটেরিয়াতে দেখা করবে৷

নিখিল বুঝতে পারে না কেন ফারহা দেখা করতে চাইছে? নিখিল মন খারাপ করে ফোন বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলো৷ 

এদিকে মেঘ বিপদ মুক্ত বিধায় ডক্টর মেঘের পরিবারকে রাতে থাকতে বারণ করে দেয় কারন আগামীকাল মেঘকে ডিসট্রাস করে দেওয়া হবে৷ বেলা এবং মায়রা দুজনে মেঘের কাছে থাকতে চেয়ে ছিলো কিন্তু শাফায়াত বারণ করে দেয় এবং তাদের নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসে৷

            আদিল ফারহাকে বাড়িতে পৌছে দিয়ে চলে যায়৷ ফারহা বাড়িতে ঢুকতেই বাড়িওয়ালা দিদার ছেলে আমজাত শিকদার ফারহার দিকে এগিয়ে এসে বলে,”এত রাত করে ফিরলে ফারহা? আর কে তোমাকে গাড়ি করে পৌছে দিলো?”

ফারহা শান্ত গলায় জবাব দিলো৷ কাজ ছিলো তাই লেট হয়েছে আর যে ছেলে টি আমাকে এখান গাড়ি করে পৌছে দিলো সে আমার মামাতো ভাই আদিল৷”

” তোমার মামাতো ভাই? তোমরা না বলে ছিলে তোমরা এতিম?”

” কেন এখন কি  আপনাকে বলেছি আমাদের বাবা মা আছে?”

” না মানে মামাতো ভাই বললে আরকি৷”

” আঙ্কেল আমি খুব টায়ার্ড পরে কথা হবে আসছি৷”

ফারহা চলে যাওয়ার পর পর আমজাত বলে উঠলো,” উফ এই ফকির গুলাকে তাড়াতে পারলে মা বাবা কে বৃদ্ধাশ্রম পাঠিয়ে দিয়ে জায়গাটা কন্সট্রাকশনে দিয়ে দিবো৷ উফফ কত গুলো টাকা পাবো৷ যেভাবে হোক জায়গাটা বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে৷”

ফারহা রুমে ঢুকতে রাফিদ ফারহাকে প্রশ্ন করে,” দি আদিল ভাই দেশে ফিরেছে?”

” হুম৷”

রাফিদ আর কিছু বললো না৷ টেবিলে খাবার গরম করে সার্ব করলো৷ ফারহা ফ্রেস হয়ে খেতে বসে৷ কেউ তেমন একটা কথা বললো না তবে খাবার খাওয়া শেষ করে ফারহা উঠতে উঠতে বললো,” ছোটু আমি চাই বেলা তোর প্রেমে পাগল হয়ে উঠুক৷ তোর জন্য অন্যের সাথে লড়াই করুক৷ তবে….”

” তবে কী দি?”

” তোর প্রেমে পড়া বারণ৷ যদিও তুই প্রেমে পড়ে থাকিস তাহলে পুরো জীবন তোকে পস্তাতে হবে৷”

” দি তুই যেভাবে বলেছিস ঠিক সেভাবে হবে কথা দিলাম৷”

ফারহা টেবিল গুছিয়ে নিজের রুমে চলে গেল৷ 

       পরের দিন সকালে ক্যাফেটেরিয়ার সামনে প্রখর রোদে নিখিলকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ফারহা যেন গরম হয়ে যায়৷ এই চারটা বছর এই বন্ধু গুলো ওর খেয়াল রেখেছে আর আজ নিখিল ইচ্ছে করে নিজের অবহেলা করছে হয়তো ফারহার একটু এটেনশন পাওয়ার লোভে৷ ফারহা নিখিলের কাছাকাছি আসতে নিখিল কিছু বলে ওঠাে পূর্বে ফারহা বলে উঠলো,” এই কড়া রোদে এখানে কেন দাড়িয়ে আছিস ডাফার? ভেতরে চল৷”

নিখিল ভদ্র ছেলের মত ফারহার পেছন পেছন ক্যাফেটেরিয়াতে ঢুকে এক কোর্নারের বসে দুটো কফি আর স্নাক্সের অর্ডার করে৷ 

” নিখিল গতকাল তোর কথা পুরোটা শোনা হয়নি৷ এখন বল গতকাল কি বলতে চেয়েছিলি?”

” তার আগে তুই বল ওই অফিসার তোকে ওভাবে টেনে কেন নিয়ে গেল?”

” ওটা তোর না জানলেও চলবে নিখিল৷”

” উহু ভুল বললি ফারু৷ তোর প্রত্যেকটা বিষয় আমাকে জানতে হবে বিকজ আই লাভ ইউ৷”

ফারহা নিখিলের কথা শুনে শান্ত দৃষ্টিতে নিখিলের দিকে তাকিয়ে বললো,” একটা গল্প শুনবি নিখিল?”

নিখিল একটু বিরক্ত হলো কারণ ফারহা তার কথার উওর না দিয়ে বরং গল্প শুনাতে চাইছে৷ তবুও নিখিল সায় জানালো সে শুনবে৷

” এক দেশে একটি মেয়ে ছিলো তার মা ছিলো না৷ তার বাবাই তার মা বাবা দুটোই ছিলো৷ মেয়েটি যখন কলেজে এইচ এস সি পড়ার  জন্য ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হলো তার কিছু দিন পর ওই কলেজের সিনিয়র একটি ছেলের সাথে মেয়েটির বন্ধুত্ব হয়৷ ছেলেটি থার্ড ইয়ারে পড়তো৷ ভিষণ ভালো ছাত্র ছিলো৷ মেয়েটিকে পড়ালেখায় গাইড করতো৷ তারা এক সাথে ঘুরতো আড্ডা দিতো৷ কিন্তু কিছুদিন পর মেয়েটি ছেলেটিকে ভালোবেসে ফেলে৷ মেয়েটি ভালোবাসার কথাটি ছেলেটিকে জানাতে ছেলেটি না বলে দেয় কারণ সে ছিলো এতিম আর মেয়েটি ছিলো বড়লোক বাবার একমাত্র সন্তান৷ ভাঙ্গা হৃদয় নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসে মেয়েটি৷ মেয়েটির বাবার প্রিয় বন্ধু আর তার ছেলে হাজির হয় তার দুদিন পর, তারা মেয়েটিকে খুব আদর করতো৷ তবে মেয়েটি আঙ্কেলের ছেলের সাথে খুব কম কথা বলতো৷ ছেলেটি যে তাকে পছন্দ করতো এটা মেয়েটি বুঝতো কিন্তু পাত্তা দিতো না কারণ মেয়েটি তাকে ভালোবাসে না৷ কিছুদিন তারা তাদের বাড়িতে থাকে কিন্তু একদিন মেয়েটি জানতে পারে তার বাবা তাকে না জানিয়ে তার বন্ধুর ছেলের সাথে তার বিয়ে ঠিক করেছে৷ মেয়েটির পড়াশুনা শেষ হলে তাদের বিয়ে হবে৷ কিন্তু কথাটি মেয়ের কানে পৌছানো মাত্র মেয়ে টি পাগলের মত ছুটে যায় তার ভালোবাসার মানুষটার কাছে৷ ছেলেটি মেয়েটিকে ভালোবাসতো শুধুমাত্র নিজের দারিদ্রতা চাকরি বিহিন বেকারত্বের জন্য মেয়েটির ভালোবাসা স্বীকার করতে চায় না৷ তা দেখে মেয়েটি নিজেকে শেষ করার হুমকি দিলে ছেলেটি তাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে স্বীকার করে সেও তাকে ভালোবাসে৷ সে দিনই তারা লুকিয়ে বিয়ে করে ফেলে৷ তারপর খুব সুন্দর কাটছিলো তাদের জীবনটা, অনেক গুলো মাস কেটে যায়৷ তাদের ভালোবাসাময় খুনসুটি দিন গুলো খুব ভালো কাটছিলো৷ ফাস্ট ইয়ার শেষ করে সেকেন্ড ইয়ারে ওঠার কিছুদিন পর মেয়েটি বুঝতে পারে তার ভেতর আর একটি নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে৷ জানিস নিখিল সেদিন ছেলে টি মেয়েটিকে ধরে খুব কেঁদে ছিলো৷ সে বাবা হবে আদো আদো গলায় কেউ তাকে বাবা বলে ডাকবে৷ ছোট ছোট হাত পা গুলো ছুঁবে৷ তাদের একটা সুন্দর পরিবার হবে৷ কিন্তু তারা জানতো না তাদের জীবনে কি ঝড় আসতে চলেছে৷ তাদের সুন্দর জীবনটা যে কাল বৈশাখী ঝড় ধ্বংস করে দিবে এটা তারা কেউ জানতো না৷” এত টুকু বলে থামলো ফারহা তার চোখে পানি৷ এদিকে নিখিলের খুব আগ্রহ হচ্ছে বাকিটুকু শুনবে৷ 

” তারপর তারপর কি হলো ফারু?” ফারহা চোখের পানি মুছে বলে উঠলো……..

.

.

.

#চলবে…………

#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া

#লেখনীতে_ফারহানা_আক্তার_ছবি

#পর্ব_১৬

.

.

🌸

” তারপর তারপর কি হলো ফারু?” ফারহা চোখের পানি মুছে বলে উঠলো,” তারপর কি হলো জানতে চাস নিখিল?”

” হ্যাঁ ফারু বল প্লিজ তারপর কি হলো?”

ফারহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আবারও বলতে লাগলো,” মেয়েটি তখন দুই মাসের প্রেগনেন্ট৷ এই সময় প্রত্যেকটা মেয়েই কিছু শারিরীক সমস্যা হয়৷ ওই মেয়েটিরও হয়ে ছিলো৷ খাবার খেতে গেলে গন্ধ পেতো বমি বমি ভাব হতো৷ মেয়েটির বাবা প্রথমে বুঝতে না পারলেও কাজের মহিলা সবটা বুঝতে পেরে মেয়েটির বাবা কে জানায়৷ মেয়েটির বাবা বিশ্বাস করতে না পেরে মেয়েটিকে না জানিয়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়৷ ডক্টর পরীক্ষা করে কর্ণফাম করে জানায় মেয়েটি দুই মাসের প্রেগনেন্ট৷ মেয়েটির বাবা সব জানতে পেরে প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে৷ মেয়েটি তার বাবাকে সবটা বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করে৷ কিন্তু তিনি সব টা জেনেও রেগে মেয়েটির গায়ে হাত তোলে ওই অবস্থায় প্রচন্ড মারধোর করে৷ জানিস নিখিল সেদিনই মেয়েটির বাবা তার বন্ধুর ছেলের সাথে মেয়েটির বিয়ে দিবে এবং সেদিনই বিয়েটা হবে বলে মেয়েটিকে জোড় করে বধু সাজানো হয়৷ আর অন্যদিকে মেয়েটির ভালোবাসার মানুষটিকে শেষ করে দিতে মেয়েটির বাবা গোপনে বেড়িয়ে পরে৷ মেয়েটি পাগলের মত তার স্বামীকে একের পর এক ফোন করতে লাগলো কিন্তু ফোন কল রিসিভ হলো না৷ কিন্তু হঠাৎ কল রিসিভ হলে মেয়েটি তার স্বামীর আর্তনাদ শুনতে পেলো৷ মেয়েটি পেটে প্রচন্ড ব্যথা ভুলে গিয়ে জোর করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়৷ মেয়েটির পেছন পেছন ছেলেটিও ছুটে আসে কিন্তু….”

” কিন্তু কী ফারু? মেয়েটি নিশ্চয়ই তার স্বামীকে বাঁচাতে পেরেছে?”

ফারহা মলিন হেসে বলে উঠলো,” না নিখিল সেদিন মেয়েটি তার স্বামীকে বাঁচাতে পারে নি আর না পেরেছে নিজের অনাগত সন্তানকে বাঁচাতে৷ সেদিন মেয়েটি দিক-বেদিক শূন্য হয়ে রাস্তায় দৌড়াতে দৌড়াতে একটা গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট করে৷ তারপর সব শেষ সব৷ সেদিন মেয়েটির জীবনের সব রঙ বির্বণ হয়ে গেল৷ সর্বস্ব হারালো মেয়েটি,”

” তারপর কী হলো?”

” মেয়েটি তিন মাস মৃত্যুর সাথে লড়াই করার পর হসপিটাল থেকে মুক্তি মেলে মেয়েটির৷ মেয়েটি এতটাই দূর্ভাগ্য নিয়ে জন্মেছিলো যে শেষ বারের মত তার স্বামী সন্তান কে শেষ দেখা দেখতে পারেনি নিখিল৷ নিজের জন্মদাতা পিতার এত নিষ্ঠুরতা মেয়েটি মেনে নিতে পারে নি সেদিন৷ জন্মদাতা পিতা বিধায় নিজের হাতে খুন করতে পারেনি কিন্তু ছেড়ে ও দেয়নি৷ সেদিনই মেয়েটি ওই শহর ছেড়ে অন্য শহরে চলে যায়৷”

” ওয়েট ওয়েট ফারু কাহিনীটা শুনে আমার সত্যি এখন ওই মেয়েটির বাবা কে খুন করতে ইচ্ছে করছে৷ কিন্তু এখানে তো শুধু মেয়েটির বাবার একার দোষ ছিলো না৷ তার বন্ধু এবং ছেলেরও দোষ ছিলো৷ কারণ তারা চাইলে মেয়েটির বাবাকে বুঝাতে পারতো৷ আর ছেলেটি মেয়েটিকে সাহায্য করতে পারতো৷ সেদিন যদি ছেলেটি মেয়েটিকে আটকানোর চেষ্টা না করে সাহায্য করতো তাহলে হয়তো মেয়েটির আর পূর্ণ সংসার হতো৷ এখানে প্রত্যেকটা ক্যারেক্টার দোষি৷ এখন তুই আমাকে বল এই কাহিনীটা আমাকে শুনানোর কারণ?”

” আর মেয়েটি এখন কোথায়?”

” তোকে মেয়েটির গল্পটা শুনানোর নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে রাইট৷ রইল বাকি মেয়েটি কোথায়? মেয়েটি তোর সামনে বসে আছে৷” ফারহার কথা শুনে নিখিলের মুখটা শুকিয়ে গেল তার পরক্ষণে হাসতে হাসতে বলে উঠলো, “”তুই আমার সাথে মজা করছিস তাই না ফারু?”

ফারহা মুচকি হেসে বলে উঠলো,” শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তোকে যা যা বলেছি প্রত্যেকটা কথা সত্যি আর সেই মেয়েটি আর কেউ না আমি৷”

ফারহার কথা শুনে নিখিলের মুখের হাসি মিটিয়ে গেল৷ প্রচন্ড রকমের শক্টড পেলে মানুষ যেন হতভম্ব, হতবিহ্বল হয়ে পড়ে ঠিক তেমন অবস্থা হলো নিখিলের৷ তা দেখে ফারহা মুচকি হেসে বলে উঠলো,”  আজ তোর ক্লাস করতে হবে না নিখিল বাড়ি চলে যা৷ আমি ভার্সিটিতে যাচ্ছি৷” 

ফারহা বিল পে করে ক্যাফেটেরিয়া থেকে বেরিয়ে গেল কিন্তু নিখিল উঠলো না ওভাবেই স্টাচু হয়ে বসে রইল৷ 

১৯.

             হাওলাদার বাড়িতে আজ আহাজারি কান্নার আওয়াজে পুরো পরিবেশটা যেন ভারি হয়ে উঠলো৷ বাড়ির কর্তার পর বাড়ির বড় ছেলের এমন নৃ’শং’স মৃত্যু হতে পারে এটা কেউ ভাবতেও পারে নি৷ মিলন হাওলাদার কঠোর এবং গম্ভির মুখে বসে বাড়ির সি সি ক্যামেরার ফুটেজ গুলো চেক করছে৷ রাতে কে বা কারা গিফ্ট বক্স তার বাড়ির দরজার সামনে ফেলে যায়৷ মিলন ফুটেজ চেক করে কোন রকম ক্লু খুজে পায়নি৷ রাগে পুরো শরীর রি রি করে মিলনের, তার বড় ভাইয়ের এমন মৃ’ত্যু’র খবর যদি ছড়িয়ে পড়ে তাহলে তাদের বিজনেসের যে মারাত্মক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে৷ সে কারণে মিলন গোপনে তার ভাইয়ের টু’ক’রো করা শরীর দাফন কাফনের ব্যবস্তা করলো৷ 

ইমামের দাফন কাফন সম্পূর্ণ হবার পর মিলন হাওলাদার যেন আরো এগ্রেসিব হয়ে উঠেছে৷ আগের থেকে আরও বেশি হিংস্র হয়ে মেয়েদের কিডন্যাপ করা শুরু করলো৷ সাধারণ কলেজ ভার্সিটির মেয়েদের টার্গেট করে কিটন্যাপ করাচ্ছে মিলন৷ এদিকে মেঘ কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর জানতে পারে৷ মাডার্র এবং কিডন্যাপিং কেসটা অন্য অফিসারকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ খবরটা শুনে মেঘের ইগোতে লাগে৷ সে দিনই  মেঘ রেজিকনেশন লেটার পাঠিয়ে দেয়৷ খবরটা শুনে মেঘের বাবা প্রচন্ড খুশি হয় কারণ তিনি কখনোই চাইতেন না তার একমাত্র ছেলে সামান্য বেতনের চাকরি করুক ৷ মেঘ কে দুই হসপিটালে রাখার পর রিলিজ করে দেওয়া হয়৷ এই দুইদিনে মেঘ ফারহার কোন খবর না পেয়ে পাগল প্রায়৷ একটু সুস্থ হতেই মেঘ ফারহাকে দেখার জন্য বের হতে নিলে মেঘের বাবা মেঘকে আটকে দিয়ে বলে,” মেঘ তুমি এখন অসুস্থ আর এই মুহূর্তে  তোমার বাইরে বের হওয়াটা একদম উচিত হবে না৷ তোমার এমনিতেও খারাপ চাওয়া লোকের অভাব নেই তাই আমি চাই না তুমি এই মুহূর্তে বের বাড়ি থেকে বের হও৷”

” কিন্তু ড্যাড আমার এই মুহূর্তে যাওয়া খুব জরুরী প্লিজ বাধা হয়ে দারিয়ে ও না কারণ আমি শুনবো না৷”

” শুনতে হবে মেঘ৷ এখন যদি তুমি বাড়ি থেকে বের হও তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে৷”

মেঘ রাগে দাঁতে দাঁত চেপে তার বাবার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেয়৷ শাফায়াত চৌধুরী রেগে গিয়ে কিছু বলতে গিয়েও বললো না৷ তিনি নিজের রুমে চলে গেলেন৷ এতক্ষণ দুরে দারিয়ে সবটা দেখছিলো বেলা৷ যখন শাফায়াত চলে গেল তখনি বেলা এসে মেঘের দরজায় নক করে মেঘ রেগে গিয়ে দরজা খুলে কিছু বলতে যাবে তখনি দেখে দরজার বাইরে বেলা দারিয়ে৷

” দা ভাই ভাবির সাথে দেখা করতে চাচ্ছিস?”

” এত জেনে তুই কি করবি?”

” উহু প্রশ্ন নয় উওর দে ভাবির সাথে দেখা করতে চাচ্ছিস কিনা?”

” হুম চাই৷”

” ওকে আমি তোর রুমে থাকছি সবাই ভাবতে তুই রুমে আছিস৷ আর সে সুযোগে তুই গিয়ে ভাবির সাথে দেখা করে আয়৷”

বেলার কথা শুনে মুহূর্তে মেঘের সব রাগ বিলিন হয়ে গেল৷ বেলার মাথায় হাত বুলিয়ে আস্তে আস্তে রুম থেকে বেরিয়ে গেল৷

              বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে ফারহা৷ গোধূলি বেলা আকাশে রঙিন মেঘের আনাগোনা৷ পাখিরা ফিরছে তাদের নিড়ে৷ বাইরে শীতল বাতাস বইছে৷ লোহার গ্রিল ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ফারহা৷ এই সময়টা ফারহার ভীষণ পছন্দের, একাকি সময় কাটানোর জন্য এই সময়টা ফারহা নিজের সাথে সময় কাটায়৷ কিন্তু মুহূর্তে আকাশে কালো মেঘ ছেঁয়ে গেল৷ মুশলধারে বৃষ্টি শুরু হতে ফারহা ছুটে যায় বাগানে রাফিদ অনেকবার বারণ কারার পরও ফারহা না শুনে বাগানে গিয়ে ভিজতে লাগলো৷ ফারহা আনমনে দুহাত মেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ভিজতে লাগলো৷ আকাশের যে আজ বড্ড মন খারাপ৷ বড্ড কান্না পাচ্ছে তার আর তাই তো তার কান্না অঝরে ঝড়ে পড়ছে জমিনের বুকে৷ ফারহা চোখ মেলে তাকাতে গেটের দিকে চোখ পড়তে দেখে বৃষ্টির মধ্যে দাড়িয়ে আছে একজন সুদর্শন যুবক৷ ফারহা আরও একটু ভালো করে তাকিয়ে দেখে সেই সুদর্শন যুবক আর কেউ নয় মেঘ৷ মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফারহার দিকে৷ মাথায় হাতে এখনো ব্যান্ডেজ করা৷ ভিজে একাকার অবস্থা৷ ফারহা কয়েক মুহূর্ত মেঘের দিকে তাকিয়ে থেকে দোতালায় চলে গেলো৷ সন্ধ্যা পেড়িয়ে  রাত ঘুটঘুটে অন্ধকার বাইরে এখনও বৃষ্টি কমেনি বিন্দুমাত্র৷ ফারহা ড্রেস চেন্জ করে বেলকনিতে গিয়ে দাড়ায়৷ রাস্তায় সোডিয়াম লাইটের আলোয় বৃষ্টির মধ্যে দাড়িয়ে থাকা লোকটিকে দেখে ফারহা চমকে ওঠে৷ মেঘ এখনও ঠায় সেখানে দাড়িয়ে আছে৷ ফারহার সাথে সাথে রাফিদও বেলকনিতে এসে মেঘকে দেখে বলে উঠলো,” ছেলেটা কি পাগল দি?”

ফারহা নির্লিপ্ত গলায় উওর দিলো৷

“পাগল নয় খুনি৷ ওর জন্য আমার সন্তান… ” বাকিটা টা আর বলতে পারলো না কন্ঠনালীতে যেন কান্না গুলো দলা পাকিয়ে আছে৷ বৃষ্টির গতি আরও তীব্র হতে দেখে রাফিদ ফারহার হাত টেনে ধরে রুমে নিয়ে যায়৷ বেলকনিতে থাকলে হয়তো ফারহা আবারও বৃষ্টিতে ভিজে যেতে পারে৷ আর অন্য দিকে মেঘ ঠায় দাড়িয়ে থাকে ফারহার বেলকনির দিকে তাকিয়ে ৷ মনে তীব্র কষ্ট যন্ত্রনা নিয়ে বলতে লাগলো,” ভালোবাসি ফারুপাখি৷ আমি জানি ফারুপাখি তুমি আমাকে ভুল বুঝে আছো বাট ট্রাস্ট মি তখন তোমাকে নিজের করে নেওয়ার জন্য নিজের মনুষ্যত্বটাকে হারিয়ে ফেলেছিলাম৷ আজ তার জন্য তোমাকে কষ্ট পেতে হচ্ছে৷ আমি সত্যি একটা অমানুষ কিন্তু তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি জান৷ তোমাতে আশক্ত আমি, তোমার নেশা ছাড়ানোর সাহস আমার নেই৷ আমার হৃদয় নিংড়ানো সব টুকু ভালোবাসা  তোমার জন্য, ভালোবাসি ফারুপাখি বড্ড বেশি ভালোবাসি তোমায়৷”

ঘন্টার পর ঘন্টা বৃষ্টিতে ভেজার ফলে মেঘের শরীর যেন ফ্যাকাশে সাদা হয়ে গেছে৷ রাফিদ দুর থেকে মেঘকে পর্যবেক্ষণ করছে৷ অবস্তা বেগতিক লাগছে রাফিদের কাছে তাই দেরি না করে বেলাকে ফোন করে৷

” বেলা তোমার ভাইকে দ্রুত নিয়ে যাও৷ ঘন্টার পর ঘন্টা বৃষ্টিতে দাড়িয়ে ভিজতে তোমার ভাই৷” সবে মাত্র চায়ের কাঁপ টা হাতে নিয়েছিলো বেলা৷ রাফিদের কথা শুনে চায়ের কাঁপটা পড়ে যেতে নিলে নিজেকে এবং চায়ের কাঁপ সামলে নেয়৷ আর ফিসফিসিয়ে বলে “আমি আসছি রাফিদ৷” বলে কল কেটে দিয়ে চুপি চুপি বাড়ি থেকে বেড়িয়ে ড্রাইভার কে সাথে নিয়ে বেড়িয়ে পরে বেলা৷

ফারহা তার সমস্থ মনোযোগ বৃষ্টি দেখছে অথচ দুইটি চোখ আকুল হয়ে যে তাকেই দেখছে সেদিকে ফারহার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই৷ রাফির রুমের ছোট্ট জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ছুঁয়ে যাচ্ছে বারবার৷ এদিকে মেঘের মাথায় আঘাত লাগা জায়গায় হঠাৎ করে চিনচিন করে ব্যথা অনুভব করতে লাগলো মেঘ৷ তার সাথে তার দৃষ্টিশক্তি অন্ধকার হতে লাগলো৷

ভোর বেলা মেঘ চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে সে তার নিজের রুমে শুয়ে আছে৷ আর পাশে চেয়ারে বেলা বসে বসে ঘুমাচ্ছে৷ বেডের পাশে একটা ছোট বোল আর কাপড় রাখা মেঘের বুঝতে বাকি নেই যে রাতে তার বেশ জ্বর এসেছিলো আর তার ছোট বোন সারারাত জেগে তার সেবা করেছে৷ কিন্তু সে এখানে কি করে এলো? মেঘ গতকাল রাতের কথা মনে করার চেষ্টা করছে কিন্তু মনে পড়ছে না৷ মেঘ ধীর কন্ঠে বেলাকে ডাকতে লাগলো কয়েকটা ডাক শুনে বেলা জেগে যায়৷ চোখ মেলে মেঘকে দেখে বলে,” দাভাই তোর গায়ে আর জ্বর নেই তো?”

” না জ্বর নেই৷ ছোট বোনের সেবা পেয়ে জ্বর পালিয়েছে৷ এখন রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়৷ আজ আর কলেজ যেতে হবে না৷”

” ওকে দাভাই৷” বেলা সাবধানে কেউ যাতে না দেখে তাই পা টিপে টিপে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ে৷

             ফোনের রিংটোনের শব্দে ফারহা কিছুটা বিরক্ত হয়ে ঘুমের ঘোরে হাতড়ে ফোন খুজে কল রিসিভ করে কানে ধরতে কোলের ওপাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠলো,” শুভ সকাল ফারুপাখি৷ “

ঘুমের ঘোরে ফারহা বললো,”কে৷”

” তোমার না হওয়া একমাত্র জামাই জান৷” লাস্ট কথা গুলো শুনে ফারহার চোখের ঘুমের রেশ যেন কেটে গেল৷ বিছানা থেকে উঠে বসে ফোনের স্কিনে নাম্বারটা ভালো করে দেখে বলে চোখ মুখ শক্ত করে ফারহা বলে,” কেন ফোন করেছেন? “

” আমার ফারুপাখিকে শুভ সকাল জানাতে৷”

” কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে আপনার মুখে শুভ সকাল শুনে আমার সুন্দর সকালটা অশুভে পরিণত হয়েছে কারণ আপনি আমার জীবনে অশুভ ছায়া কাল হয়ে দাড়িয়েছেন৷”

ফারহার কথা শুনে মেঘ খুব কষ্ট পেয়েও বলে,” ওহ জান এভাবে নিজের হবু জামাই কে বলে?  লোকে শুনলে কি বলবে বলো? যাই হোক আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি আজ থেকে তুমি গাড়িতে যাতায়াত করবে৷ বুঝতে পেরেছো?”

” আপনার কী মনে হয় আমার গাড়ি কেনার ক্ষমতা নেই নাকি আমার গাড়ি নেই? আমার নিজের সম্পত্তি টাকা ব্যাংক ব্যালেন্স যা আছে তার একভাগও কী আপনার আছে মিস্টার অফিসার উপস স্যরি স্যরি আপনি তো এখন আর অফিসার নেই মিস্টার মেঘ চৌধুরী৷”

” সম্পত্তি টাকা তোমার থেকে কম হলেও ভালোবাসাটা তোমার থেকে অন্তত বেশি জান৷”

” ভালোবাসা শব্দ টা আপনার ওই নোংরা মুখে বার বার উচ্চারণ করে অপমান করবেন না মিস্টার চৌধুরী৷ যাই হোক আমাকে ফোন করে নেক্টস টাইম ডিসটার্ব করার চেষ্টা করবেন না তাহলে এর পরিনাম ভয়াবহ হবে৷”

“কী হবে? প্রথম বার মরি নি এবার মরে যাবো এটাই তো? তাতেও আমার আক্ষেপ নেই ফারুপাখি৷ তোমাকে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ভালোবাসি বলে যাবো৷”

ফারহা আর কিছু না বলে কল ডিসকানেক্ট করে দিলো৷ ভীষণ রাগ হচ্ছে ফারহার তবুও নিজের রাগটা দমন করে বিছানা থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে নেয়৷ রুমে এসে দেখে টেবিলের উপর খাবার ঢাকা দিয়ে রাখা ফারহার বুঝতে বাকি নেই দিদা এসে সকালের নাস্তা দিয়ে গেছে৷ বুড়িটা যে তাদের দুই ভাই বোন কে ভিষণ ভালোবাসে এটা ফারহা খুব ভালো করেই জানে৷ ফারহা মুচকি হেসে রাফিদকে নিয়ে এক সাথে বসে নাস্তা করে ফারহা ভার্সিটিতে আর রাফিদ তার কলেজের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পড়লো৷ রাফিদের কলেজ ফারহার কলেজের বিপরিতে হওয়ায় রাফিদ চলে যায়৷ ফারহা হেটে তার ভার্সিটির দিকে কিছুদুর হাটার পর একটা গাড়ি এসে ফারহার সামনে এসে থামে৷ গাড়িটা দেখে ফারহা না দেখার ভান করে অন্য পাশ থেকে হেটে যেতে লাগলো৷ তখনি আর একটি গাড়ি এসে ফারহার সামনে থেমে গিয়ে দ্রুত ফারহার হাত ধরে ফারহাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়৷

.

.

.

#চলবে………..

#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া

#লেখনীতে_ফারহানা_আক্তার_ছবি

#পর্ব_১৭

.

.

🌸

“আমাকে এভাবে গাড়িতে তোলার মানে কী পিচ্চি?” খানিকটা রাগ নিয়ে আদিলকে প্রশ্ন করলো ফারহা৷ 

” সরি আপা এটা করা ছাড়া আমার আর কোন উপায় ছিলো না৷ তুই ভালো করেই জানতি ওই গাড়িটা কার? এবং তোর সামনে কেন থেমে ছিলো৷”

” হ্যাঁ জানতাম ওই গাড়িতে মেয়েদের কিডন্যাপ করা হয়৷ “

” আর তুই জেনে বুঝে কিডন্যাপ হতে চেয়েছিলি?”

” না আমার তো অন্য প্লান ছিলো কিন্তু মাঝখানে তুই এসে গন্ডগোল পাকিয়ে দিলি৷ “

” বেশ করেছি৷ তোকে আমি কোন রিস্কি কাজ করতে দিবো না৷ এখন থেকে যা যা করার দরকার আমি করবো ৷ তোর প্লান অনুযায়ী আমি কাজ করবো৷”

ফারহা তার ভাইয়ের পাগলামি দেখে মুচকি হেসে বলে,” ঠিক আছে ৷ ” ফারহা আদিলের কথোপকথন এর মাঝে ফারহার ফোনটা বেজে ওঠে৷ ফারহা কল রিসিভ করার পর ফোনের ওপাশ থেকে বলে উঠলো,” সরি ম্যাম আপনার কথা মত টাইমলি খবরটা দিতে না পারার জন্য,”

” ঠিক আছে বলুন কি জানতে পেরেছেন?”

” ম্যাম লোকটি খুব চতুর এব ধুরন্ধর৷ সবাইকে বলে বেরিয়েছে ওই জায়গা বিক্রি করে দিবে৷ আসলে সত্যিটা হলো তিনি ওখানে মদের বার বানাতে চেয়েছে৷ জায়গাটা নিরিবিলি হওয়ায় পুলিশের ঝামেলা কম হবে এটা ভেবে তিনি বাড়ি বিক্রির গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছে৷”

ফারহা সব শুনে বললো,”  লোকটাকে ধরে কিছুদিন আদর ভালোবাসা দিয়ে দিন৷ আর ভালো করে বুঝিয়ে দিন তার কি করা উচিত আর কি করা উচিত নয়৷”

” ওকে ম্যাম৷” ফারহা কল ডিসকানেক্ট করে আদিলকে বলতে লাগলো,” তোকে একটা করতে হবে পিচ্চি৷”

” কি কাজ আপা?”

“মিলন হাওলাদার কে খুব সতর্কতার সাথে কিড’ন্যাপ করতে হবে তবে এটা কেউ যেন জানতে না পারে৷ ছেলেটা বড্ড চালাক আর লো’ভী পিচ্চি তার বাবা আর ভাইয়ের করুণ পরিনতি দেখার পরও নিজেকে সুদরে নেওয়া তো দুরে থাক আরও নতুন উদ্দামতা নিয়ে মেয়েদের কিড’ন্যাপ করছে৷”

” তুই নিশ্চিন্ত থাক আপা এই বিষয়টা আমি দেখে নিচ্ছি৷”

বলতে বলতে ভার্সিটির সামনে গাড়ি থামে৷ আদিল ফারহাকে নিয়ে ভার্সিটিতে ঢুকে যায়৷ ফারহার সাথে অচেনা একটা ছেলেকে দেখে অনেকে আড়চোখে ফারহা আর আদিলের দিকে তাকিয়ে থাকে৷ তখনি হুট করে নেহাল নিখিল আয়মান তনু এসে ফারহার সামনে হাজির হয়৷ ফারহা নিখিলকে দেখে কেমন আছিস জ্বিজ্ঞাসা করে৷

” ভালো কিন্তু ছেলেটা কে ?”

” ওহ পরিচয় হয়ে নে৷ আদিল ও হচ্ছে  নিখিল ও নেহাল তনু আর আয়মান৷ এরা আমার বেস্টফ্রেন্ড আর নিখিল ও হচ্ছে আদিল আমার আর একটা ছোট ভাই কিছুদিন হলো লন্ডন থেকে এসেছে৷”

ছোট ভাই কথাটা শুনে তনুর মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেল কারণ আদিলকে দেখেই বড়সড় একটা ক্রাশ নামক বাশ অলরেডি খেয়ে বসে আছে৷ বাকিরা সবাই আদিলের সাথে আড্ডা জমিয়ে ফেলে৷ আদিল যাওয়ার সময় ফারহাকে বলে যায় ক্লাস শেষ হলে সে এসে তাকে পিক করে নিয়ে যাবে৷ ফারহাও তাতে সায় জানায়৷ আজ তিনটে ক্লাস করার পর   টিচারদের মিটিং হওয়ায় ক্লাস আর হয় না৷ আজ সূর্য মামা তার তেজটা বেশ বাড়িয়ে দিয়েছে৷ ফারহা নিখিল নেহাল তনু আয়মান ভার্সিটির ক্যাম্পাসের এক বটবৃক্ষের নিচে বসে গল্প করছে  হঠাৎ ফারহা চোখ যায় ভার্সিটির দক্ষিন দিকে যেখানে পরিত্যাক্ত একটি রুম রয়েছে৷ সেখানে ভাঙ্গা বেঞ্চ টেবিল রাখা হয়৷ বেশির ভাগ রুমটা দারোয়ানরা ব্যবহার করে থাকে৷ সে রুমের দরজার লক খোলা এবং কয়েকটা মেয়েকে দেখছে যাদের দেখে মনে হচ্ছে মেয়ে গুলো নেশা করে আছে৷ খানিকক্ষণ  বাদে দরজাটা বন্ধ হয়ে গেল৷ মনে হলো ভেতর থেকে কেউ দরজাটা বন্ধ করে দিয়েছে৷ ফারহা পুরোটা দেখে নেয় এবং নজরে রাখে৷ ফারহার ধারণা আজ এই মেয়ে গুলোই  হলো টার্গেট৷ এদের কেই আজ তুলে নিয়ে যাবে৷

২০.

                     আজ বেশ দীর্ঘ সময় ধরে ফারহা রুমটার উপর নজর রেখে তার লোকদের মেসেজ করে জানিয়ে দেয় তাদেরকে কি করতে হবে৷ কিছুক্ষণ বাদে ভার্সিটি ফাঁকা হতে পেছনের গেট দিয়ে কিছু লোক মেয়ে গুলো কে অজ্ঞান করে নিয়ে যায়৷ 

ফারহা এবার সবাইকে বলে ওঠে,” অনেক সময় হলো এখন যেতে হবে আর নিখিল তোর সাথে আমার কিছু কথা ছিলো৷” ফারহার কথা শুনে তনু বলে উঠলো,” তোদের আবার কথা কিসের? যা বলার আমাদের সামনে বল৷”

 ফারহা তনুর দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলে উঠলো,” তাহলে তুই আগে বল আজ আমার ভাইকে দেখে ওভাবে তাকিয়ে ছিলি কেন?” ফারহার কথা শুনে নেহাল বলে উঠলো,” লুচ্চা মাইয়া গো আর কাজ কী ফারহা? পোলাগো দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকায় থাকা তাই না?”

নেহালের কথা শুনে তনু রেগে গিয়ে বললো,” চুপ থাক অশিক্ষিত৷ ভার্সিটিতে পড়ে আবার যে মুখের ভাষা ছিঃ আঙ্কেলকে বলতে হবে তোর দিন দিন অবনতি হচ্ছে এভাবে পড়িয়ে টাকা নষ্ট না করে তোকে রিক্সা কিনে দিতে তুই ওটারই যোগ্য৷” শুরু হয়ে গেল বিশ্ব যুদ্ধ তনু আর নেহালের মাঝে আর আয়মান এখানে ওদের থামানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু লাভ হচ্ছে না৷ ততোক্ষণে ফারহা আর নিখিল অন্য সাইডে চলে গেল৷

” কি বলবি ফারু?”

” প্রথমত আমাকে ফারহা নাম ধরে ডাকবি ফারু বলে ডাকবি না৷ আর দ্বিতীয়তঃ আমার প্রতি যদি তোর কোন ফিলিংস এখনো বাকি থাকে তাহলে সেটা শেষ করে দে৷ আমি চাই না আমার জন্য আমার বেস্টফ্রেন্ড কষ্ট পাক৷” ফারহার কথা শুনে নিখিল কিছু না বলে হুট করে ফারহাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,” তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড আমার কলিজা আগে যেমন ছিলি এখনোও তেমন থাকবি আর আমার ফিলিংস সেটা আমার ভেতরই থাকবে কখনো কেউ জানবে না তুই আমার ভালোবাসা৷ আর না আমি সে ফিলিংস কখনো কাউকে বুঝতে দিবো৷ ” নিখিলের কথা শেষ হতে না হতে হুট করে মুখ থুবড়ে পড়লো৷ আচমকা এমন আক্রমনের জন্য নিখিল বা ফারহা কেউ প্রস্তুত ছিলো না৷ ফারহা নিখিলকে মাটি থেকে তুলে সামনে তাকিয়ে দেখে মেঘ দাড়িয়ে৷ চোখে মুখে অসম্ভব রাগ৷ রাগে চোখ দুটো রক্ত বর্ণ ধারণ করেছে৷ এদিকে নিখিলের নাক থেকে রক্ত পড়ছে৷ ঠোঁট কেটে রক্ত পড়ছে এটা দেখে ফারহা নিজেকে আর সামলাতে পারেনি মেঘের সামনে গিয়ে মেঘকে একটা থাপ্পর মেরে বসে৷ ফারহার এহেন কান্ডে হতবম্ভ হয়ে যায় মেঘ৷ ফারহা এবার মেঘকে ধাক্কা দিয়ে বলে উঠলো,” হাউ ডেয়ার ইউ মিস্টার চৌধুরী৷ আপনার সাহস কী করে হয় আমার বেস্টফ্রেন্ডের গায় হাত তোলার?” ফারহার কথা শুনে মেঘ প্রচন্ড রেগে নিখিলের দিকে একবার তাকিয়ে ফারহাকে বললো,” তোমার শরীরে পরপুরুষের স্পর্শ আমি সহ্য করবো না ফারুপাখি , হোক সে তোমার বেস্টফ্রেন্ড৷ যে হাত দিয়ে তোমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করবে সে হাত আমি কে’টে ফেলবো৷ প্রয়োজন পড়লে তাকে জিন্দা মাটিতে পু’তে ফেলবো৷ ডু ইউ আন্ডারস্টান্ড৷”

ফারহা দুহাত ভাজ করে চুপচাপ মেঘের কথা গুলো শুনে বলে উঠলো,” আপনার বলা শেষ? শেষ হলে আপনি আসতে পারেন৷ আর নিখিল তুই আমার সাথে সামনের ফার্মেসিতে চল৷”

” প্রয়োজন নেই ফারহা৷”

“প্রয়োজন আছে কী না নেই সেটা আমি বুঝবো৷ চল আমার সাথে৷” ফারহা নিজ থেকে মেঘের সামনে নিখিলের হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো৷ ভার্সিটিতে স্টুডেন্ট কম থাকায় তেমন একটা কেউ মেঘ ফারহার দিকে খেয়াল করলো না তবে আয়মান নেহাল তনু এসে হাজির হয়৷ পুরো কাহিনী না বুঝতে পারলেও নিখিলের মুখের অবস্থা দেখে ধারণা করে নিয়েছে কী হতে পারে৷ 

ফারহা নিখিলের হাত ধরা দেখে মেঘ পারে তো নিখিলকে সেখানে শেষ করে দেয় কিন্তু নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করলো৷ আর মনে মনে বলতে লাগলো,” ফারুপাখি একদিন আসবে যখন তোমার হাত ধরা কেন তোমাকে স্পর্শ করার সম্পূর্ণ অধিকার আমার থাকবে৷ এত বছর যখন তোমার জন্য অপেক্ষা করতে পেরেছি আরও কিছু দিন না হয় অপেক্ষা করবো৷ তবে দিন শেষে তোমাকে এই মেঘের বুকেই আসতে হবে৷ সেদিনের অপেক্ষায় রইলাম৷” 

মেইন গেট থেকে বের হওয়ার পর পরই নিখিল ফারহাকে সাইডে নিয়ে বললো,” ফারহা একটা প্রশ্নের উওর দিবি?”

” আমি জানি তুই কী প্রশ্ন করবি৷ এটাই তো মেঘ চৌধুরী কেন আমার পেছনে পড়ে আছে?”

নিখিল মাথা নেড়ে সায় জানায়৷ ফারহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে তোকে যে গল্পটা বলেছিলাম মনে আছে নিশ্চয়ই? মেয়েটার বাবা যে ছেলেটার সাথে বিয়ে দিবে বলে ঠিক করে রেখেছিলো এই মেঘ চৌধুরী হলো সেই ছেলে৷

ফারহার কথা শুনে নিখিলের চোখ দুটো কপালে ওঠে যাওয়ার উপক্রম৷

” ম,,মানে যার সাথে তোর বিয়ে…..” বাকিটা বলার পূর্বে ফারহা বলে ওঠে,”হ্যাঁ ঠিক ধরেছিস৷ আমার জীবনটা নষ্ট হওয়ার পেছনে এই লোকটারও বিশাল অবদান রয়েছে৷”

নিখিলের এই মুহূর্তে ইচ্ছে করছে মেঘকে মাটিতে পুতে ফেলতে৷ ফারহা সবার আগে তার বেস্টফ্রেন্ড৷ একজন বেস্টফ্রেন্ডের কষ্ট অন্য জন কখনো সহ্য করতে পারে না৷ নিখিল রেগে ভার্সিটির ভেতরে যেতে নিলে ফারহা নিখিলকে আটকে দিয়ে বলে,” নিখিল এটা আমার যুদ্ধক্ষেত্র৷ আমাকেই লড়তে হবে আর আমাকেই জিততে হবে৷ আমি চাই না তুই বা অন্য কেউ এই লড়াইয়ে সামিল হ ৷”

” আই কান্ট বিলিভ দিস ফারহা৷ তুই এত কিছু সহ্য করার পরও এতটা স্ট্রং 

কি করে থাকতে পারিস? আর কেনই বা এদেরকে তার প্রাপ্য শাস্তি দিচ্ছিস না?”

” নিখিল একটা কথা সব সময় মাথায় রাখবি৷ আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না৷ আর ওরা ওদের শাস্তি পাবে তবে এক ঝাটকায় সেই শাস্তি ওদের আমি দিবো না৷ ওদের কে আমি তীলে তীলে শেষ করবো৷ মানুষিক ভাবে গুড়িয়ে দিবো৷”

” সেটা কবে ফারহা?” নিখিলের প্রশ্ন শুনে ফারহা রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো, “খুব শীগ্রই৷” 

নিখিল ফারহা কথা বলতে বলতে আদিল এসে উপস্থিত হয়৷ নিখিল পকেট থেকে রুমাল বের করে নাক আর ঠোঁটের রক্ত মুছে বলে,” ফারহা আমি বাড়ি চলে যাচ্ছি ট্রিটমেন্ট না হয় বাড়িতে থেকেই নিবো৷ তুই দেরি না করে আদিলের সাথে চলে যা৷

ফারহা কিছু একটা ভেবে নিখিলের কথায় সায় জানায়৷ নিখিল বাকিদের বিদায় জানিয়ে চলে যায়৷ ফারহা ও দেরি না করে আদিলের গাড়িতে উঠে বসে৷ আদিলকে প্রশ্ন করে৷

” কাজটা হয়েছে?”

” পার্ফেক্টলি কাজ টা হয়ে গেছে আপা৷”

” গুড আব আয়েগা উট পাহাড়কে নিচে৷ পিচ্চি আরও কিছু কাজ আছে যেটা তোকেই করতে হবে৷ এই শহরের গার্লস স্কুল কলেজ ভার্সিটিতে  কড়া নজরে রাখতে হবে৷ এবার অনেক গুলো মেয়েকে কিড’ন্যাপ করা হয়েছে৷ তাদেরও উদ্ধার করতে হবে৷”

” আপা আমি একটা কথা বুঝতে পারছি না৷ এদেশে পুলিশ অফিসার আর্মি থাকা সত্যেও এই অপরাধ গুলো মানুষ কী করে করতে পারে?”

” যদি এই অফিসারদের কেউ অসৎ হয় তাহলে সব কিছুই সম্ভব৷ যাই হোক আমাকে একবার আন্ডারগ্রাউন্ডে যেতে হবে৷ আমাকে ওখানে নামিয়ে দে তারপর বাকি কাজ গুলো সেরে ফেল৷”

” আপা আর একটা প্রশ্ন আছে?”

” আর কোন প্রশ্ন নয় পিচ্চি৷ যা বলেছি সেগুলো করা চাই ফাস্ট৷ “

” ওকে৷”

ভার্সিটি থেকে ফারহার বন্ধুরা চলে যাওয়ার পর পর পুরো ভার্সিটি একবার চক্কর কাটে মেঘ৷ মেঘকে এভাবে ভার্সিটিতে ঘুরতে দেখে পিওন মেঘের কাছে তার পরিচয় জানতে চায় মেঘ কিছু না বলে পকেট থেকে বেশ কিছু টাকা পিওনের সামনে ধরতে পিওনের চোখ দুটো লোভে চকচক করছে৷ মেঘ টাকা গুলো পিওনের হাতে দিয়ে বলে আমার কিছু ইনফমেশন দরকার দিতে পারবে?

” হ পারমু৷ পারমু না কেন? টাকা পাইলে আমি সব কাজই করতে পারুম৷ ” মেঘ পিওনের কথা শুনে বাঁকা হাসলো৷ যে হাসির মানে পিওনের বোঝার সাধ্য নেই৷ 

অন্যদিকে মেয়ে গুলোকে ডেরায় না পৌছাতে দেখে মিলন তার লোকদের ফোন করতে থাকে তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো কেউ ফোন রিসিভ করছে না৷ মিলন বেশ রেগে গেল কারণ আজকেই পচিঁশ টা মেয়ে সাপ্লাই দেবার কথা৷ আজ যদি কথা মত মেয়ে গুলোকে সাপ্লাই না দিতে পারে তাহলে বড় সর বিপদ তার জন্য অপেক্ষা করছে৷ কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে আবারও সেই কাঙ্ক্ষিত নাম্বারে ডায়াল করতে লাগলো৷ 

এদিকে মেয়েদের কে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো তাদের জ্ঞান ফিরতে তারা নিজেদের কে অন্য একটা গাড়িতে আবিষ্কার করে আর তার চেয়েও বড় কথা ভার্সিটির পেছনের দিকে বড় দিঘিটার মধ্যে তাদের গাড়িটা, মানে তারা এখন দিঘির মধ্যে আর তাদের জ্ঞান ফেরার কারণ হলো গাড়ির ভেতর পানি ঢুকে যাওয়ার জন্য, লোকগুলো গাড়ির দরজা খুলে ফেলার ট্রাই করতে লাগলো কিন্তু কিছুতেই দরজা খোলা তো দুরে থাক ভাঙ্গতেও পারছে না পানি তাদের বুক পর্যন্ত উঠে গেছে৷ একজনের ফোন বাজার শব্দ পেয়ে দ্রুত ফোনটা নিয়ে কল রিসিভ করে বলে উঠলো,” বস আমাদের বাঁচান আমরা মারা যাচ্ছি৷”  লোক গুলোর কথা শুনে মিলন চমকে উঠে বলে তোরা কোথায় ? আর মেয়ে গুলো কোথায়?”  মিলন একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে আর ফোনের ওপাশ থেকে শুধু একি আওয়াজ ভেষে আসছে৷ ” বস আমাদের বাঁচান আমরা ডুবে যাচ্ছি৷” কয়েকবার কথা গুলো কানে শুনতে পেলেও এক সময় আর কোন আওয়াজ শুনতে পেল না মিলন৷ দিঘির পানির অতলে তলিয়ে গেল গাড়িটা৷ 

.

.

#চলবে………..

#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া

#লেখনীতে_ফারহানা_আক্তার_ছবি

#পর্ব_১৮

.

.

🌸

ঘুটঘুটে অন্ধকার রুমের ভেতর হুট করে আলো জ্বলে উঠতে আমজাত শিকদার চোখ বন্ধ করে ফেললেন৷ শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করছে৷ আবারও শরীরে কারেন্ট শক্টড পেতে আমজাত শিকদার ছটপট করতে লাগলো তা দেখে ফারহা খিলখিলিয়ে হেসে উঠে বলে,” কি হলো আমজাত শিকদার উপস আঙ্কেল আমার লোকেরা আপনার আপ্যায়ন বুঝি ঠিকঠাক মত করেনি?” 

খুব পরিচিত গলা শুনতে পেয়ে আমজাত কষ্ট হলেও চোখ মেলে তাকিয়ে সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটা দেখে প্রচন্ড রকমের অবাক হলো৷ সেটা ওনার চোখ মুখ দেখে যে কেউ বলে দিবে৷ আমজাত প্রচন্ড রকমের অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ফারহার দিকে তা দেখে ফারহা বলে উঠলো ,” এভাবে অবাক দৃষ্টিতে কি দেখছেন আঙ্কেল?” ইনোসেন্ট ফেস করে বললো ফারহা৷

” ফা ফারহা তু তুমি?”

” কেন আঙ্কেল আমাকে দেখে আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না এটা আমি? ওয়েট আপনার বিশ্বাস করার মত একটা কাজ করছি৷” ফারহা আবারও ইলেক’ট্রিক তার নিয়ে আমজাতকে কারেন্ট শক্টড দিলো৷ আমজাত একরাশ বিস্ময় নিয়ে ফারহাকে বললো,” আমার সাথে কেন এমন করছো? কী করেছি আমি? আর তুমি কে?” আমজাতের কথা শুনে ফারহা তার সামনের চেয়ারে বসে বলে,” এত গুলো প্রশ্ন এক সাথে! যাই হোক মেইন টপিকে আসি৷ বাড়িটা ভেঙে আপনি ঠিক কি বানাতে চেয়েছেন আঙ্কেল?”

ফারহার প্রশ্ন শুনে ঘাবড়ে গেল আমজাত৷ আমতা আমতা করে কিছু বলতে নিলে ফারহা আবারও ইলেক’ট্রিক শক্টড দেয় আমজাত কে তখনি আমজাত বলে ওঠে,” বলছি বলছি আমি ওই পুরনো বাড়িটা ভেঙে বার বানাতে চেয়েছিলাম৷” 

” তো এবার কি করবেন? বার বানাবেন?” ফারহার কথা শুনে আমজাত আতঁকে উঠে বলে উঠলো,” কোন দিন ও না আমি কোন বার টার বানাবো না যেমন বাড়ি আছে তেমনি থাকবে৷” 

” গুড বয়৷ আর একটা কথা আজকের কথা গুলো যদি কেউ জানতে পারে তাহলে…..”

” না না না কেউ জানবে না৷ আমি কাউকে বলবো না আল্লাহর কসম৷” 

ফারহা আমজাতকে কিছু না বলে তাদের লোকদের বললো “এই জঞ্জালটাকে বাইরে ফেলে এসো৷”

” ওকে ম্যাডাম৷” আমজাতকে কিছুক্ষণ পর একটা ইনজেকশন ইনজেক্ট করে দেওয়ার পর পর আমজাত সেন্সলেস হয়ে যায়৷ তার পর পরই আমজাতকে ডেরার বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়৷ 

” ম্যাম আদিল স্যার মেয়ে গুলোকে তাদের বাড়িতে পৌছে দিয়েছে৷ “

” শুনুন ভার্সিটির পিওনকে তুলে নিয়ে আসুন আগামীকাল৷ লোকটার বড্ড বেশি লোভ বেড়েছে৷ ওর লোভটা একটু কমাতে হবে৷”

” ওকে ম্যাম ৷ ম্যাম আদিল স্যারের কথা মতো লোক গুলোকে অজ্ঞান করে অন্য একটা গাড়িতে বসিয়ে ভার্সিটির পেছনের দিঘিতে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়েছে৷”

” গুড৷ এতক্ষণে তো মিলন হাওলাদার খবরটা জানতে পেরেছে৷ এবার হবে আসল খেলা৷ শুনুন আমি এখন চলে যাচ্ছি আপনি এদিকটা ভালো করে দেখে রাখবেন৷ আর ভার্সিটির কয়েকটা মেয়ের ইনফরমেশন এই ফাইলটা আছে আপনি এদের উপর নজর রাখবেন৷ এরা যদি কোন ভাবে আমার নাম প্রকাশ করে তো এদের কে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে দিবেন৷” গার্ড ফাইলটা চেক করে বলে, ম্যাম এই তো সেই মেয়ে গুলো যাদের আপনি ছেড়ে দিয়ে ছিলেন৷”

” হুম এদের উপর নজর রাখবেন৷”

“ওকে ম্যাডাম৷”

ফারহা ডেরা থেকে বেড়িয়ে যায়৷ বাইরে বের হয়ে একটা রিক্সা নিয়ে বাড়িতে চলে আসে৷ বাড়িতে এসে গোছল সেরে নিয়ে রান্না সেরে ফেলে৷ ভেজা চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাড়ায়৷ সময়টা গোধূলীলগ্ন ভেজা চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে গুন গুন করে গান গাইতে লাগলো৷ এই সময়টা ফারহার বড্ড পছন্দের সময়৷ পাখিরা তাদের নিড়ে ফিরছে৷ মৃদু বাতাস বইছে চারিদিকে৷ সাথে বেলী ফুলে ঘ্রাণে পুরো পরিবেশটাই যেন মাতাল করা৷ ফারহা গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে আয়াশের কথা ভাবতে লাগলো৷ তাদের প্রায় এক বছরের সংসার জীবনে প্রায়সই তারা একই সাথে এই গোধূলীলগ্নে বসে সময় কাটাতো৷ খুনসুটিতে মাতিয়ে রাখতো দুজনে৷ সে সমস্থ স্মৃতির পাতায় ডুবে ছিলো ফারহা তখনি তার ফোনটা বিকট শব্দ করে বেজে উঠলো৷ তৎক্ষনাৎ ফারহা তার ধ্যান ভাঙে খানিকটা বিরক্তি নিয়ে রুম থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে আননোন নাম্বার৷ ফারহা কল রিসিভ করে কানে ধরতে ফোনের ওপাশ থেকে বলে ওঠে ,” ফারুপাখি এভাবে উদাসিন আনমনা বিষন্ন ফারপাখিকে আমি চিনি না৷ আমার সেই দূরন্ত অভিমানিনী লজ্জাবতী ফারুপাখি কে দেখতে চাই৷ সে কি আমার হবে? আমার ব্যাকুল হৃদয় যে সারাক্ষণ তারই নাম জপ করে৷ 

তার ভালোবাসায় সিক্ত হতে চাই আমি৷ পাবো কি আমি তারে আমার সণে? নিবে কি আমায় তার ভালোবাসায় জড়িয়ে!”

মেঘের আবেগ মাখা কথা গুলো শুনে ফারহা হাসতে লাগলো হাসতে হাসতে চোখ দিয়ে পানি বেড়িয়ে আসে৷ মেঘ মন মুগ্ধ হয়ে ফারহার হাসির শব্দ শুনে যাচ্ছে৷ কে বলবে এই মেয়েটা সারাক্ষণ গম্ভির হয়ে থাকে৷ কে বলবে এই মেয়ে নিজেকে নিয়ে সারাক্ষণ উদাসি হয়ে আকাশ পানে চেয়ে থাকে? কে বলবে এই নীলাক্ষি চোখের কেউ ভয়ংকর ভাবে প্রেমে পড়বে৷ কে বলবে এই মেয়ের হাসি কারও হৃদয়ে প্রেমের ঝংকার তুলে দিতে যথেষ্ট! কে বলবে এই মেয়ের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কেউ একজন সাতজনম পর্যন্ত অপেক্ষা করতে আবার এই মেয়েকে নিজের করে পাওয়ার জন্য খুনি হতেও দ্বিধাবোধ করবে না৷” 

মেঘের ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে ফারহা গম্ভির গলায় বলে ওঠে, আমার জীবনে প্রথম পুরুষ আমার আয়াশ আর শেষ পুরুষও আয়াশ৷ এখানে অন্য কারোর প্রবেশ নিষিদ্ধ৷ বিশেষ করে আপনার মত খুনিদের প্রবেশ একে বারে নিষিদ্ধ৷ “

ফারহার কথা শুনে মেঘ হাসতে হাসতে বলে উঠলো,” ফারুপাখি আমায় তুমি ভালোবাসো বা নাই বাসো তোমার দিন আমাতেই শেষ আর শুরু আমাতেই ঘিড়ে হবে৷”

” ইন ইউর ড্রিম মিস্টার অফিসার উপস সরি মিস্টার চৌধুরী৷” ফারহার খোঁচা মারা কথা শুনেও মেঘ শুধু হাসলো৷ 

” বাই দ্যা ওয়ে ফারুপাখি নীল সালোয়ার কামিজে তোমায় ভীষণ সুন্দর লাগছে৷” মেঘের কথা শুনে ফারহা বেলকনিতে গিয়ে গেটের দিকে তাকাতে রাস্তায় সোডিয়াম লাইটের আলোয় মেঘকে দেখে কপাল কুঁচকে দাঁত কিড়মিড় করে মেঘকে বলে ওঠে,” আপনি আমার বাড়ির সামনে কী করছেন?”

” এখানে আসতে বা দাড়াতে নিশ্চয়ই আমি কারও পারমিশণ নিবো না কারণ এটা সরকারি রাস্তা৷ এখানে যে কেউ দাড়াতে পারবে৷” 

ফারহা মেঘের দিকে আগুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো,” আপনাকে আমি সত্যি একদিন খুন করে ফেলবো মিস্টার মেঘ চৌধুরী৷”

ফারহার কথা শুনে মেঘ মৃদু হেসে বললো,” আমি তো কবেই তোমার প্রেমে খুন হয়ে গেছি ফারুপাখি৷”

ফারহা বুঝলো মেঘের সাথে কথা বলাটাই হলো অনর্থক৷ তাই কথা না বারিয়ে বললো কি চান আপনি?”

” তোমাকে৷ তোমাকে চাই ফারুপাখি৷ দিবে কি তোমায় আমাকে?”

” না কারণ আমি শুধু আয়াশের আর কারও না৷”

আয়াশের নাম শুনে মেঘের মুখের ভাবভঙ্গি হুট করে বদলে গেল৷ রাঙ্গানিত গলায় বলে উঠলো,” আয়াশ আয়াশ আয়াশ এই নামটা আর কতদিন নিজের সাথে জড়িয়ে রাখবে? সে নেই তার কোন অস্তিত্ব নেই৷ তাকে ঘিড়ে কি করে বাঁচবে তুমি? মনে রেখো আজ হোক বা কাল তুমি আমারই হবে৷ আমার ভালোবাসায় তুমি নিজেকে রাঙ্গাবে৷” 

মেঘের প্রত্যেকটা কথা শুনে ফারহা ক্রুর হাসি দিয়ে মেঘকে বললো,” কন্ফিডেন্স ভালো কিন্তু ওভার কন্ফিডেন্স ভালো না৷ এমন না হয় নিজের জালে নিজেই এমন ভাবে জড়িয়ে গেলেন যে কোন ভাবে সেই জাল ছিড়ে বের হতে পারলেন না৷ আর না আমাকে পাবেন৷” ফারহা মেঘকে বলার সুযোগ না দিয়ে কল কেটে দিয়ে বিড় বিড় করে বলতে লাগলো,” এভাবে নয় মেঘ চৌধুরী আপনার শাস্তিটা হবে সব চেয়ে ভয়াবহ৷ আমাকে পেয়েও পাবে না৷ ছুঁয়ে দেখতে চাইলেও ছুঁয়ে দেখতে পারবে না৷ উমম তোমার জন্য বিশেষ শাস্তি ওয়েট করছে মিস্টার চৌধুরী যাস্ট ওয়েট এন্ড সি৷” 

ঠোঁটের কোণে ক্রুর হাসি নিয়ে ভেতরে চলে গেল ফারহা৷ মেঘ ফারহাকে চলে যেতে দেখে গাড়ি উঠে বসে গাড়ি  স্টার্ট দেয়৷ 

ফারহা রুম বসে হৈ চৈ শুনতে পেয়ে বুঝতে পারলো আমজাতকে দেখে বাড়ির সবাই হৈ চৈ করছে৷ ফারহা হেসে বই পড়তে বসে পড়লো পরীক্ষার যে আর বাকি নেই৷ 

২১.

              শাফিন চৌধুরীর একের পর এক ষরযন্ত্রের জাল ছিড়ে  ফারহা বেড়িয়ে যায়৷ মিরা চৌধুরী ও বুঝতে পারছে না ফারহা ঠিক কি করতে চাইছে? 

“শাফিন আমাদের হয়তো মেয়েটাকে শেষ করতে দেরি না হয়ে যায়৷”

” মিরা জান এই মেয়েটা প্রচন্ড চালাক ভেবেছিলাম মেয়েটা ওই দিনের পর ভেতর থেকে  ভেঙে গুড়িয়ে গেছে কিন্তু আমার সব ভাবনায় জল ঢেলে দিলো মেয়েটা৷ মেয়েটার সম্পর্কে লোক গুলো যা যা বলেছে তা শুনলে তুমি ঘাবড়ে যাবে মিরা৷” 

” তাহলে তুমি এবার হুট করে ওর উপর আক্রমন করো শাফিন৷ মেঘ বেলার বিয়েটা যত দ্রুত সম্ভব হয় ওদের দিয়ে দিতে হবে৷ আমার মনে হচ্ছে সামনে আমাদের জন্য বড় কোন ঝড় অপেক্ষা করছে৷ “

” চিন্তা করো না মিরা এবার ফুল প্রুফ প্লান করবো যে মেয়েটা বেঁচে ফিরতে পারবে না৷”

” তাই যেন হয় শাফিন৷” 

কথা গুলো বলেই দুজনে মিলে ড্রিংকস করতে লাগলো৷ অন্যদিকে দরজার পাশে দাড়িয়ে সবটা শুনে থরথর করে কাঁপছে বেলা৷ তার মা বাবা এতোটা জঘন্য হতে পারে এটা তার জানা ছিলো না৷ 

” না মম ড্যাড আমি তোমাদের এই আশা পূর্ণ হতে দিতে পারি না৷ কিন্তু এর পেছনে আরও গল্প আছে সে গুলো আমাকে জানতে হবে কিন্তু কে বলবে আমাকে? দাভাই ও সবটা জানে৷ আজ দাভাই আমাকে সবটা জানাবে না হলে আমি ফারহা ভাবির কাছে চলে যাবো৷”

বেলা দ্রুত পায়ে হেটে মেঘের রুমে গিয়ে নক করে৷ মেঘ সবে মাত্র ফারহার সাথে দেখা করে এসেছে মন টা বেশ ভালো৷ গুন গুন করে গান গাইছে৷ দরজায় টোকা পড়তে একটু বিরক্ত হয়ে বলে,” দরজা খোলা আছে৷”

বেলা থম থমে মুখ নিয়ে ভেতরে ঢুকে বলে,” দাভাই তোমার থেকে আমার কিছু জানার আছে৷”

” কি জানতে চাস?”

” ফারহা ভাবি আর তোমার গল্প যেটা আমি জানি না৷”

মেঘের মুখটা আধারে ছেঁয়ে গেলো বেলার কথা শুনে কারণ ফারহা আর তার গল্প গুলো যে একটুও যে মধুময় ছিলো না৷ তাদের সম্পর্ক টা শুরু থেকে তিক্ততা বহন করে আসছে৷ একতরফা ভালোবাসায় আসক্ত হয়ে এমন কিছু করেছে যে সে গুলো তার পক্ষে বলা সম্ভব নয়৷

” দাভাই আমি সবটা জানতে চাই?”

” আমাকে একা থাকতে দে বেলা৷” গম্ভির গলায় বলে উঠলো মেঘ৷ বেলা বুঝতে পারছে তার দাভাই তাকে সবটা বলবে না এখন একমাত্র আশা হচ্ছে রাফিদ৷ বেলা সময় নষ্ট না করে মেঘের রুম থেকে বেড়িয়ে গেল৷ 

রাতের খাবার খেয়ে ফারহা আর রাফিদ গল্প করছিলো তখনি রাফিদের ফোনটা বেজে ওঠে৷ ফোনের কাছাকাছি ফারহা থাকায় ফারহা বেলার নামটা দেখে রাফিদকে কল রিসিভ করতে বলে৷ রাফিদ নিদ্বির্ধায় ফারহার সামনে কল রিসিভ করে৷

” হ্যালো রাফিদ৷”

” হুম বেলা বলো৷”

” আমি এখুনি তোমার সাথে দেখা করতে চাই৷”

” এখন!”

” হ্যাঁ, আমি তোমাদের বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছি৷” 

রাফিদ দ্রুত উঠে বেলকনিতে গিয়ে দেখে সত্যি সত্যি বেলা তার বাড়ির সামনে দাড়িয়ে৷ চোখ মুখ কেমন যেন লাগছে বেলার৷ রাফিদ কল কেটে দিয়ে রুমে এসে ফারহাকে সবটা বলতে যাবে তার আগে ফারহা বলে ওঠে,” মেয়েটার সাথে দেখা করে আয়৷ অনেক প্রশ্ন নিয়ে মেয়েটা তোর সাথে দেখা করতে এসেছে ছোটু৷”

” তুই কিভাবে জানতে পারলি ও এসেছে? আর ওর মনে অনেক প্রশ্ন?”

ফারহা রাফিদের কথার প্রত্যুত্তরে হাসলো শুধু৷ 

” মেয়েটা অনেকটা সময় ধরে দাড়িয়ে আছে ছোটু যা গিয়ে কথা বলে আয়৷ আর হ্যাঁ আজ ও যা যা জানতে চায় ওকে সবটা জানাবি৷”

” ওকে দি৷” 

রাফিদ বেরিয়ে গেল বেলার সাথে দেখা করতে এদিকে ফারহা বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে বিড় বিড় করে বলতে লাগলো,” চৌধুরী পরিবারের ধ্বংসের আজ এক ধাপ আরও এগিয়ে গেলাম মিস্টার চৌধুরী৷ তৈরি থাকুন ঝড় আসছে আপনার জীবনে, যে ঝড় সব কিছু ধ্বংস করে দিবে৷ শুধু সময়ের অপেক্ষা৷” 

” কি হলো সেই কখন থেকে দেখছি চুপ করে আছো৷ কিছু বলবে নাকি আমি চলে যাবো?” বিরক্তি নিয়ে বললো রাফিদ৷

” আমি দাভাই আর ফারহা আপুর বিষয়ে সবটা জানতে চাই?”

” এক মিনিট বেলা তোমার সাথে তো আমি আমার দি’র সম্পর্কে তেমন আলোচনা কখনো করেনি তাহলে তুমি কি জানতে চাইছো? আর তোমার দাভাই কে?” জেনেও না জানার ভান করলো রাফিদ৷ বেলা তার ভুলটা বুঝতে পেরে বললো,” আমার দাভাই হলো মেঘ চৌধুরী৷ শাফায়াত চৌধুরীর একমাত্র ছেলে মেঘ চৌধুরী৷ রাফিদ দাঁতে দাঁত কটমট করে বেলার দিকে তাকিয়ে বলে তুমি ওই খুনির কি হও বেলা ৷” ধমকের সুরে জ্বিজ্ঞাসা করলো রাফিদ৷ রাফিদের কথা শুনে বেলা বলে উঠলো,” আ  আমি মেঘ চৌধুরীর আমার বড় ভাই৷ সম্পর্কে আমরা কাজিন৷” আর কিছু বলার পূর্বে রাফিদের চোখের দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে গেল৷

.

.

.

#চলবে……….

#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া

#লেখনীতে_ফারহানা_আক্তার_ছবি

#পর্ব_১৯

.

.

🌺

” আ  আমি মানে মেঘ চৌধুরীর আমার বড় ভাই৷ সম্পর্কে আমরা কাজিন৷” আর কিছু বলার পূর্বে রাফিদের চোখের দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে গেল৷

” তুমি ওই খুনিটার বোন শিট এটা কেন আমি আগে বুঝতে পারি নি?”

” রাফিদ ফর গড সেক প্লিজ আমাকে সবটা খুলে বলো আমি জানতে চাই ফারহা আপুর বিষয়ে৷”

” জেনে কী করবে বেলা? পারবে তোমার কাছের মানুষ গুলোকে শাস্তি দিতে? কী হলো বলো?”

” রাফিদ প্লিজ আমাকে সবটা বলো৷” রাফিদের হাত ধরে করুণ গলায় বললো বেলা৷ রাফিদ এবার কিছুটা নরম স্বরে বলে উঠলো,” তাহলে শোন ……..”

             মেঘের মা মিসেস মায়রা চৌধুরী বেলার সাথে কিছু কথা বলার জন্য ওর রুমে ঢুকতেই দেখে পুরো রুম ফাঁকা৷ ওয়াশরুমেও নেই দেখে তিনি চিন্তিত হয়ে মেঘের রুমের দরজায় নক করে৷ মেঘ বেলকনিতে দাড়িয়ে নিকোটিনের ধৌয়া উড়াতে ব্যস্ত তখনি দরজায় নক পড়তে দ্রুত সিগারেটের বাকী অংশের আগুন নিভিয়ে বাইরে ছুড়ে ফেলে রুমে এসে দরজা খুলে দেখে তার মা দাড়িয়ে৷

” মম এতো রাতে তুমি? ঘুমাও নি?”

” বেলা কোথায় মেঘ?” বলতে বলতে রুমে ঢুকলো মায়রা৷ রুমের ভেতরে সিগারেটের বাজে গন্ধটা যে এখনো রয়ে গেছে এটা বুঝতে পেরে মেঘ বেশি কথা না বলে বললো মম বেলা ওর রুমে হবে নিশ্চয়ই৷ এতো রাতে আমার রুমে কেন থাকবে?”

” বেলা ওর রুমে কেন পুরো বাড়ির কোথাও নেই মেঘ৷” মেঘ এবার যেন চমকালো৷ বেলা বাড়িতে নেই তাহলে রাফিদের কাছে যাই নি তো? যে কথা গুলো বেলাকে বলতে পারে নি ওর ঘৃনা দেখতে পারবে না বলে আজ সে তার বোনের চোখে নিজের জন্য ঘৃনা দেখতে পাবে হয় তো! এটা ভাবতেই মেঘ শিউরে উঠলো৷ সে তার আদরের ছোট বোনের চোখে যে নিজের জন্য ঘৃনা দেখতে পারবে না৷ কিছুতেই না৷ কথা গুলো ভাবতে ভাবতে মেঘ বলে উঠলো,” মম আমি দেখছি বেলা কোথায় আছে৷ তুমি টেনশন করো না আর ছোট চাচুকে কিছু বলো না শুধু শুধু টেনশন করবে৷” মেঘ কথা গুলো বলে দ্রুত চেন্জ করে গাড়ির চাবি নিয়ে রুম থেকে বের হয়৷ তবে ড্রইংরুম পর্যন্ত আসতেই দেখে বেলাকে৷ চোখ মুখ ফুলে লাল হয়ে আছে৷ দেখে মনে হচ্ছে বেলা খুব কেঁদেছে মেয়েটা৷ মেঘের বুকটা তৎক্ষনাৎ ছ্যাৎ করে উঠলো৷ যে ভয়টা সে পেয়েছিলো সেইটাই হলো না তো? এই দ্বিধা দ্বন্দের মাঝে বেলা মেঘের সামনে দাড়িয়ে ভাঙা ভাঙা গলায় বলে উঠলো,” ঘৃনা করি তোমায়৷ তুমি আমার দাভাই হওয়ার যোগ্য নও৷ তুমি একটা খুনি৷ একটা মেয়ের জীবনটা কয়েক মুহূর্তে তুমি নরকে পরিবর্তণ করে দিলে৷ একটি বারও ভাবলে না যে ভালোবাসে সে কখনো তার ভালোবাসা ছিনিয়ে নিতে চায় না বরং ত্যাগ করে তার ভালোবাসার মানুষটির সুখের জন্য, আর তুমি কী করলে? ফারহা আপুর জীবনে সব রঙ তুমি কেড়ে নিলে? তার জীবনটা নষ্ট করে দিলে? কী করে পারলে তুমি?ছিঃ আমার ভাবতেও ঘৃনা হচ্ছে তুমি আমার দাভাই৷ আমার ঘৃনা হচ্ছে এমন একটা পরিবারে জন্ম নিয়ে আর সেই পিতার জন্য আফসোস হচ্ছে যে পিতা তার নিজের হাতে তার একমাত্র মেয়ের সুখ গুলো নিজের হাতে গলা টিপে মেরে ফেলেছে৷ তোমাদের জন্য আমার ঘৃনা হচ্ছে৷ শুধু ঘৃনা৷” বেলা আর কিছু বললো না মেঘের পাশ কাটিয়ে উপরে নিজের রুমে চলে গেল৷ মেঘ এতোক্ষণ অনেক কষ্ট করে নিজেকে সামলে রেখেছিলো৷ বেলা চলে যেতে মেঘ হাটু মুড়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে৷ এতোক্ষণ দোতালার দাড়িয়ে মায়রা চৌধুরী সবটা শুনছিলো মেঘকে কাঁদতে দেখে তিনি নিচে এসে মেঘের কাঁধে হাত রাখে মেঘ পেছনে তাকিয়ে তার মা’কে দেখতে পেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো৷

” মেঘ আমি জানি না তুমি অতিতে ঠিক কী কী করেছো তবে বেলার মুভমেন্ট তার কথা গুলো শুনে ধরে নিবো তুমি অতিতে ভালো কিছু করো নি যার কারনে বেলা তোমাকে এত কথা শুনালো৷ কী হয়েছে বা কী হয়েছিলো তা এখন তোমার কাছে আমি জানতে চাইবো না তবে আমি আশা করবো তুমি তোমার ভুল গুলি শুদরে নিবে৷ এখন রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো বাকি কথা আগামীকাল হবে৷” 

মায়রা চৌধুরী মেঘকে কিছুটা শান্ত করে নিজের রুমের উদ্দেশ্য চলে গেল কারণ তারও আজ অনেক গুলো প্রশ্ন তার স্বামীকে করা বাকী আছে৷ সে প্রশ্নের উওর যে তার আজ চাই৷ 

          আজ রাফিদ নিজেকে বড্ড হালকা মনে হচ্ছে বেলাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবটা জানাতে পেরে৷ মেয়েটা সবটা শুনে যে বড্ড কষ্ট পেয়েছে এটা রাফিদ বেলার চোখ দুটো দেখেই বুঝতে পেরেছে৷ বেলার জন্য মনে মনে যে রাফিদের বুকটা পুড়ছে এটা বুঝেও নিজেকে শান্ত করার বৃথা চেষ্টা করছে রাফিদ৷ কারণ বেলার সাথে ভালোবাসার নাটক করতে করতে কখন যে নিজের মনের চিলেকোঠায় বেলা নামক দুরন্তপনা মেয়েটাকে ঠাই দিয়েছে সেটা রাফিদ নিজেও জানে না৷

ফারহার ঠোঁটের কোণে তৃপ্তির হাসি৷ ল্যাপটপে কিছু একটা দেখে ফারহার মনটা ভালো হয়ে গেল৷ ল্যাপটপ বন্ধ করে ফারহা রাফিদের সাথে কথা বলার জন্য রাফিদের রুমে ঢুকতেই  দেখে রাফিদ বেলার ছবি গুলো বার বার দেখছে৷ ফারহা নিঃশব্দে রাফিদের রুম থেকে বেড়িয়ে গেল৷ ঘড়ির কাটা একটা ছুঁই ছুঁই ফারহার চোখে ঘুম নেই৷ রাফিদ যে বেলাকে ভালোবেসে ফেলবে এটা কিছুটা আন্দাজ করলেও যে এতো তাড়াতাড়ি বিষয়টা ঘটে যাবে এটা ভাবে নি ফারহা৷ 

পরেরদিন মিসেস মায়রা মেইডদের সাথে সাথে দ্রুত টেবিলে খাবার সাজিয়ে ফেললো৷ তবে পুরো সকাল থেকে মিসেস মায়রার মুখটা থমথমে হয়ে আছে৷ মিসেস মায়রার ছোট জা মিরা এসে হাসি মুখে মিসেস মায়রার কাজে হাত লাগাতে নিলে মিসেস মায়রা বলে ওঠে,” তোকে কিছু করতে হবে না ছোট৷ আমি সবটা সামলে নিবো৷ তুই বরং সবাইকে খাবার সার্করে দে৷” মিসেস মায়রার কথা মত মিরা সবাই কে খাবার সার্ব করে দিতে দিতে বেলাকে খাবার টেবিলে দেখতে না পেয়ে বলে,” বেলা কোথায়? ও এখনো ঘুম থেকে উঠে নি? “

মিরার কথা শুনে মেঘের মনটা বিষিয়ে গেল গতকাল রাতে ঘটনা মনে পড়ায়৷ মেঘ ভাবছে হয়তো একই টেবিলে বসে তার সাথে খেতে হবে এই জন্য হয়তো তার ছোট বোনটা খেতে আসছে না৷ তবে মেঘের সব ভাবনা ভুল প্রমান করে একজন মেইড বলে উঠলো,” ম্যাডাম বেলা আফা তো বাড়িতে নাই৷ ভোর বেলা  দেখলাম তার বড় লাগেজটা লইয়া বাইর হইয়া গেল৷” কথা টা শোনা মাত্র সবাই রিতিমত চমকে গেল৷ বেলা এত ভোর বেলা লাগেজ নিয়ে কোথায় যেতে পারে? এই চিন্তায় একে অন্যের মুখ দেখতে লাগলো৷ তখনি মেঘ সেই মেইডকে প্রশ্ন করে৷

” খালা যাওয়ার সময় বেলা আর কিছু বলে গেছে আপনাকে? মনে করে বলুন তো?”

মেইড একটু ভেবে বলে হয় মেঘ বাবা৷ বেলা আফা যাওনের সময় আমারে বললো , খালা কেউ যদি জানতে চায় আমি কোথায় চলে গিয়েছি তখন বলবেন৷ বেলা তার নিজের দেশে ফিরে গেছে৷” 

শাফিন চৌধুরী তার মেয়ের এমন কান্ডে অবাক হয়ে বললো,”মানে কানাডা চলে গেছে? কিন্তু কেন?” 

মায়রা চৌধুরী তার ছেলের মুখের দিকে না তাকিয়ে শাফিনকে বললো,” চিন্তা করো না ভাই বেলা মা সঠিক সময়ে ফিরে আসবে৷ হয়তো কোন আর্জেন্ট কাজ ছিলো ওদেশে তাই কাউকে না জানিয়ে ফিরে গেছে৷”

” কিন্তু ভাবি আমাদের তো একবার বলতে পারতো?”

” যা হয়ে গেছে তো হয়ে গেছে তুমি কি এখন কিছু করতে পারবে ভাই? “

” না ভাবি কিন্তু..”

” কোন কিন্তু নয় ভাই৷ বেলা মা সঠিক সময়ে ফিরে আসবে তোমরা চিন্তা করো না৷ খেয়ে নেও৷”

সব শুনে মেঘের গলা দিয়ে খাবার আর নামলো না৷ না খেয়েই উঠে গেল৷

২১.

                   সকালে নাস্তা করেই দুই ভাইবোন বেড়িয়ে পড়ে৷ রাফিদ রিক্সা করে কলেজে চলে যায় কারণ আজ বেশ দেরি করে ঘুম থেকে ওঠায় কলেজ যেতে লেট হয়ে গেল৷ আর ফারহা সব গুছিয়ে নিয়ে বের হওয়ার সময় দিদা এসে মরা কান্না জুড়ে দেয়৷  কারণ তার ছেলে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছে৷ হাসপাতালে ভর্তি করা প্রয়োজন হতে পারে৷ ফারহা হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারলো না৷ যে তার ছেলের এই অবস্থা করেছে তার কাছে এসেই কান্না জুড়ে দিলো৷ সব সামলে বের হতে হতে বেশ লেট হয়ে গেল ফারহার৷ দূর্ভাগ্য বসত অর্ধেক রাস্তা পর্যন্ত যেতেই আকাশের রঙ বদলাতে শুরু করলো কয়েক মুহূর্তে মধ্যে চারিদিক অন্ধকারে ছেঁয়ে গিয়ে ঝড় শুরু হলো৷ এই দূর্যোগে একটা রিক্সাও পাচ্ছে না৷ রাগে দুঃখে ফারহা দ্রুত পা চালালো৷ ফারহার চলার মাঝে হুট করেই একটা গাড়ি এসে ফারহার গা ঘেষে থামে৷ একটুর জন্য ফারহা হয়তো ছিটকে পড়লো না তবে রাগে গাড়ির জানালায় টোকা দিবে এমন সময় জানালার কাঁচ নামাতে ফারহা মেঘকে দেখে রাগের পরিমানটা যেন আরও তীব্র হলো৷ তবে মেঘের মুখে কোন রিয়েকশন দেখতে পেলো না ফারহা৷ পরক্ষণে গতকাল রাতের কথা মনে পড়তেই ঠোঁটের কোণে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো৷ মেঘ কোন ভনিতা ছাড়াই গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে বললো,” উঠে এসো ফারুপাখি৷”

” না আমি আপনার সাথে কোথাও যাচ্ছি না মিস্টার চৌধুরী৷”

” তর্ক করো না ফারুপাখি৷ গাড়িতে উঠে এসো না হলে বাধ্য হয়েই আমাকে নামতে হবে৷”

ফারহা এদিক-ওদিক তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে গাড়িতে উঠে বসবো৷ ফারহা গাড়িতে ওঠার পরই মেঘ গাড়ি স্টার্ট দেয়৷ ঝড়ের তীব্রতা যেন বেড়েই যাচ্ছে হঠাৎ ফারহা খেয়াল করে মেঘ তার ভার্সিটি ওভার টেক করে অন্য রাস্তা ধরে যাচ্ছে৷ আজ যে সে ভার্সিটিতে যেতে পারবে না ফারহার বুঝতে আর বাকি নেই৷

মেঘের অফিসের কাছাকাছি একটা ফ্লাট আছে৷ ওখানে শুধু মাত্র মেঘ যেতো৷ ফ্লাটটা মেঘ নিজেই কিনে ছিলো৷ যেটা তার বাবা মা কেউ জানে না৷ এর মাঝে ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি পড়তে লাগলো৷ আটতলা বিল্ডিংয়ে চতুর্থ তলায় মেঘের ফ্লাট৷ মেঘ বৃষ্টির ভেতর গাড়ি থেকে নেমে ফারহাকে কোলে তুলে নিয়ে বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করে৷ আচমকা মেঘের কান্ড দেখে ফারহা  হচকিয়ে যায়৷ মেঘ কী চাইছে বুঝতে পেরেই ফারহা চিৎকার করে বলতে লাগলো,” আমাকে কোল থেকে নামিয়ে দিন মিস্টার চৌধুরী৷ আপনি যা করছেন সেটা একদম ভালো করছেন না৷ আমাকে যেতে দিন বলছি৷”

ফারহার কথা যেন মেঘের কানে পৌছাচ্ছে না৷ মেঘ ফারহাকে কোলে নিয়ে লিফটে উঠে গেল৷ বলা বাহুল্য যে সে সময় কোন ফ্লোরে কেউ ছিলো না যে যার ফ্লাটে ছিলো৷ কেউ ফারহার গলার আওয়াজ পাইনি কারণ বাইরে তমুল বেঁগে বৃষ্টি পড়ছিলো৷ মেঘ চতুর্থ তলায় গিয়ে ফারহাকে কোল থেকে নামিয়ে হাত শক্ত করে ধরে থেকে দরজার লক খুলে ফেলে ফারহাকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে৷

রাগে থর থর করে কাঁপছে ফারহা৷ ফারহার এখনি ইচ্ছে করছে মেঘকে নিজ হাতে খুন করতে৷ মেঘ দরজা লক করে পকেটে চাবি রেখে গলার টাই টা আলগা করে ফারহাকে বলে,” সরি ফারুপাখি এভাবে তোমাকে না বলে তুলে নিয়ে আসার জন্য, কিন্তু কি করবো বলো? বললে তো তুমি ভালো মেয়ের মত আসতে না৷ তাই তো না বলে তোমাকে নিয়ে আসলাম৷  জানি তোমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে৷ হয়তো ইচ্ছে করছে আমাকে খুন করে ফেলতে তাই না?”

ফারহা দাঁতে দাঁত চেপে রাগটা সংবরণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ ফারহা চাচ্ছে না এই মুহূর্তে তার হাতে কোন অঘটন ঘটে যাক৷ এই মেঘ নামক লোকটাকে এতো ইজিলি মৃ’ত্যু ফারহা মটেও দিবে না৷ এতো বছর স্বামী সন্তান হারিয়ে যে যন্ত্রণা ফারহা ভোগ করেছে সে যন্ত্রনা যে মেঘকে সইতে হবে৷ তার আগে মৃ’ত্যু দেওয়ার কথা ফারহা ভাবতেও পারে না৷ 

ফারহার ভাবনার মাঝে মেঘ হুট করে ফারহার সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়ে হাত জোড় করে ফারহাকে বলতে লাগলো,” ফারুপাখি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেও৷ আমি অতিতে তোমার সাথে যা করেছি তার কোন ক্ষমা হয় না কিন্তু আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি ফারুপাখি৷ ভার্সিটিতে তোমাকে দেখার পর থেকে আমি তোমার সাথে নাটক করে এসেছি৷ কারণ আমি জানতাম তুমি মাঝে মাঝে পুরনো স্মৃতি ভুলে যেতে৷ আমি সেটারই সুযোগ নিয়ে তোমাকে প্রপোজ করি৷ কিন্তু তুমি রিজেক্ট করে দেও তখনি বুঝতে পেরেছি আয়াশ শুধু তোমার স্মৃতিতেই নেই, আয়াশ তোমার হৃদয়ের চিলেকোঠায় খুব যত্নে আগলে রেখেছো৷ ফারুপাখি আমি তোমাকে ভালোবাসি বড্ড বেশি ভালোবাসি৷ তোমাকে ছাড়া আমার বেঁচে থাকাই সত্যি খুব যন্ত্রনার তুমি বিহীন এই মেঘের কোন অস্তিত্ব নেই৷ ভালোবাসি তোমায় কেন বুঝো না তুমি? কেন আমাকে ভালোবাসতে পারো না ফারুপাখি? সে দিন সেদিন আয়াশ আর তোমার সাথে যা হয়েছে সেটার জন্য আমি দায়ী না৷ আমি শুধু মাত্র তোমাকে আটকাতে চেয়েছিলাম কিন্তু তখন কী থেকে কী হয়ে গেলো৷ আমি সবটা বুঝে ওঠার আগেই সবটা শেষ হয়ে গেলো৷”

ফারহা এতোক্ষণে নিস্তব্ধতা ভেঙে বলতে লাগলো,” আমার দূর্বলতার সুযোগ নিতে চেয়েছিলেন আপনি কিন্তু আফসোস সেটা আপনি নিতে পারেন নি৷ কিন্তু আজ আমাকে এখানে তুলে আনার কারণ টা জানতে পারি নিশ্চয়ই আপনার এই স্বীকারক্তি গুলো শুনাতে আনেন নি তাই অভিনয় না করে আমাকে কেন আপনার ফ্লাটে এনেছেন সেটা বলুন?”

মেঘ উঠে ফারহার মুখোমুখি দাড়িয়ে বলে উঠলো, “বিয়ে করতে৷”

.

.

.

#চলবে…..?

#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া

#লেখনীতে_ফারহানা_আক্তার_ছবি

#পর্ব_২০

.

.

🌺

পুরো ড্রইংরুম জুরে নিরবতা ছেঁয়ে আছে৷ ফারহা মেঘের কথা শুনে কোন রকম রিয়েক্ট করলো না৷ এটা দেখে মেঘ বেশ অবাক হয় কারণ বিয়ের কথা শোনা মাত্র ফারহা এতোক্ষণে সব কিছু ভেঙে চুড়ে ফেলার কথা কিন্ত ফারহা তেমনটা মটেও করলো না বরং মেঘের সামনে থেকে সরে গিয়ে সোফায় বেশ আরাম করে বসে মেঘের উদ্দেশ্যে করে বলতে লাগলো,” আপনার এমন চিপ জোকস আমার একদমিই পছন্দ হয় নি মিস্টার চৌধুরী৷ যদিও বা আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে না আপনি জোকস করছেন তবুও বলে রাখি মন দিয়ে শুনুন৷ আমি অতিতে যেমন আমার আয়াশকে ভালোবাসতাম , ঠিক তেমন বর্তমানেও ভালোবাসি আর ভবিষ্যৎ ভালোবাসবো৷ তাই অযথা আমার পেছনে সময় ব্যয় না করে আপনি আপনার নিজের কাজে মন দিন৷”

মেঘ ধীর পায়ে ছোট্ট ডাইনিং প্লেসে গিয়ে গ্লাসে পানি ঢেলে নিয়ে ফারহার সামনে গ্লাসটা এগিয়ে দিলো৷ ফারহাও সুন্দর ভাবে গ্লাসটা হাতে নিয়ে টেবিলের উপর রেখে মেঘ কে বললো,” এখন বলুন আপনি কী কারণে আমাকে আপনার ফ্লাটে নিয়ে এসেছেন?”

মেঘ একটু বিরক্ত হলো ফারহার প্রশ্নে তবুও আবারও সেই একি প্রশ্নের উওর দিলো৷

” বিয়ে করতে ফারুপাখি৷”  

ফারহা এবার বেশ রেগেই টেবিলের উপর থেকে গ্লাস টা নিয়ে মেঘের মুখে পানিটা ছুড়ে মেরে বলতে লাগলো,” আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিস না মেঘ৷ সহ্য করতে পারবি না আমার রাগটাকে, অনেক কষ্ট করে নিজেকে সামলে রেখেছি আমাকে বাধ্য করিস অন্য রুপটা দেখাতে বিশ্বাস কর এই রুপে যদি তোর জীবনে একবার প্রবেশ করি তাহলে চৌধুরী বংশ ধ্বং’সের একমাত্র কারণ আমি হবো৷ তার সাথে চৌধুরীর পরিবারের প্রত্যেকটা সদস্যদের ক’বরে শুইয়ে দিবো৷ “

ফারহার কঠোরতা, হিং’স্রতা দেখে মেঘ কয়েক মুহূর্তের জন্য ভুলেই গিয়েছিলো এই সেই নরম কোমল হৃদয়ের মেয়ে৷ যার মিষ্টি কোমলতা দেখেই সে তার ফারুপাখির প্রেমে পড়েছিলো৷ কিন্তু আজ যাকে দেখছে সে তার ফারুপাখি নয় তার আদলে থাকা এক কঠিন ভয়ংকর হিং’স্র নারী৷ 

” মিস্টার চৌধুরী দরজার লক খুলে দিন আমাকে যেতে হবে৷”

মেঘ এবার ধাতস্থ হয়ে আবারও সেই একি কথা বলে উঠলো,” প্রথমে আমাদের বিয়ে হবে ফারুপাখি৷ তারপর তুমি যেখানে ইচ্ছে যেতে পারো৷ আমি বাধা হয়ে দাড়াবো না৷” ফারহা নিজের রাগটা আর সামলাতে পারলো না আচমকা মেঘের গালে ঠাটিয়ে একটা থাপ্পর মেরে বসলো ফারহা৷ থাপ্পরের জোরটা এতো ছিলো যে মেঘের কানে যেন তন্দ্রা লেগে গেল৷ 

” তোকে বার বার সাবধান করার পরও তোর যখন বিয়ে করার শখ তাহলে আজ আমি তোর এই শখটা না হয় মিটিয়ে দিবো৷ “

ফারহা তার ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে কাউকে একটা কল দিয়ে বিয়ে এরেন্জমেন্ট করতে বলে কিন্তু তৎক্ষনাৎ মেঘ ফারহা ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে কল কেটে দিয়ে বলে,” এভাবে লুকিয়ে চুরিয়ে বিয়ে মেঘ চৌধুরী করবে না ফারুপাখি৷ আমাদের বিয়েটা হবে ধুমধাম করে৷ পুরো শহরকে জানিয়ে হবে৷ মেঘ উঠে দাড়িয়ে দরজার লক খুলে ফারহাকে বলতে লাগলো,” আমি জানি আমার উপর তোমার অনেক রাগ অভিমান জমে আছে৷ আমি তোমার হৃদয়ের কষ্ট গুলো ঠিক একদিন বিলিন করে আমার ভালোবাসার ফুল ফুটাবো ফারুপাখি৷ সেদিন তোমার হৃদয়ে আঙ্গিনায় জুড়ে এই মেঘের আনাগোনা থাকবে৷ কথা দিলাম তোমার হৃদয়ের গহীনে ঠিক একদিন আমি প্রবেশ করবো৷”

” সেদিন হবে আমার জীবনে শেষ দিন৷” কথাটা বলে ফারহা তার ব্যাগ ফোন নিয়ে ফ্লাট থেকে বের হয়ে লিফটে উঠলো৷ ফারহার পেছন পেছন মেঘ ও এলো৷ কেউ কারও সাথে বাক্য বিনিময় করলো না দুজনের মাঝে নিস্তব্ধতা বিরাজমান৷ লিফটের দরজা খুলে যেতে ফারহা লিফট থেকে বের হতে হতে মেঘের উদ্দেশ্যে বললো,” আর একপাও আমার পেছনে এগোবেন না মিস্টার চৌধুরী৷ ” 

থমকে গেল মেঘ সত্যি সত্যি আর এক পাও আগালো না মেঘ৷ তবে মেঘ দেখলো তার গাড়ি পাশে আর একটি বেশ দামী গাড়ি দাড়িয়ে আছে৷ ফারহা ঠিক ওই গাড়িটার সামনে দাড়াতে গাড়ির দরজাটা খুলে গেলো আর ফারহা গাড়িতে উঠে বসলো৷ মেঘ বেশ অবাক হয় এটা দেখে৷ গাড়িটার ভেতরে ফারহা ব্যতিত অন্য ব্যক্তিটাকে দেখার জন্য এক পা আগাতে দেখে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে মিনিটেই তার পরিসীমার বাইরে চলে গেল৷ তখনও টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছে৷ যদিও বা মেঘ বৃষ্টিতে ভিজতে না তবুও কেমন যেন তার ভেতরে ভেতরে অস্তিরতা কাজ করছে৷ আজকে ফারহা যে রুপ দেখেছে মেঘের হঠাৎ মনে হচ্ছে এই মেয়ে তার জীবনে সর্বনাসিনী হয়ে প্রবেশ করে সব কিছু ধ্বং’স করে দিবে না হয়ে ভালোবাসার সমুদ্দুরে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে৷

                ইতোমধ্যে পুরো এক বোতল ঠান্ডা পানি খেয়ে ফেলেছে ফারহা তবুও যেন তার রাগটা কমছে না৷ আদিল চেষ্টা করছে তার আপার রাগটা কমানোর কিন্তু যতোবারই কথা বলার চেষ্টা করছে ঠিক ততোবারই ফারহার রক্ত চক্ষু দেখে চুপ হয়ে গেছে৷ ফারহা এবার পানি খেতে খেতে নিজ থেকে বলতে লাগলো,” ওই দিকের কী খবর?”

” তোর কথা মত সব জায়গায় লোক লাগিয়ে দিয়েছি আপা৷ আর একটা খবর হলো আজ সকালে পুলিশ ভার্সিটির পেছনের দিঘি থেকে গাড়ির সাথে ওই লোক গুলোর ডেডবডি তুলে ফেলেছে৷ আর আশ্চর্যের বিষয় হলো সেদিনকার কোন সি সি ক্যামেরার ফুটেজ নেই ৷ মানে রেকর্ড হয়নি৷ পুরো ভার্সিটিতে লাগানো ক্যামেরা গুলো বন্ধ ছিলো তাই পুলিশ কোন ক্লু খুজে পায়নি৷”

” গাঁধা মিলন হাওলাদার এতটাও বোকা না যে মেয়ে গুলো তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে আর প্রমাণ গুলো সামনে ফেলে রাখবে৷ আমি এগুলো আগেই জানতাম তাই এগুলো নিয়ে আমি আর মাথা ঘামাই নি৷”

” উফফ কি বুদ্ধি আপার,সব কিছু কি করে সামলে নেয়৷ বাট আজ ওই মেঘের ভাগ্য ভালো ছিলো আপা ওকে নিজের হাতে খুন করেনি৷ আপা যে কী চায়ছে আমি সত্যি বুঝতে পারছি না তবে একবার এ দেশ থেকে তোকে নিয়ে যেতে পারলে কখনো এই পোড়া দেশে তোকে আসতে দিবো না৷ এখানে কষ্ট ছাড়া আর কিছুই তোর জন্য অবশিষ্ট নেই৷” নিজের মনে মনে কথা গুলো বললো আদিল৷

            দুটো ক্লাস শেষ তবুও বেলাকে আসতে না দেখে রাফিদের মনটা কেমন যেন কু ডাকছে৷ সকাল থেকে একশ বার বেলাকে কল করেছিলো কিন্তু যতবার কল দিয়েছে ঠিক ততবার এক বিরক্তিকর নারী কন্ঠ বার বার একই কথা বলে গেছে৷ বেলার ফোন বন্ধ দেখে রাফিদের চিন্তা যেন আরও এক ধাপ বেশি হলো৷ কোন ভাবে তৃতীয় ক্লাস শেষ করে বেলার ভাবনায় বিভোর হয়ে রাফিদ বাড়ি দিকে ফিরতে লাগলো৷ আজ যে তার কোন কাজে মন বসছে না৷ 

আদিল ফারহার গাড়িটা আবাসিক এরিয়া ছাড়িয়ে যাওয়ার পর পর একটা বড় ট্রাক দ্রুতগতিতে তাদের পেছনে আসছে৷ আদিল গাড়ি সাইডে নিলেও ট্রাকটা এগিয়ে না গিয়ে তাদের গাড়ির পেছনে রইল আর দ্রুত গতিতে আগাতে লাগলো৷ আদিল ফারহার বুঝতে বাকি নেই যে এটা তাদের শত্রুদের মধ্যে একজনের কাজ৷ 

—“পিচ্চি তুই পেছনের সিটে যা আমাকে গাড়ি চালাতে দে৷”

–” কিন্তু দি৷”

–” কোন কিন্তু নয় পিচ্চি ট্রাকটা আমাদের দিকে আসছে৷ দ্রুত ড্রাইভিং সিট থেকে সরে যা৷”

আদিল তাই করলো৷ ফারহা ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিলো৷ তখনি ফারহা খেয়াল করে সামনে থেকে আর একটি ট্রাক আসছে৷ পেছনে সামনে দুদিকে বিপদ ফারহা আদিলকে বাঁচতে হলে এখন দুটো  উপায় আছে এক. গাড়ি থেকে লাফিয়ে বের হয়ে যাওয়া আর দুই হলো… কাটা দিয়ে কাটা তোলা৷ ফারহা দ্বিতীয় রাস্তাটা বেছে নিলো৷ প্রচন্ড গতিতে গাড়ি চলছে সামনে তিন রাস্তার মোড় ফারহা দ্রুত গতিতে ট্রাকের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আর সামনের  এবং পেছনের ট্রাকটা তাদের দিকে এগিয়ে আসছে৷ আচমকা বিকট শব্দে দুটো গাড়ির সংঘর্ষে ব্লাস্ট হলো গাড়ি দুটো৷ চারিদিকে কালো ধোয়ায় ছেয়ে গেছে৷  সাধারণ জনগন ভয়ে জ্বলন্ত গাড়ির দিকে না গিয়ে দুরে দাড়িয়ে দেখছে৷ ইতোমধ্যে পুলিশ এসে হাজির হয়৷ অন দা স্পটে যারা ছিলো তারা সবাই মারা গেছে৷ রিপোটার খবর টা নিউজে প্রচার হতে লাগলো৷ এদিকে শাফিন চৌধুরী তার লোকদের একের পর এক কল করে যাচ্ছে কিন্তু কোন ভাবেই তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না৷ তখনি মিরা ছুটে এসে শাফিনকে উদ্দেশ্য করে বলে,” শাফিন তুমি নিউজ দেখেছো? “

” না মিরা কেন কী হয়েছে?”

মিরা কথা না বারিয়ে দ্রুত টিভি অন করে নিউজ চালালো৷ শাফিন নিউজ দেখে ধপ করে বসে পড়লো চেয়ারে৷ মিরা শাফিনের কাছে যেতে শাফিন বলতে লাগলো,” এই বার, এই বারও মেয়েটা বেঁচে গেলো৷ “

” হ্যাঁ শাফিন মেয়েটা বেঁচে গেল কী করে? তোমার প্লান অনুযায়ী দুদিক দিয়ে গাড়ি এ্যাটাক করলে মেয়েটার বাঁচার কথা না কিন্তু মেয়েটা ঠিকি বেঁচে গেল আর মরলো তোমার লোকেরা৷ ট্রাক দুটো সংর্ঘষে আগুন লেগে সবাই মরে গেছে৷”

শাফিন যেন এবার নিজের হার মেনে নিলো৷ ফারহাকে শেষ করা যে তার পক্ষে সম্ভবপর নয় এটা ঠিক বুঝে গেছে৷ 

২২.

—-” স্যার আপনার ফোন৷ দুবাই থেকে শেখ সাহেব দিয়েছে৷”

শেখ সাহেব নামটা শুনে মিলনের বুকের ভেতর ধক করে উঠলো৷ একে তো মাল ডেলিভারি দিতে পারি নি তার উপর এ্যাডভান্স টাকা গুলো ফেরত দিতে পারেনি৷ এখন কি বলবে শেখ সাহেব কে ভাবতেই গলা যেন শুকিয়ে এলো মিলনের৷ কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা নিয়ে কানে ধরলো মিলন৷ মিলন হ্যালো বলার সাথে সাথে ফোনের ওপাশ থেকে এক হংকার শুনতে পেলো মিলন৷ 

                 আদিল আজ ফারহাকে নিয়ে তার ফ্লাটে চলে গেলো৷ রাফিকেও মেসেজ করে এখানে আসতে বলে দেয় আদিল৷ ফারহা তার নির্ধারিত রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে ড্রইংরুমে এসে বসে ততক্ষণে আদিল তার আপার প্রিয় নুডুলস বানিয়ে ফেলে৷ 

” এই নে আপা খেয়ে নে৷ কম সময়ে শুধু এতটুকুই করতে পেরেছি৷”

ফারহা মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলতে লাগলো,” তুই খুব ভালো করেই জানিস নুডুলস আমার ফেবারিট৷ এটা হলে আমার আর কিছু চাই না৷ তোর টা কোথায়?”

” এই তো আনছি৷” 

ফারহা খেতে খেতে আদিলকে বলতে লাগলো৷ পিচ্চি সামনে আমার জন্য এক মহাযুদ্ধ অপেক্ষা করছে৷

” আপা তোর কথার মানে টা আমি ঠিক বুঝলাম না৷”

“আমার মনে হয় মেঘ চৌধুরী আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে আমাকে বিয়ে করার জন্য উঠে পরে লাগবে৷”

“ওয়াট! বিশ্বাস কর আপা এই মেঘ কে আমি জানে শেষ করে দিবো৷” 

” উহু না পিচ্চি জানে আমি মারবো না মেঘকে৷ ওকে তো আমি ধুকে ধুকে মারবো৷ “

” কী ভাবে আপা?”

” বলবো তার আগে তোকে একটা কাজ করতে হবে৷”

” কি কাজ?”

ফারহা খেতে খেতে তার প্লানটা আদিলকে বুঝিয়ে দিলো৷ ফারহার প্লান শুনে আদিল বলতে লাগলো,” আপা তুই তো জিনিয়াস৷ তোর প্লান মত চললে সাপও মরবে আর লাঠিও ভাঙবে না৷ 

আকাশে কালো মেঘ গুলো সরে গিয়ে তারা গুলো জ্বল জ্বল করছে৷ চারিদিকে শীতল বাতাস প্রবহমান৷ মেঘ কিছুক্ষণ আগে ফ্লাট ছেড়ে বাড়িতে ফিরে আসে৷ বাড়িতে ঢুকতেই মায়রা চৌধুরীর মুখোমুখি হয়৷ মেঘ তার মা’কে কিছু বলতে নিলে মায়রা চৌধুরী মুখ ফিরিয়ে অন্যত্র চলে যায়৷ মেঘের মুখে অন্ধকারে ছেঁয়ে যায়৷ মেঘ মন খারাপ করেই তার রুমে চলে যায়৷ 

মায়রা না তার ছেলের সাথে কথা বলছে আর না তার স্বামী শাফায়াতের সাথে কথা বলছে৷ সে রাতে তার স্বামীকে চেপে ধরার পর পরই শাফায়াত সবটা খুলে বলে মায়রাকে৷ সবটা শুনে মায়রা চৌধুরী কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলো৷ তিনি যেন নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছিলো না৷ তার স্বামী সন্তান একটা মেয়ের স্বামী সন্তান সংসার সব কিছু ধ্বংস করে দিলো৷ একটা মেয়ে হয়ে মায়রা চৌধুরী কিছুতেই মানতে পারছে না৷ একরাশ ঘৃনা হতাশা তার স্বামীর দিকে নিক্ষেপ করে বলে,” ছিঃ আমার ভাবতেও ঘৃনা হচ্ছে তুমি আমার স্বামী শাফায়াত৷ তুমি মেঘ আর আশরাফ ভাই তোমরা কি ভাবে পারলে মেয়েটার জীবনটা ধ্বংস করলে? তোমরা কি মানুষ? তোমাদের শরীরে কী মানুষের রক্ত নাকী কোন পশুর রক্ত ?”

” মায়রা মুখ সামলে কথা বলো৷”

মায়রা শাফায়াতের কথার পিঠে শুধু একটা কথাই বললো,” তোমরা যা করেছো তার বিচার উপরে যে আছেন সে করবে৷ মনে রেখো আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না৷” 

সে রাতের পর থেকে মায়রা তার স্বামী এবং সন্তানের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলো৷ 

            পরেরদিন সবাই একত্রে ডাইনিং টেবিলে বসে নাস্তা করছিলো তখনি শাফায়াত চৌধুরীর ফোনটা বেজে ওঠে৷ ম্যানেজারের নাম্বার দেখে শাফায়াত কল রিসিভ করে কানে ধরতে ফোনের ওপাশ থেকে যা বললো তা শুনে শাফায়াত চৌধুরী আতঁকে ওঠে হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেল৷ 

.

.

.

#চলবে………..

#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া

#লেখনীতে_ফারহানা_আক্তার_ছবি

#পর্ব_২১

.

.

🌺

পরেরদিন সবাই একত্রে ডাইনিং টেবিলে বসে নাস্তা করছিলো তখনি শাফায়াত চৌধুরীর ফোনটা বেজে ওঠে৷ ম্যানেজারের নাম্বার দেখে শাফায়াত কল রিসিভ করে কানে ধরতে ফোনের ওপাশ থেকে যা বললো তা শুনে শাফায়াত চৌধুরী আতঁকে ওঠে হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেল৷ 

” ভাইজান কী হয়েছে? তোমকর চোখ মুখ এমন লাগছে কেন?”

” ড্যাড কিছু তো বলো কী হয়েছে?”

শাফায়াত চৌধুরী গ্লাসে থাকা পানি টুকু খেয়ে দম নিয়ে বললো,” আমাকে এখুনি ফ্যাক্টরিতে যেতে হবে মেঘ৷”

” কী হয়েছে বলবে তো?”

” আ’গুন আ’গুন লেগেছে ফ্যাক্টরিতে, সব মাল আ,গুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে মেঘ৷ আমি সর্বশান্ত হয়ে গেলাম৷”

” ড্যাড কিচ্ছু হয়নি৷ আমি এখুনি চেন্জ করে আসছি৷” মেঘ নিজের রুমে গিয়ে চেন্জ করে নিচে এসে দেখে তার চাচা বাবা দুজনে তৈরি৷ তিনজনই দ্রুত রওনা হয়ে গেল ফ্যাক্টরির উদ্দেশ্য৷

“আপা নিউজটা শুনেছিস?”

চায়ের কাঁপে চুমুক দিয়ে ফারহা আদিলের কথার জবাব দিলো,” শুনেছি৷ যে অর্থ সম্পত্তির অংহকারের আমার জীবন নষ্ট করেছে৷ তাদের পতনের সময় হয়ে এসেছে পিচ্চি৷”

” আপা আমার একটা প্রশ্ন ছিলো৷”

” কি প্রশ্ন?”

” মেঘের বাবা শাফায়াত চৌধুরীর কোম্পানির সাথে ফুফা মানে আশরাফ খান এর সম্পর্ক কী?”

ফোনের ওপাশ থেকে আদিলের প্রশ্ন শুনে ফারহা মুচকি হেসে বললো,” শাফায়াত চৌধুরী আর আশরাফ খান  এরা দুজন বিজনেস পাটর্নার পিচ্চি৷ তাই এই কোম্পানি বা ফ্যাক্টরির ক্ষতি হওয়া মানে দুজনের ক্ষতি হওয়া৷ এখন তুই তাদের কে কিনে নে যারা এদের কাঁচামাল সাপ্লাই করে৷ আর এদের লসের খবরটা শেয়ার মার্কেটে ছড়িয়ে দে৷”

“তারপর?”

” তারপর? তারপর না হয় নিজেই দেখতে পাবি পিচ্চি৷” কথা গুলো বলেই রহস্যময়ী হাসি দিলো ফারহা৷

কখনো রোদ কখনো বৃষ্টি শ্রাবণ মাসে এমনটাই হয়ে থাকে৷ কিন্তু এখন মুশলধারে বৃষ্টি হওয়ায় ড্রাইভ করতে বেশ কষ্ট হচ্ছে মেঘের অন্যদিকে তার বাবা আশরাফ খান কে ফোন করে সবটা জানাতে তিনি জানান , তিনি শহরের বাইরে আছে এবং খুব শীগ্রই ফিরে আসবে৷ ততক্ষণে যেন সবটা তারা সামলে নেয়৷ 

এদিকে আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রনে ফায়ার সার্ভিস আনলেও যা যা ক্ষ,তি হওয়ার সেটা হয়ে গেছে৷ চারিদিকে শুধুমাত্র ধ্বং,সাবশেষ পড়ে আছে৷ শাফায়াত চৌধুরীর চোখ ফেটে যেন কান্না পাচ্ছে৷ তার এত বছরের কষ্ট করে গড়ে তোলা ফ্যাক্টরি আজ ধ্বং,স হয়ে গেল৷ অন্য দিকে এখনো ব্যাংক ঋন নিয়েছিলো ১০০ কোটি টাকা নেক্টস প্রজেক্টের জন্য সেটাও এখনো পরিশোধ হয়নি৷ শাফায়াত চৌধুরী টেনশনে স্টোক করে বসে৷ 

২৩.

ফারহা তৈরি হয়ে বের হবে তখন রাফিদকে দেখে ফারহা ভ্রু-জোড়া কুচকে রাফিদকে বলে,” কলেজে যাস নি?”

রাফিদ আস্তে করে উওর দেয়৷ 

” মাথা ব্যাথা করছে দি তাই আজ কলেজে যাই নি৷”

ফারহা রাফিদের পাশে বসে বলে,” সত্যি করে বলতো রাফিদ সত্যি মাথা ব্যাথা করছে নাকি হৃদয়ে ব্যাথা করছে?”

রাফিদ আর লুকালো না ফারহার কাছে সত্যি টাই বললো,” দি আমি বেলাকে সত্যি ভালোবেসে ফেলেছি৷ ওকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না৷”

ফারহা মুচকি হেসে রাফিদের মাথায় হাত রেখে বললো,” চিন্তা করিস না বেলা তোরই হবে৷ কথা দিলাম৷”

রাফিদের জন্য এতটুকু কথাই যথেষ্ট ছিলো তার মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলার৷ রাফিদ হাসি মুখে রেডি হয়ে কলেজে বেরিয়ে গেল৷ ফারহাও রাফিদের বের হওয়ার পর পর দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে গেল৷ 

মেইন গেট দিয়ে বের হওয়ার পর পর একটা গাড়ি এসে ফারহার সামনে থামে৷ ফারহা চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসতে গাড়ি স্টার্ট দিলো৷ 

শহরে একের পর এক খু,ন হচ্ছে কিডন্যাপ হচ্ছে পুলিশ এখনো খুনিকে ধরতে পারেনি৷ পুলিশ সম্পর্কে যা নয় তাই বলছে মিডিয়া৷ পুলিশ কমিশনার কেসটা নিয়ে প্রচন্ড ডিস্টার্ব আছে৷ কি করবে বুঝতে পারছে না৷ এর মধ্যে দরজায় নক পড়তে কমিশনার মেঘকে দেখতে পেয়ে একটু স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে বলতে লাগলো,” মেঘ খুন কিড,ন্যাপিং  কে করছে? এগুলো জানতে পেরেছো?”

” অনেকটা জানতে পেরেছি স্যার এখন শুধু হাতে নাতে ধরার অপেক্ষা৷”

” তাহলে তোমার পুলিশের চাকরি ছাড়ার নাটকটা করা বিফলে যাইনি ঠিক তো?”

” জ্বী স্যার৷ এটা তো মাত্র খুনি টোপ দিয়েছি৷ যার জন্য খু,নি ওভার কন্ফিডেন্স দেখাতে গিয়ে নিজের করা কাজ গুলোর প্রমান রেখে গেছে৷”

” তোমার বুদ্ধির তারিফ না করে পারছি না মেঘ৷ তুমি সত্যি আমাদের ডিপার্মেন্টের গর্ব৷”

” স্যার আমি দুদিনের জন্য ছুটির আবেদন করছি৷ দুইদিন পর আসল অপরাধী আপনার সামনে নিয়ে আসবো৷”

” অলরাইট মেঘ৷ তোমার দুইদিনের ছুটি মঞ্জুর করলাম৷”

” আসছি স্যার৷”

মেঘ হেড কোয়ার্টার থেকে বের হওয়ার পর পর একটা লোক আড়ালে চলে গেল৷ 

ফারহা তার গোপন ডেয়ার বসে আছে৷ চোখে মুখে অসম্ভব রাগ ফুটে আছে৷ সামনে তিনটে মেয়ে ভয়ে রুমের এক কোণে বসে আছে৷ মেয়ে গুলোকে ফারহা ছেড়ে দিয়ে ছিলো৷ সেই মেয়ে গুলো কে মেঘ আজ তার জেরার মুখে ফেলেছিলো৷ মেয়ে গুলো মেঘের কঠিন জেরার মুখে পরে  সবটাই বলে দিয়েছে তবে ফারহার নামটা বলার সাহস হয়নি৷ তার আগেই ফারহার লোকেরা মেয়ে গুলোকে সরিয়ে ফেলে৷ ফারহা এটা ভেবে পাচ্ছে না যার বাবা হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে সে কি না এখন আসামী ধরতে এসেছে৷ বাহ এই হচ্ছে সত দায়িত্বশীল সাহসী পুলিশ অফিসার৷ যে কী না নিজের দায়িত্ব থেকে একচুল নরছে না কিন্তু মিস্টার অফিসার যখন আমার সাথে খেলতে চাইছে তখন না হয় তার সাথে একটু খেলি৷ আমাকে ধরবে তাই না? এবার দেখি কে জিতে আর কে হারে৷ 

ফারহা তার লোকদের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,” আপনাদের ঠিক কী করতে হবে নিশ্চয়ই জানেন?”

” ইয়েস ম্যাম৷ আপনি চিন্তা করবেন না আমরা বাকি টা সামলে নিবো৷ “

ফারহা মেয়ে গুলোর দিকে আ,গুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে ডেরা থেকে বেরিয়ে গেল৷ 

         আশরাফ খান হসপিটালে আসতে রিপোটার তাকে ঘিরে ধরে নানা রকম প্রশ্ন করতে থাকে৷ আশরাফ খানের পিএ তাদের কে সরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে৷ আশরাফকে দেখে মায়রা কোন টু-শব্দ করলো না৷ শাফায়াতের কেবিনের বাইরে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো তার স্বামীর সুস্থ হবার আশায়৷ শাফিন আশরাফকে দেখে তার কাছে গিয়ে ভাইয়ের জন্য কাঁদতে লাগলো৷ মিরা তার স্বামীর কুমিরের কান্না দেখে মনে মনে তার স্বামীকে বাহবা দিতে লাগলো৷ এত ভালো অভিনয় তার স্বামী যে করতে পারে এটা মিরা ধারনা করতে পারে নি৷

আশরাফ খান শাফিনকে শান্ত করে  মিসেস মায়রার কাছে যায়৷ মিসেস মায়রা আশরাফকে দেখে কোন কথা বলে অন্য দিকে ফিরে রইল৷ আশরাফ মায়রার এমন বিহেব দেখে কিছুটা অবাক হয় কারণ মায়রা কখনো তার সাথে এমন আচরণ করেনি৷ আশরাফ মায়রার পাশে বসে বলে বোন চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে৷ মায়রা এবার মুখ খোলে বলে,” সব ঠিক হয়ে যাবে? কী করে ঠিক হবে ভাইজান? আপনি আপনার বন্ধু আর মেঘ মিলে একটা অসহায় মা মরা মেয়ের সাথে যা করেছেন তার কী কোন বিচার হবে না বলছেন?”

” মানে কী বলছো বোন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না৷” 

” আপনারা তিনজন ফারহার সাথে ঠিক কী কী করেছেন তা কী আপনার মনে আছে ভাইজান? দেখুন পাপের শা,স্তি আল্লাহ আপনাদের দেওয়া শুরু করে দিয়েছে তার সব চেয়ে বড় প্রমান আপনার বন্ধু, দেখুন এই হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে৷”

আশরাফের মুখে কোন কথা নেই৷ সে জানে সে যা করেছে কোন মেয়ে কোন মা কোন স্ত্রী তাকে ক্ষমা করবে না৷ আশরাফ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো৷

” আমিও যে শাস্তি পাচ্ছি বোন৷ আমার একমাত্র মেয়ে যে কী না কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালকিন সে কী ভাঙ্গাচোরা এক চিলেকোঠায় থাকছে৷ নিজেকে এতিম বলে পরিচয় দিচ্ছে যেখানে তার জন্মদাতা পিতা এখনো বেঁচে আছে৷ আমার মেয়ে আমাকে বাবা পর্যন্ত বলে না গত চার বছর ধরে৷ এটা কি আমার জন্য শাস্তি নয়?

মায়রা তাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে বলে,” এটা অতি সমান্য শাস্তি ভাইজান৷ আপনারা যা করেছেন তার কোন ক্ষমা হয় না৷ আর এই শাস্তি তো কিছুই না৷” মায়রার কথা শেষ হতে না হতে আশরাফের পিএ হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে বলে,” স্যার সর্বনাস হয়ে গেছে আপনার বড় ক্যামিকেল ফ্যাক্টরিতে  আ,গু,ন ধরে গেছে৷ ইতোমধ্যে পনেরো জন শ্রমিক নিহত হয়েছে আর চল্লিশ জন আহত হয়েছে৷ তাদের কে হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে৷”

পিএ যা বললো তা শুনে আশরাফ খান আর বসে থাকতে পারলেন না দ্রুত ফ্যাক্টেরিতে যাওয়ার জন্য উঠে দাড়ালো তখনি মায়রা বলে ওঠে,” দেখুন ভাইজান যে সম্পত্তির অহং,কারে আপনি দুটো প্রাণকে বিনাকারণে শে,ষ করে দিয়েছেন তার পাপের শা,স্তি শুরু হয়ে গেছে৷ আপনাদের অহং,কার আজ আগুনে ছাই হয়ে যাচ্ছে৷ দ্রুত গিয়ে সে আগুন থেকে নিজেদের অহং,কার বাঁচাতে পারেন কী না দেখুন ভাইজান৷” 

আশরাফ খান আর একমুহূর্ত না দাড়িয়ে চলে গেল এদিকে শাফিন আর মিরা দুজনে হতবাক হয়ে মায়রার দিকে তাকিয়ে রইল৷

২৪.

               ফারহার কথা মত মেয়ে গুলোকে আবার তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে দেয়৷ মেঘ যেহেতু দুদিনের ছুটি নিয়েছে তাই মেঘ সরাসরি কাজে  অংশ না নিয়ে ফোনে তার টিম কে ইন্সট্রাকশন দিয়ে আসছে৷ অন্যদিকে হুট করে মিলন হাওলাদার মিসিং ওনাকে কোথাও খুজে না পেয়ে মৃ’ত ইমাম হাওলাদারের স্ত্রী থানায় এসে অভিযোগ জানায়৷ 

শাফায়াত আপাদতো বিপদ মুক্ত রয়েছে কথা শোনা মাত্র শাফিন চৌধুরীর মুখটা অন্ধকারে ছেঁয়ে গেলো৷ কিন্তু বিপদ যেন তাদের পিছু ছাড়ে নি৷ একের পর এক অঘটন তাদের ফ্যাক্টেরিতে ঘটে যাচ্ছে৷ মেঘ হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে সমস্যা গুলো সামলাতে৷ সেদিনটা পুরো কেটে গেলো৷ মেঘ একমিনিটের জন্য বসার সুযোগ পায় নি৷ এদিকে আদিল ফারহার কথা মত সব কাজই প্রায় শেষ করে ফেলেছে এখন শুধু সেই শুভ মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছে দুজনে৷ 

রাত প্রায় দুটোর কাছাকাছি ফারহা তখন লাইট নিভিয়ে ল্যাপটপে কোন কাজ করছিলো৷ হঠাৎ করেই বাইরে দমকা হাওয়া আর আকাশে বজ্রপাতের শব্দে পুরো বাড়ি যেন কেঁপে কেঁপে উঠছে৷ ফারহা ফোনের ফ্লাশ জ্বালিয়ে ধীর পায়ে বেলকনিতে গিয়ে দাড়ায়৷ চারিদিক নিস্তব্ধ অন্ধকারে ছেঁয়ে আছে৷ ফারহা প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নিচ্ছে৷ বেলী ফুলের ঘ্রানে চারিদিকে মৌ মৌ করছে৷ ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে ফারহা ঠিক ভাবে বৃষ্টি ছুতে পারছে না বিধায় ঠোঁট ফুলিয়ে ভেতরে যেতে নিলে হঠাৎ সোডিয়াম লাইটের আলোয় কাউকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ফারহা চমকে যায়৷ এতো রাতে কেউ একজন এভাবে রাস্তায় কে দাড়িয়ে থাকবে? ফারহার মনে বেশ সন্ধেহ হয়৷ ফারহা আর একটু ভালো করে তাকিয়ে দেখে  দাড়িয়ে থাকা ব্যাক্তিটি আর কেউ নয় মেঘ৷ বৃষ্টির বেগ সময়ের সাথে সাথে যেন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ ফারহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছাতা নিয়ে রুম থেকে বের হয়৷ 

” আপনি এত রাতে এখানে কী করছেন মিস্টার চৌধুরী?”

মেঘ কিছু না বলে হুট করে ফারহাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো,” ভালোবাসি ফারুপাখি৷ বড্ড ভালোবাসি তোমায়, আমাকে ছেড়ে কখনো চলে যাবে না তো ফারুপাখি? বলো আমাকে ছেড়ে যাবে না তো?” ফারহার আর সহ্য হলো জোর করে নিজের থেকে মেঘকে সরিয়ে দিলো৷ মেঘ হঠাৎ ঝাপটে ধরায় ফারহার হাত থেকে ছাতা টা পড়ে যায়৷ মেঘের সাথে সাথে ফারহাও বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে৷ ফারহা সে দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে মেঘের দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো,” আমি কখনো আপনাতে জড়িয়েছি যে ছেড়ে চলে যাবো মিস্টার চৌধুরী? আপনার ভালোবাসা হয়তো আমি কিন্তু আমার ভালোবাসা আপনি নন৷ তাই ভবিষ্যতে আমাকে জড়িয়ে ধরার স্পর্ধা করবেন না মিস্টার চৌধুরী৷ যদি করেন আই সোয়্যার আপনার ওই বুকে আমি আ,গুন জ্বালিয়ে দিবো৷” কথা গুলো বলে ফারহা চলে যেতে নিলে মেঘ ফারহার হাত চেপে ধরে পেছনে মুড়ে বলে,” ভালোবাসি বলে তোমায় এত ছাড় দিচ্ছি ফারুপাখি৷ আমাকে বাধ্য করো না এমন কিছু করতে যা তুমি কখনো কল্পনাও করবে না৷” ফারহা ত্যাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে মেঘ কে বলে,” এই তো আপনার আসল রুপে ফিরে এসেছেন৷ তো বলুন কী করবেন আপনি?”

” তেমন কিছু না তোমার প্রিয় মানুষ গুলোকে একটু কষ্ট দিবো৷”

ফারহা ঠোঁটের কোণে ক্রুর হাসি৷ মেঘ সে হাসি দেখে বেশ সংঙ্কিত হলো৷

” তাই মিস্টার চৌধুরী আপনি আমার প্রিয় কাছের মানুষ গুলোকে কষ্ট দিবেন তাই তো?”

” ওকে ডান কষ্ট দিয়ে দেখান৷ আমিও দেখতে চাই অফিসার মেঘ চৌধুরীর কত ক্ষমতা৷” মেঘ ফারহার হাত ছেড়ে দিয়ে ফারহাকে বললো……

.

.

.

#চলবে………..

#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া

#লেখনীতে_ফারহানা_আক্তার_ছবি

#শেষপর্ব

.

.

🌺

ফারহা ঠোঁটের কোণে ক্রুর হাসি৷ মেঘ সে হাসি দেখে বেশ সংঙ্কিত হলো৷

” তাই মিস্টার চৌধুরী আপনি আমার প্রিয় কাছের মানুষ গুলোকে কষ্ট দিবেন তাই তো? ওকে ডান কষ্ট দিয়ে দেখান৷ আমিও দেখতে চাই অফিসার মেঘ চৌধুরীর কত ক্ষমতা৷” মেঘ ফারহার হাত ছেড়ে দিয়ে ফারহাকে বললো,” আগামীকাল তৈরি থেকো ফারুপাখি৷ আগামীকাল আমরা বিয়ে করছি৷”

ফারহা মুখে রহস্যময় হাসি দিয়ে মেঘকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,” ডান মিস্টার চৌধুরী৷ আমি বধু সেজে তৈরি থাকবো কিন্তু আপনি বিয়ের করতে আসবেন তো?”

মেঘ চমকালো ফারহার কথা শুনে তবুও সেটা মুখে প্রকাশ না করে দৃঢ় গলায় বলে উঠলো,” আসবো৷ ” 

মেঘ আর কিছু বললো না ধীরে ধীরে অন্ধকারে হারিয়ে গেল৷ ফারহা রাস্তা থেকে ছাতাটা তুলে নিয়ে ধীরে ধীরে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেল৷ 

কাক ডাকা ভোর বেলায় ফোনের কর্কশ আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে গেল ফারহার৷ বিছানা হাতরে ফোন খুজে কল রিসিভ করে কানে ধরতে ফোনের ওপাশ থেকে একটা কন্ঠস্বর শুনে ফারহার চোখের ঘুম যেন উড়ে গেল৷ ফারহা কথা বললো না চুপ করে ফোনের ওপাশে থাকা মানুষটার কথা শুনে গেল নিরবে৷ কিছুক্ষণ পর ফোনের ওপাশ থেকে কোন আওয়াজ শুনতে না পেয়ে ফারহা বুঝলো কল কেটে গেছে৷ তবুও কিছুক্ষণ ফোনটা ধরে বসে থাকে৷ 

ফারহা ফ্রেস হয়ে নিজের হাতে রাফিদের জন্য নাস্তা বানালো৷ রাফিদ নাস্তা করতে এসে নিজের পছন্দ  মত খাবার দেখে বেশ অবাক হয়৷ আলুর পরোটা, হালুয়া, মাংস ভুনা, আর আচারে খিচুড়ি ৷

“দি আজ এত কিছু তুই বানিয়েছিস?”

” না পাশের বাসার আন্টি বানিয়েছে৷ এত কথা না বলে ঝটপট খেয়ে নে তো৷”

ফারহা আজ নিজের হাতে রাফিদকে খাইয়ে দিলো৷ রাফিদের মনটা যেন আজ কেমন করছে৷ তার দি’কে হারিয়ে ফেলার এক তীব্র ভয় তার মনে কাজ করছে ৷ তবুও তার দি’কে বুঝতে দিলো না৷ ফারহারাফিদ কে খাইয়ে দিয়ে বলতে লাগলো,” ছোটু আগামী সপ্তাহে বেলা বাংলাদেশে আসবে৷ তখন তোরা রেজিস্ট্রি করে রাখিস৷ তোদের পড়ালেখা শেষ হলে বড় করে আয়োজন করে বিয়ে করিস আর শোন এই বাড়িটা যেন এমনটাই থাকে৷ যদি কখনো বাড়িটা ভাঙ্গার  প্রয়োজন হয় তাহলে তুই সে দায়িত্ব নিয়ে বাড়ির কাজ সম্পূর্ণ করবি৷ আর দাদু দিদা কে নিজের সাথে রাখবি৷ আর একটা কথা ফুফির যাবতীয় সম্পত্তির দলিল ব্যাংকের লকারে আছে আর চাবিটা আমার আলমারির উপরের কাপড়ের ভাজে আছে৷ আর…..” বাকিটা বলার আগে রাফিদ বলে উঠলো,” দি কি হয়েছে আজ তোর? এত কিছু আমাকে কেন বলছিস? এমন ভাবে বলছিস যেন তুই কোথাও চলে যাবি আর যাওয়ার আগে সবটা আমাকে বুঝিয়ে দিয়ে যাচ্ছিস উদ্ভুত৷” রাফিদের কথার বিপরীতে ফারহা শুধু হাসলো৷ এই হাসিতে কোন প্রাণ খুজে পেলো না রাফিদ৷

“ছোটু মানুষের জীবনে কী হয়না হয় কেউ বলতে পারে না তাই শুধু একটা কথাই বলবো বেলার হাত কখনো ছাড়বি না৷ জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাকে ভালোবেসে যাবি৷ আর শোন আজ তোকে কলেজ যেতে হবে না৷”

” ওকে দি৷ তাহলে তো তুই ও ভার্সিটিতে যাচ্ছিস না?”

” না তবে তনু, নিখিল , নেহাল, আয়মান আসবে৷ দুপুরে ওদের জন্য রান্না করবো৷”

” দারুণ হবে দি৷ তাহলে আমি বাজার টা সেরে ফেলি?”

“হুম৷”

রাফিদ খাওয়া শেষ করে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে বাজারে চলে যায়৷ রাফিদ বের হওয়ার পর পরই ফারহা আদিলকে কল করে৷

” হ্যালো পিচ্চি৷”

” হা আপা আমি তোকেই কল করতে যাচ্ছিলাম৷ আপা রাতে মেসেজে আমাকে যা যা করতে বলেছিস আমি সব কাজ করে ফেলেছি কিন্তু আপা এটা তো বেশ রিস্কি হয়ে গেল না? তোর যদি কিছু হয়ে যায় তখন? ” 

” ওপারে যে আয়াশ আমার জন্য অপেক্ষা করছে পিচ্চি৷ আমাকে তো যেতেই হবে আজ হোক বা কাল৷”

” আপা৷” ফোনের ওপাশ থেকে রেগে চিৎকার করে উঠলো আদিল৷

” ভুলেও দ্বিতীয়বার এই কথা যেন তোর মুখে না শুনি আপা৷ আই সোয়্যার যদি আর কখনো বলিস তাহলে তুই কোন দিন আমার মুখ দেখবি না৷”

আদিলের কথা শুনে বিষাদময় হাসি দিয়ে ফারহা বললো,” ঠিক আছে বলবো না তবে কাজে একচুল ভুল হলে আমাকে আর দেখতে পাবি না পিচ্চি৷”

” না আপা কোন ভুল হবে না আই প্রমিজ৷ আর আমার কথা আমি রাখবো কিন্তু তুই তোর কথা রাখবি তো?”

” রাখবো৷ রাখবো তোর কথা৷”

” ঠিক আছে তাহলে রাতে কথা হচ্ছে৷”

” হুম৷”

২৫.

শাফায়াত চৌধুরী আগের থেকে অনেকটা ভালো আছে৷ এটা শুনে মায়রা নিশ্চিন্ত হলো কিন্তু মেঘ তারপর যা বললো তা শুনে মায়রার মনের ভেতর কু ডাকছে৷ ফারহাকে মেঘ আজ বিয়ে করবে৷ কথাটা না যতটা ইজিলি মেঘ বলতেছে৷ শাফিন আর মিরা ততটা ইজিলি মেনে নিতে পারেনি৷ দুজনের মনের ভেতর রাগে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে৷ মেঘ ফারহাকে বিয়ে করলে যে তাদের সব কিছু হারাতে হবে৷ এটা তো তারা কিছুতেই মেনে নিতে পারবে না৷ স্বামী-স্ত্রী দুজনে এক কঠিন সিধার্ন্ত নিলো হয়তো এই সির্ধান্ত তাদের পথে বসিয়ে দিবে আর নয়তো তাদের স্বপ্ন পূরণ করবে৷

মেঘ ডক্টরের সাথে কথা বলে শাফায়াত চৌধুরীকে বিকেলে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য পারমিশন নেয় যদিও আলাদা ভাবে বেশি কেয়ারফুলের জন্য একজন নার্স ঠিক করেছে মেঘ৷ ফ্যাক্টরির বিষয়টা আপাতত ম্যানেজার সামলাচ্ছে তাই মেঘকে ওই বিষয়ে নাক গলানোর প্রয়োজন পরেনি৷ মেঘ একাই ফারহার জন্য বিয়ের কেনাকাটা করে ড্রাইভারকে দিয়ে ফারহার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে হাবিলদার মুশফিককের কল রিসিভ করে৷

” স্যার আপনার কথা মত মেয়েদের হালকা ডোজ দিতে মেয়ে গুলো সেই ব্যক্তির নাম বলে দিয়েছে৷ যে এতদিন যাবত খু’ন আর কিড’ন্যা’পিং করেছে৷ কিন্তু স্যার আশ্চর্যের বিষয় হলো মিলন হাওলাদার কেন নিজের বাপ ভাইকে খুন করবে? শুধু টাকার জন্য? স্যার আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব থানায় আসুন৷”

” মুশফিক আমি আগামিকাল আসছি থানায় আজ আসবো না৷”

” স্যার আজ আসবেন না কেন?”

” আজ আমার বিয়ে তাই আসবো না মুশফিক৷”

” স্যার আপনার বিয়ের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইল৷”

” ধন্যবাদ মুশফিক৷ বিয়েটা পারিবারিক হচ্ছে বলে তেমন কাউকে বলছি না তবে বড় করে যখন করবো তখন সবাইকে জানাবো৷”

” ওকে স্যার৷”

 মেঘ কল কেটে আশরাফ খান কে ফোন করে বিয়ের বিষয়টা জানাতে তিনি বেশ চমকে যায়৷ তিনি তার মেয়েকে চিনে, ফারহা এত সহজে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেছে এই বিষয় টা যেন তার কোন ভাবে হজম হচ্ছে না তবুও মেঘকে তেমন কিছু না বলে বললো,” এড্রেস পাঠিয়ে দিয়ো মেঘ সঠিক সময়ে চলে আসবো৷”

” আঙ্কেল বিয়েটা চৌধুরী ভিলায় হচ্ছে  রাত আটটায়৷”

“শাফায়াত!”

” ড্যাডকেও হসপিটাল থেকে বিকেলে ডিসট্রাস করে দেওয়া হবে৷”

” ঠিক আছে আমি চলে আসবো৷”

             দুপুরে চার বন্ধু এসে হাজির হলো ফারহার ভাঙ্গাচোরা বাড়িতে৷ বড়বাড়ির ছেলে মেয়ে হয়েও তাদের ভেতর যে বিন্দু মাত্র অহংকার নেই সেটা দেখে রাফিদের বেশ ভালো লাগলো৷ দুপুরে এসে চার বন্ধু ফারহার সাথে গল্প হাসি মজা করতে করতে রান্নায় হেল্প করে দিলো৷ এদিকে নিখিল একদম স্বাভাবিক আচরণ করছে ফারহার সাথে ঠিক যেমন আগে করতো৷ এটা দেখে ফারহা মৃদু হাসলো৷ রান্না শেষ হলে সবাই এক সাথে ফ্লোরে মাদুর পেতে একসাথে বসে খাবার খেলো সবাই৷ খাওয়া শেষ হওয়ার পর পর ফারহা উঠে যায়৷ আর কিছুক্ষণ পর দুটো ব্যাগ হাতে করে নিয়ে আসে৷ 

” এই ব্যাগ গুলো তে কী আছে ফারহা?” (তনু)

ফারহা মুচকি হেসে ব্যাগ থেকে পাঁচটা  ঘড়ি বের করলো৷ সবাই ঘড়ি গুলো দেখছে একি রকম ডিজাইনের ঘড়ি৷

” এই ঘড়ি গুলো তোদের জন্য৷”

ফারহা একে একে সবার হাতে ঘড়ি গুলো পড়িয়ে দিলো৷ রাফিদ, তনু , নিখিল, নেহাল আর আয়মানের হাতে৷ ঘড়ি গুলো যে বেশ দামী সেটা দেখলেই বুঝা যায়৷ 

আয়মান কপোট রাগ দেখিয়ে ফারহাকে বললো,” এত খরচ করার কোন প্রয়োজন ছিলো না ফারহা৷”

” জানি ছিলো না কিন্তু এই ঘড়িটা আমার স্মৃতি হয়ে না থাক৷ দেখ আমার হাতেও সেম ডিজাইনের ঘড়ি৷”

আয়মান দেখলো সত্যি ফারহার হাতেও সেম ডিজাইনের ঘড়ি৷ বাকিরা আর কিছু বললো না৷ গল্প করে পুরো বিকেলটা কেটে গেল ফারহার সন্ধ্যার আগেই সবাই চলে যায়৷ সবাই চলে যাওয়ার পরই রাফিদ ফারহার কাছে এসে বলে,” দি ভাইয়া আপু আসার আগে বেলাদের বাড়ি থেকে এতো কিছু তোমাকে কেন পাঠালো? আর ড্রেস গহনা দেখে মনে হলো কারও বিয়ের শপিং কিন্তু বিয়ের শপিং এখানে কেন পাঠাবে?”

ফারহা নির্লিপ্ত গলায় বলে উঠলো,” কারণ আজ আমার বিয়ে আর এগুলো তোর বেলার ভাই পাঠিয়েছে৷”

” মেঘ চৌধুরী!”

ফারহা মাথা দুলালো৷ রাফিদের চোখে মুখে রাগ ফুটে উঠলো৷ তবে তার দি’কে কিছু বললো না৷ ফারহা ব্যাগ থেকে ড্রেস গুলো বের করে ছবি তুলে আদিলকে পাঠিয়ে দিয়ে মনে মনে বলতে লাগলো,” আজ নাহলে এস্পার হবে নয় ওস্পার৷” 

             শাফিন আর মিরা দুজনে রিলাক্সে বসে খাচ্ছে৷ তাদের যেন এই বিয়ে নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই৷ পুরো চৌধুরী ভিলা রঙ্গিন আলোয় রাঙ্গিয়ে তুললো মেঘ৷ কয়েক ঘন্টার ভেতর পুরো বাড়ি বিয়ে বাড়ির রুপে রুপান্তর হয়েছে৷ মেঘ তার বিয়ের শেরওয়ানী ছুঁয়ে দেখছে৷ কয়েক বছর পূর্বে এমন একটা শেরওয়ানী সে পড়েছিলো কিন্তু আফসোস তার ভালোবাসাকে সে পায়নি কিন্তু আজ! আজ সে তার ভালোবাসাকে নিজের করে পাবে৷ মেঘ শেরওয়ানী পড়ে তৈরি হয়ে নিজেকে আয়নায় দেখছে৷ আর মাত্র কিছুক্ষণ কিছুক্ষণ পর সে তার ভালোবাসার মানুষটিকে নিজে গিয়ে নিয়ে আসবে৷ মেঘ রেডি হয়ে নিচে নামতে জানতে পারে শাফিন অলরেডি ফুলে সজ্জ্বিত একটি গাড়ি ফারহাকে আনতে পাঠিয়ে দিয়েছে আদঘন্টা পূর্বে৷ এর মানে দাড়ায় গাড়িটি নিশ্চয়ই মাঝ রাস্তা পর্যন্ত এসেছে?

ফারহা সত্যি গাঢ় লাল রঙের লেহেঙ্গা সোনালী ওড়না আর ভারি গহনা পড়ে তৈরি হয়ে নিলো৷ ফারহা নিজেই নিজেকে হালকা সাজে সজ্জ্বিত করে ফেলে৷ রাফিদ তখন রুমে এসে ফারহা কে দেখে ওখানে স্থির হয়ে দাড়িয়ে বলে,” আল্লাহ আমি কী সত্যি দেখছি নাকি ভুল দেখছি? এটা কী আমার দি নাকী আসমান থেকে নেমে আসা কোন হুর পরী?” নীলাভ চোখে  গাঢ়  কাজল দেওয়া আখিদ্বয় থেকে কাজল খানিকটা আঙ্গুলে ছুইয়ে ফারহার কানের লতিতে লাগিয়ে দিয়ে বললো,” আল্লাহ আমার দি’র উপর যেন কোন বদনজর না পরে৷” 

” তোর হয়েছে?” বিরক্ত হয়ে বললো ফারহা৷ ফারহার কথা শুনে রাফিদের ধ্যান ভাঙে৷ উফ দি বলতেই তো ভুলে গেছি৷ তোর জন্য গাড়ি পাঠিয়েছে অনেকক্ষণ হলো৷” ফারহা রাফিদের দিকে রাগ দেখিয়ে বললো,” তোর দ্বারা কিচ্ছু হবে ছাগল৷” রাফিদের গাল টেনে দিয়ে ফারহা তার ফোনটা হাতে নিয়ে বের হতে হতে বলে ,” ছোটু দরজাটা খোলা রাখ লক করার প্রয়োজন নেই৷ আর তুই আমার সাথে নিচে চল৷”

রাফিদ তার গালে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,” উফফ দি কি জোরে গাল টেনে দিলি? গালটা জ্বলছে৷” 

ফারহা সিড়ি দিয়ে নামার সময় চিলেকোঠার রুমটার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ কারণ এখানে যে #চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া রয়েছে৷ চোখের কোণ ভরে এলো ফারহার সেটা আড়াল করতে ধীরে ধীরে নিচে নামতে নামতে বললো, ” হয়তো আর কখনো তোর গাল জোরা টানতে পারবো না তাই তো আজ একটু টেনে দিলাম যাতে আমাকে সব সময় মনে রাখিস বুঝেছিস ছোটু?” 

ফারহা মেঘদের বাড়ি থেকে পাঠানো গাড়িতে উঠে বসার পর পর রাফিদ উঠতে নিলে ফারহা চেঁচিয়ে বলে,” ছোটু তুই এই গাড়ি তে উঠবি না৷”

” কেন দি?”

” কারণ পেছনের গাড়িটায় গিয়ে বস৷ এই গাড়িতে একমাত্র আমি থাকবো আর ড্রাইভার মামা আপনি ছোটুর সাথে ওই গাড়িতে বসুন৷”

” কিন্তু স্যার যে বললো আমাকে আপনার সাথে আসতে?”

” আপনাকে যা বলেছি আপনি সেটা করুন নাহলে আমি গাড়ি থেকে নেমে যাবো৷”

” না না ম্যাম আমি নামছি৷” ড্রাইভার নামার পর পরই ফারহা ড্রাইভিং সিটে এসে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়৷ আর পেছনের গাড়িতে রাফিদ আর ড্রাইভার বসে৷ ফারহা গাড়ি তার নিজের মত করেই চালিয়ে যাচ্ছে অন্য দিকে মেঘ গাড়ি নিয়ে বের হবার পর পরই শাফিন আর মিরা চৌধুরী বের হয়৷ মিরা ফোনে কোন এক নার্সের সাথে কথা বলে শাফিনকে বলে,”  ডান শাফিন৷ কিছুক্ষণের মধ্যে সুসংবাদটা মেঘ পেয়ে যাবে৷”

” গ্রেট আর সামনে হবে ধামাকা৷” বলতে বলতে গাড়ির স্পিড যেন আরও বাড়িয়ে দেয়৷ মেঘ দুটো গাড়ি ফুল দিয়ে সাজিয়েছিলো একটা ছিলো তার বাবা কে আনার জন্য যেটা মেঘ গেটের সামনে রেখেছিলো কিন্তু হসপিটালে পাঠানো হয়নি আর যেই গাড়িটা ফারহার জন্য পাঠানোর জন্য ছিলো সেটা সাজানো কম্পিলিট করে আগের গাড়িটার পাশাপাশি রাখা হয়৷ শাফিনের লোকেরা শাফিনের কথা মত প্রথম গাড়িটার ব্রে’কফে’ল করিয়ে দেয়৷ কিন্তু ভুল বসত ফারহাকে আনতে দ্বিতীয় গাড়িটি পাঠিয়ে দেয়৷ মেঘ যেহেতু অন্য গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে তাই বাধ্য হয়ে প্রথম গাড়িটি অর্থাৎ ব্রে’ক’ফেল করা গাড়িটি নিয়ে স্বামী স্ত্রী বেরিয়ে পড়ে৷ 

শাফিন দ্রুত গতিতে অন্য রাস্তা ধরে মেঘের আগে ফারহার কাছে পৌছাতে চায় কারণ শাফিন মিরা দুজনে নিজ চোখে ফারহার মৃ’ত্যু উপভোগ করতে চায়৷ যেটা গত কয়েক বছরে পারে নি৷ 

ফারহার গাড়ি চলতে চলতে অন্ধকার  রাস্তায় হারিয়ে যায়৷ রাফিদ ফারহার গাড়ি হুট করে দেখতে না পেয়ে ভয় পেয়ে যায় কিন্তু কয়েক মিনিট পর আবার ফারহার গাড়িটি দেখতে পায়৷ দেখতে পায় বধু সাজে কেউ ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি চালাচ্ছে৷ অন্ধকার রাস্তা পার হওয়ার পর পর সোডিয়াম লাইটের আলোয় রাফিদ দেখতে পায় আর একটি ফুলে সজ্জ্বিত গাড়ি তাদের গাড়ির দিকে এগিয়ে আসছে৷  তখনি ড্রাইভার তাদের গাড়িটা স্লো করে ফেলে কিন্তু ফারহার গাড়ির স্পিড তখন যেন বেড়ে যায় যা দেখে রাফিদ প্রচন্ড ভয় পেতে থাকে৷ 

অন্যদিকে শাফিন চৌধুরী তার গাড়ি নিয়ন্ত্রন করতে পারছে না৷ বুঝতে বাকি নেই তার গাড়ি ব্রে’ক’ফে’ল করছে৷ 

” শা শাফিন কি হলো গাড়ি আস্তে চালাও৷”

” মি মিরা আমাদের গাড়ি ব্রে’কফে’ল করেছে৷”

” ওয়াট! শাফিন কী বলছো এই সব? ব্রে’কফে’ল করেছে মানে? তারমানে ব্রে’কফে’ল করা গাড়িটিতে আমরা আর অন্য গাড়িটায় ফারহা৷ শিট৷” 

শাফিনের গাড়ির পেছনে মেঘের গাড়ি মেঘ গাড়িতে বসে সবটাই দেখছে কিন্তু তার ছোট চাচা যেভাবে গাড়িটা চালাচ্ছে সেটা দেখে মেঘের ভয়ে বুকটা কেঁপে উঠলো সেই অজানা ভয়ে৷ রাফিদ মেঘ দুজনে দুদিক দিয়ে সবটা দেখলেও কিছু করার ছিলো না৷ কিন্তু তৎক্ষনাৎ ফারহার গাড়ি আর শাফিন মিরার গাড়ি সামনা সামনি সংঘর্ষে গাড়ি উল্টে আগুন ধরে যায়৷ কয়েক মুহূর্তে চোখের সামনে দুটো গাড়িতে ধাউ ধাউ করে আগুন জ্বলতে দেখে মেঘ রাফিদ গাড়ি থেকে নেমে জ্বলন্ত গাড়ির দিকে যেতে নিলে ড্রাইভার মেঘ আর রাফিদকে আটকে দেয়৷ দুটো গাড়িতে তাদের আপন জনেরা আগুনে পুড়ছে ৷ রাফিদ ওখানে বসে পরে দি দি বলে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো৷ অন্যদিকে মেঘ পাগলের মত জ্বলন্ত গাড়ির দিকে যেতে চাইছে৷ ড্রাইভার অনেক কষ্ট করে মেঘকে ঝাপটে ধরে রেখে৷ ইতোমধ্যে মানুষের ভীর জমে গেছে৷ পুলিশের গাড়ি এসে সবটা সামলে নেয় কিন্তু একটা ফোন কল মেঘ কে মুহূর্তের মধ্যে বাকিটুকু ভেঙে দিতে সক্ষম ছিলো৷ মেঘের আর্তচিৎকার আর পাগলামির মাঝে মেঘের ফোন টা বেজে ওঠে ড্রাইভার কল রিসিভ করে লাউডে দেয়৷ ফোনের ওপাশ থেকে কান্নারত গলায় মায়রা চৌধুরী মেঘের নাম ধরে কেঁদে উঠতে মেঘ শান্ত হয়ে ফোন হাতে নিয়ে বলে,” মম কি হয়েছে তুমি কাঁদছো কেন?”

” মে মেঘ তোর বাবা, তোর বাবা আর নেই ৷” মায়রা চৌধুরীর কথাটা শোনা মাত্র মেঘ বসে পড়লো৷ একদিনে চার চারটে আপনজনকে হারিয়ে মেঘ বাকরুদ্ধ৷ একদিকে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে হারানোর যন্ত্রণা অন্য দিকে নিজের জন্মদাতা পিতাকে হারানোর যন্ত্রনা ৷ বাবা মা’র সমতুল্য  চাচা চাচীকে হারানোর যন্ত্রনায় মেঘ  যেন পাথরে রুপান্তর নিলো৷ মেঘ জ্বলন্ত আগুনের দিকে তাকিয়ে থেকে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো, ” জিতে গেছো তুমি৷ শুনতে পাচ্ছো ফারুপাখি তুমি জিতে গেছো তোমার আর আয়াশের ভালোবাসা জিতে গেল৷ আমি হেরে গেলাম৷ হেরে গেলাম আমি তোমাদের ভালোবাসার কাছে৷ দেখো ফারুপাখি আজ আমি সব হারিয়েছি৷ সর্বহারা আমি৷ সব শেষ সব শেষ তুমি জিতে গেছো ফারুপাখি তুমি জিতে গেছো৷” বলতে বলতে মেঘ উল্টো দিকে হাটতে লাগলো৷ রাফিদ পেছন থেকে অনেকবার মেঘ কে ডেকেছে কিন্তু মেঘ সায় দেয় নি৷ অন্ধকার রাস্তায় হাটতে হাটতে মিলিয়ে গেলো মেঘ৷

             #সমাপ্ত

বিঃদ্রঃ বড্ড অগোছালো ভাবে শেষ করলাম #চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া প্রথম খন্ড ৷ গল্পটা শেষ করার প্রয়োজন ছিলো কারণ লেখায় এক প্রকার অনিহা ধরেছে আমায় আর সাথে রয়েছে ব্যস্ততা৷ আচ্ছা তার আগে বলুন তো ফারহা কী আদৌ মা’রা গেছে? নাকী এটা কোন নতুন গল্পের সূচনা? যাই হোক কেমন হলো জানাবেন আর ভুল ত্রুটি সুন্দর ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷ আসসালামু আলাইকুম৷

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।